আমি তোমার বন্ধুও
লিখেছেন লিখেছেন সাদামেঘ ০৬ জুলাই, ২০১৩, ১১:৩৭:৫০ রাত
আমার প্রানের প্রিয়তম, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি। তাইতো তোমার সব কষ্টগুলো অনুভব করি আমার অন্তরে। তোমার হাস্যোজ্জল মুখ যেমন আমার পৃথিবীকে আলোকিত করে দেয় তেমনী তোমার অন্ধকার মুখ আমাকে রাতের আঁধারের মত মলিনতায় ঢেকে দেয়। তুমি হয়তো আমার এই আবেগকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমার কষ্টে আমার মনে খুব কষ্ট অনুভব করি। দেখাতে পারবো না। কারন দেখানোর জন্য মহান সত্তা সে নিয়ম করে দেননি যদি দিতেন তবে আমিও তোমাকে দেখাতে পারতাম আমার ভেতরের কষ্টগুলো।
মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি তো সেই ছোট বেলা থেকেই কষ্ট করে আসছো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, একাকি প্রবাসে থেকে থেকে। এখন সংসার করেও সেই একই কষ্ট তোমার মনে। একসময় থেকেছ নিজের মা/ বাবা/ ভাই/ বোন থেকে। আর এখন থাকছো নিজের বউ ও ঔরষজাতক সন্তান থেকে। যার মুখ থেকে এখনো বাবা ডাকটাও ভাল করে শোননি। জানি তোমার কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখতে চাও মনের আড়ালে।
কিন্তু সবার থেকে সব বিষয় লুকানো যায়না। জা...... আমি শুধু তোমাকে ভালইবাসি না অনুভব করতে চেষ্টা করি তোমার মনের আকাংখা। এবং তা পূরন ও করতে সচেষ্ট হই। ইতি পূর্বে তুমি হয়তো সেটা বুঝতে পেরেছ কখনো কখনো। জা......আমি উপলব্ধি করি তোমার বুকের ভেতরের কষ্ট। তাই তো মাঝে মাঝে নানান পাগলামি করে তোমাকে আনন্দ দিতে চাই। তুমি হয়তো সেটা খারাপ মনে করো।
কিন্তু জা......... আমি মনে করি এখন তোমার কর্মের পাশা-পাশি সংসারের সবার ভালবাসার মাঝে থাকা উচিৎ। কারন ক’দিন আগে কোন একসময় তুমিই বলেছ জীবনটা আর ক'দিনের? এই তো সামান্য পরে শেষ হয়ে যাবে। এই অল্প সময়েই আমাদের আখেরের সামানপত্র যোগাড় করতে হবে আমি এসব বুঝি। কিন্তু কখনো কখনো মানতে পারি। আবার কখনো কখনো মানতে পারিনা। আর ইদানিং তোমার যেসব কাজের সিদ্ধান্ত তাতে আমার ভেতরকে আরো ভাবিয়ে তুলেছে।
আসলেই তাই! তোমার কথাই ঠিক। নিজের স্থান নিজেকেই গড়ে নিতে হবে এই পৃথিবীতে। জা....... তোমার কথামত তুমি ক’দিন পেয়েছ তোমার কাছের লোকজনকে, আমার কথা বাদই দিলাম তোমার বেবীর কথাই ধরো এই ক'দিনের হিসাব কষলে বুঝতে পারবে তোমার সন্তান তোমাকে ক'দিনই বা কাছে পাবে? ইতি পূর্বেই বা ক'দিন পেয়েছে? এই তো আর মাত্র ক'টা বছর পর সে তোমাকে দেখলে তোমার বোনের মত করবে।
কাছে আসতে চাইবেনা। ফ্রি ভাবে কোন কথা ও বলতে পারবেনা। একধরেনের দুরত্ব তোমার মাঝে আর ওর মাঝে বহাল থাকবে। আমার জা............আমি এগুলো তোমাকে দোষী মনে করে লিখছি না। বরং তোমার ভেতরে এমন অনেক কষ্ট বাসা বেঁধে আছে যা তুমি আমাকেও জানাতে চাওনা। অথচ তুমি আমাকে বন্ধু ভাবো। কিন্তু আমি কি তোমার সেই মনের গভীরের কষ্ট শেয়ার করার মত বন্ধু হয়েছি? না কি হতে পেরেছি?
সত্যিই তুমি আমার দোসত। কিন্তু তুমি এমন দোসত যে, দোসতের খবর জানতে চাও, দোসতের মনের কষ্ট জানতে চাও, শান্তনা দিতে চাও, ভাগও নিতে চাও, অথচ নিজের অনেক কষ্ট লুকিয়ে রাখে মনের অন্তড়ালে। অনেক কষ্টের কথা আমাকে বল ঠিক আছে। কিন্তু তুমি যেমন আমার ভেতর/বাহির সব জানতে চাও। আমিও তো তেমনী তোমার ভেতর বাহির সব জানতে চাই। মাঝে মাঝে তোমাকে খুবই উদাসী দেখি কি যেন ভাবতে থাকো আণমনে।
আমি খুজে পাইনা তোমার সে উদাসী মনের ভাষা। মরুর বিভীষিকাময় কষ্টে থাকতে থাকতে তোমার কাছে অনেক কষ্টই সহনশীল হয়ে গেছে। কিন্তু আমি সবসময় ছিলাম সবুজুদ্দ্যানে তাই তোমার কষ্ট অনেক হলেও সেটা সহনশীল। আর আমার কষ্ট কম হলেও আমার জন্য অসহনীয়। তাই তো আমার কম কষ্টের মাঝে তোমার অনেক কষ্টগুলো অনুভব করি। অনুভব করি তখন তোমার কষ্টের পাশে আমার কষ্ট যেন পুকুর আর সাগরের মতন।
এজন্যই আজকে জানতে চেয়েছি জা............ তোমার কি খুব কষ্ট হয় কাজ করতে? কারন স্বদেশীদের তো স্বভাব হল সারা দিনের পরিশ্রমের পর রাতে নিজের আত্মার আত্মীয়দের সাথে সময় কাটিয়ে পরিশ্রমের কষ্ট ভুলে যান। কিন্তু প্রবাসে তো সেটারও ব্যবস্থা নেই। যাই হোক অনেক অনর্থক কথা লিখে ফেললাম। তুমি তো সময়ও পাবেনা পড়তে এখন। যাক, যখন সময় পাও পড়ে নিও। আর বুঝে নিও আমি শুধু তোমার থেকে ভালবাসা পেতেই চাইনা। তোমার লুকানোর কষ্টগুলোর অনলে জ্বলতেও চাই।
তোমার কষ্টগুলোও অনুভব করতে চেষ্টা করি। তোমাকে প্রবাসে রেখে আমি ভাল থাকিনা। আল্লাহ আমাকে ভাল রাখেন। তোমাকে সেবা না করতে পেরে আমার মনের কষ্টগুলো বাড়তে থাকে, আল্লাহ তখন সবর দেন। আর আমার পাহাড়সম আবেগ যখন তোমার কাছে অবহেলা পায়, তখন আমার দু'চোখের অশ্রুতে নদী প্রকাশিত হয়। তুমি যানোনা, তুমি দেখনা, দেখেন তোমার আমার প্রতিপালক, আমি শুধু তোমার স্ত্রীই নই আমি তোমার বন্ধুও তোমার সহধর্মীনিও,
আর তোমার জীবন পথে চলার সাথীও যখনই দিনের কাজের পরিশ্রম শেষে ঘরে ফিরবে তখনই আমাদেরকে মনে করো বিশেষ করে তোমার বেবীকে দেখবে তোমার মনের ভেতরের অনেক কষ্ট, পরিশ্রমের সিমাহীন কষ্ট, সব ভুলে যাবে। খুজে পাবে মনের গভীরে অন্যরকম আনন্দ, অন্য রকম সুখ। বিশ্বাস না হয় তো ট্রাই করে দেখ সত্যি কিনা। কারন আমি উপলব্ধি করেছি বেবীর দেড় মাসের সময়।
হঠাৎ আমি অসুস্থ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং সবাই বলে যে ছোট বাবু, ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ঠিক হবেনা রেখে যা। আমি তাই করি আমার দেড় মাসের বেবীকে রেখে যাই ডাক্তারের কাছে। ওখানে সর্বোচ্চ সময় ব্যয় হয় তিন ঘন্টা। এর মধ্যে কয়েকবার ফোন করেও খোজ নিয়েছি, কি করছে? কাঁদছে কিনা, কে আছে পাশে? সবের পরেও আমার মনে হতে থাকে আমার কাজটা করা উচিৎ হয়নি।
কিন্তু আমার মনে হতে থাকে আমি মহা মূল্যবান কিছু বাসায় রেখে এসেছি। এর আগে কখনোই আমার এমনটি মনে হয়নি। আমার অলংকার বা আমার প্রানপ্রিয় মা বাবাকে রেখে কোথাও গেলেও কখনো মনে হয়নি এমনটি। কিন্তু আমার সেই ছোট বেবীকে মনে হয়েছে মহা মূল্যবান সম্পদ। মনে মনে আমার আশংকা হচ্ছিল যেন এর কোন ক্ষতির। কিছু হয় কিনা, ব্যথা পাবে কি না, এসব ভাবছিলাম মনে মনে।
যতটুকু সময় ছিলাম ততটুকুন সময়ই মনটা আমার কাঁদতে ছিল কেন রেখে এলাম বাসায়। আর দোয়া করতে ছিলাম মনে মনে যেন আমার বেবী ভাল থাকে, কোন সমস্যা যেন না হয়। আমার সাথে আমার মা ছিল আর ছিল আমার ছোট ফুফু উনারা বলতে ছিল মারে মা মারে মা মাত্র দেড়মাসের মেয়ের জন্য এত চিন্তা? আর আমাকে দেখিয়ে বলছেন আমাদের এত বড় মেয়ের জন্য কি একটুও চিন্তা নেই আমাদের?
আমি বলেছিলাম আপনারা করবেন আমার চিন্তা আর আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ঐছোট মেয়ের চিন্তা করতে। ফুফু তখন বলে ছিল এত চিন্তা করতে হবেনা আল্লাহই ভাল রাখবেন। এত আমার একদিনের অভিজ্ঞতা। তুমি ও ট্রাই করে দেখো, দেখবে তোমার তাই মনে হবে। যা আমার মনে হয়েছিল।
এতগুলো বছর পরও তুমি আমার কাছে লুকাতে চাও তোমার অসুস্থতা? আমার কি এতটুকুও অভিজ্ঞতা হয়নি যে, তুমি কখন কেমন মুডে থাকো তা অনুভব করার? আমি কষ্ট পাবো, কাঁদবো সেজন্য তুমি বলছো না তুমি আজকে অসুস্থ। এবং দুরে আছো জেনেও আমার থেকে সে কথাটা লুকাতে চাইছো। আর সে কথাটা তোমার চোখ বলছে, তোমার শরীর বলছে অথচ তুমি লুকাতে চাইছো এই বলে যে, তুমি ভাল আছো। আমি বুঝতেছি তুমি আজ অসুস্থ আর তা জানার আরো একটি কারন হল তুমি অসময়ে বাসায় থাকা। আর তোমার অসময়ে বাসায় থাকাই তোমার অসুস্থের প্রমান বহন করছে। যাক; ইতিতে তোমার সর্বপরি কল্যান কামনা করছি আন্তরিক ভাবে। ইতিতে শুধু বলবো বলতে চাই মনে রেখ আমি শুধু তোমার জীবন সঙ্গীই নই আমি তোমার বন্ধুও। আণমনে ভেবে দেখ তোমার নিজেকে দিয়ে কথাটা কতখানি সঠিক?
৬ই জুলাই ২০১৩
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন