Rose Rose আমাদের দেশে প্রচলিত পীর মুরিদি বৈধ কিনা?Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ৩১ মে, ২০১৬, ০৭:১৮:০২ সন্ধ্যা

উত্তর: পীর মুরিদি দুটাই ফার্সী শব্দ যা অনারবদের আবিস্কৃত । আরবীতে পীর মুরিদি কোন শব্দ নেই। আরবীতে ছাত্র শিক্ষক الطالب ومعلم এ দুটো বিষয় আছে। আর এ দুটো বিষয় ইলম অর্জনের জন্য যথেষ্ট । রাসুল সা শিক্ষক আর সাহাবাগন ছাত্র ছিলেন। তেমনি আজ পর্যন্ত ইলমে ওহী শিখার জন্য সমগ্র বিশ্বে মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষক প্রথা চালু আছে।

রাসূল (সাঃ) এর ওফাতের শত শত বছর পর ভারত উপমহাদেশে কিছু সুফিবাদি লোকেরা তাদের ইচ্ছা মত পির মুরিদি চালু করেন।তারা এমন অনেক কিছু বিষয় ইসলামে যোগ করলেন যা মূলত ইসলামে নেই । তারা ইলমে তাছাউউফ, ইলমে মারিফত,ফানা ফিললা, কাশফ, ভিন্ন ভিন্ন তরিকা আবিষ্কার অথচ ইসলাম এক ও অভিন্ন, ভিন্ন ভিন্ন যিকির, বাইআত ইত্যাদি নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করলেন যা সমপূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া আবিস্কৃত।

তাছাড়া তাদের কিছু বিদাতি কাজ নিম্নরুপ:

১- অনেক পীর তাবিজ বিক্রি করে টাকা ইনকাম করেন। অথচ রাসূল (সাঃ) বলেছেন: তাবিজ বিক্রি করা বা ব্যবহার করা শিরক। তিরমিযি)

২- পীরেরা খতমে নারী, খতমে খাজিগান, খতমে জালালি, খতমে বোখারী পাঠ করে টাকা ইনকাম করেন যা রাসূল (সাঃ) এর যুগে ছিলোনা তা বিদআত ও বানোয়াট।

৩- পীরেরা উচ্চস্বরে চিল্লা চিল্লি করে যিকর্ করেন যা ইসলামে নেই বরং যিকর্ হবে নিম্ন স্বরে একা একা।

আল্লাহ তা'আলা বলেন :

ادعوا ربكم تضرعا وخفية ( سورة الأعراف 5 5 )

তোমাদের রবের যিকর্ করো বিনয়ী হয়ে গোপনে।

তেমনি পীর মুরিদরা, বানোয়াট দুরূদ পাঠ, বিনা দলিলে হাজার হাজার তাসবিহর বাইআত, পীরের নামের ওসিলায় দোয়া, কবর পূজা তথা পীরের কবরে ওয়াল দেওয়া বাতি দেওয়া, নাম লিখা, পীরের পায়ে ধরে সালাম করা, পীরকে গুনাহ মুক্ত মনে করা, পীরের কথাকে কোরআন হাদীসের দলিল ছাড়া অন্ধ ভাবেই তাকে মেনে নেওয়া ইত্যাদি বিদআত শিরকি কাজে তারা লিপ্ত।

৪- পীরেরা গদিসিনি পীর, পীর মারা গেলে নিজ ছেলেকে গদিসিনি পীর বানিয়ে যাওয়া যদিও অন্য কেহ এর চেয়ে বেশি যোগ্য, কারণ এতবড় ইনকামের সুযোগ কি অন্য কে দেওয়া যায়? যত পীর আছে সকলের মৃত্যুর পর ছেলেরাই গদিসিনি পীর।

৫- পীরেরা কোরআনের, হাদীসের অপব্যাখা করেন।। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

قال الله تعالى ياأيها الذين آمنوا اتقوا الله وابتغوا إليه الوسيلة .سورة مائدة 35.

পীরেরা বলে এখানে ওয়াসীলা হচ্ছে পীর ধরা, (নাউযুবিললাহ)। কোন তাফসিরের কিতাবে ওয়াসিলা দ্বারা পীর ধরা বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে ওয়াসিলা অর্থ নেক আমল , ما يقرب به العبد الي لله যে নেক আমলের মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহর নিকটবর্তী হয়।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:

أولائك الذين يدعون يبتغون الي ربهم الوسيلة .سورة الإسراء 57.

এরাই সঠিক যারা সরাসরি আল্লাহর কাছে ওয়াসিলা চায়। (কোন মানুষের কাছে নয়)। তাই পীরেরা কোরআনের অপব্যাখা করে জাহান্নামের দিকে ধাবিত।

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تكلم القرأن برأيه فليتبوا مقعده من النار ,رواه الترمذي وحسنه,

রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে তার মন মত কোরআনের তাফসির করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। (তিরমিযি)

আর পীর দের হাদীসের অপব্যাখার সীমা নেই। পীরদের অধিকাংশ আমল,ফতোয়া, যিকির, খতম, দুরূদ মনগড়া বানানো যার দলিল সহীহ হাদীসে নেই, তারা সহীহ হাদীসকে মনগড়া যুক্তি দিয়ে প্রত্যাখান করেন।

৬- পীরেরা ইসলামের প্রথম যুগে মক্কার কুফফারে কুরাইশদের মত যুক্তি দেখান। মক্কার কাফিররা বলত: কোরআনের ভাষায়:

ما نعبدهم إلا ليقربنا الي الله زلفي

আমরা মূর্তি পূজা করি যাতে মূর্তি আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। আজ যারা পীর মুরিদি করে তারাও একই ভাবে বলে পীরের মাধ্যমে জান্নাতে যাব। তোমার পীরে জান্নাতের সার্টিফিকেট পেয়ে গেছে? পীর কি নিজে জান্নাতে যেতে পারবে?

قال الله تعالي ادعوني استجب لكم

আল্লাহ তা'আলা বলেন তোমরা সরাসরি আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (সুরা গাফির 60)। এখানে কারো মাধ্যম ধরতে বলা হয়নি।

৭- পীরেরা মুরিদানদেরকে জান্নাতের সার্টিফিকেট দেন। কত পীর তার মুরিদদের বলেন: আমার কাছে বাইআত-ই একমাত্র জান্নাতের সার্টিফিকেট পাওয়ার উপায়। পীরে কামিল ওলিকুলশিরমনী, ছাহেবে কিবলা ইত্যাদি মিথ্যা খেতাব দিলে পীরের সুহবতে জান্নাতের সার্টিফিকেট মিলে। (নাউযুবিল্লাহ)। কে জান্নাতি ও কে জাহান্নামি আল্লাহ তা'আলা ছাড়া কেহই বলতে পারেনা। তাই যারা জান্নাতের সার্টিফিকেট দেয় তারা ভ্রান্ত নি:সন্দেহে।

৮- পীরেরা বিদআত শিরকের কিছু কিতাব ও দাওয়াত সাপ্লাই করেন। মকছুদুলমু'মিনিন, নিয়ামুল কোরআন, ভেদে মারিফত, ইয়াদে খোদা, দুরূদে আহাজারি, তাজ, তাবিজেরুহুললাহ, ইত্যাদি। পীরদের রচিত কিতাবে শিরক বিদআতে পরিপূর্ণ। এমনকি বেহেশতি জেওরের চতুর্থ খন্ড গণনা দিয়ে লিখা তাবিজের শিরকে পরিপূর্ণ। পীরদের শিরক বিদআত সীমাহীন। জেনে রাখুন অনেক পীর মাজহাবের দোহাই দিয়ে তাদের শিরকি বিদআতি কাজ বৈধ করার চেষ্টা করে অথচ ইমাম আবূহানিফার: সহ সকল ইমাম উক্ত পীর মুরিদির বিদআত শিরকি থেকে মুক্ত ছিলেন। ইমামদের যুগে পীর মুরিদি বলতে কিছুই ছিলনা। আসুন মুসলিম যুবকেরা পীরের কাছে সফলতা কামনা না করে, পীরের শিরকে লিপ্ত না হয়ে নিজেই কোরআন হাদীস গবেষণা করে তদনুযায়ী আমল করে সরাসরি আল্লাহর তা'আলার কাছে সফলতা কামনা করি। ইলম অর্জনের জন্য মাদ্রাসায় শিক্ষকদের কাছে যাই। যে কোন আমলে রাসূল (সাঃ) এর সহীহ হাদীসের দলিল অনুসন্ধান করি। (মামুন রাশেদ মদিনা ইসলামই বিশ্ববিদ্যালয়)

মানুষকে বুঝানোর সঠিক রাস্তা হলো, কোরআন আর হাদীস ভিত্তিক। অযথা কিসসা-কাহিনী বা বানোয়াট যুক্তি দিয়ে নয়! আপনি কোরআন সুন্নাহর আলোকে তাকে বুঝান। সে-ই সিদ্ধান্ত নেবে কোনটা গ্রহণ করবে। মদিনা আমাদের আদি শিক্ষাকেন্দ্র এবং সর্বশেষ শিক্ষাকেন্দ্র! মদিনার প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা যেমন থাকবে (বাস্তবিক, মাযার পূজারীদের মতো নয়!) তেমনি ওখানকার আলেমদের প্রতিও আমাদের রাখতে হবে অগাধ আস্থা। কেননা ওখানকার মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুলুল্লাহ সা. আমাদের আগেই বলে গেছেন।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

«إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا».

“ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে’’। [সহীহ বুখারী – ১৮৭৬ ও মুসলিম – ৩৭২]

মদীনা দারুল ঈমান বা ঈমানের গৃহ। তাইতো এখান থেকেই ঈমানের আলো সারা বিশ্বে বিচ্ছুরিত হয়েছিল। পরিশেষে মানুষ যখন ঈমান হতে বিচ্যুত হতে থাকবে, তখন ঈমান তার গৃহে তথা মদীনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا».

“ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে’’। [সহীহ বুখারী – ১৮৭৬ ও মুসলিম – ৩৭২]

«يَضْرِبُونَ أَكْبَادَ الإِبِلِ يَطْلُبُونَ الْعِلْمَ فَلاَ يَجِدُونَ عَالِمًا أَعْلَمَ مِنْ عَالِمِ الْمَدِينَة»

‘‘মানুষ হন্যে হয়ে ইলম অনুসন্ধান করবে, তবে মদীনার আলেমের চেয়ে অধিক বিজ্ঞ কোন আলেম তারা খুঁজে পাবে না।’’ [নাসায়ী: ৪২৭৭ ও হাকেম: ৩০৭ সহীহ সূত্রে]

পরিশেষেঃ মক্কা বা মদিনা নগরীতে কোন পীর মুরিদি প্রথা নেই। এগুলো নব্য আবিষ্কৃত সকলের উচিৎ কোরআন ও সহীহ হাদীস নিজে পড়ে তার উপর আমল করা। বিগত কয়েকটি পোস্টে যে লেখাগুলো পোস্ট করেছিলাম তা মদিনা ইসলামই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ছাত্রবৃন্দের লেখা। পোস্টটি শেয়ার করে মুসলিম যুবকদেরকে পীরদের শিরকের বেড়াজাল থেকে বাঁচাই।

বিষয়: বিবিধ

২৬৩৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370554
৩১ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
নকীব আরসালান২ লিখেছেন : পীর ফারসি শব্দ, অর্থ বৃদ্ধ, মুরুব্বী। মুরিদ শব্দটি আরবি ক্রিয়ামূল ইরাদা থেকে কর্তৃবাচক বিশেষ্য, অর্থ বাব ভেদে ইরাদা পোষনকারি বা বর্জনকারী। খৃস্টানি বৈরাগ্যবাদ, শিয়াবাদ, ব্রাহ্মন্যবাদ ইত্যাদির মিস্রনে সুফিবাদের জন্ম। ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।
০২ জুন ২০১৬ সকাল ১১:০৭
307614
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুন্দর ও অর্থবোধক মন্তব্যে অনেককিছু জানতে পারলাম। জাযাকুমুল্লাহ।
370559
৩১ মে ২০১৬ রাত ০৯:১৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : এক পীরের মুরিদ আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেল খাওয়ার দাওয়াতে। গিয়ে দেখি সেখানে অনেক লোকজন। রুমে ডুকেই দেখী বড় বড় অক্ষরে লেখা "হাদিস দেখে পিরের আমল যাছাই করোনা, ফিরের আমল দেখেই হাদিস সিখ। আমি সাথে সাথেই বল্লাম এই লেখা কে লিখেছে..? কেউ উত্তর দেয়না সবাই চুপ। আমাকে এই শয়তানের দলে দাওয়াত দেওয়ার সাহস আপনারা পেলেন কোথায়..? ওদের মধ্যে একেক জন একেক কথা বলে অঅমাকে বুঝাবার চেষ্টা করছেন। আমি তাদেরকে বল্লাম আগামি কাল আমি পুলিশ নিয়ে আসবো এই বিদায়াত সহ আপনাদেরকে গ্রেফতার করাব। সকলেই চুঠাচুটি শুরু হয়ে গেছে। পরে জান্তে পারলাম ওরা আটরশীর সয়তান পরের দিন গিয়ে দেখী কেউ ওখানে নেই। ধন্যবাদ
০২ জুন ২০১৬ সকাল ১১:০৯
307615
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! আপনি সঠিক কাজটিই করেছেন। নয়তো শয়তানের প্রভাব আপনাকেও প্রভাবিত করতো। সময় থাকতে সকলের ঈমান বাঁচানোর কাজে লাগা উচিৎ। জাযাকুমুল্লাহ
370564
৩১ মে ২০১৬ রাত ১০:৩৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পির মুরিদি এখন খুবই ভাল ব্যবসা!
০২ জুন ২০১৬ সকাল ১১:০৯
307616
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
370571
০১ জুন ২০১৬ রাত ০১:৩৭
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। পির আছে বলেই ব্যবসা আছে।
০২ জুন ২০১৬ সকাল ১১:১১
307617
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সঠিক কথাই বলেছেন ভাইয়া। সবাই বুঝতো এই সূক্ষ ব্যপার গুলো??? জাযাকুমুল্লাহ।
370578
০১ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:০৩
শেখের পোলা লিখেছেন : এটি একটি বিনা মূলধনে বংশ পরাম্পরা ব্যবসা। আল্লাহ এদের ইমান দিক।
০২ জুন ২০১৬ সকাল ১১:১১
307618
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সঠিক কথাই বলেছেন ভাইয়া। সবাই বুঝতো এই সূক্ষ ব্যপার গুলো??? জাযাকুমুল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File