Rose Rose "রমাদ্বান উপলক্ষ্যে ব্লগ আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে" "এমাস হোক সারা বছরের পুঁজি" Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৮ জুন, ২০১৬, ০৮:৩৬:২৮ রাত




মানুষের জীবনের প্রত্যেক কাজেরই উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্য বিহীন কাজ কোন বোকাও করেনা। আর আমরা তো সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। তাই আমাদেরকেও উদ্দেশ্য সামনে রেখে কাজ করতে হবে। আমরা যদি কোন কাজের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তার বাস্তবায়ন করার জন্য প্রচেষ্টা চালাই তবে অবশ্যই তা সফল হবে। আর নয়তো তা কখনোই সফলতার মুখ দেখবেনা। তাই আমাদেরকে আগে জানতে হবে সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে। সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু তাক্বওয়া অর্জন করা। মহান আল্লাহ সূরা বাকারাহ এর ১৮৩ নং আয়াতে বলেন, "হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হলো, যেমনি তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর ও ফরজ করা হয়েছিল, সম্ভবত তোমরা তাকওয়াবান তথা পরহেজগার হবে।" এই আয়াত অনুসারে সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন বা পরহেজগারিতা অর্জন করা।

প্রথমেই আমাদের নিয়্যতকে যাছাই বাছাই করতে হবে। কাজটি কার জন্য করছি। এবং তিনবার যাছাই-বাছাই করা। প্রথমে, মাঝখানে ও শেষে। কারন আমলের প্রতিদান নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকটা কাজের আগেই নিয়্যতকে সহীহ শুদ্ধ করা। সহীহ হাদীসে এসেছেঃ উমর ইবনুল খাত্তাব বলেন, (রাযিঃ) রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ সকল আমল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়্যত করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি হিজরত করে দুনিয়া পাওয়ার জন্য কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার জন্য, তাহলে তার হিজরত হবে সেইদিকে যেদিকে সে হিজরত করল। (বুখারী) তাই রমাদ্বান মাসেও আমরা যা করবো তা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করবো। কোন লৌকিকতা যেন তাতে প্রকাশ না পায়।

মাহে রমাদ্বানের ফজিলতঃ এমাসের ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা।

شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ﴾ [البقرة: 185

‘‘রামাদ্বান মাস - এমাসেই কোরআন নাযিল হয়েছে।’’(সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৫)

«إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ»

‘‘যখন রামাদ্বান মাস আসে, জান্নাতের সকল দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয় জাহান্নামের সকল দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলিত করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০০, ৩১০৩ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং২৫৪৭)

তারাবীহের নামাজ পড়া: মু'মিন মুসলমানের জন্য তারাবীহের নামাজ কতইনা আনন্দের বিষয়। কিন্তু অনেক রোজাদার তারাবীহ এর গুরুত্ব দেয়না। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে এত পরিমাণ খায় যে, ক্লান্তিতে ঘুম এসে যায় আর তখনই ঘটে বিপত্তি; না! এমনটি করা যাবেনা অলসতাকে সুযোগ কোনভাবেই দেয়া যাবেনা। অলসতা সুযোগ পেলেই আপনার কাজের সিডিউলকে পরিবর্তন করে দেবে। আর আপনাকে অধিক সাওয়াব অর্জন করা থেকে বঞ্চিত করবে। আপনি ইফতারের সময় পরিমিত খাবেন যেন ক্ষুধার কষ্টও না হয়, আবার অধিক খেয়ে ইবাদতও নষ্ট না হয়। খুব সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যেন খাবারের কারনে তারাবীহ আদায়ে ব্যাঘাত না ঘটে। এবিষয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন:

من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه( رواه البخاري )

যে ব্যক্তি ঈমান ইখলাছ সহকারে তারাবীহের নামাজ পড়বে তার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

পবিত্র মাহে রমাদ্বান মাসেই রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লাইলাতুল ক্বদেরর ন্যায় বরকতময় রজনীঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ

سْمِ اللَّـهِ الرَّ‌حْمَـٰنِ الرَّ‌حِيمِ প্রথমেই তেলোয়াত ও সরল অর্থঃ

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ‌ ﴿١﴾ وَمَا أَدْرَ‌اكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ‌ ﴿٢﴾ لَيْلَةُ الْقَدْرِ‌ خَيْرٌ‌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ‌ ﴿٣﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّ‌وحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَ‌بِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ‌ ﴿٤﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ‌ ﴿٥﴾ সরল অর্থঃ রাহমান, রহীম আল্লাহর নামে। ১- নিশ্চয়ই আমরা কোরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। ২- আর আপনাকে কিসে জানাবে "লাইতুল কদর কী? ৩- "লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। ৪- সে রাতে ফিরিশতাগণ ও রুহ নাযিল হয় তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। ৫- শান্তিময় সে রাত ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত। :কোরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর থেকে)

রোযাদারকে ইফতার করানোঃ সহীহ সনদে তিরমিযী ও আহমাদ বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ إِلَّا أَنَّهُ لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْء»

‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করায়, সে উক্ত রোযাদারের সাওয়াবের কোনরূপ ঘাটিত না করেই তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।’’ (সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৭ ও মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৭০৩৩)

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يُفْطِرُ عَلَى رُطَبَاتٍ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّىَ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَعَلَى تَمَرَاتٍ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ»

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রুতাব’ (শুকনা নয় এমন) খেজুর দিয়ে নামাযের আগে ইফতার করতেন, রুতাব পাওয়া না গেলে শুকনা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাও পাওয়া না গেলে তিনি কয়েক ঢোক পানি পানে ইফতার করতেন।’’ (উত্তম সনদে ইমাম আহমাদ, হাদীস নং ১২৬৭৬ ও আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৬)

এই রহমত বরকত পূর্ণ মাসে আপনি আপনার নেক যেভাবে আরো বাড়াতে পারেন। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ও বেশি বেশি দান খয়রাত করে আপনার নেক বৃদ্ধি করতে পারেন। আর দান খয়রাতের ব্যপারে আপনার স্বজনেরা বেশী হক্বদার। তাই তাদেরকে আগে প্রাধান্য দিন।

তাদেরকে যাকাত, ফিত্‌রাহ ও সাদাকাহ দেয়া। হাদীসে এসেছে :

كَانَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদ্বানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। (মুসলিম : ২৩০৮)

পরিশেষেঃ আমাদের সকলের ছোট থেকে ছোট ও বড় থেকে বড় সকল ইবাদত ও নেক কাজ একমাত্র আল্লাহর জন্যই। তিনিই এর উত্তম প্রতিদান দাতা। হে মহিমান্বিত প্রতিপালক আমাদের কাজকে, ইবাদতকে রিয়া মুক্ত করে কবুল করে নিন। আর বাকি মাসের সিয়াম সাধনাকে সহজ ও কবুলিয়্যাত করে দিন। এমাসের সকল ইবাদত ও তাকওয়া এমন ভাবে অর্জন করার তৌফিক দিন যেন বছরের বাকি এগারো মাসও নিজেদেরকে তাওয়াবানদের অর্ন্তভুক্ত রাখতে পারি। এমাস যেন হয় মুসলমান সকলের সারা বছরের পুঁজি। এই পুঁজি দিয়ে যেন সারা বছরের নেকের মাঝে থাকতে পারি। আমিন ইয়া রব।

বিষয়: বিবিধ

১০২৪ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371451
০৮ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৪২
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam apuni. Beautiful writing in the evidence of al quran n Hadith mashallah.
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫১
308447
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫১
308448
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371461
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১০:০৯
আফরা লিখেছেন : আমীন ! ছুম্মা আমীন !
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫২
308449
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371464
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১০:১৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সংক্ষেপে কুরআন ও হাদীস থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপনার জন্য শুকরিয়া। জাযাকিল্লাহ খাইর
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫২
308450
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371476
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১১:৩৮
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আল্লাহুম্মা আমীন
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫২
308451
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371494
০৯ জুন ২০১৬ রাত ০২:৩৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

ইবাদাত কবুলের সর্বশেষ ছাঁকুনী হলো ইখলাস। সবকিছু ঠিক থাকার পরেও ঐ ছাঁকুনীতে পার পাওয়ার অনিশ্চয়তা রয়েই যায়। তাই এ বিষয়ে চরম সতর্কতা অবলম্বন করা কর্তব্য।
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৩
308452
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুন্দর ও সঠিক পরামর্শের জন্য জাযাকুমুল্লাহ।
371499
০৯ জুন ২০১৬ সকাল ০৭:৫০
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর হোক পথচলা।
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৩
308453
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371503
০৯ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:২৪
মিশু লিখেছেন : হে আমাদের প্রভু! আমরা যেসব গোনাহ করছি তা মাফ করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি আছে সেগুলো আমাদের থেকে দূর করে দাও এবং নেক লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করো। -সুরা আল ইমরান-১৯৩
সুপ্রিয় আপু। জাযাকাল্লাহী খাইরান
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৩
308454
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371504
০৯ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:২৫
মহিউদ্দিন মাহী লিখেছেন : সুন্দর লেখনী,
ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ।
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৩
308455
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371509
০৯ জুন ২০১৬ সকাল ১০:৩৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন। অনেক ধন্যবাদ
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৩
308457
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
১০
371518
০৯ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:২৪
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ, ভালো লাগলো আপনার মূল্যবান লিখাটি।
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৩
308456
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File