"রমাদ্বান উপলক্ষ্যে ব্লগ আয়োজনের প্রস্তুতি ও বিষয়ে""পবিত্র মাহে রমাদ্বানে রোজা রাখার আদব, সুন্নত, ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০২ জুন, ২০১৬, ১২:০৪:৩২ দুপুর
بِّسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ প্রথমেই তেলোয়াত ও সরল অর্থঃ
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ﴿١﴾ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ﴿٢﴾ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿٣﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ ﴿٤﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿٥﴾ সরল অর্থঃ রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। ১- নিশ্চয়ই আমরা কোরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। ২- আর আপনাকে কিসে জানাবে "লাইতুল কদর কী? ৩- "লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। ৪- সে রাতে ফিরিশতাগণ ও রুহ নাযিল হয় তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। ৫- শান্তিময় সে রাত ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত। :কোরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর থেকে)
"রমাদ্বান উপলক্ষ্যে ব্লগ আয়োজনের প্রস্তুতি ও বিষয় বণ্টনে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রমাদ্বানের ফজিলত বিষয়ে লেখার জন্য" আলহামদুলিল্লাহ; সমস্ত প্রশংসা সারা বিশ্বের একচ্ছত্র মালিক ও পালনকর্তার জন্য এবং দরূদ ও ছালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ), তাঁর আ-ল ও আওলাদ এবং সাহাবীগণের প্রতি। অধিক রহমত বরকত ও অধিক নাজাত লাভের এই মাসকে আবারো পেতে যাচ্ছি মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে এমাসের গুরুত্ব বুঝে বেশী বেশী আমলে ছলীহা করার তৌফিক দিন।
পবিত্র মাহে রমাদ্বানে রোজা রাখার আদব, সুন্নত, ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়: অসংখ্য রহমত, বরকত, মাগফিরাত, নিয়ে অচিরেই পবিত্র মাহে রমাদ্বানের আগমন হবে ইনশা-আল্লাহ। মু'মিন বান্দাদের জন্য মাহে রমাদ্বান হচ্ছে ইবাদতের মৌসুম, পাপ মোচনের মহা সুযোগ, জান্নাত লাভের এক অনন্য উপায়, এজন্য অধির আগ্রহে তারা রমাদ্বানের অপেক্ষায় আছেন। আল্লাহর নেক বান্দাদের জন্য রমাদ্বানে রহমত ও জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় ,জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় ও শয়তান কে আবদ্ধ করে রাখা হয়। পবিত্র রমাদ্বান ঈমানের দিকে, মাগফিরাতের দিকে আমাদেরকে আহবান করে জানাচ্ছে:
يا باغي الخير أقبل ويا باغي الشر أقصر ولله عتقاء من النار( أصحاب السنن)
হে কল্যাণ কামনা কারী নেক আমলে অগ্রসর হও ও হে পাপী পাপ বন্ধ কর আর রমাদ্বানের প্রতি রাতেই মুসলিমদের কে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। রমাদ্বানের রোজার কিছু আদব সুন্নত ও করণীয় বর্জনীয় দিক আছে যা সংক্ষেপে উল্লেখ করছি:
১- রোজার নিয়্যত করা: সকল আমল নিয়্যতের উপর নির্ভর করে। তাই কেবল খালিস ভাবে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে রোজার নিয়্যত করতে হবে ও রোজা রেখে যাবতীয় নেক আমলের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফরজ রোজায় রাতেই নিয়্যত করতে হবে। তবে নিয়্যত মনে মনে কল্পনাই যথেষ্ট মুখে উচ্চারণ সঠিক নয়।
২- সাহরী খাওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
تسحروا فإن في السحور بركة
তোমরা সেহরি খাও কেননা সাহরিতে বরকত আছে। (বোখারী)
তিনি আরো বলেন:
مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَرِ
আমাদের (মুসলিমদের) ও ইয়াহূদী-নাসারাদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া। (মুসলিম : ১০৯৬)
অর্থাৎ আমরা সিয়াম পালন করি সাহরী খেয়ে, আর ইয়াহূদী-নাসারারা রোযা রাখে সাহরী না খেয়ে।
نِعْمَ سَحُورُ الْمُؤْمِنِ التَّمْرُ
মু’মিনের সাহরীতে উত্তম খাবার হল খেজুর। তেমনি সাহরি ফজরের আজানের একটু পূর্বে খাওয়া সুন্নত। বেশী আগে খাওয়া সুন্নত পরিপন্থী। রাসূল (সাঃ) বলেছেন: (রোযাদারদের জন্য) সাহরী হল একটি বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন। (আহামদ : ১০৭০২)
সাহরী দেরী করে খাওয়া। অর্থাৎ তা শেষ ওয়াক্তে খাওয়া উত্তম। রাতের শেষাংশে গ্রহণকৃত খাবারকে সাহরী বলা হয়।
৩ - সাহরীর সময়ের পূর্বে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া: নফল ইবাদত এর মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ। রমাদ্বানে সাহরীর পূর্বে এ নামাজ পড়ার মহা সুযোগ। এগার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সুন্নত। তবে না পারলে আপনি দু, চার রাকাত পড়েন, তবু ও রমাদ্বানে তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়বেন না।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন: প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরশ থেকে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আর বান্দাদেরকে এই বলে আহবান করেন :
مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ وَمَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ
‘‘এখন যে ব্যক্তি আমার কাছে দু‘আ করবে আমি তা কবূল করব, যা কিছু আমার কাছে এখন চাইবে আমি তাকে তা দিব এবং যে আমার কাছে এখন মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দিব। (বুখারী:৬৩২১; মুসলিম:৭৫৮)
অতএব খাওয়ার পূর্বে অধ্যয়ন, তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, তাওবাহ-ইস্তিগফার ও দু‘আ কবূলের জন্য এটা এক উত্তম সময়। তাদের প্রশংসায় আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ ﴾ [الذاريات: ١٨]
‘‘তারা শেষ রাতে জেগে উঠে তাওবাহ-ইস্তিগফার করে।’’ (সূরাহ যারিয়াত-১৮)
৪- সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র ইফতার করা অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ইফতার করা। অতিরঞ্জিত সাবধানতার নামে ইফতার বিলম্ব না করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ
অর্থাৎ মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারী : ১৯৫৭; মুসলিম : ১০৯৮)
لاَ يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ لِأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ
যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইয়াহূদী ও নাসারাদের অভ্যাস হল ইফাতর দেরীতে করা। (আবূ দাঊদ : ২৩৫৩)
ثَلاَثَةُ مِنْ أَخْلاَقِ النَّبُوَّةِ تَعْجِيْلُ الإِفْطَارِ وَتَأْخِيْرُ السَّحُوْرِ وَوَضْعِ الْيَمِيْنِ عَلَى الشِّمِالِ فِي الصَّلاَةِ
তিনটি বিষয় নাবী চরিত্রের অংশ: সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে ফেলা, সাহরী শেষ ওয়াক্তে খাওয়া এবং সালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ১০৫)
كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ -صلى الله عليه وسلم- أَسْرَعُ النَّاسَ إِفْطَارًا وَأَبْطَأُهُمْ سُحُوْرًا
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ সকলের আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সকলের চেয়ে দেরীতে সাহরী খেতেন। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক : ৭৫৯১)
৫- মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা এবং খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يُفْطِرُ عَلَى رُطَبَاتٍ قَبْلَ أَن يُّصَلِّيَ...
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাগরিবের) সালাতের পুর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (আহমাদ : ৩/১৬৪)
তবে পেট ভর্তি করে খাওয়া ইসলাম নিরুৎসাহিত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
مَا مَلأُ ابْنُ آدَمَ وِعَاءُ بَطْنِهِ
‘‘যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খায় তার ঐ পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।’’ (তিরমিযী : ২৩৮০)
সুন্নাত হল পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবার খাবে, আর তিনভাগের একভাগ পানি পান করবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য খালী রেখে দিবে। (তিরমিযী : ২৩৮০)
৬- ইফতারের সময় দু‘আ করা: এ মুহূর্তটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার সময়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلّ لَيْلَةٍ لِكُلِّ عَبْدٍ مِنْهُمْ دَعْوَةً مُسْتَجَابَةً
(ক) ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এ মুক্তি দানের পালা রমাদ্বানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। সে সময় সিয়াম পালনকারী প্রত্যেক বান্দার দু‘আ কবূল হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় নিম্নের এ দুআটি পাঠ করতেন
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ
অর্থ : ‘‘পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরষ্কারও নির্ধারিত হল।’’(আবূ দাউদ : ২৩৫৭, দারাকুতনী : ২২৭৯ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
ইফতারের সময় যখন আযান হয় তখন আযানের পরের সময়টা দু‘আ কবূলের সময়। হাদীসে আছে আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দু‘আ কবূল হয়।
উল্লেখ্য: অনেকে ইফতারের সময় খাবার নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে দোয়ার সময় পায়না, এরকম মোটেই উচিত নহে বরং তখন দোয়া করা সুন্নত।
৭- বেশি বেশি কোরআন পাঠ করা, সালাত আদায়, যিকর ও দু‘আ করা।
রমাদ্বান যেহেতু কোরআন নাযিলের মাস সেহেতু এ মাসে কোরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন অন্য সময়ের চেয়ে বেশি করা উচিৎ।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,
الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ
সিয়াম ও কোরআন কিয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে, হে রব! দিনের বেলায় আমি তাকে পানাহার ও যৌন উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর।
কোরআনও বলবে, হে রব! (রাতে কুরআন পাঠের কারণে) রাতের নিদ্রা থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই এ পাঠকের ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ মঞ্জুর কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়েরই সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (আহমাদ : ৬৫৮৯)
তাই ইখলাছ সহকারে তাজবীদ সহকারে রমাদ্বানে বেশী বেশী কোরআন নিজে খতম করা উচিত। ইমাম শাফেযী (রহঃ) ইমাম মালিক (রহঃ) হাদীসের দরস্ বাদ দিয়ে রমাদ্বানে শুধু কোরআন তিলোয়াত করতেন। এমনকি রাসুল (সাঃ) রমাদ্বানে জিবরাঈল (আঃ) কে সম্পূর্ণ কোরআন পড়ে শুনাতেন।
৮- তারাবীহের নামাজ পড়া: একজন মু'মিনের জন্য তারাবীহের নামাজ কতইনা আনন্দের বিষয়। কিন্তু অনেক রোজাদার তারাবীহ এর গুরুত্ব দেয়না। অথচ রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه( رواه البخاري )
যে ব্যক্তি ঈমান ইখলাছ সহকারে তারাবীহের নামাজ পড়বে তার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
৯- ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা।
তাদেরকে যাকাত, ফিত্রাহ ও সাদাকাহ দেয়া। হাদীসে এসেছে :
كَانَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদ্বানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। (মুসলিম : ২৩০৮)
১০- উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা। রমাদ্বান ধৈর্যধারনের মাস। আর সিয়াম হল এ কার্য প্রশিক্ষণের ইনিষ্টিটিউট। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ يَوْمَئِذٍ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ
‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, ‘‘আমি রোযাদার’’। (মুসলিম : ১১৫১)
১১- অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকা। খাওয়া দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ ও আরাম আয়েশে অনেকেই অপচয় ও অপব্যয় করে থাকে। এটা এক গর্হিত কাজ এ থেকে বিরত থাকা।
১২- সকল পুরুষের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।
নামাজ পড়া ছাড়া কোন আমলের মূল্য নেই। তাই আগে ফরজ নামাজ এরপর রোজা। তাই যারা ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করে রোজা রাখেন তারা অহেতুক কষ্ট করা ছাড়া তাদের কোন লাভ হবেনা। ইচ্ছা করে ফরজ নামাজ ত্যাগ করা কুফুরি ।
১৩- দুনিয়াবী ব্যস্ততা কমিয়ে দেয়া। রমাদ্বানের এবরকতময় মাসে অর্থ উপার্জন ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে আখিরাতের মুনাফা অর্জনের জন্য অধিকতর বেশি সময় দেয়া আবশ্যক। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাত চিরস্থায়ী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ١٧ ﴾ [الاعلا: ١٧]
‘‘আর আখিরাতের জীবন সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ী।’’ (সূরা আ‘লা : ১৭)
১৪- খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য রক্ষা করা।
কেউ কেউ এতো বেশি খাবার খায় যে নাস্তা ও দুপুরের খাবার শুধু ইফতারের এক বেলায়ই তা পুষিয়ে নেয়। আবার তারাবীহ ও সেহরীর ওয়াক্তের দ্বিগুণ দিনের বেলায় ঘুমিয়ে তা কা'যা করে। এভাবে চললে খাবার ও ঘুমের কোরবানী হলো কীভাবে? তাই এ বিষয়ে রোযাদারকে ত্যাগ তীতিক্ষা করতে হবে এবং এ'দু’এর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সিয়াম পালন করে যেতে হবে।
১৫- শেষ দশ দিন এতেকা'ফে থাকা: রাসূল (সাঃ) নিয়মিত এতেকা'ফে থাকতেন। এমনকি শেষ বৎসর বিশ দিন এতেকা'ফে ছিলেন। তাই রমাদ্বানের সর্বোত্তম আমল শেষ দশ দিন এতেকা'ফে থাকা।
আসুন মুসলিম যুবকেরা আমরা রাসূল (সাঃ) এর সহীহ হাদীস মোতাবিক রমাদ্বানে বেশী বেশী নেক আমল করে জান্নাত লাভের চেষ্টা করি আর অযথা ঘুমে বা আড্ডা দিয়ে যেন সময় নষ্ট না করি। হয়তবা এ রমাদ্বান আমাদের জীবনের শেষ রমাদ্বান।
(মামুনূর রশীদ মাদানী মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) এই লেখাটা লিখতে গিয়ে একটি ঘটনা মনে পড়লো। পরের পর্বে আসছে..............।
http://www.quraneralo.com/virtues-of-madinah/" target="_blank" target="_blank" rel="nofollow">রমাদ্বানের ফজিলত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৫২১ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বুবু, শুকরিয়া।
পরে সময় করে পড়ব।
কোরআন ও হাদীসের সনদ সহকারে রামাদ্বানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমনঃ শবে ক্বদর, সেহরি, ইফতারসহ বিভিন্ন দিক অতি সুন্দর ও জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়েছে মাশাআল্লাহ।
বোধ করি ব্লগীয় আয়োজনের এটাই প্রথম লিখা। রামাদ্বানের প্রথম আগমনী বার্তা নিয়ে আসার জন্য অসংখ্য মুবারকবাদ আপু।
আর গাজী ভাইয়ের জন্য প্রাণভরা অনিঃশেষ দোয়া ও নিরন্তর শুভ কামনা। মহান রব ওনাকে সফলকাম করুণ পার্থিব ও আখিরাতের প্রতিটি মোকামে। আমীন।
সবাই তো প্রশংসা করলেন, আর তা করাই উচিত, আমিও তাতে সমর্থন করলাম!
তবে কিছু কথা আমি একটু অন্যভাবে বলি-
>>>>
সূরা বাকারার আয়াতগুলো দিয়ে শুরু করলে অধিক প্রাসঙ্গিক হতো!!
>>>>>
এ বাক্যটি এভাবে বললে আরো সুন্দর হতো মনে হয়-
কারণসমর্থন করে না। বলতে নিষেধাজ্ঞা বোঝায়! অথচ "নিষিদ্ধ" নয়!
***
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমান নিদ্রা খাদ্যগ্রহন শরীরের হাক্ক্ব, এদুটো না হলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়ে যায়! তাই খাবার ও ঘুমের কুরবানী মানে এটা নয় যে, শরীরের প্রয়োজন অপূর্ণ রাখতে হবে!!
বরং সংযত জীবনযাপন এবং অপচয় না করা, প্রতিবেশী ও গরীবদের প্রতি খেয়াল রাখা ইত্যাদি ঠিক রেখে যথেষ্ট পরিমান উন্নত খাওয়াতে যেমন দোষ নেই, ঠিক তেমনি কর্তব্যকর্মে গাফলতি না করে প্রয়োজনীয় পরিমান ঘুমাতেও দোষ নেই!!
ইয়াসসিরু ওয়া লা তুআসসিরু....
*********
নেতিবাচক কথায় সিদ্ধান্তমূলক শব্দপ্রয়োগ না করাই উত্তম! "তাদের কোন লাভ হবেনা" বাক্যটি "তাদের কোন লাভ হওয়া অনিশ্চিত" বললে সুন্দর হতো! কারণ ঈমানের পর যে কোনো নেকআমল কবুলিয়াতের বিষয়টি অপর আমলের সাথে সরাসরি সংযুক্ত নয়, বরং সেটি আল্লাহতায়ালার একক ইখতিয়ারে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্য অনুচিত।
***********
ক্বুরআন অধ্যয়নের, বিশেষতঃ অর্থ বুঝে পড়ার যোগ্যতা অর্জন/বৃদ্ধির ব্যাপারে আরো কয়েকটা বাক্য লিখলে অধিক সুন্দর হতো!
দোয়া করি আপনার মেধা ও কলম(কীবার্ড) আরো শাণিত হয়ে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির স্তরে পৌঁছে যাক! আমীন
রাতের একেবারে শেষের দিকে জাগতে না পারার আশংকা থাকলে সেহরি আগে খেয়ে ফেলা উচিৎ।
কুরআন খতম করে পড়ার চাইতে বুঝে অধ্যয়ন করা জরুরি তাদের জন্য, যারা তোতা পাখির মত আওড়ায়। তবে যারা নিয়মিত বুঝে কুরআন পড়ে, তারা বেশি বেশি খতম করতে পারেন।
আপা, খুব ভালো লিখেছেন। জাযাকাল্লাহু খাইর
অনেক ভালো লাগলো,
নতুন করে ক্লিয়ার ও হলো অনেক কিছু
জাঝাক আল্লাহ খাইরান
মন্তব্য করতে লগইন করুন