"আসুন একটু পিছনে ফিরে তাকাই"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২০ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:৩৭:৩৭ সকাল
হজ্জ কর্মসমূহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
তাওয়াফ: পবিত্র কুরআনে এসেছে: এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইলকে (আঃ) দায়িত্ব দিলাম যে তোমরা আমার ঘর পবিত্র করো তাওয়াফকারী ও ইতিকাফকারীদের জন্য।
এ আয়াত থেকে বুঝা যায় তাওয়াফ কা'বা নির্মাণের পর থেকেই শুরু হয়েছে।
وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ (সূরা আল বাকারা : ১২৫)
রামল:
রামল শুরু হয় সপ্তম হিজরীতে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ষষ্ঠ ‘হিজরীতে হুদায়বিয়া থেকে ফিরে যান উমরাহ আদায় না করেই। হুদায়বিয়ার চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী বছর তিনি ফিরে আসেন উমরা পালনের উদ্দেশ্যে। সময়টি ছিল যিলকদ মাস। সাহাবাদের কেউ কেউ জ্বরাক্রান্ত হয়েছিলেন এ বছর। তাই মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে পরস্পরে বলাবলি করতে লাগল, ‘এমন এক সম্প্রদায় তোমাদের কাছে আসছে ইয়াছরিবের (মদিনার) জ্বর যাদেরকে দূর্বল করে দিয়েছে।
শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাদেরকে (রাঃ) রামল অর্থাৎ আমাদের যুগের সামরিক বাহিনীর কায়দায় ছোট ছোট কদমে গা হেলিয়ে বুক টান করে দৌড়াতে বললেন। উদ্দেশ্য, মুমিন কখনো দুর্বল হয় না এ কথা মুশরিকদেরকে বুঝিয়ে দেয়া। একই উদ্দেশ্যে রামলের সাথে সাথে ইযতিবা অর্থাৎ চাদর ডান বগলের নীচে রেখে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রাখারও নির্দেশ করলেন তিনি। সেই থেকে রমল ও ইযতিবার বিধান চালু হয়েছে।
- عن ابن عباس رضي الله عنهما قال :قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم وأصحابه ، فقال المشركون : إنه يقدم عليكم قوم قد وهنتهم حمى يثرب ، فأمرهم النبي صلى الله عليه وسلم أن يرمـلوا في الأشواط الثلاثة .. وفــــــــــــي رواية زيادة : ارملوا ليرى المشركون قوتكم بخاري : 1602 ومسلم : 1262.
যমযমের পানি ও সাফা মারওয়ার সাঈ:
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘ইব্রাহীম (আঃ) হাজেরা ও তাঁর দুগ্ধপায়ী সন্তান ইসমাইলকে নিয়ে এলেন ও বায়তুল্লাহর কাছে যমযমের উপর একটি গাছের কাছে রেখে দিলেন। মক্কায় সে সময় মানুষ বলতে অন্য কেউ ছিল না। পানিরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না তখন সেখানে। এক পাত্রে খেজুর ও অন্যটিতে পানি রেখে ফিরে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলেন ইব্রাহীম (আঃ)। ইসমাইল (আঃ) এর মা তার পিছু নিলেন। বললেন, এই জনমানব শূন্য তৃণ-লতা-হীন ভূমিতে আমাদেরকে ছেড়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি একাধিকবার ইব্রাহীম (আঃ) কে কথাটা বললেন। ইব্রাহীম তার দিকে না তাকিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহ কি আপনাকে নির্দেশ করেছেন? হাঁ, ইব্রাহীম (আঃ) উত্তর করলেন। তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। হাজেরা ফিরে এলেন। ইব্রাহীম এগিয়ে চললেন।
তিনি যখন দু’পাহাড়ের মধ্য খানে সরু পথে প্রবেশ করলেন, যেখানে কেউ তাঁকে দেখছে না, তিনি বায়তুল্লাহর পানে মুখ করে দাঁড়ালেন! হাত উঠিয়ে এই বলে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আমার বংশধরকে শস্যবিহীন এক উপত্যকায় বসবাস করতে রেখে দিলাম, তোমার পবিত্র ঘরের সন্নিকটে। হে আল্লাহ যাতে তারা সালাত কায়েম করে। অতঃপর মানুষের হৃদয় তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দাও, এবং তাদের রিজিক দাও ফলের, হয়তো তারা শুকরিয়া আদায় করবে।
ইসমাইল (আঃ) এর মা তাকে দুধ পান করাতে থাকলেন। নিজে ওই পানি থেকে পান করে গেলেন। পাত্রের পানি শেষ হয়ে গেলে তিনি পিপাসার্ত হলেন। পিপাসা পেল সন্তানেরও। সন্তানকে তিনি তেষ্টায় কাতরাতে দেখে সরে গেলেন দূরে যাতে এ অবস্থায় সন্তানকে দেখে কষ্ট পেতে না হয়। পাহাড়সমূহের মধ্যে সাফাকে তিনি পেলেন সবচেয়ে কাছে। তিনি সাফায় আরোহণ করে কাউকে দেখা যায় কি-না জানার জন্য উপত্যকার দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন।
কাউকে দেখতে না পেয়ে সাফা থেকে নেমে এলেন। উপত্যকায় পৌঁছালে তিনি তাঁর নিজের কামিজ টেনে ধরে পরিশ্রান্ত ব্যক্তির মতো দ্রুত চললেন। উপত্যকা অতিক্রম করলেন। অতঃপর মারওয়ায় আরোহণ করলেন। মারওয়ায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখলেন কাউকে দেখা যায় কি-না। কাউকে দেখতে না পেয়ে নেমে এলেন মারওয়া থেকে। আর এ ভাবেই দু’পাহাড়ের মাঝে সাতবার প্রদক্ষিণ করলেন। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, এটাই হল সাফা মারওয়ার মাঝে মানুষের সা'ঈ (করার কারণ)। তিনি মারওয়ার ওপর থাকাকালে একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন, কেউ বলছেন, ‘থামো!’ তিনি আবারও আওয়াজটি শুনতে পেয়ে বললেন- শুনতে পেয়েছি, তবে তোমার কাছে কোনো ত্রাণ আছে কি না তাই বলো।
তিনি দেখলেন, যমযমের জায়গায় একজন ফেরেশতা তাঁর পায়ের গোড়ালি বা পাখা দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পানি বের হয়ে এল, তিনি হাউজের মতো করে পানি আটকাতে লাগলেন। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ ইসমাইলের মাতার ওপর রহম করুন। তিনি যমযমকে ছেড়ে দিলে, বর্ণনান্তরে-যমযমের পানি না ওঠালে, যমযম একটি চলমান ঝরনায় পরিণত হত।
ফেরেশতা হাজেরাকে বললেন, হারিয়ে যাওয়ার ভয় করো না, কেননা এখানে বায়তুল্লাহ নির্মিত হবে, যা নির্মাণ করবে এই ছেলে ও তার পিতা। আর আল্লাহ তার আহালকে ধ্বংস করেন না। -সূরা ইব্রাহীম : ৩৭
ঘটনাটি বিস্তারিত দেখুন সহিহ বোখারি : ১/৪৭৪-৪৭৫
উকুফে আরাফা:
আমরা সুনির্দিষ্ট স্থানের বাইরে উকুফে আরাফা করছিলাম। ইবনে মেরবা আনসারি আমাদের কাছে এলেন এবং বললেন, আমি আপনাদের কাছে রাসূলুল্লাহর প্রতিনিধি। তিনি বলেছেন: হজ্জের মাশায়ের—জায়গায় অবস্থান করুন—কেননা আপনারা আপনাদের পিতা ইব্রাহীমের ঐতিহ্যের ওপর রয়েছেন।
এর অর্থ ইব্রাহীম (আঃ) উকুফে আরাফা করেছিলেন, সে হিসেবে আমরাও করে থাকি।
- আবু দাউদ ও তিরমিযি : হাদিস নং (৮৮৩) আলবানি (রহঃ) এ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। আবি দাউদ গ্রন্থে বিশুদ্ধ বলেছেন (হাদিস নং ১৬৮৮)
হজ্জ, উমরাহ ও যিয়ারত গাইড হজ্জ: কর্মসমূহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ইসলামহাউজ.কম।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুয়া চাই আল্লাহ যেন কবুল করেন।
ভালো লাগল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন