♣বিষয়: আরাফার দিন রোযা রাখা। #কেন, #কিভাবে, #কোনদিন এই রোযা রাখবেন?
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৬:৩৮:৪১ সন্ধ্যা
জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ হল আরাফার দিন, (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল)। এই দিনে হাজীগণ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হন বলে এই নামকরণ হয়েছে। এই দিনের রোযা রাখার ফজিলত প্রসঙ্গে মহানবী (সা জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেছিলেন-
♦‘‘আরাফার দিনের রোযা বিগত এক বছরের এবং আগামী এক বছরের কৃত পাপরাশিকে মোচন করে দেয়।’’ [মুসলিম, তিরমিজী]
♦সাহল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন রোযা রাখে তার উপর্যুপরি দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়।’’ [সহিহ তারগীব]
♦রাসূল (সা আরো বলেছেন- "আরাফার দিনের রোযার সাওয়াব এক হাজার দিন রোযা রাখার সমান।" [তারগীব]
**কোনদিন আরাফার রোযা রাখবেন?
♣উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, এই দিনের রোযার কত ফজিলত। তাই আপনি হয়তো মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন এইদিন রোযা রাখবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো কোনদিন "ইয়াওমুল আরাফা"?
এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ আরাফার দিন। কেননা এই দিনই হাজীরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন। সেই হিসাবে এবার সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ আরাফার দিন।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যেহেতু আমরা সৌদি আরবের একদিন পিছনে, সেই হিসেবে অনেকে বলে থাকেন, আমাদের "ইয়াওমুল আরাফা" তাদের একদিন পর অর্থাৎ ১২ তারিখ।
কিন্তু বাস্তব কথা হলো, আমরা আগের দিন টিভিতে লাইভ দেখি যে, হাজীদের আরাফার ময়দানে অবস্থান চলছে, অথচ রোযা রাখি পরের দিন। তাহলে তো আরাফার দিনে আমাদের রোযা রাখা হলো না। কেননা আরাফার দিনতো আমাদের জন্য পরের দিন পর্যন্ত বসে থাকেনি।
তাই যেহেতু "ইয়াওমুল আরাফা" হাজীদের আরাফার ময়দানে অবস্থান করার সাথে সম্পৃক্ত, সেহেতু প্রসিদ্ধ উলামায়ে কেরাম সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে আরাফার রোযা রাখতে বলেছেন। সেই হিসেবে এবার আমাদের দেশেও #_রোযা_রাখতে_হবে_আরাফার_দিন
বিষয়: বিবিধ
২০৪১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এবিষয়ে অনেক মতই আছে, তবে আমার নিকট নিম্নের মতটিই অধিক যৌক্তিক ও সঠিক মনে হয়েছে।
আর সে হিসেবে আমাদের দেশের মানুষ সকলে সোমবার রোযা রাখবে।
হাদিছে এসেছে:
(صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده)
‘ইয়াওমে আরাফার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করবেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬২
‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ নয় জিলহজ্ব। এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। কারণ এই রোযা আরাফা বা উকুফে আরাফার আমল নয়; তা ঐ তারিখের আমল। ‘ইয়াওমে আরাফা’ হচ্ছে ঐ তারিখের (নয় যিলহজ্বের) পারিভাষিক নাম। যেহেতু ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রোকন হজ্বের প্রধান রোকন উকুফে আরাফা ঐ স্থানের তারিখ হিসাবে নয় যিলহজ্বে আদায় করা হয় তাই এ তারিখেরই নাম পড়ে গেছে ‘ইয়াওমে আরাফা’। একারণে যেসব আমল আরাফা বা উকূফে আরাফার সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং যিলহজ্বের নয় তারিখের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেগুলোকেও ‘ইয়াওমে আরাফা’র আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, নয় তারিখে বা ঈদের আগের দিন আমলটি করতে হবে।
এ প্রয়োগের কারণে (নয় যিলহজ্বকে ‘ইয়াওমে আরাফা’ বলা) আরাফা ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে তো কোনো বিভ্রান্তি হয় না, কিন্তু দূরত্বের কারণে ঐ অঞ্চলের সাথে যেসব অঞ্চলের তারিখের পার্থক্য হয় সেখানে-যারা এই প্রয়োগের সঠিক অর্থ সম্পর্কে অবগত নয় তাদের-বিভ্রান্তি ঘটে। যেমনটা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঘটেছে।
এ প্রয়োগের (ইয়াওমে আরাফা অর্থ নয় যিলহজ্ব) আরেকটি দৃষ্টান্ত ‘তাকবীরে তাশরীক’। এটি আরাফা বা উকুফে আরাফার বিশেষ আমল নয়। এটি শুরু হয় নয় যিলহজ্ব ফজর থেকে, অথচ যে দলীল দ্বারা নয় তারিখ থেকে তাকবীরে তাশরীক শুরু হওয়া প্রমাণিত তাতেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ শব্দই আছে। দলীলের আরবী পাঠ এই-
عن علي رضي الله عنه : أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة، إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق، ويكبر بعد العصر.
رواه ابن أبي شيبة في مصنفه وإسناده صحيح كما في الدراية.
আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৭৭, ৫৬৭৮
এখানেও কি ‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ নয় যিলহজ্ব করা ভুল?
দ্বিতীয়ত, গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা আছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর।
এটি প্রমাণ করে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ একটি তারিখের নাম, আর তা হচ্ছে নয় যিলহজ্ব, যেমন ‘ইয়াওমুন নাহর’ একটি তারিখের নাম, আর তা হচ্ছে দশ যিলহজ্ব। কোনো অঞ্চলের অধিবাসীরা যদি ঐ অঞ্চলের তারিখ অনুযায়ী ইয়াওমুন নাহরের অর্থ দশ জিলহজ্ব ধরে ইয়াওমে আরাফার এমন কোনো অর্থ করেন, যদ্বারা সেখানের তারিখ হিসেবে তা হয়ে যায় আট যিলহজ্ব, তাহলে সেটা হবে এক উদ্ভট, হাস্যকর ও ইজমা বিরোধী কথা। কারণ ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমুন নাহরের মাঝে আরেকটি দিন স্বীকার করে নেওয়া ইজমার সরাসরি বিরোধী।
তথ্যসূত্র- আল কাউছার
তবে এক্ষেত্রে আরেকটি কথা বলা উচিৎ তা হলো, অনেক আলেমই এই মত দিয়েছেন যে যেহেতু হাদিছে আরাফার দিন বলা হয়েছে তাই সে হিসেবে এই দিনটি আট তারিখ হলেও রোজা রাখা উত্তম। এতে আরাফার দিন হিসেবে রোজা হলো আবার নয় তারিখ হিসেবে এর পরদিন রোজা হয়ে গেলো। আবার জিলহজের আমলে ছালেহও বেশী হয়ে গেলো।
ইখতিলাফী বিষয়ে একপাক্ষিক যুক্তি সমাধান আনেনা!
‘ইয়াওমে আরাফা’ ও ‘ইয়াওমুন নাহর’ তারিখ দুটিতে 'আরাফা' ও 'নাহর' মূল বিষয়! যাকগে, নিজ নিজ বুঝমতে আমলে যদি ইখলাস ঠিক থাকে তবে আল্লাহতায়ালা উত্তম জাযআ-ই দিবেন ইনশাআল্লাহ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন