প্রবাসী বাবার কাছে!!
লিখেছেন লিখেছেন সাদামেঘ ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৩৫:৩৯ বিকাল
"প্রিয়র চেয়ে প্রিয় হে আব্বুজী আমার"
প্রথমেই সুন্নতী সালাম আপনার জন্য মনটা সদাই থাকে ভাবান্ত আপনার জন্য কেমন আছেন ভেবে! কষ্ট লাগে মনেতে আমার ক্লাশমেটেরা বা অন্য মেয়েদেরকে যখন দেখি তাদের আব্বুদের সাথে প্রতিদিনই ভালবাসা বিনিময় হয় তখন! চোখের অশ্রুকে তখন ধরে রাখতে পারিনা সে
তার আপন ধারায় ঝরে যায়। দু'চোখ বুঝে অনুভব করি একদিন আমার আব্বুও আসবে আমাকে আদর করতে! আব্বুজী আপনি আমাকে খুশি
করতে বড় চাচ্চু মেজু চাচ্চু ছোট চাচ্চু ও মামাদের কাছে কতকিছু পাঠান সুযোগ পেলে কোন হাজীদের কাছেও এটা সেটা পাঠান তাতে আমি
খুশি হই ঠিকই কিন্তু আমার মনটা ভরেনা মনে হয় শুধুমাত্র আপনার হাতের পরশ আমার মাথার উপর অনুভব করবো তখনই আমার মনের
ভেতরটা ভরে যাবে। মাস বছর পেরিয়ে যখন থেকে লেখা শিখেছি তখন নাকি প্রথম যে চিঠিটা লিখেছি তার মাঝে হাজার হাজর বার শুধু
বাবা বাবা বাবা লিখেছি শেষে এমন হয়েছে যে, চিঠির ভাষাই বুঝা যাচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো যেন শুধু এলোমেলো আঁকাআঁকি মা সেই
চিঠিটা আপনার কাছে পাঠিয়েছিল অনেকগুলো টাকা খরচ করে কিন্তু আপনি মায়ের সাথে তখন রাগ করেছিলেন এত টাকা খরচ করে চিঠি
পাঠাও অথচ পড়তেও পারিনা তবে আর চিঠি দেয়ার দরকার কি? মা পরের চিঠিতে বলেছিল ঐলেখাটা তোমার মেয়ের মনের ভাষা! কেমন
বাবা তুমি? মেয়ের মনের ভাষাও পড়তে জানোনা? সেই ছোট বেলার বাবা লেখা একটি চিঠি মাও খুব যতন করে রেখেছিলেন! এখনো সেই
চিঠিটা মা বুকে নিয়ে কাঁদেন! আমার মনের কষ্টগুলো উপলদ্ধি করে।
ছাত্রী বোনেরা পরীক্ষা দেয়ার পর তাদের আব্বু এসে সে রেজাল্ট নিয়ে যায় আব্বুর হাতের সই করে জমা দিয়ে যায় আর আমার আব্বু
সইয়ের জায়গায় অন্য জনের সই কখনো চাচ্চুদের থেকে কারো সই, কখনো মামাদের সই, কখনো মায়ের সই! আমি তখন ভাবতে থাকি
কবে যে আমার আব্বুজী আমার রেজাল্ট নিতে আসবে? সেই দিন কবে আসবে? আব্বুজীর ভালবাসাটা যেন আমার কাছে আকাশের চাঁদের
মত! হাত বাড়ালেও ধরা যায়না সেই চাঁদ! আমার আব্বুজীর ভালবাসাও তেমন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে! যখন আমি আব্বুজীকে বেশী বেশী মিস
করি তখন তিনি প্রবাসের প্রাচীরে আবদ্ধ! মেয়ের ভালবাসার টানে সবকিছু ছিন্ন করে আসতে পারেন না! যেমনই আসতে পারেনা
ঐনীলাকাশের চাঁদ! আম্মুর সবকিছুই যেন আমার কাছে খুব পরিচিত মা যেন আত্মার পরম আত্মীয় কিন্তু মায়ের মত করে আব্বুজীকে কখনো
অনুভব করতে পারিনা আব্বুজীকে শুধু মুখটাই বেশী চিনি! প্রবাসের মত অপরিচিতই যেন আব্বুজী আপনার জীবনটা আমার কাছে! আব্বুজী
আপনি স্বর্নের গয়না পাঠান আমার জন্য অনেক গয়না আমার কিন্তু সেগুলোকে আমার কাছে মূল্যবান মনে হয়না! মনে হয় আপনার আদর
এই গয়নার চেয়েও অনেক অনেক মূল্যবান! ভাল খাবার, দামি পোষাক, অনেকটা সচ্ছলভাবে থাকার চেয়ে আপনি কাছে থাকাটা আমার
কাছে অনেক অনেক মূল্যাবান! আমি বুঝাতে পারবোনা আপনাকে সবসময় কতটা মিস করি! কতটা অনুভব করি নিরবে সরবে, আনন্দে-
ঊল্লাসে, ঈদে-কোরবানে, ভ্রমনে! যখনই স্বজনেরা সবাই একত্রিত হয় তখনই আমার চোখে ভেসে উঠে একটি মুখের ছবি যে আমার
সবচেয়ে প্রিয় আমার আব্বুজী! কিন্তু সেই অনুভবটা আমি কাউকেই বুঝাতে পারিনা! আমার মনের কষ্টটা শুধু বুঝের আমার মা! আর মাঝে
মাঝে দাদাভাইয়া বুঝতে পারেন আমার মনের কষ্টটা! আমি কেন মনমরা হয়ে আছি? কি ভাবছি? কার অভাব অনুভব করছি? দাদাভাইয়া
শান্তনা দেন মন খারাপ করিস নারে দাদু..... তোদের ভাল রাখার জন্যেই তো তোর বাবার প্রবাস বরণ! সে তো তোর বাবা আমার তো সন্তান
আমারও কি কম খারাপ লাগে তার জন্য? কিন্তু কি করা এই পৃথিবীতে একটু ভাল থাকতে একটু সচ্ছলভাবে থাকতে সন্তানদের সু-শিক্ষা
দিতেই অনেক বাবাদের প্রবাসের কারা বরণ করতে হয়! তুই দোয়া কর দাদুভাই! আল্লাহ যেন তোর বাবাকে নেক হায়াত দেন! আমি
দাদাভাইয়ের কথায় কিছুটা শান্তনা পেলেও মনটাকে শান্ত করতে পারিনা! কেন আমাদের মত অনেকের আব্বুজীরা প্রবাসে থাকবে? আমাদের
দেশে কি আয়ের কোন পথ নেই? কেন প্রবাসী বাবাদের মেয়েরা বাবার জন্য কাঁদবে চুপে চুপে? কবে তাদের এই গোপন কান্না শেষ হবে?
কবে প্রবাসের প্রাচীর ভেঙে স্বদেশে আসবে প্রিয় আব্বুজীরা কন্যার ভালবাসার টানে? হে আমার আব্বুজী কবে আসবেন আপনি আমাকে
আদর করতে? আমার রেজাল্ট নিতে? কবে আসবেন ভালবাসা দিবসের মত দিনে আমাকে সময় দিতে? হে আমার আব্বুজী আপনি আর
আমাবশ্যার মত প্রবাসে থাকবেন না! আমার মনের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে থাকুন সবসময়ের জন্য! আমরা কয়জন ভাই বোনেরা
আপনার আদর ভালবাসার জন্য, আপনার সাথে সময় কাটানোর জন্য মরুর ভূমির মত চৌচির হয়ে আছি আপনি আসুন আমাদের কাছে
কাংখিত অঝর ধারার বৃষ্টি রুপে! হে আমার আব্বুজী আপনি আমাকে অন্যের বাড়িতে বিদায় করার আগেই আমার মনে আপনাকে দুরে রাখার
যে কষ্ট সে কষ্ট দুর করুন! হে আব্বুজী আমাকে জানিয়ে দিন ভালবাসাটা কেন এত কষ্টে মোড়ানো থাকে? কেন ভালবাসাটা ভালবাসার মত
হয়না? কেন আব্বুজীর ভালবাসাটা আমার মনের আকাশের মেঘ হয়ে আমার চোখের কষ্টের বৃষ্টি ঝরায়? জম্ম থেকে একযুগ পরেও কেন
আপনি আমার অনুভবের জগতেই আছেন এখনো? কেন সামনে এসে আপনার আদরে ভালবাসায় আমাদেরকে পুলকিত করেন না? কেন
আমার কাছে অনুভবেই আছেন? বাস্তবের আদরে ভালবাসায় কেন আপনাকে পাইনা? আপনি আমাকে জানান ভালবাসাটা এত
কাঁদায়...................কেন?
এক কন্যা বার বছরের জীবনে বাবাকে কাছে পেয়েছে দেড় বছর কি দুই বছরের মত! বর্তমানে সে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী! প্রবাসী বাবার কাছে
তার মনের আরজু এভাবেই প্রকাশ করে।
"প্রবাসী বাবার কন্যা"
বিষয়: বিবিধ
১১৮৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন