"পশ্চিমাকাশে নতুন হেলাল"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৮ জুলাই, ২০১৬, ০২:২৮:০০ রাত
আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবছে নাবিলা আলহামদুলিল্লাহ আজ ত্রিশ রোজা পরিপূর্ন হলো। পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনার পর পৃথিবীর আকাশে চিকন বাঁকা চাঁদ উঠে ঈদের সুসংবাদ দিয়ে গেলো সন্ধ্যাতেই। আগামিকাল ঈদুল-ফিতর। চারিদিকে যেন আনন্দের জোয়ার বয়ে চলল সাথে সেমাই পায়েসের মন মাতানো মিষ্টি সু-গন্ধে মৌহিত আশ-পাশ। ঈদের আয়োজন এখন থেকেই শুরু হয়েছে। নাবিলার মনেও আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। সাথে কিছুটা হতাশার মিশ্রন। ঈদের এই আগমনে কি সবাই পুলকিত হতে পারে? সবাই কি এই আনন্দের অংশীদার হতে পারে? কারো না কারো তো এই ঈদের দিনেও বারোমাসের মতোই কষ্ট বিরাজমান তাদের কথা ভেবে নাবিলার সব আনন্দ যেন উবে গেলো। পরোক্ষনেই ভাবতে লাগলো প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ যাকাত ফিতরাহ্ সঠিকভাবে আদায় করতো তবে আর কেউই এই ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকতো না তবে কতই না মজা হতো। নাবিলার মনটা হঠাৎ করেই প্রফুল্লতা বোধ করল এই ভেবে যে, সে নিজে তো সঠিকভাবে যাকাত ও ফিতরাহ্ আদায় করতে পেরেছে আল্লাহ কবুল করুন। সে দু'চোখ বন্ধ করে মনের মাঝে উদয় হওয়া কথার প্রশান্তি যেন অনুভব করতে লাগলো।
ঈদ শুরু হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই। ঈদের রান্নাও প্রায় শেষ করে মধ্যরাতে রওয়ানা হলো মসজিদে নববীর দিকে। মনের অনেক অনেক না বলা কথামালা আল্লাহকে বলতে বলতে যেগুলো সারা রমাদ্বানেও বলে শেষ করতে পারেনি অন্তর্যামীর কাছে। সেই কথা গুলোই প্রার্থনাকারে বলতে ছুটলো আল্লাহ্ তা'য়ালার প্রিয় রাসূল (সঃ) এর মসজিদে তাকবীর ধ্বনী আওড়াতে আওড়াতে। ফজর শেষে অপেক্ষাতে রইল সূর্যদ্বয়ের সাথে মশগুল রইল প্রার্থনায়। হে আল্লাহ! তোমার দেয়া অফুরন্ত নেয়ামতপূর্ণ রমাদ্বানুল কারীম চলে গেল। আমরা কি পেরেছি সেই রমাদ্বানের সঠিক মর্যাদা দিতে? আমরা কি সম্পূর্ণ করতে পেরেছি এই মাসে নেকের কাজ করে গুনাহ ক্ষমা করাতে? নাবিলা মনে মনে দোয়া করতে থাকে আগামি রমাদ্বানকে যেন আরো গুরুত্ব ও মর্যাদার সাথে পালন করতে পারি তুমি আমাদেরকে হায়াতে ত্বয়্যীবাহ্ দান করো। প্রার্থনাতে রত থাকতে থাকতে কখন যে রাতের আঁধার কেটে পূবাকাশে ভোরের সূর্যদ্বয়ের আবির্ভাব হলো নাবিলা টেরই পায়নি। মসজিদে নববীর মিনার থেকে আওয়াজ আসতে থাকলো আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ্। মদিনার বাতাস যেন এই আওয়াজকে অনেকদুর থেকে দুরে নিয়ে যাচ্ছে কি মধুর সেই আওয়াজ ধ্বনী ভাষায় লেখা সম্ভব নয়।
নাবিলা মুয়াজ্জিনের সাথেই বলতে থাকলো তাকবীর ধ্বনী। শীতল বাতাস বয়ে গেলো বাতাসও যেন ঈদের সু-সংবাদ নিয়ে ব্যস্ত আজি। মনটাতে আরশে আজীমের পক্ষ থেকে প্রশান্তি অনুভব করতে থাকলো সে। দু'চোখের বারিধারা যেন মনের সকল কষ্ট আর গুনাহ সমূহকে ধুইয়ে দিয়ে যাচ্ছে। শুরু হলো ঈদের সালাহ্ জামাতের সাথে ঈদের সালাহ্ আদায় করে ইমামের সাথে মোনাজত করলো সবাই এ যেন এক পূর্ণতার অপরুপ দৃশ্য।
চোখে না দেখলে কল্পনাও করা সম্ভব না। মনের মাঝে অফুরন্ত প্রশান্তি নিয়ে বাড়ির দিকে চলল নাবিলার পরিবারের সকলে আল্লাহর আযাবারে ভয়ে ও আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম প্রতিদানের আশা বুকে নিয়ে। ইনশা-আল্লাহ্ মহান আল্লাহ উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করবেন সকল মু'মিন ও মু'মিনাতকে। মেহমান ও নাবিলা মেজবানের ভূমিকায় সুন্দর ভাবে কেটে গেলো ঈদুল-ফিতর। নাবিলা অবগত আছে ঈদের পরের দিন থেকেই শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার ফজিলত, নিয়ম ও এর মাধ্যমে কিভাবে পূর্ন এক বৎসরের ছওয়াব লাভ হয়। আপনারা কি জানেন কিভাবে তা লাভ হয়?
উত্তরে বলা যায়ঃ রাসূল (সঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি রমাদ্বানের রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখবে সে পূর্ন এক বৎসর রোজা রাখার ছওয়াব লাভ করবে। (সহীহ মুসলিম )
কি ভাবে পূর্ন এক বৎসরের ছওয়াব লাভ হয়? ইমাম ইবনু হাজার ফাতহুল বারী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বলেছেন, এক নেক আমল করলে দশ নেকি।
قال الله تعالى: من جاء بالحسنة فله عشر أمثالها ( سورة الأنعام)
তাই রমাদ্বানের এক মাসের রোজার বিনিময়ে দশ মাসের রোজা রাখার সমান ছওয়াব লাভ হয়। তাই বৎসর পূর্ন থেকে বাকি থাকে দুই মাস। বাকি দুই মাসের ছওয়াব শাওয়ালের ছয় রোজা রাখলে পূর্ন হবে। যেহেতু ছয় দিয়ে দশ কে গুন করলে ষাট দিন হয় অর্থাৎ দুই মাস। তাই শাওয়াল এর ছয় দিন রোজার মাধ্যমে পূর্ন এক বৎসরের রোজা রাখার সমান ছওয়াব লাভ হয়।
এ ছয় রোজা রাখার নিয়ম কি? ঈদুল ফিতর এর পরদিন থেকে শাওয়াল মাস শেষ হওয়ার আগেই যে কোন দিন থেকে শুরু করে এ ছয় রোজা রাখলে এ ছওয়াব লাভ হবে। এক সাথে বা একাধারে ছয় রোজা রাখা শর্ত নহে। তবে যথাসম্ভব দ্রুত ছয় রোজা রেখে শেষ করাই ভাল যাতে অবহেলায় এ নফল রোজা ছুটে না যায়। সে জন্য নাবিলার পরিবার আগামি কাল থেকেই শাওয়ালের রোজা শুরু করার ইচ্ছা করছেন। আপনারাও শাওয়ালের রোজা শুরু করবেন আগামি কাল থেকে?
নাবিলা তার শশুর-শাশুড়ী ও মা-বাবা ভাই বোন সকলকে শাওয়ালের রোজা রাখতে উৎসাহ দিতে থাকলো। নাবিলা ও তার শশুর পরিবার ও তার বাবার পরিবার সবাই মাহে রমাদ্বানের আনন্দ বুকে শাওয়ালের রোজা রাখার দৃঢ় ইচ্ছা বুকে আছে। আল্লাহ তৌফিক দিন নাবিলার পরিবার সহ সকল মানুষকে শাওয়ালের ছয়টি রোজা রেখে পূর্ণ একবছরের রোজার সওয়াবের অংশীদার হতে। একথাটি নাবিলা প্রতিবেশীদেরকেও জানায় যে, মাত্র ছয়টি রোজা রেখেই একবছরের রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। আপনারাও রাখতে পারেন এই রোজা। নাবিলার প্রতিবেশী একজন ভাবি এসেছেন জানতে মহিলাদের ভাঙা রোজা গুলো কিভাবে রাখবে? নাবিলা জানিয়ে দেয় যে, আগে ভাঙা রোজাগুলো রেখে তারপর শাওয়ালের রোজা রাখতে হবে। দেরী না করে তাড়াতাড়িই শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখা শুরু করা উচিৎ। অনেকের নিয়্যত থাকা সত্ত্বেও অবহেলা করে দেরী করে পরে শাওয়াল মাস শেষ হয়ে যায় কিন্তু তার জন্য শাওয়ালের ছয় রোজা তার ভাগ্যে জোটেনা।
জেনে রাখুন! যারা কেবল দুনিয়াতে আরাম আয়েশে ও পেট ভরে খাবার ও ভোগ বিলাসের চিন্তা করে তাদের জন্য পরকালে জান্নাত লাভ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আর যারা না খেয়ে রোজা রাখে, না ঘুমিয়ে তিলাওয়াত করে তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত পড়ে, শত কষ্ট সহ্য করে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করে ও যাবতীয় শির্ক বিদআতের প্রতিবাদ করে তাদের জন্য ইহকাল শান্তি ও পরকালে জান্নাত লাভ সহজ হবে ইনশাল্লাহ।
নাবিলার পরিবার সহ প্রতিবেশী আরো কয়েকটি পরিবারের সবাই মিলে শাওয়ালের রোজা পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মাহে রমাদ্বানের ইমেজ থাকতে থাকতে। নাবিলা বলে, মহান আল্লাহ আপনাদেরকে ও আমাদেরকে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার মন মানষিকতা দান করুন। আমিন বলতে বলতে নাবিলার প্রতিবেশী ঘরের দিকে পা বাড়ায়। বুকের ভেতর করে নিয়ে যায় শাওয়ালের রোজা পালনের অধীর আগ্রহ....................।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর একটি গল্পের মধ্যে ছাওয়াল মাসের রোযার কথা সকলকেই স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
অনেক ভাল লাগলো।
আপনার লেখা কিন্তু চাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন