প্রয়োজন একজন ভাল বন্ধুর!!

লিখেছেন লিখেছেন সাদামেঘ ২৮ জুলাই, ২০১৩, ০৫:৩০:১৮ বিকাল

প্রয়োজন একজন ভাল বন্ধুর!!

পৃথিবীতে বাঁচতে হলে কত কিছুই না করতে হয়। কত কষ্টই না পেতে হয়। পেতে হয় কত অবহেলা তার কোন হিসেব নেই। প্রত্যেকটা মানুষের উঠতি বয়ষে একজন ভাল পরামর্শদাতা প্রয়োজন যে কিনা বুঝমান এবং সকল ভুল থেকে শোধরাতে পারে। ভুল পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত রাখতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক বন্ধু বা পরামর্শদাতা না পেলে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হয় আর এই ভুলের মাশুল বাকি জীবন ভর দিতে হয়। হোক তা সামান্য বা কিছু বেশি।

প্রত্যেকজন মানুষেই আলাদা আলাদা চিন্তা, চেতনা, স্বপ্ন, পাওয়ার প্রত্যাশা, জীবনকে সাজানো গুছানোর ভিন্ন রকম স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগুতে থাকে সাথে সাথি হয় বুক ভরা আকাংখা। যার কারনে মানুষ জীবনে যেকোন ঝুকি নিতে রাজি হয়। ভাল লাগা আর ভালবাসা এমন একটা বিষয় যার জন্য যে কেউই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সেই ভুলের কারনে আজীবন ভুগতেও হতে পারে সঠিক পরামর্শদাতা বন্ধুর অভাবে।

মনে পড়ে এখনো পড়া লেখার জীবনে আমি এমন একজন শিক্ষিকাকে পেয়েছি যার সুন্দর চিন্তা ও সুন্দর পরামর্শ অনেকের অনেক উপকারে এসেছে। এবং যেই উনার পরামর্শ বা সুন্দর আলোচনাকে হেয় করেছে জীবনে সেই পস্তিয়েছে। বর্তমানে তো এমন অবস্থা যে, কেউ যদি কোন ভুল কাজ বা ভুল পথে বা বাড়াতে চায় অনেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বা ভাল পরামর্শ দেয়ার পরিবর্তে উস্কে দেয় যা বাস্তব জীবনে আফছূছের কারন হয়। কথায় বলে তেল দিতে জানে সবাই! তৈল আর গুড় দেয় ক’জনায়? আমার সেই শিক্ষিকা আপুর নাম শাহানাজ পারভীন! উনার ব্যবহার ও চালচলন এবং মানুষের সাথে কথাবার্তা সবই যেন আমাকে মুগ্ধ করে। যেখানে অনেকে উনাকে নিয়ে সমালোচনায় মত্ত সেখানে উনার কথা আমাকে যেন মুগ্ধ থেকে আরো বেশি মুগ্ধ করে। আপার ভাল ভাল পরামর্শ গুলো আমাকে আমার জীবন চলার পথে অনেক সহযোগীতা করেছে যা বলে বা লিখে বুঝানো যাবেনা। প্রত্যকটা মানুষের জীবনে প্রয়োজন ভাল পরামর্শদাতার, ভাল বন্ধু, সঠিক পথো নির্দেশনাকারির। যার সুন্দর সুন্দর কথা বা ভাল পরামর্শ গ্রহনে বাস্তব জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে এবং সঠিক সিদ্ধান্তে আন্তরিক ভাবে সুখ অনুভব করে। হোক তা খুব ক্ষুদ্রপর্যায়ের বা বৃহত্তম।

সুন্দর পরামর্শ; এই আপা আমাদেরকে সুন্দর ও ভাল পরামর্শ দিতেন সবসময়। কেউ তা গ্রহন করে উপকৃত হতো আর কেউ তা বর্জন করে ডুবে যেত ভুলের চোরাবালিতে যেখানে হারাতো চিরকালের সুন্দর চিন্তা ভাবনা, ও পরম প্রিয়জনদেরকে। আপা আমাদেরকে বলতেন শোন তোমরা সেই প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ে আসছো আর এই পর্যন্ত আসতে, তোমাদের সবাইকে অনেক অনেক কষ্ট করতে হয়েছে অনেক বাঁধা বিঘ্ন পেরুতে হয়েছে, তেমনী এখন থেকে তোমাদের আগত ভবিষ্যৎ পর্যন্ত যেতে আরো অনেক কষ্ট ভোগ করতে হবে। নিজের অবস্থানকে ঠিক রাখতে সঠিক সিদ্ধান্তের বড়ই প্রয়োজন। আপা আমাদেরকে যেসব কথা বলেছেন এসব কথার কিছুআংশ শেয়ার করছি এখানে। সম্মানিতা আপার উক্তি হলঃ

@ তোমরা কখনো অন্যের প্রাধান্যের সমালোচনা করবেনা কারন সে যদি অনেক প্রাধান্যের পাত্রী হয়ও তবুও না কারন হল; সে তো তার গন্তব্যে পৌছে গেছে তাই তার সমালোচনা করে সময় অপচয় না করে তার থেকে এই শিক্ষা নেবে যে, তার থেকেও তোমাকে আরো ভালো কিছু করতে হবে যেন তোমাকে নিয়েও লোকে সমলোচনা করে।

@ কখনো কোন ছেলের কথায় আবেগ প্রয়োগ করবেনা। কারন সেই আবেগে লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতির আশংকাই। আর মনে রেখ কোন ভদ্র পরিবারের ছেলে তোমার পেছনে ঘুরবেনা বরং সে তার আপন লক্ষে পৌছে তারপর কোন মেয়েকে অফার করবে এবং তাতেই সিমাবদ্ধ থাকবেনা তাকে নিয়েই জীবন সাজাবে।

@ অনুরুপ কোন জ্ঞানী শিক্ষিত মেয়েও কোন ছেলের কথায় নিজেকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করেনা বরং সেও তার শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে তার জ্ঞান দিয়ে আপন লক্ষে পৌছে এরপর আপন পিতার/মাতার উপর ন্যস্ত করে তার মতামত আর এতেই তারা বাস্তব জীবনে সুখি হয়।

@ বর্তমানে বাস্তবতার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় অধিকাংশ ছেলে মেয়েই পিতা মাতার অমতে লুকিয়ে বিয়ে করে এতে করে ক’জনে সুখি হয় বলতে পারো? হাতে গোনা কয়েকজনে সুখি হয় তাও বিরল। আমি বলছিনা তারা একেঅপরে পছন্দ করবেনা বরং তারা যথার্থ বয়ষে পৌছানোর পর তাদের মতামত পিতামাতার কাছে রাখলো তখন তারাই তোমার পছন্দকে মূল্যায়ন করবে।

@ তুমি যদি তোমার বাবা মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চেষ্টা করো তবে উনারাও তোমার ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করবে এতে কোনই সন্দেহ নাই।

@ আপা আরো বলেন; আমার ছেলেদেরকে নিয়ে আমি সিনেমা দেখি এরপর ছেলের কাছে জানতে চাই এই সিনেমা থেকে তুমি কি বুঝলে? আমাকে বলো আর না বুঝলেও বলো। ছেলে এ টু জেড পর্যন্ত সব বর্ণনা করে। যদি কোন বিষয় ছেলেরা নাও বুঝতে পারে তখন সেই আপু ছেলেদেরকে তা বুঝিয়ে বলেন এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে অবগত করেন আর অপকারিতা থেকে বিরত থাকার জন্য বলে দেন।

@ এই আপু আরো বলেন; আমি আমার স্বামিকে বলে দেই সন্তানকে হয় বাবাকে ভয় করতে হবে নয়তো মাকে ভয় করতে হবে। নয়তো এই সন্তান প্রকৃতমানুষ রুপে গড়ে তোলা কঠিন হবে। আমি যখন শাসন করবো তুমি তখন ওদেরকে এই বলে বুঝাবে যে, মা কি জন্য শাসন করেছে? আর এতে কি লাভ আর কি ক্ষতি সেটাও বুঝিয়ে দেবে। এতে করে সে কখনোই মাকে ভুল বুঝবেনা যে, মা আমাদেরকে শুধু শাসনই করে আদর করেনা।

@ যখন সন্তানের আদরের প্রয়োজন তখন আদর করি। যখন ওদেরকে শাসনের প্রয়োজন তখন শাসন করি। আর যখন ওদের থেকে ওদের পড়া বা কোন কাজ আদায় করা প্রয়োজন অনুভব করি তখন ওদেরকে কোন গিফট দেয়ার কথা স্বরন করিয়ে দেই যাতে উৎসাহিত হয়ে সেই কাজ সম্পন্ন করে।

@ তোমরা তোমাদের মা অথবা বাবাকে তোমাদের বন্ধু রুপে গ্রহন করবে। আর সব বিষয়ে আলাপ আলোচনা করবে। মোটকথা একে অপরের সাথে ফ্রি থাকবে। এতে করে তোমরা কোন সমস্যায় পতিত হলে উনারা সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সঠিক কাজ করতে সহায়তা করতে পারে এবং যেকোন কষ্টে বা সমস্যাতে তোমাদের পাশে দাড়াতে পারে।

@ কখনো বাবা মাকে না বলে বাহিরে যাবেনা। উনারা যদি নিশেধ করে তবে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে উনাদের যেকোন আদেশ নিশেধও তোমাকের জন্য কল্যানের। কারন কোন বাবা মাই চায়না তার সন্তানের ক্ষতি

@ মনে রাখবে প্রতিবেশিদের সাথে ভাল ব্যবহার কোন না কোন সময় তোমার অমূল্য উপকারে আসবে যা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।

@ আজকে আমার কথাগুলো হয়তো তোমাদের ভাল লাগবেনা তবে কেউ যদি এই কথাগুলোকে নিজের কাজে কর্মে ফলাতে পারে তবে আমার বিশ্বাস সে কখনোই ভুল পথে পা দেবেনা। বরং তাকে সঠিক পথে থাকতে উৎসাহিত ও সহযোগীতা করবে।

@ আমরা কেউই মায়ের পেট থেকে শিখে আসিনি পৃথিবীতে এসেই শিখেছি যোগ বিয়োগ গুন ভাগ। শিখেছি ভাল মন্দ বিচার করার শক্তি তাই বিচার বিশ্লেষন করে চলার চেষ্টা করবে সবসময় এতে করে অনেক সমস্যা এড়ানো যায়।

@ নিজের মতকেই প্রাধান্য দিবেনা সব সময় অন্যের মতের মূল্যায়ন যদি তুমি করো তবে অপরেও তোমার মতের মূল্যায়ন করবে।

@ কখনোই সত্য বলতে বা সত্য প্রকাশের জন্য ভয় পাবেনা। কারন তোমার সত্য বলাতে হয়তো কারো উপর মিথ্যা শাস্তি অর্পিত হবেনা। বা কেউ হয়তো সুন্দর সমাধানে আসতে পারবে।

@ মানুষের যেকোন সমস্যাতে এগিয়ে আসতে কুন্ঠাবোধ করবেনা। বরং খুব আন্তরিকতার সাথে আসবে।

@ অসুস্থ রোগীর সেবা করতে কখনো নিজেকে বিরত রাখবেনা কারন এমন সময় হয়তো আসতে পারে তোমার জীবনে যখন কারো সেবার বা সহযোগীতার প্রয়োজন তুমি অনুভব করবে।

@ শিক্ষিকা হিসেবে তোমরা আমাকে ভয় পাও ঠিক আছে কিন্তু তোমাদের এই ভয় যেন থাকে যে সামনে ভয় পাই পিছনে যা ইচ্ছা তা করে যাই এমনটি যেন না হয়।

@ আমি একজনকে সম্মান করি সামনে অথচ পিছনে তার সমালোচনা করে যাই আসলে এমনটি কখনোই করা উচিৎ নয়।

@ তোমাদের মাঝে আরেকটি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে সেটা হল অন্যের ভুল শোধরানো এবং তা নম্র কথা বা নম্র ব্যবহারের মাধ্যমে।

@ আমি যেমন একজন ভাল বন্ধু বা বান্ধবী চাই তেমনী আমাকেও ভাল হতে হবে।

@ আর সব সময় মনে রাখবে পৃথিবীতে যত বড় বড় জ্ঞানী গুণি ব্যক্তি ছিল তারাও কারোর না কারোর অনুস্বনেই বড় হতে পেরেছে। তোমরাও এমন কারো অনুসরন করো যাকে সামনে রেখে জীবনের আসল লক্ষে পৌছতে পারো। একদিন তোমরাও বড় হবে আমরা দোয়াও করি তাই তোমাদের জন্য মেহনত করাটা যেন আমাদের গর্ববোধের কারন হয়।

@ মনে রেখ বড়রা শুধু শাসন করে, ধমক দেয়ে, চোখ রাঙায়, আসলে তারাই তোমার সবচেয়ে ভাল চায়। তুমি কখনোই এর বিপরীত চিন্তা করবেনা। ভালটাই ভাববে এবং ভালোর বিশ্লেষন করে সে মতেই চলবে।

@ ভাল বন্ধু আর ভাল বান্ধবী তোমাকে যেমন পড়াশুনা সহ সব কাজে সহযোগীতা করবে তেমনী খারাপ বন্ধু বা খারাপ বান্ধবী তোমাকে খারাপের নিম্মস্তরে পৌছে দেবে।

আপার এই কথাগুলো সেদিন হয়তো কারোর ভাল লাগেনি বা কেউ হয়তো আন্তরিক ভাবে পছন্দ করেনি তাতে আপার কোন ক্ষতি হয়নি। আবার অনেকেই এইকথা গুলোকে জীবন পথের পাথেয় হিসেবে নিয়ে অনেক উপকৃত হয়েছে। আমি আমার এই প্রিয় শিক্ষিকার দীর্ঘ হায়াত কামনা করছি। আর এই লেখা পড়ে কারোর যদি কোন ছোট থেকে ছোট উপকারও হয় তবে আমার এই শিক্ষিকা আপার জন্য দোয়া করতে ভুলবেননা।

বিষয়: বিবিধ

২২২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File