আশুরার রোজা রাখা প্রসঙ্গেঃ
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৩৫:৩১ দুপুর
আশুরার রোজা প্রসঙ্গেঃ আজকে জু'মারদিন। ৬ই আশুরা হিজরী ১৪৩৮ ৭ই অক্টোবর ২০১৬ ইং। সোমবার ইংরেজী ১০ তারিখ ও মঙ্গলবার ইংরেজী ১১ তারিখ (বাংলাদেশের সন হিসেবে ১১ ও ১২ ইংরেজী তারিখে) আশুরার দুটি রাখা আবশ্যক। এই দিনের একটি রোজা রাখলে পিছনের এক বছরের গুনাহ্ মাফ হয়। তবে এই দিনটির সাথে মিলিয়ে অর্থাৎ আগের দিন অথবা পরের দিন মোট দুটি রোজা রাখতে হবে। রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ। ইনশা আল্লাহ্ আমরা সকলেই যেনো এই আমলটি করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দিন। আমিন।
** আশুরার ফজিলত
ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মাদানী
আয়েশা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমাদ্বান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানেরা আশুরার দিন রোজা রাখত। আর এ দিন কাবা ঘরের গিলাফ পরানো হতো। যখন রমাদ্বানের রোজা ফরজ করা হলো তখন রাসূল (সঃ) এ ঘোষণা দিলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আশুরার দিনের রোজা রাখার সে রোজা রাখবে। আর যে রোজা পরিহার করতে চায় সে তা পরিহার করবে (বুখারি-১৫১৫, ১৭৯৪)
এ দিনের মর্যাদা উপলব্ধি করে ইহুদী সমাজও এ দিনকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করত এবং বিশেষভাবে এ দিনের রোজাব্রত পালন করত। রাসূল (সাঃ) থেকে প্রসিদ্ধ সাহাবি ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) যখন মদিনায় আগমন করেন তখন তিনি ইহুদীদের দেখতে পেলেন তারা আশুরার দিবসে সিয়াম পালন করছে, তাদের জিজ্ঞেস করা হলো এ দিনের রোজা সম্পর্কে; তারা বলল এ দিন আল্লাহ তায়ালা মুসা (আঃ) ও বনী ইসরাইলকে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের ওপর বিজয় দান করেছেন, তাই আমরা এ দিনের সম্মান ও মহত্ত্বের জন্য রোজা পালন করি। তাদের প্রতি উত্তরে রাসূল (সাঃ) এরশাদ করলেন আমরা তোমাদের চেয়ে মুসার উত্তম অনুসারী, অতঃপর তিনি এ দিনের রোজা রাখতে সাহাবিদের নির্দেশ দেন (বুখারি-৩৭২৭)।
আশুরার দিনে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত হচ্ছে, রাসূল (সাঃ)কে এ দিনের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ দিনের রোজা পালন গত এক বছরের গুনাহগুলোর কাফফারাস্বরূপ’(সহি মুসলিম-১১৬২)।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে, আশুরার দিবসের রোজা প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই রাসূল (সাঃ) এ দিন ছাড়া অন্য কোনো দিন ফজিলতের উদ্দেশ্যে রোজা পালন করতেন। আর এ মাস অর্থাৎ রমাদ্বান ছাড়া অন্য কোনো মাসে তিনি রোজা পালন করতেন।’ সুতরাং এ কথা প্রমাণিত হলো যে, রাসূল (সাঃ) এ দিনের রোজা রাখাকে ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ মনে করতেন।
সহি মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘আশুরার দিবসের রোজা পালনে আমি গত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে আশা পোষণ করি’ (সহি মুসলিম-২৮০৩)।
সহি বুখারি ও মুসলিমে সালামাহ ইবনে আকওয়া (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বনী আসলাম গোত্রের এক লোককে নির্দেশ দিলেন সে যেন লোকদের মাঝে এ ঘোষণা করে দেয়, যে আজ সকালে খেয়েছে সে যেন দিবসের বাকি অংশ রোজা পালন করে, আর যে ব্যক্তি কিছু খায়নি সে যেন রোজা রাখে। কেননা আজকের এ দিন আশুরার দিন।
অপর বর্ণনায় রুবাই বিনতে মু’আওয়ামের সূত্রে এসেছে, রাসূল (সাঃ) আশুরার দিন সকালে মদিনার আশপাশে আনসারদের গ্রামগুলোতে লোক পাঠিয়ে এ ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি আজ রোজা রেখেছে সে রোজা সম্পন্ন করবে, আর যে ব্যক্তি রোজা রাখেনি সে দিবসের বাকি সময় রোজা পালন করবে। অতঃপর আমরা এ দিন রোজা রাখতাম এবং আমাদের ছোট সন্তানদেরও রোজা রাখতে বাধ্য করতাম। এ দিন রাসূল (সাঃ) -এর নির্দেশের গুরুত্ব এতে এটাও প্রমাণিত হয় যে, এ দিনের রোজা রাখার নির্দেশ রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দিতেন।
রমাদ্বান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পর রাসূল (সাঃ) আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ তুলে নেন এবং এ ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করেন। বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) আশুরার রোজা রেখেছেন এবং রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তবে যখন রমাদ্বানের রোজা ফরজ করা হলো তিনি এ নির্দেশ পরিহার করেন। তাই আবদুল্লাহ ইবনে উমর তার নির্ধারিত নফল রোজার দিন না হলে আশুরার এ দিনের রোজা রাখতেন না।
এসব হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, নবী (সাঃ) রমাদ্বানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার সিয়াম পালনকে নির্দেশ শিথিল করে নেন। এরপর এ দিনের রোজা বাধ্যতামূলক ছিল না। এ দিনের রোজা পালন মুস্তাহাব বা সুন্নাতের পর্যায়ে রয়ে যায়। তার পরও উমর ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আউফ আবু মূসা, কায়স ইবনে সাদ, ইবনে আব্বাস প্রমুখ থেকে এ দিনের রোজা রাখা প্রমাণিত হয়।
নবী (সাঃ) তাঁর জীবনের শেষ দিকে এ দিনের সাথে অন্য এক দিনসহ রোজা রাখার সঙ্কল্প করেন। যেহেতু ইহুদী সম্প্রদায় শুধু এ দিনের রোজা পালন করে থাকে, তাই তিনি তাদের বিরোধিতা করণার্থে এ দিনের সাথে আরো এক দিন রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। সহি মুসলিমে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল (সাঃ) আশুরার দিবসে রোজা রাখলেন এবং এ দিনের রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন, সাহাবি (রাযিঃ)গণ তাকে জানালেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এ দিনকে ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা মর্যাদা দিয়ে থাকে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ আগামী বছর এলে আমরা নবম তারিখেও রোজা রাখব। বর্ণনাকারী বলেন, আগামী বছর আসার আগেই রাসূল (সঃ)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) এরশাদ করেছেন, যদি আমি আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি অবশ্যই আশুরার সাথে নবম দিনও রোজা রাখব। মুসনাদ ইমাম আহমাদে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন, আশুরার দিবসে তোমরা রোজা রাখো, আর এ ক্ষেত্রে ইহুদীদের বিরোধিতাকারী আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন মিলিয়ে দুইটি রোজা রাখো।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) জাদুল মা’আদ-এ উল্লেখ করেন, ‘আশুরার দিবসের রোজার তিনটি গ্রেড রয়েছে। সর্বোচ্চ গ্রেড হচ্ছে এর আগে ও পরে মোট তিনটি রোজা রাখা; তারপর হচ্ছে ৯ ও ১০-এ দুই দিনের রোজা রাখা। বেশির ভাগ হাদীস এভাবে এসেছে। এরপর হচ্ছে কেবল ১০ তারিখের রোজা রাখা। এ বক্তব্য থেকে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, কেবল ১০ তারিখের রোজা রাখা মাকরুহ নয়।
সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
১০৯৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বুবু, জাযাকাল্লাহু খাইর
আমল করার জন্য সুন্দর শিক্ষণীয় বিষয়টি শেয়ার করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন