Rose Rose শিকারী- মুস্তাফা লুতফী আল-মানফালুত্বী Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৬ মার্চ, ২০১৭, ০৫:৪৩:২৬ বিকাল

শিক্ষনীয় লেখাটি পড়ে আমার ভালো লেগেছে ও অন্তরে অল্পে তুষ্ট থাকার প্রতি অনুপ্রেরণা অনুভব করছি। আপনারাও পড়ে দেখেন আপনাদের অন্তরে অল্পে তুষ্ট থাকা ও যা নেই তা নিয়ে হা-হুতাশ করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন ইন-শা-আল্লাহ্। লেখাটি সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি আপনি পড়ুন আপনার প্রতিবেশী বা বান্ধবী বা স্বজনদেরকে শেয়ার করুন। সবাইকে জাযাকুমুল্লাহ্।

আমার বন্ধু বলেন, একদিন সকালে আমি আমার ঘরের আঙিনায় বসেছিলাম; এ সময় একজন জেলে একটি জালে বড় একটি মাছ নিয়ে প্রবেশ করল। সে আমার কাছে মাছটি পেশ করল; আমি দর-দাম না করে তার নির্ধারিত মূল্যেই কিনে ফেললাম। দেখতে পেলাম, সে খুবই খুশি হয়েছে। সে বলল, “আল্লাহ আপনার প্রতি ইহসান করুক; আপনাকে যেমন বিত্তের মাধ্যমে সুখী করেছেন তেমনি চিত্তেও সুখী করুন।” আমি তার এই দোয়ায় যারপরনাই আনন্দিত হলাম। তাকে বললাম, “অর্থ-বিত্তের সুখ ছাড়া আর কোনো সুখ আছে কি?” সে মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “যদি অর্থ থাকলেই মানুষ সুখী হত তাহলে আমি হতাম সবচেয়ে দুর্ভাগা ও অসুখী ব্যক্তি হতাম।”

আমি বললাম, “তুমি কি নিজকে সুখী ও সৌভাগ্যবান মনে কর?”

সে বলল, “হ্যাঁ, অবশ্যই। কারণ আমি আমার রিযিকের উপর সন্তুষ্ট, আমার জীবনযাত্রা নিয়ে তৃপ্ত। কোনো কিছু না পেলে বিরক্ত হই না আবার কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আমার মনে আফসোসও আসে না। তাহলে আপনিই বলুন, কীভাবে আমার অন্তরে অসন্তুষ্টি এবং অতৃপ্তি আসবে?”

আমি বললাম, “কী বল তুমি? তুমি কীভাবে নিজেকে সুখী মনে করো অথচ তোমার পায়ে জুতা-খড়ম কিছু নেই; এমনকি তোমার শরীরে কয়েক টুকরো ময়লা কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই।”

সে বলল, “যদি সন্তুষ্টি ও তৃপ্তি বলতে অন্তরের সুখ-শান্তিকে বুঝায় আর অসন্তুষ্টি বলতে অন্তরের বেদনাকে বুঝায় তাহলে আমি তো সুখী।

আর যদি সুখ-শান্তির অন্য কোনো সংজ্ঞা আপনাদের কাছে থাকে তাহলে আমি তা বুঝি না।”

আমি বললাম, “ধনী ব্যক্তিদের জামা-কাপড়, দালান-কোঠা, যান-বাহন দেখলে কি তোমার মনে লোভ জন্মায় না?”

সে বলল, “এগুলো সবই আমার কাছ তুচ্ছ ব্যাপার; এরা এ সব কিছু পেয়ে যতটা সুখী হয়েছে আমি এ সব কিছু না পেয়ে তার থেকে বেশি সুখী। আর যদি আমি আমার দৃষ্টিশক্তিকে আনন্দ ও সুখ দিতে চাই তাহলে আমি প্রতিদিন সকালে আমি আমার জাল নিয়ে বের হয়ে নদীর তীরে যাই। সেখানে আকাশ, নদীর পানি, সবুজ তৃণভূমি দেখে উপভোগ করি। কিছুক্ষণ পরই আলো ছড়াতে ছড়াতে স্বর্ণের তৈরী ঢালের মত সূর্য উদিত হয়। পরিবেশ তখন নীরব-নিঃশব্দে থাকে। আমি আমার জাল ফেলে আপন মনেও স্বপ্নের জাল বুনতে থাকি। হঠাৎ হঠাৎ হাতে থাকা জালে টান অনুভব করলে দেখি যে কোনো একটি মাছ নড়াচড়া করছে। তখন সেই মাছ তুলি; এভাবে সারা দিনে যতটা মাছ আমার জীবিত। এরপর প্রশান্তির ঘুম ঘুমিয়ে যাই। আমার কোনো রেশমি কাপড়ের প্রয়োজন হয় না— আবার কোনো কোমল বিছানারও প্রয়োজন হয় না। এভাবেই, মানুষের মধ্যে আমার অর্থ-বিত্ত কম থাকলেও চিত্তে আমি সুখী এবং সন্তুষ্ট।

আমার এবং ধনীব্যক্তির মধ্যে কোনো পার্থক্যই নেই; তবে আমাকে দেখে মানুষ সম্মান দেখানো জন্য দাঁড়িয়ে যায় না—এটিই একমাত্র পার্থক্য। মানুষ আমাকে দেখে দাঁড়াক বা বসুক, আকাশে ভেসে যাক বা পানিতে ডুবে যাক তাতে আমার কিছু আসে যায় না। মানুষের সাথে আমার তো কোনো সম্পর্কই নেই—শুধু আমি যেই রবের ইবাদত করি, যার একত্ববাদে বিশ্বাস করি তার সন্তুষ্টির জন্য যে সম্পর্ক তাই তো ধারণ করি। আর এ দৃঢ় বিশ্বাস আমার অন্তরে প্রশান্তি এনে দেওয়া ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। আমি আমার ভালো-মন্দ ভাগ্যের উপর বিশ্বাস করি; এ জন্য ভালো কিছু হলে অত্যাধিক খুশিও হই না আবার মন্দ কিছু হলে খুবই অসন্তুষ্ট হই না। হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতবারই কাঁধে জাল নিয়ে নদী তীরে মাছ শিকারে রওনা হই ততবারই আমার অন্তরে সন্দেহ দানা বাঁধে— আমি কি কিছু বহন করে আনতে পারব নাকি আমাকেই বহন করে আনা হবে?

বিশ্ব চরাচর তো একটি সাগরের মতই।

আর মানুষেরা এই সাগরে বিচরণশীল মাছগুলোর মত। মৃত্যু ফেরেশতা— সে তো একজন শিকারী, তার জাল প্রতিদিন ফেলে, যাকে ধরার তাকে ধরে আর যাকে ছেড়ে দেওয়ার তাকে ছেড়ে দেয়। আজকে যে তার কাছ থেকে বেঁচে গেছে সে আগামীকাল বেঁচে যাবে না। সুতরাং, আমি যার মালিক নই তা নিয়ে কেন ঈর্ষা করব; যে বিষয়ের উপর নির্ভর হওয়া যায় না তার উপর আমি কেন নির্ভরশীল হব।”

আমার বন্ধু বলেন, আমার মনে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জন্ম নিল। আমি তার বিশুদ্ধ চিন্তায় বিমুগ্ধ হলাম; তার সুখ-শান্তিকে ঈর্ষা করলাম। আমি তাকে বললাম, “সব মানুষই তো সুখ খোঁজে কিন্তু সুখ পায় না। এ কারণে মানুষের মনে একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে, জীবনে অসুখী থাকা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে তুমি কীভাবে বিশ্বকে সুখী বলবে অথচ বিশ্বের সকল মানুষ অসুখী।”

সে বলল, “না। মানুষ তার সৃষ্টিগতভাবেই সুখী। বরং অসুখ ও অসন্তুষ্টি সে নিজের উপরই টেনে আনে। অর্থের প্রতি তার লোভ যত তীব্র হয় ততই তার হা-হুতাশ ও কষ্ট বেড়ে যায়।

সে মনে করে যেন তার মনে আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়া জীবনের একটি অধিকার। কিন্তু যখন তার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয় না তখন সে নির্যাতিত ব্যক্তির মত আর্তনাদ করে ওঠে। সে তার যুগ নিয়ে সবসময় ভালো ধারণা পোষণ করে। কিন্তু যখন তার অর্থ-কড়ি বা সন্তান-সন্ততি কোনো অসুবিধায় পতিত হয় তাহলে সে তীব্র দুশ্চিন্তায় পতিত হয় ও ব্যথায় ব্যথিত হয়। অথচ সে যদি সময়কে পরীক্ষা করে দেখত তাহলে সে বুঝতে পারত যে, মানুষের হাতে যা কিছু আছে সবই আমানত—যা নির্ধারিত সময়ের পরই ফেরত নেওয়া হবে।

মানুষ সবচেয়ে বেশি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয় অন্তরের দিক থেকে; বাহ্যিক দিক থেকে নয়। কারণ, হিংসুকের চোখ যখনই কোনো ব্যক্তির দিকে পড়ে, প্রতিশোধপরায়ণ ব্যক্তি যখনই দেখতে পায় যে সে তার শত্রুর প্রতিশোধ নিতে পারছে না, লোভী যখনই দেখতে পায় যে সে তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ করতে পারছে না, অত্যাচারী যখনই নির্যাতিত ব্যক্তির আকুতি ও বদ-দোয়া শুনতে পায় অথবা অত্যাচারের ফল পায় তখন তাদের মন আরও ব্যথিত হয়।

এমনিভাবে খারাপ কাজ যারা করে - মিথ্যাবাদী, চোগলখুর, গীবতকারী- প্রত্যেকেই এই ফলভোগী।

যে ব্যক্তি সুখ খুঁজতে চায় সে যেন নিজের দেহের ভিতরে যে আত্মা আছে তার মাঝেই খুঁজে দেখে— অন্যথায় সে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হতভাগা যদিও সে আসমান-যমীনের সকল ধন-সম্পদ জমিয়ে রাখে।

আমার বন্ধু বলেন, শিকারী তার কথার এ পর্যায়ে উপনীত হলে দাঁড়িয়ে গেল; সে তার জাল ও লাঠি তুলে নিয়ে বলল, “আপনাকে আল্লাহর হাতে আমানত হিসেবে রেখে যাচ্ছি। আর আপনার জন্য সেই দোয়াই করি যা আমার নিজের জন্য পছন্দ করি; আর তা হলো, আল্লাহ আপনাকে যেমনি বিত্তের সুখ দিয়েছেন তেমনি চিত্তের সুখ দান করুন।

সূত্র: Abdullah Mojumder-এর ফেইসবুক পাতা থেকে সংগৃহীত।

বিষয়: বিবিধ

১০৭৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382140
০৬ মার্চ ২০১৭ বিকাল ০৫:৫৩
সত্যের বিজয় লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ! মনটা অনেক প্রশান্ত হয়ে গেল আপু। আসলে না পাওয়ার বেদনা সবচেয়ে বেশী অনুভব হয়।
০৯ মার্চ ২০১৭ রাত ১২:৫৯
315922
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!‍ নিজের অবস্থান থেকে নিম্মে তাকালেই আমাদের অল্পে তুষ্টি আসবে আর সব কাজে ধৈর্য পাওয়া যাবে। জাযাকুমুল্লাহ্
382141
০৬ মার্চ ২০১৭ রাত ১০:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৯ মার্চ ২০১৭ রাত ১২:৫৯
315923
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!‍ জাযাকুমুল্লাহ্
382159
০৮ মার্চ ২০১৭ বিকাল ০৫:৪৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam , beautiful
০৯ মার্চ ২০১৭ রাত ০১:০০
315924
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!‍ আপুনি আপনার মন্তব্যে সত্যিই খুব উৎসাহ পাই মনের মাঝে। দোয়া করবেন আমাদের জন্যে। আপনার জন্যেও দোয়া। জাযাকুমুল্লাহ্

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File