Rose Rose "অনন্তসাথীর সন্ধানে"২য় ও শেষপর্ব Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ০৬:২২:৪৭ সন্ধ্যা

ওয়াহিদার পক্ষে শুধু ছোট চাচা আর ছোট মামা তারা তিনজনে পরামর্শ করে ছোট চাচাকে পাঠিয়ে দেয় বরের গ্রামের বাড়িতে। তিনি খোজ নিয়ে আসেন ছেলের বাবা নেই। মা বিছানায় শায়িত (খাওয়া-দাওয়া প্রাকৃতিক কাজ সব করে দিতে হয়)। একা বাড়ি ভাইয়েরা যার যার মতো আলাদা বাড়িতে থাকে। একভাই শশুরের একমাত্র জামাই হওয়ায় সে ঘরজামাই থাকে। আর সবচেয়ে বড়কথা হলো ছেলে বিবাহিত। ওয়াহিদা তো শুনেই অস্থীর। কি বলেন ছোটচাচ্চু? হাঁ রে মা আমি ঠিকই বলছি। সে বউয়ের নাকি অন্যকারো সাথে সম্পর্ক আছে। ছেলে ইতালিতে থাকে ঠিক আছে মাকে দেখার জন্য বিয়ে করবে। আগের বউটাও এভাবেই ছিলো যেই কারনো বউ অন্যকারো সাথে সম্পর্ক করার সুযোগ পেয়েছে। তাই তারা সে বউকে বিদায় করে একদিনে বা একসপ্তাহে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছোট চাচ্চুর কথা শুনে তো ওয়াহিদার পরিবারের সবার যেন টনক করেছে। আর সে তার মাকে বলেছিলো এ বিয়ে হবেনা মা কারন আমি এস্তেখারার নামাজ পড়ে যখন ঘুমিয়েছি তখন স্বপ্নে দেখেছি কোন একটা গন্ডগোল হয়ে বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। তখন মা বলেছিলো তুই তো অলি হয়ে গেছিস তাই সব জানিস। আমাকে স্বপ্নে আল্লাহ ঠিকই ইঙ্গিত করেছেন। অনেক কাঠ_খড়ী পোঁড়ানোর পর সে বিয়ে ভেঙে যায়। এবার কিছুটা শান্তনা পায় সে অন্তত পরিবারের লোকেরা সামান্য হলেও বুঝেছে তাকে। সে আবারো মনোযোগ দেয় তার পড়াশুনায়। আর কোন প্রস্তাব আসলেই সে এস্তেখারার নামাজ পড়ে মাকে জানায় তার ফলাফল। তখন থেকে মা ও মেয়েকে চিনে নেয় তার মেয়ে সত্যিই আল্লাহর প্রিয়বান্দি। এরপর আরেক বিয়ের প্রস্তাব আসে সে ইস্তেখারা করে মাকে জানায়, মাগো এই ছেলেটা পাগল মাথায় সমস্যা আছে। পরে খোজ নিয়ে জানা যায় সত্যিই সে পাগল। তবে সবসময় পাগলামি করেনা। মাঝে মাঝে করে। যখন পাগলামি করে তখন দা বটি নিয়ে মানুষকে কোপাতে চায়।

এভাবে প্রায় একশতের উপরে বিয়ের প্রস্তাব আসে আবার ফিরে যায় কোনটাকে ফেরাতে হয়। চলতে চলতে সেই বছর শেষ হয়ে ২০০৯ সাল শুরু হয়। এমাসে ও কয়েকটা প্রস্তাব আসে কিন্তু সবাই তার বিয়ে নিয়ে বিরক্ত তাই বাসায় আসার অনুমতি দেয়না ছেলে পক্ষকে। মার্চমাস শুরু এবার সেই ২০০৬সালের প্রস্তাবটা আবার আসে। মা নিষেধ করে দিলেও বরের বাবা জোর করেন শুধু একবার দেখতে দেন। এরপর বিয়ে হবে না হয় আমরা আর আসবো না আপনাদের কাছে। কণের মা রাজি হয়। পরদিন শুক্রবার বিকেল চারটায় আসার কথা থাকলেও তিনটায় চলে আসে বরপক্ষ। বর কণেকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে। এবিয়ের কথা যেহেতু অনেকদিন আগেই হয়েছিলো তাই ছেলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় কাল সকালেই কণের গ্রামের বাড়ির খোজ নেবে। কথামতো কাজ করে। এরপর বিয়ের আয়োজন। ওয়াহিদারও পছন্দ হয় কিন্তু সে রাতে এস্তেখারার নামাজ পড়ে আল্লাহ্ থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে মত প্রকাশ করবে। সে রাতে তাই করে কিন্তু কোন ফল আসেনা। এভাবে শনিবার রবিবার রাতে সে ফলাফল পায় এখানে বিয়ে হলে তার জন্য কল্যাণময় হবার ইঙ্গিত। আর রবিবার রাতেই বরপক্ষ জানায় কালকেই আমরা আংটি পড়াতে আসবো। সোমবারে আংটি পড়ানো হলো। কণের চাচারা কয়েক জনে বাঁধ সাধলো কম মোহর নিয়ে। ওয়াহিদা তার বড়চাচাকে ডেকে বলল কাকা বেশি মোহর ধরার মাঝে কোন কল্যাণ নেই। সেটা শুধু কাগজে কলমেই থাকবে। আসল হলো অল্প মোহর ধরে পরিশোধ করে দেয়ার মাঝে। চাচাজান বলল এতে তুই ঠকে যাবি না? সে বলল নবী (সঃ) সুন্নত মতো মোহরে আমি খুশি আছি। চাচাজান বললেন আলহামদুলিল্লাহ্। তারপর বর কণেকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয় কণের দাদি থাকেন কণের সাথে।

বর বলে আল্লাহ্ আমাদেরকে কবুল করলে ইনশা-আল্লাহ আমরা শুরুতেই বেবী নিবো। ওয়াহিদা তো লজ্জায় মাথা নুইয়ে আছে। বর জানতে চায় তোমার কোন ইচ্ছা থাকলে জানাতে পারো। সে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে আমাকে সবসময় পর্দার মাঝে রাখতে হবে। বর বলে ইনশা-আল্লাহ্ আমি সবসময় তোমাকে পর্দাতে রাখার চেষ্টা করবো। এভাবেই বিয়ের সানাই বাজলো ওয়াহিদার। মাঝের বুধবার বাদ দিয়ে পরের বুধবার বিয়ে। এই বর যেন তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপহার। খল নায়কের ভূমিকা নিয়ে এসে যেন দুনিয়ার জাহান্নাম থেকে ও মানুষের দেয়া কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছে। শুকরিয়া স্বরুপ সে কয়েক রাকাআত নফল নামাজ করে সে রাত সে নামাজেই কাটিয়ে দেয় বেশি সময়। এমন কি আশ-পাশের ভাড়াটিয়া থেকে শুরু করে ছাব্বিশটা পরিবারের মহিলাগণ সবাই নফল নামাজ আদায় করেন তার জন্য। কেউ দুই রাকাআত কেউ আরো বেশী তবে বেশীরভাগই বিশ রাকাআত করে নফল নামাজ আদায় করেন। সত্যিই আল্লাহর অনুগ্রহ যখন আসে তখন কেউ তাতে বাঁধ সাধতে পারেনা। বুধবারে বিয়েটা হয়েই গেলো ওয়াহিদার। ইসলামই জীবন বাস্তবে ধারণ করে সে অনেক যুদ্ধ করেছে। পর্দা মানার জন্য সে অনেক যন্ত্রনা সহ্য করেছে। আজকে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম প্রতিদান পেয়ে খুশি হয়েছে। সে তার মনের মতো দ্বীনদার ফরহেজগার স্বামী পেয়েছে। আল্লাহ্ যেন তাদের উভয়কে পৃথিবীতে উত্তম সঙ্গী ও অনন্তের সাথী করেন ও উত্তম প্রতিদানে সম্মানিত করেন।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379778
১৮ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:২৬
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ

১৯ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:০১
314402
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! ভাইয়া কি মন্তব্য করেছেন? নাকি প্রচারের কাজ করছেন?
379781
১৮ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৯ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:০২
314403
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ ভাইয়া। কেমন আছেন?
২০ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:৪০
314412
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ওয়ালাইকুমআসসালাম। এখন মোটামুটি ভাল আছি
379787
১৮ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০২
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহুপরম স্নেহাশীলা ছোট বোন।


গল্পে গল্পে শিক্ষণীয় একটি বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপিত করার জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান।


অনেক ভাল লাগলো।
১৯ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
314401
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু্! আপনার আগমনে মনটা পুলকিত হয়ে গেলো। জাযাকুমুল্লাহ্

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File