"প্রবাসী! প্রবাসীর স্ত্রী ও প্রবাসী বাবা"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৩ জুন, ২০১৬, ০৬:২০:৩৭ সন্ধ্যা
লেখাটি লিখতে গিয়ে কিছু ঘটনা মনে পড়ে গেলো। ঘটনা ১মঃ শাহ আলম শহরে ষ্টীলের ব্যবসা করে। প্রতি পনেরোদিন পর বা কখনো মাসে একবার গ্রামে এসে দুইরাত থেকে আবার চলে যান। ছেলে শহর থেকে আসলেই মা এসে বউকে বলেনঃ যাও বউমা আমার ছেলে এসেছে তার পাশে পাশে থাকো দেখ কখন কি লাগে। বউ হাবীবা বলে, আম্মা হাতের কাজটা সেরে যাই শাশুড়ী বলে নাঃ আমার ছেলে যতক্ষন সময় বাড়িতে আছে ততক্ষন তুমি তার পাশে থাকো এদিকটা আমি আর আমার মেয়েরা দেখবো। বউ যেতে না চাইলেও শাশুড়ী ধমকের সুরে বলে যাও তুমি এখন আমার ছেলের সেবা করো।
ঘটনা ২য়ঃ কয়েকবছর পর রিয়াজ বিদেশ থেকে বাড়ীতে এসেছে। ভাই বিদেশ থেকে আসাতে রিয়াজের বোন ও তার জামাইকে নিয়ে বাপের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে। রিয়াজ চায় তার স্ত্রী তার সামনে থাকুক, কিন্তু শাশুড়ী তা চান না। কারনে অকারনে বউকে ব্যস্ত রাখেন নানা কাজ দিয়ে। আর নিজের মেয়েকে বলে জামাই বাবার পাশে পাশে থাক কখন কি লাগে খেয়াল রাখ। পরেরদিন ভোর বেলায় রিয়াজের মা নিজের মেয়েকে না ডেকে রিয়াজের বউকে সকালের চা-নাস্তা তৈরী করতে অর্ডার দেয়। এই হচ্ছে আমাদের দেশের মা-দের একচোখা বিচার। রিয়াজের মা-র উচিৎ ছিল ছেলের বউ ও নিজের মেয়েকে একসাথে চা-নাস্তা তৈরী করার নির্দেশ দেয়ার। আমাদের দেশের মা-রা নিজের মেয়ের সুখ নষ্ট করতে চায়না। কিন্তু ছেলের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করে অন্য মেয়ের সুখ নষ্ট করতে তৎপর থাকে। বউ-শাশুড়ীর আর শাশুড়ী বউয়ের দ্বন্দের কারনে বেশীর ভাগ সংসারে অশান্তি লেগেই আছে------------- ।
৩য় ঘটনাঃ (ধনী লোকের দুলালী কণ্যা আমার পূর্ব পরিচিত) একজন মেজিষ্ট্রেটের মেয়ে ও মেজিষ্ট্রেটের বউ। এবং উচ্চ শিক্ষিতা ধনীর দুলালী আর বউ ও হয়েছে ধনী পরিবারে সে কোন কাজ করেনা এমন কি শাশুড়ী ও কোন কাজ করতে বলেনা কারন কাজের লোক কয়েকজন আছে এবাড়িতে। (ছেলে পছন্দ করে বিয়ে করেছে) বউ আহামরি সুন্দরীও নয় তবু ও সে শাশুড়ীকে আম্মা বলে ডাকবেনা। তার কড়া কথা আমার মা একজনই যিনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন। এই শাশুড়ী বলেনঃ আমার ছেলের বউ তো এখনো ছোট সে বুঝেনা কার সাথে কি রকম ব্যবহার করতে হবে সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বউ তো বুঝেনা তাই আমিই আমার বউকে সব শিখিয়ে নেবো। তাই বউ আম্মা না ডাকলেও শাশুড়ী সুন্দর করে বউমা বলে ডাকে। বাজার থেকে শশুর যখন কোন সদাই আনে শাশুড়ীর কাছে দিলে তিনি বলেন আমাকে নয় বউমাকে ডেকে তার হাতে দাও সেই সবাইকে আপ্যায়ন করবে। বউমা বলে ডেকে বলে তোমার শশুর দেখ কি নিয়ে আসছে, বউকে ডাকলে সে বলে এই কাজ আমাদের বাসায় চাকরানিরা করে। শাশুড়ী বলে ও তাই? ঠিক আছে এখান থেকে নিয়ে যাও তোমার কোনটা পছন্দ। সে তার পছন্দ হলে কিছু নেয় আবার কখনো নেয়না। এই শাশুড়ী বউকে ডেকে বলে বউমা শুন, আশেপাশের মেহমান আসবে তুমি নতুন তোমাকে দেখতে তাই তুমি সবসময় সেজে-গুজে থাকবে। যেন তোমাকে কেউ অপছন্দ না করে। বউ বলে আমি কি সো পিজ নাকি যে সারাদিন সেজেগুজে থাকবো? আপনারা না সব সময় নানান বোঝা চাপিয়ে দেন এসব আমার ভাল্লাগেনা। এই শাশুড়ী চায়না বউ কাজ করুক, এই শাশুড়ী চায়না তার ছেলের বউকে কেউ কালো বলুক, এই শাশুড়ী চায়না তার ছেলের বউকে কেউ কিছু বলুক, তিনি চান সবার মুখে যেন থাকে তার বউয়ের প্রশংসা মাখা কথা। তাই এই শাশুড়ী তার সঞ্চায়িত কথার ভান্ডারে যত সুন্দর ভাষা আছে তা বউয়ের জন্য ব্যবহার করতে থাকে। ঘটনাক্রমে আমার সাথে সাক্ষাতে বললেন, লায়লাঃ আমি বড়ই ভাগ্যবতী দেখ আমার বউমা টা কত শান্ত স্বভাবের। চুলগুলো কত বড়। কত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে আমার মনটা ভরে যায়। আমার মনটা আরো ভরে যেত যদি আমার বউমাটা আমাকে আম্মা বলে ডাকতো। লায়লা তুমি দোয়া করো যেন আমার বউমা আমাকে আম্মা বলে ডাকে। আমি বললাম খালাম্মাঃ পৃথিবীতে আসলে কেউই প্রকৃতভাবে সুখী নয়। সুখে থাকার ভান করে সবাই। এই আপনাদের পাঁচতলা বাড়ি কত আসবাব পত্র দিয়ে সাজানো-গুছানো সংসার তারপরও আপনার মুখে আক্ষেপের স্বর? তিনি বললেন না লায়লা এটা আমার অ-সুখের কথা নয় এটা আমার এটা শখ বলতে পারো। আমি বললাম আল্লাহ আপনার বউয়ের অন্তরটাকে আপনার জন্যে নরম করে দিন। তিনিও সাথে সাথে বললেন আল্লাহ তুমি কবুল করো আমিন। সাথে আমিও অংশ নিলাম। কয়েক বছর পরে জেনেছি বউ এখন আম্মা বলে ডাকে। এই খালাম্মা এখন নিজেকে সুখী মানুষের কাতারের একজন মনে করেন। জানো লায়লা এই আম্মা ডাকটা শুনতে আমাকে অনেক সময় গুণতে হয়েছে? আমি বললামঃ খালাম্মা আপনার সুন্দর মধুমাখানো কথাগুলোই আপনাকে আজকে সুখী ও আনন্দিত করেছে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে যদি এমন হতো? তিনি বললেন লায়লা এমন উপাধি দিওনা মনের মাঝে রিয়া এসে যাবে। বললাম না খালাম্মা রিয়া আসবেনা মানুষের মাঝে সুন্দর ভাষা প্রয়োগের উৎসাহ বাড়বে বলে দুজনেই হাসলাম.......।
৪র্থ ঘটনাঃ বউ শিমুলী পছন্দ করেই বিয়ে করেছে ছেলে। মা বাবার অমতে বিয়ে করলেও শাশুড়ী ও শশুর মেনে নেন। কিন্তু বউই উল্টো তাদেরকে মানতে পারেন না। কারন ইসলামী জ্ঞানের অভাবই বলতে হবে। শাশুড়ী ভোরে উঠে সব কাজ করে নাস্তা বানিয়ে রাখে। বউয়ের ইচ্ছে মতো ঘুম থেকে জেগে এসে নাস্তা করে। অথচ এই শাশুড়ী বাড়িতে কেউ আসলে তাদের সবার কাছে প্রশংসা করে বলে আমার বউমা সকালে ঘুম থেকে জেগে সব কাজ শেষ করে নাস্তা বানিয়েছে। দেখেছ তোমরা আমার বউমা কত ভালো? কখনো বউয়ের বদনাম বা দূর্নাম করেনা কারোর কাছে। বউ শিমুলী একদিন নিজের কানে শুনে শাশুড়ী তার প্রশংসা করছে তার বান্ধবীদের কাছে, আমার বউমার মতো মেয়েই হয়না। পৃথিবীর যত মেয়ে আছে, যত বউ আছে সবার থেকে ভালো হলো আমার বউমা। সে আমার অনেক সেবা করে। গোসলের পর কাপড় ধুইয়ে রোদ থেকে শুকিয়ে এনে ভাঁজ করে রাখে। সে বউ নয় সে হলো আমার ঘরের আয়না যাতে আমি আমার মুখ দেখি। আর আমার ত্রুটি গুলোকে শোধরাতে চেষ্টা করি। সে আমার ছেলের বউ নয় সে আমার মেয়ে। আমার ছেলে পছন্দ করে অনেক ভালো মেয়েকেই বউ করে এনেছে আমি তা পারতাম না। তোমরা সবাই দোয়া করো আমার বউমায়ের জন্য সে যেন সুখী হয়। প্রায়শ্বই শাশুড়ীর মুখে এমন প্রশংসা বাক্য শুনে শিমুলী। কয়েক বছর পর যখন শিমুলীর কোল জুড়ে আসে সুন্দর শিশুপূত্র। তখনও এসব কথা শুনতে শুনতে বউ শিমুলীর মনে উদয় হলো নতুন সূর্যের, নতুন আলোর। সে ভাবতে লাগলো আমি আমার শাশুড়ীর কিছুই করিনা কোন সেবা করিনা। সংসারে কোন কাজ করিনা তারপর ও আমার শাশুড়ী আমার কত প্রশংসা করছে লোকালয়ে। আসলেই আমার এসবকিছুই করা ঠিক হচ্ছেনা। সেদিন থেকেই বউ শিমুলী আর বউ নয় মেয়ে হয়ে যায়। বাস্তবতা নিয়ে লিখছি একেই বলে জ্ঞানবতী শাশুড়ী। কাউকে বকে, লোকালয়ে সম্মান নষ্ট করে কখনো সম্মান পাওয়া যায়না। কিন্তু সুন্দর ব্যবহার দিয়ে সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। শিমুলীর শাশুড়ী এখন নাতিকে কোল করে বসে থাকেন আর বউ এসে সামনে খাবার দিয়ে বলেন আম্মা বাবুকে আমার কাছে দিন আপনি খাবার খান............।
৫ম ঘটনাঃ শফিক বিয়ে করে আড়াই মাস পরেই চলে যায় প্রবাসে। বছর ঘুরতেই কণ্যার বাবা বনে যান। মেয়েকে দেখতে তার মন হয় উদাসী চাতকের মতো কিন্তু প্রবাস মানেই ধৈর্যের পাহাড় হতে হয়। মন চাইলেই সব কাজ করা যায়না। তাই সে ধৈর্য ধরতে থাকে। এভাবে কণ্যার বয়ষ হতে চলেছে প্রায় একবছর নিজের সত্তার আরেক রুপকে এখনো দেখতে না পারার কষ্ট তাকে মাঝে মাঝে খুবই কাঁদায়। আর বউয়ের তো হক্ব আছে। কিন্তু কি করা? সময় আর সুযোগের অপেক্ষাতে থাকে শফিক। দেশে আসতে চাইলেই মা বলে, আগে বাড়িটা কর, ঋন পরিশোধ কর, তোর ভাইদের লাইন ধরিয়ে দে, বোনের বিয়ের খরচ যোগাড় কর তুই বড় তুই তো ওদের ভরসা, শফিকের তর যেন সইছে না। মার কাছে দেশে আসার কথা বলতেই বলে, তোর বোনের বিয়েতে গয়না দেয়া হয়নি তোর বোনের জন্য বিয়ের গয়না সেট নিস। (প্রবাসে থাকতেই বোনের বিয়ে হয়)। এবার মা বলেন জামাইটা সামান্য ব্যবসা করে সে কখনোই দাম দিয়ে আমার মেয়েকে গয়না কিনে দেবেনা আর তোদের ওতো একটি বোন দশটা থাকলে দিতিস না? এখন আমার কথা যতবার আসবি ততবারই তার জন্য এক একটা দামী জিনিস এনে দিবি। তোর বোনাইর জন্য পোষাকের টাকা যোগাড় কর কারন তুই বড় সমোন্ধি আর প্রথম তাকে দেখবি, আর তোর একমাত্র ভাগিনার জন্য চেইন এসব বলে তাকে বাঁধা দিয়ে রাখে। এত এত উপঢৌকন আগে যোগাড় করতে হবে। আর বউ ও মেয়ের জন্যেও তো কিছু নিতে হবে। শফিক ভাবতে থাকে বেচারী প্রবাসীর বউ হয়ে ঠকেই গেলো হয়তো। কি করবে সে থাকে। এসব যোগাড় না করে তো দেশে ও যাওয়া যাবেনা। প্রবাসে শফিকেরও ইকামা নিয়ে সমস্যা হয়ে অনেক টাকা খরচ হয়েছে সে ধকলও সামাল দিতে হয়েছে একাকি শফিককে। শফিক একে একে বাড়ির কাজ সমাপ্ত করে, ঋন পরিশোধ করে, ও বোনের জন্যে গয়না সেট, বোনাইয়ের পোষাকের টাকা, ভাইদের একজনকে বিদেশে নেয়া, আরেকজনের ডাক্তারী পড়ানোর খরচ, প্রথম ভাগিনার জন্য চেইন দেশে আসার খরচ সব যোগাড় করে এসব করতে গিয়ে বউ আর আপন সন্তানের জন্য ছুটে আসতে পারেনা। মেয়েকে স্কাইপিতে দেখেই মানের মাঝে শান্তনা খুজে বেড়ান। এভাবে বউকে কল করে বলে তোমার কাছে কি অলংকার দামী নাকি আমি দামী? বউ বলে আমার স্বামীই আমার কাছে দামী অলংকার। শফিক সুযোগ বুঝে বলে আমি আসছি তোমার জন্য তুমি খুশি? বউ হাঁ সূচক উত্তর দেয়। বউকে বলে এই কাজটা সমাধা হলেই আসবো এভাবে করতে করতে মেয়ের বয়ষ হলো বারো আর বিয়ের বয়ষ তেরো। মেয়ে বাবার সাথে শুধু ফোনালাপের সম্পর্ক। মাঝে মাঝে স্কাইপিতে দেখা এই তো। বারো বছর পর দেশে আসলে মেয়ে লাকী তো বাবাকে বাবা বলে ডাকে না কাছে যায়না। বাবা ডাকলেও পড়শীর মতো আচরণ করে। অথচ শফিকের ভাইদেরকে কত সুন্দর করে চাচাজান বলে ডাকে। শফিকের মনে ডাক যেন ঝড় তুলে দেয়। এরপর তিনবছর পর পর দেশে আসলে আরো দুটি মেয়ে ও দুটি ছেলে হয়েছে তারা সবাই বাবাকে ভালোবাসে বাবার কাছে বসে, বাবার কাছে আবদার করে কিন্তু লাকী বছর পর চলে গেছে বাবাকে কখনো সামনা-সামনি বাবা বলে ডাকেনি সে লজ্জাবোধ করে। লাকী কখনো বাবার পাশে বসেনি মনে হলেই শফিকের কলিজা যেন ছিড়ে যেতে চায়। লাকীর বিয়ে হয়ে চলে যায় শশুরালয়ে। কিন্তু বাবার মনে রয়ে যায় প্রথমা কণ্যার মুখে বাবা ডাক না শুনার সিমাহীন কষ্ট। প্রবাসের যাওয়ার আগে বউকে বলে আমার যদি আরো দশটা সন্তানও হয় তারা সকলে আমাকে একসাথে বাবা বলে বলে ডাকতে থাকে তবুও আমার মনের এই কষ্ট দুর হবেনা। আর আমি আমার লাকীর হক্ব নষ্ট করেছি তাকে কখনো আদর করিনি তাকে কখনো বুকে জড়িয়ে নেইনি আমার মতোই তো তার মনে কষ্ট আছে তাইনা...........? আপন সন্তানকে বুকে না নিতে পারার যে যন্ত্রনা তা সারাজীবন আমাকে জ্বালাবে। সে কষ্ট হয়তো আমার কলিজার টুকরো লাকীকেও অগ্নিদগ্ধ করবে। শুন বউ তুমি লাকীকে সব সন্তানের চেয়ে বেশী খেয়াল রাখবা। তার সব প্রয়োজন তুমি পুরা করবা। আমি তাকে আর কোন কষ্ট দিতে পারবোনা। সেও বাবাকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট কখনো ভুলবেনা। আর তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি তোমারও অনেক হক্ব নষ্ট করেছি। তুমি যদি ক্ষমা না করো আল্লাহ ও আমাকে ক্ষমা করবেনা। সবার হক্ব খেয়াল করতে করতে আমি আমার পরিবারের হক্বই আদায় করতে পারিনি। আজকে সবাই প্রতিষ্ঠিত আর আমিই হাজারো ব্যথা বুকে প্রবাসে যাতনাকে সাথি করে প্রবাসী। কারন ভাই বোনদের প্রতিষ্ঠিত করেছি এবার সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার পালা। আর তোমার কাছে আবারও ক্ষমা চেয়ে নেই কারন সবচেয়ে বেশী তোমার হক্বই নষ্ট করছি এবারও তাই হবে আমাকে ক্ষমা করে হে প্রিয়া.......।
জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা যা করেন তা সকল শাশুড়ীর করা উচিৎ এবং সকলের জন্য তা মূল্যবান উপদেশ স্বরুপঃ
۞ শাশুড়ীরা (বেশিরভাগ) নতুন বউ ঘরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পেছনে লেগে সম্পর্কটা শুরুতেই তিতে করে ফেলেন। মনে রাখবেন, ছেলের বউয়ের পিছে লাগা মানে কার্যত ছেলের পেছনে লাগা। আর জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা তা কখনোই করেন না।
۞ সংসারে শান্তির জন্য ছেলে দুরে সরে যেতে চাইবে। অজ্ঞ শাশুড়ীরা ইট মেরে পাটকেলটি খায়। আর জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা বউকে ইট না মেরে ফুল দেয়। আর ফুল দিতে না চাইলে মুখ এবং চোখ বন্ধ করে রাখে এতে করে ঝামেলা কম হয়।
۞ বউ দেখতে ভালো না কেন? মোটা কেন? বেশী ঘুমায় কেন? বেশী খায় কেন? এই চিন্তা বাদ দিয়ে দেন বউ দেখতে এত সুন্দর কেন-এই চিন্তাও বাদ দিয়ে বরং বউয়ের করা ছোট ছোট কাজের প্রশংসা করে জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা। আর অজ্ঞরা অনর্থক কাজেই ব্যস্ত হয়ে বউয়ের সাথে দুরত্বের সৃষ্টি করে।
۞ নাতি-নাতনীদের কাছে কখনোই জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা (বউয়ের) ওদের মায়ের বদনাম করেন না। তারা তার মায়ের প্রশংসা করে ও মাকে খেদমত করতে বলে। আর অজ্ঞরা করে উল্টোটা। হে সমাজের শাশুড়ীরা আপনাদের জিভ ছোট রাখুন প্রত্যেক কাজে আল্লাহকে ভয় করুন। আর বউকে চাকরানী না বানিয়ে মেয়ে বানিয়ে নিন দেখবেন বউ আপনাকে শাশুড়ী নয় মা বানিয়ে মায়ের মতো সেবা করবে।
۞ জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা বউ কোন দোষ করলে নিজের সন্তান ভেবে মাফ করে দেয় অথবা বুঝিয়ে বলে। আর অজ্ঞরা এটা নিয়ে তোলপাড় করে লোক জানায়, সম্মান হারায় এটা বুঝে না যে, বউয়ের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে নিজের দোষও যে পরে জেনে যাচ্ছে। "ঘরের খবর পরে জানলো কেমনে"? "এই যে এমনে"।
۞ ছেলে আর ছেলের বউয়ের সম্পর্কের মধ্যে অযথা নাক গলায় না জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা। তারা ভালো পরামর্শ দেয়, বুঝায়, ছেলে আর ছেলের বউয়ের মাঝে সামান্য কোন দন্দ হলে সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে মিটমাট করে। ছেলেকে যেমন ভালোবাসে ছেলের বউকেও তেমন ভালোবাসে। জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা ছেলের বউকে ভালোবাসে, যেন ছেলে কোনদিন ও তাকে ছেড়ে না যায়। আর ভালোবাসে বলেই একটা মায়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মাঝে। আর অজ্ঞরা বিপরীত করে বউকে দুর করতে ছেলেকেই হারায় সারাজীবনের জন্য।
۞ জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা মনে করেন ছেলের সংসারে যখন থাকতে হবে, তখন তারা মনে করেন আমি আমার মেয়ের সংসারেই আছি। আর শাশুড়ীরা যখন মা হয় তখন মেয়েকে অনেক দোষের পরেও ক্ষমা করতে পারেন। আর মেয়েও মা ভেবে শাশুড়ীর সব ভুল গুলোকে হাসি মুখে সইতে পারেন। আমাদের সমাজে এই চিত্র খুব কমই নজরে পড়ে।
۞ জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা মেয়ের জামাইয়ের কাছে যেমন নিজের মেয়ের প্রশংসার ফুলঝুরি তোলেন, ছেলের কাছে বউয়ের বেলায় তার ব্যতিক্রম করেন না। তাই সে সকল শাশুড়ীরা রানীর আসনে থাকে জীবনের বাকি সময়। আর অজ্ঞরা মেয়ের জামাইয়ের কাছে মেয়ের প্রশংসা করেন ঠিকই কিন্তু ছেলের কাছে বউয়ের বেলায় বলেন ব্যতিক্রম কথা এতে করে সংসারে অশান্তি বৈ শান্তি আসার সম্ভবনা কম।
۞ জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা প্রথমে বউকে শিখায় আর পরে বউ থেকে সেবা নেয়। আর অজ্ঞরা বউ থেকে প্রথমেই সেবা চায় আর পরে শিক্ষা দিতে চায়। একারনে হিতে বিপরীত হয়।
۞ জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা ছেলেকে হারাতে চায়না তাই বউকে মেয়ে বানিয়ে নেয়। আর অজ্ঞরা তা না করে বউকে পর করে শেষে ছেলেকেও হারায়।
۞ জ্ঞানবতী শাশুড়ীরা ছেলের বউ এলে মেয়ের মা হয় তারা আগে থাকেন ছেলের মা পরে হোন ছেলে মেয়ের মা। নতুন বউ এসে যখন মা পায় তখন সে আর কখনো বউয়ের আচরণ করেনা সে ও মেয়েই হয়ে যায় হতে চেষ্টা করে। আর যখন নতুন এসে মা নয় শাশুড়ী পায় তখন সে ও বউ হতেই চেষ্টা করে মেয়ে হতে নয়।
বিষয়: বিবিধ
৭৬৮৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার লেখাতে জ্ঞানবতী শাশুড়ি বলতে যেটা বুঝিয়েছেন সেটা হল - বিয়ের পর পরই মেয়েদের মিশন হয় কিভাবে স্বামীকে তার পরিবার থেকে আলাদা করবে । এজন্য সে তার চেষ্টার অন্ত রাখে না । স্বামী তার কথামত না চললে সে সংসারে আগুন লাগিয়ে রাখে ।
এটা মেনে নিয়েই আপনার মতে জ্ঞানবতী শাশুড়িরা ছেলের সংসারের শান্তির স্বার্থে ছেলের বউকে তোয়াজ করা শুরু করে । ফলে সে ও তার ছেলে ছেলের বউয়ের বসিংয়ে চলা শুরু করে । তবেই সংসারে সে ঝামেলা পাকায় না , অশান্তি করে/বাড়ায় না ।
অথচ ইসলাম বলে নারীকে পুরুষের (স্বামীর) আনুগত্য করে চলতে । পুরুষেরা যদি তাদের শরিয়ত অনুযায়ী বসিং করেও সেটা স্ত্রীদের পছন্দ হয় না । তারা চায় তারাই বসিং করবে, না হলে সংসারে অশান্তি ডেকে আনে ।
আল্লাহর নির্ধারন করে দেওয়া কর্তৃত্ব যা তিনি দিয়েছেন স্বামীদেরকে স্ত্রীদের উপর - সেটার লঙ্ঘনের জন্য আর কারও বিচার হোক না হোক সেই স্বামী তো পার পাবে না আল্লাহর কাছ থেকে । অথচ শরিয়া সন্মতভাবে চলতে গেলে মনুষ্য আইন আপনারা বানিয়ে রেখেছেন আল্লাহর আইনের বিপরীতে ।
তাই আমরা যেসব মুসলমান পরিবার দেখি শান্তিতে সংসার করছে সেটা আসলেই শরিয়ত সন্মত নয় । বিয়ে যদিও শরিয়ত মোতাবেকই হয়েছে , কিন্তু সংসার চলে বেশরিয়তিভাবে , স্ত্রীর প্রতি আনুগত্য করে ।
এরকম আস্কারা পেয়ে থাকলে সেই মেয়ে তো সংসারের কোন দ্বায়িত্বই পালন করবে না শরিয়ত মোতাবেক নুন্যতমভাবে । অথচ স্বামীর কাছ থেকে শরিয়ত মোতাবেক ঠিকই সে পেয়ে যাচ্ছে ।
আর এরকম যদি জ্ঞানবান শাশুড়ি পাবার কথা সেট হয়ে যায় - তাহলে কোন মা ই তার মেয়েকে শশুড় শাশুড়ির সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য গড়ে তুলবে না ।
শাশুড়ীরাই হচ্ছে যতসব অশান্তির মূল । আপনি মনে হয় এখনও বউমা এর স্টেজেই আছেন । শাশুড়ির স্টেজে আসেন নি । হয়ত সৌভাগ্যবশত আপনার শুধু মেয়ে সন্তানই আছে , কোন ছেলে সন্তান নেই । বিয়ের পর মেয়ের জামাইরা শাশুড়িকে তোয়াজ করবে মেয়েদের দাপটে । আর ছেলে না থাকায় আপনাকে জ্ঞানবতী শাশুড়ির অভিনয়ও করতে হবে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন