"রমাদ্বান উপলক্ষ্যে ব্লগ আয়োজনের ৫ম পর্বে " এ'তেকাফ ও কিছু কথা"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৬ জুন, ২০১৬, ০৬:২৫:২৫ সন্ধ্যা
মু'মিন মু'মিনাত আজ সবাই আনন্দিত! গতরাত থেকেই শুরু হয়েছে ক্বিয়ামুল-লাইল। মসজিদে নববীতে এ'শা তারাওবী ও ক্বিয়ামুল-লাইল পড়া কতযে আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। গতপরশু থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে মসজিদে নববীর ভেতরাংশ (যেখানে বরাদ্ধ করা এ'তেকাফের জন্য) সেখানে উপস্থিত হয়। রাজ-কোষ থেকেই এ'তেকাফকারিদের জন্য সাহরী ও ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়। সময় স্বল্পতার কারনে বিষদাকারে লিখতে পারছিনা। তবে মদিনায় রমাদ্বান পালন করে খুবই আনন্দানুভব করছি। এত গরম তার মাঝেও যেন নবী (সঃ) সমজিদে গেলে প্রাণ জুড়িয়ে শীতল হয়ে যায়।
আর জুহরের নামাজের পর থেকে (সুফরাহ) বিছানো ইফতার আয়োজন চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা হয়তো। মনটা পুলকিত হয়ে যায় সবার কল্যাণের কাজে নেকী অর্জনের জন্য বিশেষ প্রতিযোগীতা হয়। এই যে সকলের কল্যাণের কাজে নিয়োজিত দেখলে কতই না ভালো লাগে। সবাই শুধু মানুষকে ইফতার করানোর জন্যে ডাকতে থাকে আসুন আমাদের দস্তরখানে আসুন। এখানে কে পাকিস্তানি কে আফগানি কে তর্কী কে সুদানী কে বাঙালি কে ইন্ডিয়ান বা কে ভিনদেশী এসবের কোন ভেদাভেদ নেই। শুধুমাত্র মহা মহীয়ান আল্লাহর সন্তুষ্টির অর্জনে সবাই একত্রে দানের হাত বাড়িয়ে আছে। কোন পরিচয়ের দরকার নেই এখানে শুধু একটিই পরিচয় সবাই মুসলমান আল্লাহর জন্য রোজা পালনকারি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই ইফতার করে ও করায়। মহান আল্লাহ তাদের এই দানকে কবুল করে নিন। কেউ কেউ যার যতটুকুন সামর্থ আছে সে সে অনুযায়ী দান করছে। কেউ কেউ পথে দাড়িয়ে শুধুমাত্র পানি দিচ্ছে। কেউ শুধুই খেজুর দিচ্ছে। আর কেউ কেউ (তামার, খুবজ, যাবাদী, আসীর) খেজুর, রুটি, টকদধী, জুস বা পানীয় দিচ্ছে। মহান আল্লাহ রমাদ্বান মাস সহ বছরের সবগুলো মাসে বেশী বেশী নেকী অর্জনের জন্য প্রতিযোগীতার মন-মানষিকতা তৈরি করে দিন।
গতকাল মাগরিব নামাযের মাধ্যমে এ'তেকাফের সময় শুরু হয়েছে। আসুন ই'তেকাফ সম্পর্কে জানি ও আমলের চেষ্টা করি।
☎ প্রশ্ন: এ‘তেকাফ এবং এ‘তেকাফকারীর বিধান কি?
উত্তর: এ‘তেকাফ হচ্ছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় আল্লাহ্র আনুগত্য করার জন্য মসজিদে অবস্থান করা। লাইলাতুল-কদর অনুসন্ধান করার জন্য এ‘তেকাফ করা সুন্নাত। আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোরআনে এদিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ করেন,
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
“মসজিদে এ‘তেকাফ করা অবস্থায় তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭) ছহীহ্ বুখারীতে প্রমাণিত আছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ‘তেকাফ করেছেন, তাঁর সাথে ছাহাবায়ে কেরামও এ‘তেকাফ করেছেন। এ‘তেকাফের এই বিধান শরীয়ত সম্মত। তা রহিত হয়ে যায়নি। ছহীহ্ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাদ্বানের শেষ দশকে এ‘তেকাফ করেছেন, এমনকি আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দান করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীরা এ‘তেকাফ করেছেন।”
★ ছহীহ্ মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাদ্বানের প্রথম দশকে এ‘তেকাফ করেছেন। তারপর দ্বিতীয় দশকে এ‘তেকাফ করেছেন। অতঃপর বলেন,
إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوَّلَ أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ ثُمَّ أُتِيتُ فَقِيلَ لِي إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ
“নিশ্চয় আমি রামাযানের প্রথম দশকে এ‘তেকাফ করে এই রাত্রি (লায়লাতুল কদর) অনুসন্ধান করেছি। তারপর দ্বিতীয় দশকে এ‘তেকাফ করেছি। অতঃপর ঐশী আগম কর্তৃক আমাকে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই উহা শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এ‘তেকাফ করতে চায়, সে যেন এ‘তেকাফ করে।” অতঃপর লোকেরা তাঁর সাথে এ‘তেকাফ করেছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘এ‘তেকাফ করা যে সুন্নাত সে সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে কোন মতবিরোধ আমার জানা নেই।’
★ তাই কুরআন সুন্নাহ্ ও ইজমার দলীলের ভিত্তিতে এ‘তেকাফ করা সুন্নাত।
★ এ‘তেকাফ করার স্থান হচ্ছে, যে কোন শহরে অবস্থিত মসজিদ। যেখানে জামাতে নামায অনুষ্ঠিত হয়। কেননা আল্লাহ্ বলেছেনঃ “মসজিদ সমূহে ই‘তেকাফ করা অবস্থায়..।” উত্তম হচ্ছে জুমআর মসজিদে এ‘তেকাফ করা। যাতে করে জুমআ আদায় করার জন্য বের হতে না হয়। অন্য মসজিদে এ‘তেকাফ করলেও কোন অসুবিধা নেই, তবে জুমআর জন্য আগে ভাগে মসজিদে চলে যাবে।
★ এ‘তেকাফ কারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, আল্লাহ্র আনুগত্যপূর্ণ কাজ তথা কোরআন তেলাওয়াত, যিকির, নফল নামায প্রভৃতিতে মাশগুল থাকা। কেননা এ‘তেকাফের উদ্দেশ্যই হচ্ছে এটা। মানুষের সামান্য কথাবার্তায় কোন অসুবিধা নেই বিশেষ করে কথা যদি উপকারী হয়।
★ এ‘তেকাফকারীর জন্য স্ত্রী সহবাস ও স্ত্রী সোহাগ বা শৃঙ্গার প্রভৃতি হারাম। মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ভাগে বিভক্তঃ
★ ১) জায়েয। শরীয়ত অনুমদিত ও অভ্যাসগত যরূরী কাজে বের হওয়া। যেমন জুমআর নামাযের জন্য বের হওয়া, পানাহার নিয়ে আসার কেউ না থাকলে সে উদ্দেশ্যে বের হওয়া। ওযু, ফরয গোসল, পেশাব-পায়খানার জন্য বের হওয়া।
★ ২) ওয়াজিব নয় এমন নেকীর কাজে বের হওয়া। যেমন, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরীক হওয়া। তবে এ‘তেকাফ শুরু করার সময় এসমস্ত কাজের জন্য বের হওয়ার যদি শর্ত করে নেয়, তবে জায়েয হবে। অন্যথায় নয়।
★ ৩) এ‘তেকাফের বিরোধী কাজে বের হওয়া। যেমন বাড়ী যাওয়া বা কেনা-বেচার জন্য বের হওয়া। স্ত্রী সহবাস করা। এ সমস্ত কাজ কোনভাবেই এ‘তেকাফকারীর জন্য জায়েয নয়।
★ ফতওয়া: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমিন ( #আরকানুল ইসলাম: 448 নং ফতওয়া)
বিষয়: বিবিধ
১১৫২ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে এতেকাফ এর সময় মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে মনে হয়্।
যারা ন্যায়ের কাজে প্রতিযোগিতা করে, তারা কতইনা ভাগ্যবান।
আপনিও সে ভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন।
জাযাকাল্লাহু খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন