গত সপ্তাহে অনূদিত মসজিদে নববীর খুতবা।
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:১৪:০৩ দুপুর
#খতিব: শায়খ আব্দুর বারী আস-সুবাইতি।
#বিষয়: সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে ইসলামের উৎসাহ।
জন্মের পর থেকে মানুষের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। কখনো সে শিশু আবার কখনো সে কিশোর, এরপর সময়ের ব্যবধানে যৌবন পাড়ি দিয়ে সে পৌছে যায় বার্ধক্যে। সময়ের এই পরিবর্তন-পরিবর্ধনে মানুষ স্বপ্ন দেখে সুন্দর পৃথিবীর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার, এবং এ জন্য সে বিভিন্ন প্লান-প্রোগ্রাম করে, যাতে সে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীতে মহান আল্লাহর বিধানগুলো পালনের পাশাপাশি আপনি আনন্দময় জীবন যাপন করবেন বা আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে সুন্দর সুন্দর ছক আঁকবেন এতে ইসলাম বাঁধা দেয় না, বরং ভবিষ্যত জীবন গঠনে এ ধরণের ‘তাখতীতকে’ ইসলাম সাধুবাদ জানায়। তবে এই জায়গায় সাধারণত মানুষ ভুল করে।
মানুষ তাঁর ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিষয়কে নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ধারস্থ হয় শিরকি পথে। গণক ও যাদুকর সহ অদৃশ্য ও অজানা বিষয়ের সন্ধানের দাবিদার বিভিন্ন ভন্ড ও খারাপ মানুষের আশ্রয় নেয়। এমনকি জিন জাতির আশ্রয়ও মানুষ গ্রহণ করে, যা ইসলাম কখনোই স্বীকৃতি দেয় না।
মহান আল্লাহ বলেন : “হে নবী আপনি বলুন : “গায়েব” বা অদৃশ্য ও অজানা বিষয়ের সন্ধান পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। (সূরা নামল,৬৫)।
অন্য এক আয়াতে বলেন পাঁচটি বিষয়ে মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারে না,
“নিশ্চয়ই কিয়ামাতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ুতে কি আছে তা তিনিই জানেন।
কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। সব বিষয়ে অবহিত”। (সূরা লোকমান ৩৪)।
এই জন্য অদৃশ্য ও অজানা বিষয়ের কেউ দাবি করতে পারবে না এবং যারা দাবি করে তাদের ধারস্থও হওয়া যাবে না।
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন : “যে ব্যক্তি গণকের কাছে ভবিষ্যতের কোন বিষয়ে জানতে চায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোন নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না”।
অন্য এক হাদিসে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন : “যে ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং তার কথা বিশ্বাস করে সে যেন রাসূল (সা.) এর আনিত ইসলাম ধর্মকে অবিশ্বাস করল।
মানুষের মানবিক চাহিদা থাকে যে সে ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চায়। কখন কি হবে না হবে জানতে কৌতুহোলী মন বারবার উঁকি দেয়, যাতে ভবিষ্যতের চিন্তা করে বর্তমান জীবনে প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়। ইসলাম মানুষের এ কৌতুহোল কে বাঁধা দেয় না। যেমন আমরা হযরত ইউসুফ আ. এর জীবনী থেকে তা জানতে পারি যে, তিনি মহান আল্লাহর সাহায্যে তৎখালীন মিশরের দূরাবস্থার সন্ধান দিয়েছিলেন এবং নির্দিষ্ট একটি প্লানের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্যে জাতি কে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন।
অনুরূপভাবে রাসূল (সাঃ) এর জীবনীতেও আমরা তা লক্ষ্য করতে পারি যে তিনি ইরশাদ করেন। ইসলামের এমন একটা সময় আসবে যে একজন মানুষ “ছানআ” থেকে “হাদরেমাওত” পর্যন্ত একা ভ্রমণ করবে অথচ তাঁর মনে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ভয় কাজ করবে না।
এ জন্য ভবিষ্যত বিনির্মাণে অবৈধ ও অসত্য পথে না গিয়ে আমরা আল্লাহর রাসূলের পথ অনুসরণ করি। কেননা রাসূলই (সা.) আমাদের জন্য একমাত্র আদর্শ।
মহান আল্লাহ বলেন : “আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ”। (সূরা আহযাব ২১)।
রাসূল (সাঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন এক অসভ্য জাতিকে সভ্য করার জন্য। এ জন্য তিনি প্ল্যান করেছেন। ছক এঁকেছেন।
বিনিময়ে সুন্দর একটি সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এ জন্য আমাদেরও প্রতিটি ভাল ও কল্যাণমূলক কাজে ছক এঁকে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে একটি প্ল্যান আপনার কাজকে অনেক সহজ করে দিবে। যাদের প্ল্যান নেই তাঁদের কাজে সফলতার মাত্রা অনেক কম। ভবিষ্যত জীবন গঠনে সুন্দর প্ল্যান ও সুউচ্চ টার্গেট না থাকলে উল্লেখ যোগ্য জীবন গঠন সম্ভব নয়। দেখা যায় নিষ্ফল জীবনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মহান আল্লাহর উপর ভরসাহীন হয়ে যায় এবং তাঁর সম্পর্কে নানাবিধ হতাশায় ভোগে যা একজন মানুষ কে কুফর পর্যন্ত নিয়ে যায়। ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতেই ব্যর্থ জীবনের গ্লানি টানতে হয়।
তবে এটাও মনে রাখতে হবে আমাদের পথ ও পাথেয় সীমিত। নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমার নেই। কারণ আমি একজন মুসলিম। এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে তাঁরই ইবাদত করি।
কিছু মানুষ আছে যারা পার্থিব জগতকে সাজাতে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে পরকালকে ভুলে যায় অথবা নিজের শারীরিক ও সাংসারিক অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যায়। এ জন্য প্রতিটি বিষয়ের অধিকার নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। এবং সময় ও নিজের শারীরিক বিষয়সহ যাবতীয় দিক বিবেচনা করতে হবে।
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন: পাঁচটি বিষয়কে অন্য পাঁচটি বিষয়ের উপর গনীমত মনে কর। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনতা, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতা, দারিদ্রের পূর্বে ধনাঢ্যতা, ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময় এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনের মূল্যায়ণ কর।
অবশেষে আমরা যেভাবেই জীবনটা অতিবাহিত করি সর্বদা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে পরকালের হিসাব-নিকাশের কথা। ভাল কিছু করে যেতে পারলে পুরুস্কার হিসেবে আল্লাহর জান্নাতে স্থান পাবো অন্যথায় কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন: সাতটি বিষয়ের সওয়াব মৃত্যুর পরও আমাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। পরকালের চিন্তা করে আমরা এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে পারি।
“যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম্ শিক্ষা করেছেন অথবা কোন নদী খনন করেছেন অথবা কোন কূপ খনন করেছেন অথবা কোন বৃক্ষ রোপণ করেছেন অথবা কোন মসজিদ নির্মাণ করেছেন অথবা কাউকে একটি কুরআন দান করেছেন অথবা কোন সু-সন্তান রেখে গেছেন যে তাঁর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে।
পরকালের কঠিন দিবসে এ সব বিষয় মানুষের নাজাতের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের ছায়াতলে থেকে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার তাওফিক দান করুন। সাথে সাথে শির্ক ও বিদাতযুক্ত বিষয়ে সতর্ক থেকে এড়িয়ে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব ভালো লাগলো পড়ে। সুন্দর শেয়ারিং।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন