"আগামিতে হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারিদের জন্যে"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৬:১৫:১৫ সন্ধ্যা
সতর্কতার জন্যে এই লেখনী। আপনি নিজে আপনার পিতা মাতা, প্রতিবেশি আত্মীয়-স্বজন বন্ধ-বান্ধব কেউ না কেউ হজ্জে যাচ্ছে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয়তো অনেকেই বুকিং দিয়েছেন বা দিবেন। মানুষ হজ্জ ও ওমরাহ পালন করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে। আর এই ইবাদতটা মৌলিক ইবাদত গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই পরামর্শ স্বরুপ আপনারা ভালো করে যাচাই বাছাই করে হজ্জ ও ওমরাহ এর বুকিং দেবেন। যেন হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারিগণ এখানে এসে কষ্টের মধ্যে না পড়েন। এবার ২০১৫- ২০১৬ সালের হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারিদের কষ্ট স্ব-চোক্ষে অবলোকন করলাম। হাজীগণের মধ্যে বিশেষ করে বাঙালি হাজীদের কষ্টে যেন গাছের পাতা ঝরেছে। কষ্টের কয়েকটা উল্লেখ করা যেতে পারে।
১/ নোংরা পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা।
২/ এমন খাবার দেয় যা বাঙালিরা খেতে পারেনা। স্বভাবতই বাঙালিরা ঝাল-মশলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেয়ে অভ্যস্ত কিন্তু এখানের মুয়াল্লিমরা মাছ গোশত দিলেও সেটা সাধারন লবন দিয়ে সেদ্ধ করার কারনে হাজীগণ থেকে পারেনা। অথচ তারা দেশেই হাজীদের থেকে খাবার টাকা নিয়ে নেন।
৩/ হাজীদেরকে বেশি সময় হারামে অবস্থান করার পরিবর্তে খাবারের জন্যে নামাজ আদায় করেই হাজীগণ দৌড়াতে থাকে খাবারের জন্য, দেরি হলে খাবার পাবেনা এই ভয়ে।
৪/ কয়েকজন হাজীদের সাথে কথা হলো তারা বলল মাগো একরুমে দশবারোজনকে একসাথে থাকতে দিয়েছে একটি টয়লেট সিরিয়াল ধরে ধরে বিরক্ত। সব কাজে শুধু দৌড়াতে হয়। খাবারের জন্য দৌড়াতে হয়, গোসলের জন্যে দৌড়াতে হয়, টয়লেটে যাবার জন্যে ও একই অবস্থা। অযু করতেও একই অবস্থা। মাগো জীবনে এমন পরিবেশে থাকি নাই। তাদের কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম। কয়েকজনে তো বলেই ফেলল এত কষ্ট আর হজ্জে আসবোনা।
৫/ আমাদের দেশে প্রচলিত আছে যে মাণের বেয়াই সে মাণের চাটাই। ( মানে হলো অনেকেই অল্প টাকায় হজ্জ করতে আসেন যে কারনে এই সমস্যা গুলোর সম্মুক্ষিন হন।)
৬/ মুয়াল্লিম নামে যিনি হাজী পাঠান তার অজ্ঞতার কারনে অনেক হাজী কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েন। মুয়াল্লিম শব্দের অর্থ না জেনেই মুয়াল্লিম সেজে বসে আছেন।
সমস্যা সমাধানের জন্য যা করা যেতে পারে।
১/ হজ্জ ওমরাহ এর বুকিং দেয়ার আগে সে ট্রেভেল এজেন্সি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
২/ থাকার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত হয়ে নিন।
৩/ হজ্জ ওমরাহ করতে তো খরচ হবেই এজন্য তো বলা আছে সামর্থ থাকলে হজ্জ করার কথা। যেহেতু খরচ করতেই হবে জেনে শুনে করুন।
৪/ যাদের মাধ্যমে হজ্জে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে খাবারের মান জেনে নিন। কারন বাঙালিরা শুধু ভর্তা দিয়েও খেতে পারে। কিন্তু শুধু সেদ্ধ করা খাসি তারা খেতে পারেনা। তাদের তাতে রুচি হয়না।
৫/ আসার আগে জেনে নেবেন, তিনতারা, চারতারা, পাঁচতারা হোটেল না হোক যেন এক টয়লেট ব্যবহারকারি অনেকজন না হয়। অন্তত একটি টয়লেটে দুইজন ব্যবহার করতে পারে বা বেশি হলে তিনজন। যদি বারোজনকে একটা দেয়া হয় কি কঠিন অবস্থার সম্মুক্ষিন চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো কেমন কষ্টের?
৬/ সবার আগে মুয়াল্লিমকে হজ্জের ব্যাপারে ট্রেনিং নিতে হবে। হজ্জ ওমরাহ্ এর মাধ্যমে ইনকাম হয় ঠিক আছে। কিন্তু হজ্জ ওমরাহ্ কে ব্যবসা মনে করে হাজী এনে খোজ খবর না নেয়া কোন জ্ঞানী মানুষের কাজ হতে পারেন। আমি বলছি না যে সব মুয়াল্লিম একই রকম। তবে বিশেষ করে গ্রামের হাজীদের যারা আনেন তাদের বেশীর ভাগই অজ্ঞ মুয়াল্লিম।
৭/ প্রত্যেক হাজী গ্রুপের সাথে মুয়াল্লিম মানে বিজ্ঞ লোক থাকা জুরুরী। কারন যে কোন হাজীই এখানে নতুন। তাদেরকে পথ চিনিয়ে দেয়া, সময় মত খাবারের ব্যবস্থা, কারন খাবার নেয়ার জন্যে অনেক হাজী এশার সালাত পড়েই দৌড়াতে থাকেন। বলেন তাড়াতাড়ি না গেলে খাবার পাওয়া যাবেনা। পরে অনেকেই আর রাতে মসজিদে আসেন না। আবার অনেকে খাবার তুলে রেখে আসেন। কয়েকজনে দেরি করাতে একবারে না খেয়েই থেকেছেন। এমনটি যাতে না হয়।
৮/ আর মহিলা হাজীদের সাথে একজন বিজ্ঞ মহিলা যার হজ্জের বিষয়াদির ব্যপারে সঠিক জ্ঞান আছে এমন একজন সাথে থাকা জুরুরী। যিনি বয়স্ক হাজীদের খোজ-খবর নেয়া ও চলার পথে সহযোগীতা করতে পারবেন।
৯/ আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হজ্জের সঠিক বিষয়গুলো দেশ থেকেই শিখে আসা। কারন আপনি হজ্জ করবেন আল্লাহর জন্যে। আর তা যদি সঠিক পদ্ধতিতে না হয় তবে তো সবই শেষ। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালনা করুন।
** হজ্জের সকল কার্যক্রম মক্কাতে তাই মক্কার কষ্টও বেশি। মহান আল্লাহর সাহায্যেই তা মানুষ সহজে পালন করতে পারে। তবে অধিকাংশ হাজী মদিনাতে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। মদিনাতে হাতে গোনা কয়েকটা পরিবার আছে যারা এই মাসগুলোতে হাজীদের জন্যেও ও বিশেষ করে বাঙালি হাজীদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করেন যার যার সাধ্যানুযায়ী। কেউ হালকা খাবার থেকে শুরু করে যেমন চা, মুরি, বিস্কিট, এবং খাবারের তালিকাতে যা থাকে তার ব্যবস্থা করেন। আর এটা শুধু করেন লিল্লাহ হিসেবে। আমি বাঙালি মহিলা হাজীদেরকে দেখলাম তারা শুধু সাদা ভাত আর ভর্তা পেলে এত খুশি হয় যা লিখে শেষ করা যাবেনা। তাই হাজী পরিবার গুলোকে আরো সচেতন হতে হবে হাজী পাঠানোর পূর্বে।
** আমার কয়েকজন পরিচিত মুরুব্বী এবছরেই হজ্জে এসেছিলো। তাদেরকে বাসায় দাওয়াত করলে তারা এসেছিলো। তারা গরুর গোশত, খাশির গোশত, সাগরের মাছ কিছুই খেলোনা। তারা প্রায় সকলেই ডাল আর ভর্তা খেলো। আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা তো কিছুই খেলেন না। রান্না ভালো হয়নি? তারা বলল মাগো এই দেড়মাসে মনে হলো আজকেই পেট ভরে তৃপ্তিসহকারে খেয়েছি। আর মদিনাতে আসার পর যেন প্রশান্তি পেলাম।
** সাধারনত সৌদি বাদশাহ এর পক্ষ থেকে আল্লাহর মেহমানদের প্রতি খেয়ালা রাখা হয়। তাদেরকে পথে পথে ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা আছে, আছে হালকা খাবার ও এদেশীয় মুগরী ভাতের ব্যবস্থা। যদিও তারা ভাষা বুঝেনা।
** আমাদের বাঙালির প্রতি বাঙালিরাই খেয়ালা রাখেনা। তারা মনে করে সৌদিতে এনে দিয়েছি আমাদের কাজ শেষ। দেশে আমাদের প্রতিবেশী মুরুব্বী কয়েকজন হাজীকে ফেলে একজন মুয়াল্লিম তো পালিয়েই গেলো। শেষে তারা রেগে গিয়ে বললো দেশে গিয়ে তার খবর করে ছাড়বো। আমরা বললাম কাকা থাক ক্ষমা করে দেন। তিনি জবাবে যা বললেন আমরা অবাকঃ আমাদের সাথে এমন করেছে শায়েস্তা না করলে পরে আরো করবে। তাই চরম শিক্ষা দিয়ে দিলে পরে কারো সাথে এমন করবেনা।
হজ্জ এবং ওমরাহ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোই ইবাদত। তাই মহান আল্লাহ এই মুয়াল্লিম নামের দুষ্টোদের হাত থেকে পবিত্র হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারিদের হেফাজত করুন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন