রমাদ্বান উপলক্ষ্যে ব্লগ আয়োজনের চতুর্থ পর্বে "রমাদ্বানের আরেক অর্থ পরিত্যাগ করা"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২০ জুন, ২০১৬, ০৮:৩৭:১৯ রাত
রমাদ্বান মাসে শুধুমাত্র সারাদিন না খেয়ে থাকলেই রোজা হবে এমন চিন্তা করা বোকার সর্গে বাস করার মতোই বোকামি। খাবার না খেয়ে থাকলেই রোজা হয়না। রোজাকে পরিপূর্ণতা দিতে হলে অবশ্যই অবশ্যই কিছু অশ্লীল বিষয়ও পরিত্যাগ করতে হবে। আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য রমাদ্বান মাসটি অনন্য। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর এই হাদীসটি যথেষ্ট উত্তম ভাবে রমাদ্বান পালনের ক্ষেত্রে। রমাদ্বানের সিয়ামকে পেয়েও যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে মুক্ত হতে পারলনা তার ধ্বংস হোক। পুরো হাদীসটি হল: “হাদীস শরীফে (সহীহ বুখারী, সহীহ তিরমিযী, ইমাম হাম্বল, ইবনে কাসীর, প্রভৃতি) বর্ণিত রয়েছে, বিশেষ করে সাহাবী ক্কা'আব বিন আজুরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, একবার জুমার খুৎবা দেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন, তখন বলেন আমিন, দ্বিতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখেন, তখন বলেন আমিন।
একই ভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও বলেন, আমিন। সালাত শেষে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে তিনবার অস্বাভাবিকভাবে আমিন বলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিব্রাইল (আঃ) ওহী নিয়ে আসেন এবং বলেন, ধ্বংস হয়ে যাক সেই ব্যক্তি, যে রমাদ্বান মাসের রোজা পেল অথচ গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না, এর জবাবে আমি বললাম, আমিন।
দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ধ্বংস হয়ে যাক সেই ব্যক্তি, যার সামনে আমার নাম নেয়া হলো অথচ দুরুদ শরীফ পড়ল না, জবাবে বলেছি আমিন। তৃতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখলাম, জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ধ্বংস হয়ে যাক সেই ব্যক্তি, যে বা যারা তার মা-বাবা কিংবা উভয়ের যে কোনো একজনকে পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাত হাসিল করতে পারল না, জবাবে বলেছি আমিন। রমাদ্বানের এই মহাসুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আমলকে সুন্দর করতে হবে। আমাদের আত্ম-শুদ্ধি করতে হবে। ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। চিমুক্তির পথ পেতে সচেষ্ট হতে হবে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وغلقت أبواب النار، وصفدت الشياطين.
যখন রমাদ্বান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস-১৮৯৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস-১০৭৯ (১), মুসনাদে আহমদ, হাদীস-৮৬৮৪)
রোযা রেখে যে ব্যক্তি হারাম বা অশ্লীল কথাবার্তা উচ্চারণ করা থেকে নিজেকে বিরতি রাখতে পারে না তার রোযার হুকুম প্রসঙ্গেঃ
_________
আমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিম্ন লিখিত আয়াত পাঠ করলেই জানতে পারি সিয়াম ফরয হওয়ার হিকমত কি? আর তা হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহ্ ভীতি অর্জন করা ও আল্লাহ্র ইবাদত করা। আল্লাহ্ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৩)।
তাক্বওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। ব্যাপক অর্থে তাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহ্র নির্দেশিত বিষয় বাস্তবায়ন করা, তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
“যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যা অভ্যাস ও মূর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।” অতএব এ কথা নিশ্চিত হয়ে গেল যে, রোযাদার যাবতীয় ওয়াজিব বিষয় বাস্তবায়ন করবে এবং সবধরণের হারাম থেকে দূরে থাকবে।
মানুষের গীবত করবে না, মিথ্যা বলবে না, চোগলখোরী করবে না, হারাম বেচা-কেনা করবে না, ধোঁকাবাজী করবে না। মোটকথা চরিত্র ধ্বংসকারী অন্যায় ও অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় সকল প্রকার হারাম থেকে বিরত থাকবে। আর একমাস এভাবে চলতে পারলে বছরের অবশিষ্ট সময় সঠিক পথে পরিচালিত হবে ইনশা-আল্লাহ্।
কিন্তু আফসোসের বিষয় অধিকাংশ রোযাদার রমাদ্বানের সাথে অন্য মাসের কোন পার্থক্য করে না। অভ্যাস অনুযায়ী ফরয কাজে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, হালাল-হারামে কোন পার্থক্য নেই। গর্হিত ও অশ্লীল কথা কাজে লিপ্ত থাকে। মিথ্যা, ধোঁকাবাজী প্রভৃতি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাকে দেখলে বুঝা যাবে না তার মধ্যে সিয়ামের মর্যাদার কোন মূল্য আছে। রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের উপর ঈমান রাখে সে যেন কথা বললে ভাল কথা বলে অথবা চুপ করে থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীস থেকে জানা যায়, জবান বা জিহ্বার ১৫টি দোষ আছে যথা: ১. মিথ্যা কথা বলা
২. ঠাট্টা বিদ্রুপ করা ৩. অশ্লীল ও খারাপ কথা বলা, ৪. গালি দেয়া, ৫. নিন্দা করা, ৬. অপবাদ দেয়া, ৭. গীবত করা, ৮. চোগলখুরী করা, ৯. বিনা প্রয়োজনে গোপনীয়তা ফাঁস করা, ১০. মুনাফিকী করা, ১১. ঝগড়া-ঝাটি করা, ১২. বেহুদা ও অতিরিক্ত কথা বলা, ১৩. বাতিল ও হারাম জিনিস নিয়ে কথা বলা, ১৪. অভিশাপ দেয়া ও ১৫. সামনা-সামনি কারো প্রশংসা করা। অবশ্য এ সমস্ত বিষয় সিয়ামকে ভঙ্গ করে দিবে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে উত্তম ভাবে রামদ্বানের রোজা পালনের তৌফিক দিন ও কবুল করে নিন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৯৫১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তোমার মর্মস্পশী লিখাটি পড়ে আবারো হৃদয়ে ভীতি সঞ্চারিত হল।
রোযার হক যথাযথভাবে আমরা পালন করছি তো?
পরিত্যাগ করতে পাচ্ছি তো যা আমাদেরকে করতে বা বলতে নিষেধ করা হয়েছে?
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
ছুম্মা আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন