সাধের বিয়ে!!
লিখেছেন লিখেছেন সাদামেঘ ০৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:৫৭:১৩ রাত
সাধের বিয়ে!!
বরের ছবি হাতে বরের মা কনের সামনে এনে বলছে দেখতো মা আমার ছেলেকে তোমার পছন্দ হয় কিনা? আমার ছেলে এখন অফিসিয়াল পোষাকে তাই প্যান্ট শার্ট পরা আছে আর এমনিতে সব সময় পাঞ্জাবী পায়জামা পরে। কনে তো চোখ তুলতেই পারছেনা, ওদিকে বরের মা অনেক অনেক প্রসংসা করছে ছেলের আর বলছে দেখ মা আমার ছেলের মুখে দাড়ি থাকলেও সে খুবই স্মার্ট একবার দেখ তোমার পছন্দ হবে। কনের ছোটবোন বরের মায়ের হাত থেকে ছবিটা নিয়ে বলে যে, আগে আমরা দেখি পরে আল্লাহ কবুল করলে আপু বাকি জীবন দেখবে। ছবি রেখে চলে যাবার সময় বরের মা আরো বলে গেল কনেকে তুমি আমার ছেলের ছবিটা দেখ, অবশ্যই তোমার ভাল লাগবে কারন আমার ছেলে নামাজী এবং দ্বীনদারও বটে, কনে নিশ্চুপ কোন কথা নেই শুধু মাটির দিকেই তাকিয়ে আছে। আর আল্লাহকে জ্বপছে মনে মনে। বাসার সবাইতো বরের মায়ের কথা শুনে মনে মনে খুশিই হচ্ছে এবং বুঝতেও পারছে যে, বরের মায়ের মেয়ে পছন্দ হয়েছে সেজন্য। যাবার সময় আরো বলে গেলেন ইনশাল্লাহ আমার ছেলে শুক্রবারে দেখতে আসবে আপনারা প্রস্তুত থাকবেন।
শুক্রবার আসতে মাঝখানে একদিন বাকি মানে বৃহস্পতিবার হাতে সময় নেই, বরের বাবা মা প্রায় তিন বছর দেখার পর বর এলো দেশে। দেখতে আসে শুক্রবার বর কনেকে দেখে পছন্দ হয়, আর এখবর বরের মাকে জানায় একটু পরেই সবাই সুযোগ করে দেয় বর কনেকে কথা বলতে, কথা বলতে বলতে গ্রামের ঠিকানা নেয়, মোবাইলে কিছু ছবিও উঠায় সাথে চোখে চোখে অনেক কথাও হয়ে যায় কারন দুজনেই দুজনের ছবি অনেকদিন আগে থেকে দেখে ছিল। তাই দেখতে এসে পছন্দ হতে সময় লাগেনি দেখতে আসে শুক্রবার, আংটি পরায় সোমবার আর বিয়ের সিদ্ধান্ত হলো মাঝের বুধবার বাদে পরের সপ্তাহের বুধবার। হাতে সময় নেই একটুও মাঝখানে আটদিন বাকি, সব আয়োজনও বাকি, বর বলেছে কোন অতিরিক্ত খরচ করতে না বা সুন্নত বিরোধী কোন কাজ যাতে না হয় এই অনুষ্ঠানে। বর কনের সাথে আংটি পরানোরদিন আবারও কথা হয় এবং বর কনেকে বলে যে, আমি মোহরানা ধরলে অনেক ধরতে পারবো কিন্তু অনেক মোহরানা ধরে নগদ দিতে না পারলে সেটা সুন্নত বিরোধী হবে সেজন্য আমি তা চাইনা। তাই আমি সল্প মোহরানা দেব কিন্তু নগদ দিয়ে দেব কারন এটাই নবীজি (সঃ) এর সুন্নত আপনার কি ইচ্ছা? কনে বলেছে আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) যে কাজে খুশি আমিও সে কাজেই খুশি। উভয়ের মত প্রকাশের পর আত্মীয় স্বজন সবার মতে, সবার দোয়া নিয়ে বর কনের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। এই বিয়েতে হয়নি অতিরিক্ত খরচ, গান বাজনা, অত্যাধনিক ভিডিও বা লৌকিকতা। সকল আত্মীয় স্বজনের মতের মূল্যায়নের মাধ্যমে এবং সকলের দোয়া নিয়ে এই জুটি অনেক অনেক সুখে আছে। বর্তমানে সেই কনে একজন কন্যা সন্তানের জননী।
বিয়েতে শিক্ষনীয় বিষয় সমূহ
১/ নবীজি (সঃ) এর সুন্নতের অনুসরন।
২/ সল্প মোহরানা ( যা সহজেই আদায় করা যায়)।
৩/ অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত
৪/ আত্মীয় স্বজনের সবার মতের মূল্যায়ন।
৫/ অতিরিক্ত লৌকিততা থেকে বিরত থাকা।
বিয়ে তো জীবনে করতেই হবে সেই বিয়ে যদি আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) এর সুন্নতের অনুসরনে এবং সে বিয়ে যদি হয় মা বাবা ও আত্মীয় স্বজন সবার মতের মূল্যায়নের মাধ্যমে তবে সেখানে থাকে সকলের দোয়া আর সেই দোয়ার বরকতে সেই দম্পতির জীবনে আসে অফুরন্ত সুখ। প্রকৃত ভাবে সুখ হল স্বামি স্ত্রী একে অপরকে মান্য করার মাঝে। একে অপরের কথাকে মূল্যায়ণ করার মাঝে এবং নিজের মতের থেকে অন্যের মতকে বেশি প্রাধান্য দেয়ার মাঝে। পৃথিবীতে তারাই বেশি সুখি হতে পেরেছে যারা অন্যের মতকে বেশি মূল্যায়ণ করতে পেরেছে। কথায় বলে যদি কিছু পেতে চাও তবে আগে দিয়ে যাও আর দিলেই পাওয়া যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৮৩১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন