"তাকওয়া-ই আল্লাহর নিকটতম করে"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৬ জুন, ২০১৬, ০৬:১৫:৪৯ সন্ধ্যা
আমরা সাধারনত ভালো কাজগুলো করি আল্লাহকে খুশি করতে ও আমাদের চিরমুক্তির লক্ষে। কিন্তু আমাদের সব কাজে কি আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারি? পারিনা। কারন একটি বিষয়ে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করি তাকওয়া অবলম্বন করি আবার আরেক কাজে তা পারিনা। এটা হরহামেশা হয়েই থাকে। তাই আমাদের নিজেকে আগে তাকওয়াবান হতে হবে তারপর আল্লাহর কাছে কল্যাণের আশা করতে হবে। আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা কাজে আল্লাহর ভয় থাকতে হবে শুধুমাত্র ভয় থাকলেই চলবেনা আল্লাহর ভয়ে নিজেকে সবরকম গুনাহ থেকে বিরত রাখতে হবে। নিজেকে আগে গুনাহ থেকে পবিত্র রাখতে পারলেই আল্লাহর কাছে ক্ষমার পাবারও আশা করতে পারবো। তাই তাকওয়া বিষয়ে আমাদেরকে জানতে হবে। নিজে মানতে হবে ও অন্যকে জানাতে হবে ও মানারো জন্য উৎসাহ দিতে হবে। আমরা জেনে নেই তাকওয়ার বিষয়গুলো। মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলকে তাকওয়ার পথে পরিচালিত করুন ও প্রতিষ্ঠিত রাখুন।
১. কোরআনের হেদায়াত পেতে হলে তাকওয়া প্রয়োজন। (সুরা বাকারা-২)
*ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য।
২. তাকওয়া ব্যতীত ইবাদাত কবুল হয়না। (সুরা হজ্ব-৩৭)
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ*
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া।
৩. তাকওয়া সত্য মিথ্যার পার্থক্যের মানদন্ডের ব্যবস্থা করে। (সুরা আনফাল-২৯)
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَتَّقُوۡا اللّٰهَ يَجۡعَل لَّكُمۡ فُرۡقَانًا وَّيُكَفِّرۡ عَنۡكُمۡ سَيِّاٰتِكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡؕ وَاللّٰهُ ذُوۡ الۡفَضۡلِ الۡعَظِيۡمِ*
হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করার পথ অবলম্বন করো তাহলে আল্লাহ তোমাদের কষ্টিপাথর দান করবেন এবং তোমাদের পাপগুলো তোমাদের থেকে দূর করে দেবেন এবং তোমাদের ত্রুটি -বিচ্যুতি ক্ষমা করবেন৷ আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল৷
৪.তাকওয়া পৃথিবীর সমস্ত নাজ-নেয়ামতের চেয়েও মহামূল্যবান। (সুরা আলে ইমরান-১৫)
قُلْ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَيْرٍ مِّن ذَٰلِكُمْ ۚ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ
বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়৷ সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে৷ পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সংগিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ৷ আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন।
৫. তাকওয়া মহান আল্লাহর নিকট বান্দার একমাত্র মর্যাদার মাপকাঠি। (সুরা হুজরাত-১৩)
اِنَّ اَكۡرَمَكُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰٮكُمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِيۡمٌ خَبِيۡرٌ
তোমাদের মধ্যে যে অধিক পরহেজগার সে-ই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদার অধিকারী৷
৬. তাকওয়া দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত নেয়ামতের দরজা খুলে দেয়। (সুরা আরাফ-৯৬)
وَلَوۡ اَنَّ اَهۡلَ الۡقُرٰٓى اٰمَنُوۡا وَاتَّقَوۡا لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِمۡ بَرَكٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ وَلٰكِنۡ كَذَّبُوۡا فَاَخَذۡنٰهُمۡ بِمَا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَ
যদি জনপদের লোকেরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর রবকত সমূহের দুয়ার খুলে দিতাম৷ কিন্তু তারা তো প্রত্যাখ্যান করেছে৷ কাজেই তারা যে অসৎকাজ করে যাচ্ছিলো তার জন্যে আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি৷
৭. তাকওয়াধারীদেরকে আল্লাহ অগনিত রিযিক প্রদান করেন। (সুরা তালাক-৩)
وَّيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُؕ وَمَنۡ يَّتَوَكَّلۡ عَلَى اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗؕ اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰهُ لِكُلِّ شَىۡءٍ قَدۡرًا
এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না৷ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট৷ আল্লাহ তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন৷ আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জন্য একটা মাত্রা ঠিক করে রেখেছেন৷
৮. তাকওয়া অবলম্বনকারিদের সকল সমস্যা মহান আল্লাহ দূর করে দেন। (সুরা তালাক-২)
وَمَنۡ يَّتَّقِ اللّٰهَ يَجۡعَل لَّهٗ مَخۡرَجًاۙ
যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন৷
৯. তাকওয়া অবলম্বনকারিদের সকল কাজকে আল্লাহ সহজ করে দেন। (সুরা তালাক-৪)
وَمَنۡ يَّتَّقِ اللّٰهَ يَجۡعَل لَّهٗ مِنۡ اَمۡرِهٖ يُسۡرًا
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার কাজ সহজসাধ্য করে দেন৷
১০. তাকওয়াবানদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (সুরা তালাক-৫)
وَمَنۡ يَّتَّقِ اللّٰهَ يُكَفِّرۡ عَنۡهُ سَيِّاٰتِهٖ وَيُعۡظِمۡ لَهٗۤ اَجۡرًا
যে আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার গোনাহসমূহ মুছে ফেলবেন এবং তাকে বড় পুরষ্কার দেবেন৷
১১. তাকওয়া অবলম্বনকারিদেরকেই আল্লাহ ভালো বাসেন এবং তাদের সাথেই থাকেন। (সুরা তাওবা-৪, বাকারা-২৯৪)
اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُتَّقِيۡنَ
কারণ আল্লাহ তাকওয়া তথা সংযম অবলম্বকারীদেরকে পছন্দ করেন৷
১২. তাকওয়া অবলম্বনকারিদের জন্যই জান্নাত তৈরী করা হয়েছে। (সুরা ইমরান-১৩৩)
﴿وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ﴾
দৌড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে,
হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে এই তাকওয়ার মাসে মুত্তাকী হিসেবে কবুল কর। আমিন!
এক মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে কথা না বলে থাকার শাস্তি সম্পর্কিত হাদীস গুলোঃ-
১. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা পরষ্পর সম্পর্ক-ছেদ করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরষ্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরষ্পর হিংসা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখবে।’’(বুখারী ও মুসলিম)
২. আবূ আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখে। যখন তারা পরস্পর সাক্ষাৎ করে, তখন এ এ দিকে মুখ ফিরায় এবং ও ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তাদের দু’জনের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সেই হবে, যে সাক্ষাৎকালে প্রথমে সালাম পেশ করবে।’’
(বুখারী ও মুসলিম)
৩. আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার আমল সমূহ পেশ করা হয়। সুতরাং প্রত্যেক সেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন করেনি। তবে সেই ব্যক্তিকে নয়, যার সাথে তার অন্য মুসলিম ভাইয়ের শত্রুতা থাকে। [তাদের সম্পর্কে] বলা হয়, এদের দু’জনকে সন্ধি করা পর্যন্ত অবকাশ দাও।’’(মুসলিম)
৪. আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন মুসলিমের জন্য এ কাজ বৈধ নয় যে, তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (আবূ দাঊদ বুখারী-মুসলিমের শর্তাধীন সূত্রে)
৫. আবূ খিরাশ হাদরাদ ইবনে আবূ হাদরাদ আসলামী, মতান্তরে সুলামী সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যে ব্যক্তি তার কোন (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে বছরব্যাপী বাক্যালাপ বন্ধ করবে, তা হবে তার রক্তপাত ঘটানোর মত।’(আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
বিষয়: বিবিধ
১০০৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাস্তবতার আলোকে সুচিন্তিত একটি হৃদয়গ্রাহী লিখা মাশাআল্লাহ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
লিখাটা খুব সুন্দর হয়েছে আপু । জাজাকিল্লাহ খায়ের আপু ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন