Rose Rose"বদলে যাবার গল্প" Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৭ জুন, ২০১৬, ০৭:৪৮:৫২ সন্ধ্যা

জীবনটা ভালোই কাটছিল, হাসি-আনন্দে, গল্পে-আড্ডায় কিংবা জীবনের স্বাভাবিক ব্যস্ততায়। ছুটির দিনে প্রিয় মানুষদের সাথে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, কখনো বারাত জেগে জমজমাট আড্ডা, ক্রিকেট মৌসুমে ক্রিকেটের নেশায় মত্ত হওয়া; কোন দল হারলো, কোন দল জিতলো, কে সেঞ্চুরী করলো, কে দুর্দান্ত বোলিং করে মাঠ মাতিয়ে রাখলো ইত্যাদি আরও কত কী!

কিংবা, লম্বা কোন ছুটি পেলে শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে এক্কেবারে সমুদ্র সৈকত কিংবা গহীন কোন অরণ্যে। সে সুযোগ না হলে নিদেনপক্ষে আশুলিয়া কিংবা সংসদ ভবন কিংবা ঢাকার আশেপাশে। ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পরে কখনও শরতের অপূর্ব আকাশ, কুয়াশা মাখা শীতের ভোর কিংবা ফুলে ফুলেভরা বসন্তের বিকেল ফ্রেমে বন্দী করা। খুব বেশী মন খারাপ হলে, কাক ডাকাভোরে কাউকে কিছু না বলে মোহনীয় সুরের তালে তালে ঘন্টা খানেকের একটা ড্রাইভ।

এভাবেই, ঘর-সংসার আর কর্মজীবনের ব্যস্ততা নিয়ে আর দশটা সাধারণ মানুষেরমতোই মোটামুটি ভালই কাটছিল আমার জীবন। কিন্তু, একদম ছেলেবেলাথেকে একটা প্রশ্ন বারবার কাঁটার মতো আমার সমস্ত সুখের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতো।আর, সে প্রশ্নটা হল, জীবনের পরে কী? এই জীবনের উদ্দেশ্যই বা কী? জ্ঞান হবার পর থেকে এই প্রশ্নগুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে জীবনের দীর্ঘ একটা সময়। মনে পড়ে, কৈশোরের শুরুতেই আমি আমার মা’কে প্রশ্ন করেছি বহুবার, “জীবনের উদ্দেশ্য কী, মা?”

মা বলতেন, আমি ইঁচড়ে পাকা। কখনো বা বিরক্ত হয়ে দূরে ঠেলে দিতেন। একপর্যায়ে প্রশ্ন করা বন্ধ করেছি, কিন্তু ডায়েরীর পাতা জুড়ে লিখেছিআমার অতৃপ্ত আত্মার না বলা অনুভুতি। এই একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পাগলেরমতো পড়েছি শত-সহস্র বই। হুমায়ুন আহমেদ থেকে মানিক বন্দোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র থেকে ম্যাক্সিম গোর্কী, বুঁদ হয়ে থেকেছি কখনও জীবনান্দ দাস বা কখনও নির্মলেন্দু গুনের কবিতায়, নানা দেশের নানা লেখকের লেখনীর মাঝে আমি শুধু খুঁজেছি একটি প্রশ্নের উত্তর।

মনে আছে, একদিন রমনা পার্কে হাঁটছিলাম। দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটু দূরে একা একাই হাঁটছিলাম। স্বভাবসুলভ ভাবুক মনে নানা ভাবনার মাঝে আবারও উঁকি দিল একই প্রশ্ন, “আচ্ছা, এই মূহুর্তে যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলে আমি কোথায় যাব? আমার সাফল্যে ভরা শিক্ষাজীবন, সম্ভাবনাময় কর্মজীবন কিংবা সুখী দাম্পত্য জীবন, আমার প্রিয় স্বামী-সন্তান, হায় আমার সাথে যে কিছুই যাবে না!” নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম, তাহলে কিসের পেছনে ছুটছি আমি? এ যে মরীচিকা ! ! এ যে ধোঁকা ! ! !

মনে পড়লো; শত-সহস্র বইয়ের মাঝে খুব যত্ন করে শেলফের অনেক উপরে উঠিয়ে রাখা ধূলি মলিন একটি বইয়ের কথা। আগ্রহের অভাবে যে বইটি কোনদিন খুলে দেখা হয়নি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কিংবা রোজার মাসে দূর্বোধ্যে হায়রোগ্লিফিকস্ এর সমগোত্রীয় ভাষায় খুব অনাগ্রহ নিয়ে পড়া ছাড়া যা কোনদিন যত্ন করে বোঝার চেষ্টা করা হয়নি।

তারপর…..

হাতের কাছে সবচাইতে অবহেলায় পড়ে থাকা ধূলিমলিন সেই বইটি বদলে দিল আমার সমগ্র জীবন, অবলীলায় দিল আমার সকল প্রশ্নের উত্তর, যে প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজেছি শত সহস্র আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্ররাজির অপূর্ব শোভায়, খুঁজেছি সবুজে ঢাকা গহীন অরণ্যের সীমাহীন নিস্তব্ধতায় কিংবা গোধূলী বেলায় স্বর্ণাভ সমুদ্রের অন্তহীন বিক্ষুব্ধ উর্মিমালায়।

একটি মাত্র বইয়ের শক্তিশালী বাণী যেন আমার অতৃপ্ত, অস্থির আর জিজ্ঞাসু মনের সকল পিপাসা দূর করে আমার অন্তরকে করলো প্রশান্ত। অবাক বিস্ময়ে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, এ কোন লেখক, যে আমার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকানা বলা প্রশ্নের উত্তর দেয়? এ কোন লেখক, যার প্রতি নিজের অজান্তেই আমার হৃদয় শুধু সিজদাবনত হয়? এ কোন লেখক, যার জ্ঞানের কাছে পৃথিবীর তাবৎ মানুষের জ্ঞান ক্ষুদ্র আর তুচ্ছ মনে হয়? . . .

“আল-কোরআন” নামের এই বইটি আমাদের সবার ঘরে ঘরে খুব যত্ন করে তোলা আছে। উদ্দেশ্যহীন আর অতৃপ্ত এইজীবনকে যারা সত্যিকার ভাবে বদলে দিতে চান, তারা একবার সব ব্যস্ততাকে একপাশে ঠেলে যত্ন করে বইটি খুলে দেখবেন কি..................?

*** লেখাটি আমার একজন খুব প্রিয় লেখিকার আমাকে উদ্দেশ্য করে। তার এই লেখাটা আমার হৃদয়ে এতই ভালোলাগার সৃষ্টি করেছে যে, আমি আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারলাম না। সত্যিই এই একটি মাত্র বইয়ের এতই শক্তি যে, সত্যকে নিয়ে ভাবুক হৃদয়কে পরিবর্তন করে দেয়। সঠিক পথ বাতলে দিয়ে জান্নাতের দিকে নিয়ে চলে। হে মহান আল্লাহ.............হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের সকলকে তোমার এইবাণীকে গাফেল অন্তরে গেঁথে হেদায়াতের নুর প্রকাশিত করে দাও।

(সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371292
০৭ জুন ২০১৬ রাত ০৯:১৯
মামুন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : খুব সুন্দর ও সুখপাঠ্য হয়েছে শেয়ার করার জন্যে শুকরিয়া । রামাদান কারীম ।
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
308215
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! বাহ্যিকভাবে আমরা এমন ভাব করি যে, কোরআনকে কতবেশী ভালোবাসি আন্তরিকতায় ভালোবাসা শূন্যের কোঠায়। আল্লাহ সবাইকে হেদায়াত দিন। জাযাকুমুল্লাহ।
371293
০৭ জুন ২০১৬ রাত ০৯:৪৮
ফারদিন ইসলাম লিখেছেন : ভালো লাগলো ! ধন্যবাদ
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
308216
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371300
০৭ জুন ২০১৬ রাত ১০:২৭
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : আমরা জাতি হিসেবে খুব অলস,, কুরআনকে কাভারে বন্দী রাখতেই বেশী ভালো বাসী
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
308217
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুন্দর ও সঠিক কথাই বলেছেন জাযাকুমুল্লাহ।
371313
০৮ জুন ২০১৬ রাত ০১:০৯
জান্নাতে যেতে চাও যারা লিখেছেন : বাস্তবতায় আলোকে লেখা শেয়ার জন্য জাযাকাল্লাহু খায়ের ।
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৫
308218
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371331
০৮ জুন ২০১৬ রাত ০১:৫৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অত্যন্ত শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৫
308219
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! ঠিক তাই। জাযাকুমুল্লাহ।
371345
০৮ জুন ২০১৬ রাত ০৪:৫৩
সরকার বিরোধী লিখেছেন : ভালো লাগলো । ধন্যবাদ
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৫
308220
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! জাযাকুমুল্লাহ।
371358
০৮ জুন ২০১৬ সকাল ১০:১২
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ছোট আপি। সুন্দর অনুভূতি জাগানিয়া উদ্ধূবুদ্ধকারী লিখা মাশাআল্লাহ।
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
308221
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দিন। আমিন। জাযাকুমুল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File