বিশ্বাসের ঘরে আগুন!!

লিখেছেন লিখেছেন সাদামেঘ ১৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:০৫:৫৫ রাত



পৃথিবী যেন তার নিজ অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে। মানুষ তবে কেন তার পূর্বের অবস্থানে থাকবে? আসলে পৃথিবী তার স্বস্থানে আছে ঠিকই কিন্তু মানুষেরা তার সম্মান মর্যাদার আসন ছেড়ে চলে এসেছে নিম্মপর্যায়ে। পৃথিবীটা সত্যিই বৈচিত্রময়। আর মানুষ গুলো তার চেয়েও বেশি বৈচিত্রময়।

একজন অচেনা অজানা মেয়ে এসে শশুর বাড়িকে আপন করে নেয়। আর সবচেয়ে আপন করে নেয় প্রানপ্রিয় স্বামী নামের মানুষটাকে। যেন জম্মের পূর্বো থেকেই তাঁর সাথে পরিচয়। সেই মানুষকে বিশ্বাস করে প্রত্যেক নারীই কাটিয়ে দেয় শশুরালয়ে তাঁর জীবন। আর সবাই যেমনই হোক না কেন?

একজন মানুষের ভালবাসায়ই তাকে পিতার বাড়ির মমতা ভুলিয়ে দেয় চিরতরে। করে তোলে পাষান হৃদয়ের। কোন কোন বাবা মা তো বলেই ফেলে তোকে বিয়ে দিয়েছি আর পাষানের মত আমাদের সবাইকে ভুলে বসেছিস। বাস্তবেও তাই ঘটে নিজের স্বামী, সন্তান, সংসার, সন্তানের পড়াশুনা

সব মিলিয়ে সব মেয়েই ভুলে যায় আপন ভাই বোন এমন কি চিরআপন মা বাবাকেও। বর্তমানে কতেক মেয়েকে দেখা যায় মোবাইলে কিছুটা যোগাযোগ করতে, কিন্তু আমি ভাবতে থাকি, ভেবে পাইনা যেই যুগে মোবাইল ছিলনা যোগাযোগের এত সুবিধা ছিলনা তখন কিভাবে মেয়েরা বাবা মায়ের খোজ খবর নিতো।

আসলে মহান মহীয়ানের বিধান এমনই তিনি এক সময় মায়ের খুব কাছে রেখে সন্তান প্রতিপালন করান আবার সময়ের পরিবর্তে সেই সন্তানকেই মা বাবা পরের হাতে তুলে দেয়। আর যাদের কাছে বা যাদের হাতে তুলে দেয় তারা যদি নিজের সন্তানের মত আদর মমতা করে তবে তো কষ্ট ভুলে থাকা যায় নয়তো কষ্টের আর শেষ থাকেনা।

মানুষ কতটা পরিবর্তনশীল তা আসলে মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে বাস্তবে যখনই কেউ এর মুখোমুখি হয়। সেইই বুঝে আসলে কতটা লাগে কষ্ট প্রিয় মানুষের পরিবর্তনে। একজন মেয়ে সব ভুলে পাড়ি জমায় স্বামীর সংসারে, সেখানে সবাই যেমনই হোক শুধুমাত্র স্বামীর ভালবাসায় সেখানে থাকার প্রেরনা পায়।

আর সেই স্বামী যখন জীবিকা নির্বাহের অযুহাতে প্রবাসে চলে যায় তখন মেয়েটা কতটা অসহায় হয়ে পড়ে একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখি তো সবাই। আসলে সবাই একরকম ভাবেও না আবার একরকম কাজ ও করেনা। একটি মেয়ে স্বামী সংসার সন্তান পেয়ে নিজের জম্মদাতা মা বাবাকেও ভুলে যায়।

আর সেই প্রানপ্রিয় স্বামী যখন প্রবাসে যায় জীবনের তাকিদে, বলে যায় আমাদের সুন্দর আগামির জন্যই আমার এই প্রবাস বরণ। সন্তানের ভবিষ্যৎ আছে, আছে কত স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রয়াস। আর সব কিছু বাস্তবায়ন করতেই আমাকে বিদেশে যেতে হবে। চলে যায় বিদেশে মেয়েটিকে দিয়ে যায় বিশ্বাস

আর কোলে রেখে যায় কলিজার টুকরো ছেলে বা মেয়ে। (আমি বলছি না সবাই একরকম কেউ কেউ এর ব্যতীক্রমও হয়) তখন থেকেই মেয়েটি সন্তানের ভালবাসা আর স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে চলতে থাকে সামনে। সেই স্বামী প্রবাসে গিয়ে যখন আরেক মেয়েকে বান্ধবী বানায়,

আস্তে আস্তে সেই বান্ধবীর সাথে গড়ে উঠে অন্য রকম সম্পর্ক, চুপে চুপে বিয়ে করে ফেলে সেই মেয়েকে। এরপর চার পাঁচ বছরপর দেশে এসে বিদেশে আর না ফেরার চিন্তা। ওদিকে যেই মেয়েকে বিয়ে করেছে সেই মেয়ে তো প্রতিমাসে বিশ হাজার বা ত্রিশ হাজার করে টাকা দিচ্ছে এসব পেয়ে

মা বা, বাবার কারো মনেই আসেনা কে টাকা দেয়? কেন দেয়? আস্তে আস্তে এভাবে আরো প্রায় দুই তিন বছর কেটে যায় প্রবাসে বসেও সেই মেয়েটি স্বামীর অপেক্ষায় থাকে আর লোকটা দেশে এসে আগের স্ত্রীকে ও সন্তানকে দেখে তো প্রায় ভুলেই গেছে প্রবাসে যেই মেয়েকে বিয়ে করেছে সেই মেয়ের কথা।

এইদুই বছরে আরেক ছেলে আসে। দুই পুত্রের জনক হয়েও লোকটা নিজের গোপন কথাটি কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেনি। হয়তো মেয়েটি যে, প্রতিমাসে টাকা দেয় সেই কারনে প্রবাস ফেরত লোকটার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে যেই স্ত্রী আছে তাঁর সবগুণ খুবই ভাল, মন মেজাজ খুবই ঠান্ডা প্রকৃতির,

স্বামী খুবই রাগি ধরনের লোক, তাই মেয়েটা কখনোই স্বামীর উপর দিয়ে কোন কথাই বলেনা। লোকটা মেয়েটার এই সরলতাকে কাজে লাগিয়ে আরেক বিয়ে করে প্রবাসে গিয়ে। প্রথম বউই না ছাড়! দিয়েছে দ্বিতীয় বউ কোন ছাড়ই! দেবেনা কারন সে শিক্ষিত, চাকুরীজীবি, চঞ্চলা প্রকৃতির স্বভাব,

সে তো তিন বছরের মত অপেক্ষা করে ঠিকানা মতে এসে পৌছে গেছে। অনেক মাল ও কয়েক লাখ টাকা নিয়ে এসেই তিনজন দেবর, শশুর, শাশুড়ী, ননদ, সতিন বাদে সতিনের দুই ছেলে সবারই জন্য এটা সেটা উপহার দিয়ে মুখ বন্ধ করে ফেলেছে। কি আশ্চর্য ঘটনা একটি মেয়ে প্রায় আট দশ বছর ধরে সংসার করে দুই সন্তানের জননী

হয়েও তাঁর অবস্থান ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে আর অপরদিকে আরেক মেয়ে মাত্র কয়েক বছরের পরিচয়ে গোপনে বিয়ে করে, সে এসে বাড়ির মোটামুটি সব দখল করে নেয়। যেই মেয়েটি তাঁর জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিলো সেই মেয়েটি কি পেল? এখন এই মেয়েটির হয়েছে মরন জ্বালা একদিকে স্বামী, সংসার, সন্তান,

আর অন্যদিকে সতিন মেয়েটি না পারছে সব ছেড়ে চলে যেতে আর না পারছে এখানে ভাল থাকতে, নিজের আপন স্বামী, যার জন্য বিদেশে যাওয়ার সময় নিজের গহনা বিক্রি করে প্লেন ভাড়া যোগাড় করে দিয়েছিল সেই মেয়েটির এই দশা? তার ভাগ্যের এই নির্মম পরিহাস? কে দেবে এই প্রশ্নের জবাব?

মেয়েটা বাপের ভিটাতেও ফিরে যেতে পারছেনা কারন বাবা মা এই বছর খানেক আগে মারা গিয়েছে এখন ভাইয়েরা যার যার মত করে চলছে কে মরন পর্যন্ত টানবে এই মেয়েকে? আবার আত্মহত্যাও করতে পারছে না কারন আত্মহত্যা মহাপাপ। এমনই কঠিন সময়পাড় করছে সেই মেয়ে, যা ভাষা দিয়ে বুঝানো যাবেনা।

সতিনকে খাটের উপর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে এই যুগে এমন সতিন নেই আগের যুগে ছিল কিনা আমার জানা নেই। মেয়েটির যা ক্ষতি হবার তা তো হলই বরং আরো বেশি হল গয়না গাটি সব বিক্রি করে স্বামির হাতে তুলে দিয়ে। লোকটা যে এত কঠিন ভাবে আরেক বিয়ে কি করে করল? মেয়েটি ভাবতেই পারছেনা।

কি করবে এই মেয়ে? সন্তান ফেলে চলে যাবে? নাকি এভাবেই এখানে থেকেই আজীবনই এই যন্ত্রনা বুকে নিয়েই কাটাবে? কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারছেনা সে। নিরবে শুধুই কাঁদছে, মনের সব কষ্ট যেন কান্নার রুপ নিয়ে দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। কথায় বরে গরীব হওয়া মহা পাপ, নয়তো

আজকে যদি মেয়েটির বাবা মা বেঁচে থাকতো বা বাবার বাড়িতে ধনাঢ্যতা থাকতো তবে কোন ভাবেই এই মেয়ে এখানে ধুঁকে ধুঁকে মরতো না। বাবা মা কোন না কোন পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করতেন। আজকে শুধু হৃদয় ক্ষতের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে সে। বুকে নিয়ে সোনার টুকরো দুই ছেলে যারা এখনো বুঝেনি জীবনের মানে কি?

কেনই বা মা কাঁদছে? কিন্তু ছোট ছোট দুই ছেলেই মায়ের চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর বলছে মা তুমি কি কাঁদছো? আমি চোখের পানি মুছে দেই, মাসুম দুই শিশু মায়ের দুচোখে গড়িয়ে পড়া পানি গুলো ওদের কচি হাতে মুছে দিচ্ছে কিন্তু এতে মায়ের কান্নার জোর যেন আরো বেড়েই চলেছে।

বাস্তব বিষয় গুলো কখনো কখনো এতই কঠিন হয়ে পড়ে যে, শান্তনা বা নরম কোন ভাষাই থাকেনা কি দিয়ে শান্তনা দিবে? নারীর জীবনে এই হয়তো সবচেয়ে বড় ক্ষতের চিহ্ন, এটাই সবচেয়ে জ্বালাময় সময়। নারী সবকিছুর ভাগ দিতে পারে কোন নারীই তার স্বামির ভাগ কাউকে দিতে চায়না যদিও সে বৃদ্ধ হয়ে যায়।

এই মেয়েটিকে কি ভাষা দিয়ে শান্তনা দেয়া যায় আমার তা জানা নেই, শুধু বলবো এরকম ঘটনা যেন পৃথিবীতে আর কারো না ঘটে। আর কোন নারী যেন এভাবে দুমরে মুচড়ে না মরে। আর কারো জীবনে যেন নিরব কান্না এসে জোড়ো না হয়। পৃথিবীতে আর কেউই যেন বিশ্বাসের ঘরে আগুন না দেয়।

বিষয়: বিবিধ

১৮৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File