"তাকদ্বীরের স্তর বা পর্যায় সমুহ চারটি"

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২০ মার্চ, ২০১৭, ০৮:৩৯:৪০ রাত

তাকদ্বীরের স্তর বা পর্যায় সমুহ চারটি; যার উপর কুরআন ও সুন্নায় অসংখ্য দলীল প্রমাণাদি এসেছে আর আলেমগণও তার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

প্রথম স্তরঃ অস্তিত্ব সম্পন্ন, অস্তিত্বহীন, সম্ভব এবং অসম্ভব সবকিছু সম্পর্কেআল্লাহর জ্ঞান থাকা এবং এ সবকিছু তাঁর জ্ঞানের আওতাভুক্ত থাকা। সুতরাং তিনি যা ছিলো এবং যা হবে, আর যা হয়নি, যদি হতো তাহলে কি রকম হতো তাও জানেন। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণীঃ "যাতে তোমরা বুঝতে পারো যে, আল্লাহ্ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং জ্ঞানে আল্লাহ্ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন" [সূরাহ আত-ত্বালাকঃ ১২] সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (সঃ) কে মুশরিকদের সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ তারা কি কাজ করতো (জীবিত থাকলে) তা আল্লাহই ভালো জানেন'" [বুখারী:১৩৮৪, মুসলিম: ২৬৫৯]

দ্বিতীয় স্তরঃ ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত কিছু ঘটবে সে সবকিছু মহান আল্লাহ্ কর্তৃক লিখে রাখা। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ "আপনি কি জানেন না যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহই ভালো জানেন। এসবই এক কিতাবে আছে; নিশ্চয়ই তা আল্লাহর নিকট সহজ। [সুরাহ্ আর-হাজ্জঃ৭০] আল্লাহ্ তা'য়ালা আরো বলেনঃ আমরা তো প্রত্যেক জিনিস এক স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত করেছি" [সূরাহ্ ইয়াছিনঃ১২] পূর্বে বর্ণিত 'আব্দুল্লাহ্ ইবনে 'আমর ইবনুল 'আসের হাদীসে একথাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'য়ালা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি জগতের তাকদ্বীর লিখে রেখেছেন। [মুসলিম:২৬৫৩] তাছাড়া অন্য হাদীসে এসেছে, ওলীদ ইবনে উবাদাহ বলেন, আমি আমার পিতাকে অসিয়ত করতে বললে তিনি বললেন, 'আমি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যখন প্রথমে কলম সৃষ্টি করলেন তখন কলমকে বললেন. লিখ। তখন থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা হবে সে মূহুর্ত থেকে কলম তা লিখতে শুরু করেছে। ' হে প্রিয় বৎস! তুমি যদি এটার উপর ঈমান না এনে মারা যাও তবে তুমি জাহান্নামে যাবে। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩১৭] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, ঐ পর্যন্ত কেউ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষন চারটি বিষয়ের উপর ঈমান না আনবে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক্ক ইলাহ নেই এটার সাক্ষ্য দেয়া। আর আমি আল্লাহর রাসূল (সঃ)। আল্লাহ্ আমাকে হক্ক সহ পাঠিয়েছেন। অনুরুপভাবে সে মৃত্যুর উপর ঈমান আনবে। আরো ঈমান আনবে মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের। আরো ঈমান আনবে তাকদ্বীরের ভালো-মন্দের উপর। [তিরমিযী: ২১৪৪]

তৃতীয় স্তরঃ আল্লাহর ইচ্ছাঃ তিনি যা চান তা হয়, আর যা চান না তা হয়না। মহান আল্লাহ বলেনঃ "তাঁর ব্যাপার শুধু এতটুকুই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন, তিনি তখন তাকে বলেনঃ 'হও' ফলে তা হয়ে যায়'। [সূরাহ্ ইয়াছিনঃ৮২] মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ "সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তোমরা কোন ইচ্ছাই করতে পারো না।" [সূরাহ্ আত-তকওয়ীরঃ২৯] হাদীসে নবী করিম (সঃ) বলেছেনঃ "তোমাদের কেউ যেন একথা না বলে যে, হে আল্লাহ! যদি আপনি চান আমাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! যদি আপনি চান আমাকে দয়া করুন, বরং দোয়া করার সময় দৃঢ়ভাবে করো; কেননা আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তা-ই করেন, তাঁকে জোর করার কেউ নেই" [বুখারী: ৬৩৩৯, মুসলিম: ২৬৭৯]

চতুর্থ স্তরঃ আল্লাহ্ কর্তৃক যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করা ও অস্তিত্বে আনা এবং এব্যাপারে তাঁর পূর্ণ ক্ষমতা থাকা। কেননা তিনিই সে পবিত্র সত্তা যিনি সমস্ত কর্মী ও তার কর্ম, প্রত্যেক নড়াচড়াকারী ও তার নড়াচড়া, এবং যাবতীয় স্থিরিকৃত বস্তু ও তার স্থিরতার সৃষ্টিকারক। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ আল্লাহ্ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সবকিছুর কর্মবিধায়ক" [সূরাহ্ আয-যুমারঃ৬২] আল্লাহ্ তা'য়ালা আরো বলেনঃ "প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা কর তাও'। [সূরাহ্ আস-সাফফাতঃ৯৬] রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেন, "একমাত্র আল্লাহ্ ছিলেন, তিনি ব্যতীত আর কোন বস্তু ছিলোনা, আর তাঁর আরশ ছিলো পানির উপর এবং তিনি সবকিছু লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন, আর আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন"। [বুখারী: ৩১৯১]

তাই তাকদ্বীরের উপর ঈমান বিশুদ্ধ হওয়ার জন্যে এ চারটি স্তরের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। যে কেউ তার সামান্যও অস্বীকার করে তাকদ্বীরের উপর তার ঈমান পূর্ণ হবেনা।

তাকদ্বীরের উপর ঈমানের উপকারিতা: তাকদ্বীরের উপর ঈমান যথার্থ হলে মু'মিনের জীবনের উপর তার যে, বিরাট প্রভাব ও হিতকর ফলাফল অর্জিত হয়, তম্মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ কার্যোদ্ধারের জন্য কোন উপায় বা কৌশল অবলম্বন করলেও কেবলমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করবে; কেননা তিনিই যাবতীয় কৌশল ও কৌশলকারির নিয়ন্তা। যখন বান্দা এ কথা সত্যিকার ভাবে উপলদ্ধি করতে পারবে যে, সবকিছুই আল্লাহর ফয়সালা ও তাকদ্বীর অনুসারেই হয় তখন তার আত্মিক প্রশান্তি ও মানষিক প্রসন্নতা অর্জিত হয়।

উদ্দেশ্য সাধিত হলে নিজের মন থেকে আত্মম্ভরিতা দূর করা সম্ভব হয়। কেননা আল্লাহ্ তাঁর জন্য উক্ত কল্যাণ ও সফলতার উপকরণ নির্ধারণ করে দেয়ার কারনেই তার পক্ষে এ নেয়ামত অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, তাই সে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হবে এবং আত্মম্ভরিতা পরিত্যাগ করবে। উদ্দেশ্য সাধিত না হলে বা অপছন্দনীয় কিছু ঘটে গেলে মন থেকে প্রশান্তি ও পেরেশানিভাব দূর করা (তাকদ্বীরে ঈমানের কারনে) সম্ভব হয়; কেননা এটা আল্লাহর ফয়সালা আর তাঁরই তাকদ্বীরের ভিত্তিতে হয়েছে। সুতরাং সে ধৈর্য ধারণ করবে এবং সওয়াবের আশা করবে। [উসুলুল ঈমান ফি দাওয়িল কিতাবি ওয়াস-সুন্নাহ্]

আল-কুরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর) ( ২য় খন্ডের সূরাহ্ আল-ক্বামারের ৪৯ নং আয়াতের তাফসীর থেকে নেয়া)।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File