"নিসফ শা’বান বা শবে বরাত .."করনীয় ও বর্জনীয়। ড.আব্দুল্লাহ্ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (রাহিঃ)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২২ মে, ২০১৬, ০১:৫৮:২৯ দুপুর
শাবান মাস একটি মুবারক মাস। বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ মাসে বেশি বেশি নফল রোযা পালন করতেন। শাবান মাসের সিয়ামই ছিল তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এমাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনো কখনো প্র্য়া পুরো শাবান মাসই তিনি নফল সিয়াম পালন করতেন। এ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ
“এ মাসে রাব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের কর্ম উঠানো হয়। আর আমি ভালবাসি যে, আমার রোযা রাখা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।” (নাসাঈ, আস-সুনান ৪/২০১; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২৪৭ হাদীসটি হাসান।)
এ মাসের একটি বিশেষ রাত হলো শবে বরাত। আমরা বাংলায় অনেক সময় “ভাগ্য রজনী” বলে থাকি। কিছু হাদীস প্রচলিত আছে যে, এ রাত্রিতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত-মওত ও রিযক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এ অর্থে বর্ণিত হাদীস গুলির সনদ অত্যন্ত দুর্বল অথবা জাল ও বানোয়াট। এ অর্থে কোনো সহীহ, হাসান বা কোনো গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয় নি। উলেখ্য যে, সূরা দুখানের ৩-৪ আয়াতে আলাহ বলেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
“আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।” (সূরা: ৪৪-দুখান: আয়াত ৩-৪।)
এর ব্যাখ্যায় তাবিয়ী ইকরিমাহ, বলেন, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘মধ্য শা’বানের রাতকে’ বুঝানো হয়েছে। তার মতে, এ রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ে ফয়সালা করা হয়। কিন্তু অন্যান্য সাহাবী-তাবিয়ী বলেছেন যে, এখানে “লাইলাতুম মুবারাকা” বলতে লাইলাতুল কদর বুঝানো হয়েছে। মুফাস্সিরগ ইকরিমার মত বাতিল বলেছেন এবং অন্যান্য সাহাবী-তাবিয়ীর মত গ্রহণ করেছেন। শবে বরাতের ফযীলত প্রমাণিত। তবে এ আয়াতে শবে বরাতের কথা বলা হয় নি। কারণ আল্লাহ কুরআনে সুস্পষ্ট বলেছেন যে, তিনি রামাদানে কুরআন নাযিল করেছেন। কাজেই বিভিন্ন উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে শবে বরাতে কুরআন নাযিলের দাবি করা ভিত্তিহীন ও অর্থহীন। আল্লাহ কুরআন নাযিলের রাতকে “লাইলাতুল কাদ্র” বা ‘মহিমান্বিত রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যত্র এই রাত্রিকেই ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা ‘বরকতময় রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন।
এ মহিমান্বিত ও বরকতম রাত বা লাইলাতুল কাদরেই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। তাবারী, ইবনু কাসীর, রুহূল মাআনী, মাআরিফুল কুরআন সহ যে কোনো তাফসীরে সূরা দুখানের তাফসীর পড়লেই আপনারা বিষয়টি জানতে পারবেন।
হাদীসে এবং সাহাবী-তাবিয়ীদের যুগে “লাইলাতুল বারাআত” পরিভাষাটি ছিল না। হাদীসে এ রাতটিকে “লাইলাতু নিসফি শা’বান” বা “মধ্য শাবানের রাত ” বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
“আল্লাহ তা‘য়ালা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষনকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনু মাজাহ, আস- সুনান ১/৪৪৫; বাযযার, আল-মুসনাদ ১/১৫৭, ২০৭, ৭/১৮৬; আহমদ ইবনু হাম্বল, আল-মুসনাদ ২/১৭৬; ইবনু আবি আসিম, আস-সুন্নাহ,পৃ ২২৩-২২৪; ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ১২/৪৮১; তাবরানী, আল-মুজাম আল-কাবীর, ২০/১০৮, ২২/২২৩; আল-মুজাম আল-আওসাত, ৭/৬৮; বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান, ৩/৩৮১; ইবনু খুযায়মা, কিতাবুত তাওহীদ ১/৩২৫-৩২৬।)
হাযেরীন, ৮ জন সাহাবীর সূত্রে বিভিন্ন সনদে এ হাদীসটি বর্ণিত। শবে বরাত বিষয়ে এটিই একমাত্র সহীহ হাদীস।
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ রাতটি ফযীলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। আর ক্ষমা লাভের শর্ত হলো শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হওয়া। এ দুটি বিষয় থেকে যে ব্যক্তি মুক্ত হতে পারবেন তিনি কোনোরূপ অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। আর যদি এ দুটি বিষয় থেকে মুক্ত হতে না পারি, তবে কোনো আমলেই কোনো কাজ হবে না। কারণ ক্ষমার শর্ত পূরণ হলো না। দুঃখজনক হলো, আমরা শবে বরাত উপলক্ষ্যে অনেক কিছুই করি, তবে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ দুটি শর্ত পূরণের চেষ্টা খুব কম মানুষই করেন।
শিরকের ভয়াবহতা আমরা জানি। আরেকটি ভয়ঙ্কর পাপ হিংসা বিদ্বেষ। মহাপাপ হওয়া ছাড়াও এ পাপের দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, তা অন্যান্য নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, আগুন যেমন খড়কুটো ও খড়ি পুড়িয়ে ফেলে হিংসাও তেমনি মানুষের নেক আমল পুড়িয়ে ফেলে। এ পাপের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহর সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হওয়া।
উপরের হাদীস থেকে আমরা তা জেনেছি। এ বিষয়ে অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ বলেন:
تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ يَوْمَ الاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ إِلاَّ عَبْدًا بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ اتْرُكُوا أَوْ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا
“মানুষদের আমল প্রতি সপ্তাহে দুবার পেশ করা হয়: প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। তখন সকল মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়, কেবলমাত্র যে বান্দার সাথে তার ভাইয়ের বিদ্বেষ-শত্র“তা আছে সে ব্যক্তি বাদে। বলে দেওয়া হয়, এরা যতক্ষণ না ফিরে আসে ততক্ষণ এদেরকে বাদ দাও।” (মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৯৮৮।)
মুসলিম ভাইকে ভালবাসা ও তার কল্যাণকামনা যেমন ফরয ইবাদত, তেমনি ভয়ঙ্কর হারাম পাপ হলো মুসলিম ভাইকে শত্র“ মনে করা, তার প্রতি হৃদয়ের মধ্যে অশুভকামনা ও শত্র“তা পোষণ করা। কোনো কারণে কাউকে ভালবাসতে না পারলে অন্তত শত্র“তা ও অশুভকামনার অনুভূতি থেকে হৃদয়কে রক্ষা করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। দুনিয়াতে কেউ আমাদের পাওনা, অধিকার, সম্পদ বা পরিজনের ক্ষতি করলে আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করার সর্বপ্রকার বৈধ চেষ্টা করতে ইসলামে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজের হক্ক আদায়ের জন্য প্রচেষ্টা করা মুমিনের দায়িত্ব। এতে অন্য মুমিনের সাথে আমাদের বিরোধ হতে পারে। তবে বিরোধ ও বিদ্বেষ এক নয়।
আমাদের হক্ক আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হবে। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক গীবত, নিন্দা, শত্র“তা, অমঙ্গল কামনা ও ক্ষতি করার চিন্তা থেকে হৃদয়কে সর্বোতভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করতে হবে। সংঘাতময় জীবনে মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে রাগ, লোভ, ভয়, হিংসা ইত্যাদি আসবেই। এসে যাওয়াটা অপরাধ নয়, বরং পুষে রাখাটাই অপরাধ। মনটা একটু শান্ত হলেই যার প্রতি বিদ্বেষভাব মনে আসছে তার নাম ধরে তার কল্যাণকামনা করে দোয় করবেন। বিরোধিতা থাকলে আলাহর কাছে বলবেন, আলাহ আমার হক্ক আমাকে পাইয়ে দিন, এছাড়া তার কোনো অমঙ্গল আমি চাই না। দেখা হলে সালাম দিবেন। এরূপ আচরণ আপনার জীবনে বিজয়, সফলতা ও রহমত বয়ে আনবে।
হিংসা বিদ্বেষের ভয়ঙ্করতম রূপ ধর্মীয় মতভেদগত বিদ্বেষ।
খুটিনাটি মতভেদ নিয়ে শত্র“তা করা এবং মতভেদকে দলভেদ বানিয়ে দেওয়া ইহূদী-খৃস্টান ও অন্যান্য জাতির ধ্বংসের অন্যতম কারণ। রাসূলুল্লাহা (সা.) অনেক হাদীসে এ বিষয়ে উম্মাতকে সতর্ক করেছেন। এক হাদীসে তিনি বলেন :
دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الأُمَمِ قَبْلَكُمْ الْحَسَدُ وَالْبَغْضَاءُ هِيَ الْحَالِقَةُ لا أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعَرَ وَلَكِنْ تَحْلِقُ الدِّينَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَفَلا أُنَبِّئُكُمْ بِمَا يُثَبِّتُ ذَاكُمْ لَكُمْ أَفْشُوا السَّلامَ بَيْنَكُمْ
“পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলির ব্যাধি তোমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে : হিংসা ও বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ মুণ্ডন করে দেয়। আমি বলি না যে তা চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দ্বীন মুণ্ডন ও ধ্বংস করে দেয়। আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর শপথ করে বলছি, মুমিন না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর একে অপরকে ভালো না বাসলে তোমরা মুমিন হতে পারবে না। এ ভালবাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, সর্বত্র ও সবর্দা পরস্পরে সালাম প্রদানের রেওয়াজ প্রচলিত রাখবে।” (তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৬৬৪, আহমদ, আল-মুসনাদ আহমদ ১/১৬৪, হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৪/১৮৫, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৩০, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ৩/২৩৭-২৪২, নং ৭৭৭। হাদীসটি হাসান।)
হিংসা-বিদ্বেষ দ্বীনদার মানুষদের প্রিয়তম ও মজাদার পাপ। যে দ্বীনদার মানুষ কোনোভাবেই গানবাজনা শুনতে বা সিনেমা দেখতে রাজি নন, সে মানুষটিই খুটিনাটি ধর্মীয় মতভেদ নিয়ে অন্য মুসলিমের প্রতি শত্র“ত্বা ও বিদ্বেষ পোষণ করেন। অথচ গানবাজনার চেয়েও ভয়ঙ্করতম পাপ বিদ্বেষ। কারণ গানবাজনার কারণে পাপ হলেও অন্য নেক আমল নষ্ট হওয়া বা আল্লাহর সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা বর্ণিত হয় নি। আর বিদ্বেষের বিষয়ে অতিরিক্ত এ দুটি শাস্তিই রয়েছে।
শয়তান সকল আদম সন্তানকেই জাহান্নামে নিতে চায়। কুফুরী, মদ, ব্যভিচার ইত্যাদি মহাপাপ তার অস্ত্র। তবে যে সকল দীনদার মানুষ পাপ থেকে আত্মরক্ষা করতে সচেষ্ট তাদেরকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য শয়তানের অন্যতম অস্ত্র তিনটি: শিরক, বিদ‘আত ও হিংসা-বিদ্বেষ। এ পাপগুলিকে শয়তান “ধর্মের” লেবাস পরিয়ে দেয়, ফলে দ্বীনদার মানুষ না বুঝেই তার ক্ষপ্পরে পড়েন।
শয়তানের ওয়াস-ওয়াসায় পাপের প্রতি ঘৃণার নামে আমরা মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করি বা তাকে শত্র“ মনে করি ও বিদ্বেষ পোষণ করি। পাপকে ঘৃণা করা যেমন আমাদের দায়িত্ব, তেমনি পুণ্যকে ভালবাসাও আমাদের দায়িত্ব। কাজেই পাপ-পুন্যের ব্যালান্স করেই হিংসা ও ভালবাসা থাকবে। সবচেয়ে বড় পুণ্য ঈমান।
যতক্ষণ কোনো মানুষকে সুনিশ্চিতভাবে কসম করে কাফির বলে দাবি করতে না পারব, ততক্ষণ তাকে ভালবাসা আমাদের জন্য ফরয। তার পাপের ওযন অনুসারে তার প্রতি আমার বিরক্তি থাকবে। কিন্তু কখনোই কোনো বিদ্বেষ, শত্র“তা বা অমঙ্গল কামনা থাকবে না। বরং মুমিন ভাই হিসেবে তাকে ভালবাসব, তাকে সালাম দিব, দু'আ করব। মনে করুন, একজন মুসলমান নামায পড়েন এবং দাড়ি রাখেন, আর অন্য মুসলমান নামায পড়েন কিন্তু দাড়ি রাখেন না। দাড়ি পালনকারী মুসলিমের প্রতি আমার ভালবাসা বেশি হবে। দাড়ি কাটা কর্মের প্রতি আমার ঘৃণা থাকবে। দাড়ি কাটার কারণে উক্ত মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আমার আপত্তি বা বিরক্তি থাকতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তার প্রতি আমার বিদ্বেষ বা শত্রুতা থাকতে পারে না। যদি দাড়ির জন্য তাকে শত্রু“ বানান, তাহলে তার ঈমান ও নামায কোথায় রাখবেন? আল্লাহ বলেছেন, মু'মিনের পুণ্যকে ১০ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে সাওয়াব দেবেন, আর পাপের জন্য একটিই শাস্তি।
অথচ আমরা শয়তানের ওয়াস-ওয়াসায় মুমিনের পুণ্যকে অবজ্ঞা করে পাপকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে ফেলি। হয়ত বললেন, দাড়ি রাখেনি মানেই নবী মানে না, কাজেই ওর ঈমান বা নামায-রোযার দাম কী? এগুলি হলো মুসলমানকে বিদ্বেষ করার শয়তানী ওয়াস-ওয়াসা। মুমিনের পুণ্যকে বড় করে দেখুন, পাপের জন্য ওযর খুজুন, দোয়া করুন, নসীহত করুন, কিন্তু মুমিনের প্রতি হৃদয়ে বিদ্বেষ বা শত্র“ভাব রাখবেন না।
আরো লক্ষ্যণীয় যে, ফরয-ওয়াজিব নষ্ট করা বা হারামের লিপ্ত হওয়ার কারণে কিন্তু কেউ কাউকে ঘৃণা করছে না। এমনকি দাড়ি কাটার মত সুস্পষ্ট পাপের কারণেও হিংসা বিদ্বেষ হচ্ছে না। কিন্তু মতভেদীয় পাপ-পুণ্যের কারণে হিংসা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছি। মীলাদ, কিয়াম, মুনাজাত, যিকরের পদ্ধতি, দীন প্রচার ও কায়েমের পদ্ধতি, কোনো একজন ইমাম, পীর, দল বা মতের কারণে আমরা একে অপরকে ঘৃণা করছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবই মুস্তাহাব-মাকরূহ পর্যায়ের। এ ধরনের বিষয় নিয়ে মুসলমান ভাইয়ের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ বা শত্রু“ভাব পোষণ করা যে শয়তানের ষড়যন্ত্র তা বুঝতে কি বেশি বুদ্ধির প্রয়োজন?
সবচেয়ে বড় কথা, মুমিনকে নিজের গোনাহের চিন্তায় ও আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকতে হবে। অন্যের পাপের চিন্তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে আমাদের হৃদয়গুলি বিদ্বেষ মুক্ত হবে। কোনো একজন মুমিনের বিরুদ্ধেও যেন মনের মধ্যে বিদ্বেষ না থাকে সেজন্য কুরআনের ভাষায় সর্বদা দুআ করুন:
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالإِيمَانِ وَلا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلاًّ لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
“হে আমাদের প্রভু, আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং ঈমানের ক্ষেত্রে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করুন। আর আপনি আমাদের অন্তরে মুমিনগণের বিরুদ্ধে কোনো হিংসা, বিদ্বেষ বা অমঙ্গল ইচ্ছা রাখবেন না। হে আমাদের প্রভু, নিশ্চয় আপনি মহা করুণাময় ও পরম দয়ার্দ্র।” (সূরা হাশর: ১০ আয়াত।)
আসুন আমরা সবাই আল্লাহর দরবারে এভাবে বারবার প্রার্থনা করে নিজেদের অন্তরগুলিকে সকল হিংসা, বিদ্বেষ ও অহংবোধ থেকে পবিত্র করি। আসুন আমরা শবে বরাত উপলক্ষ্যে সকল প্রকার শিরক, হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে তাওবা করি ও হৃদয়গুলিকে মুক্ত করি। জাগতিক কারণে বা ধর্মীয় মতভেদের কারণে যাদের প্রতি শত্রু“ভাব বা বিদ্বেষ ছিল তাদের জন্য দু'আ করি।
তাহলে আমাদের কয়েকটি লাভ হবে। প্রথমত, কঠিন পাপ থেকে তাওবা হলো। দ্বিতীয়ত, শবে বরাতের সাধারাণ ক্ষমা লাভের সুযোগ হল। তৃতীয়ত, বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানি যে, হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হৃদয় লালন করা রাসূলুল্লাহ -এর অন্যতম সুন্নাত। যার মনে হিংসা, বিদ্বেষ বা অমঙ্গল কামনা নেই তিনি অল্প আমলেই জান্নাত লাভ করবেন এবং জান্নাতে রাসূলুল্লাহ -এর সাহচার্য লাভ করবেন। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ বলেন:
يَا بُنَيَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تُصْبِحَ وَتُمْسِيَ لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ/ غِلٌّ لأَحَدٍ فَافْعَلْ ثُمَّ قَالَ لِي يَا بُنَيَّ وَذَلِكَ مِنْ سُنَّتِي وَمَنْ أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجَنَّةِ
“বেটা, যদি সম্ভব হয় তাহলে এভাবে জীবনযাপন করবে যে, সকালে সন্ধ্যায় (কখনো) তোমার অন্তরে কারো জন্য কোনো ধোঁকা বা অমঙ্গল কামনা থাকবে না। অতঃপর তিনি বলেন : বেটা, এটা আমার সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। আর যে আমার সুন্নাতকে (পালন ও প্রচারের মাধ্যমে) জীবিত করবে সে আমাকেই ভালবাসবে। আর যে আমাকে ভালবাসবে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।” (তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৪৬, কিতাবুল ইলম, নং ২৬০২। তিরমিযী বলেন হাদীসটিকে হাসান গরীব।
উপরের সহীহ হাদীস থেকে আমরা জেনেছি যে, হৃদয়কে শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করাই শবে বরাতের মূল কাজ। এ রাত্রিতে অন্য কোনো আমল করতে হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। তবে আমল করার মত কয়েকটি যয়ীফ হাদীস থেকে তিনটি আমল জানা যায়: প্রথমত: কবর যিয়ারত করা, দ্বিতীয়ত, দুআ করা এবং তৃতীয়ত নফল সালাত আদায় করা।
ইমাম তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ আয়েশা (রা)-এর সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, যাতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ () রাতের গভীরে কাউকে না বলে একাকী বাকী গোরস্তানে যেয়ে মুর্দাদের জন্য দুআ করেছেন। তিরমিযী উলেখ করেছেন যে, তাঁর উস্তাদ ইমাম বুখারী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন। (তিরমিযী, আস-সুনান ৩/১১৬, ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৪৪৪, আহমদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ, ৬/২৩৮।)
ইমাম ইবনু মাজাহ আলী (রা)-এর সূত্রে একটি হাদীস সংকলন করেছেন, যাতে বলা হয়েছে:
إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ أَلا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ أَلا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلا كَذَا أَلا كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ.
যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাতে (সালাতে- দোয়ায়) দণ্ডায়মান থাক এবং দিবসে সিয়াম পালন কর।
কারণ; ঐ দিন সুর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোন রিয্ক অনুসন্ধানকারী আছে কি? আমি তাকে রিয্ক প্রদান করব। কোন দুর্দাশাগ্রস্থ ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে মুক্ত করব। এভাবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। (ইবনু মাজাহ, আস- সুনান ১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮।)
এ হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী ইবনু আবী সাবরাহকে ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করেছেন। (ইবনু হাজার , তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃষ্ঠা ৬৩২; তাহযীবুত তাহযীব, ১২/২৫-২৬
এছাড়া এ অর্থে আরো কয়েকটি যযীফ সনদের হাদীস থেকে এ রাতে দু‘আ ও সালাত আদায়ের ফযীলত জানা যায়।
এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। প্রথমত, এ রাতের নামাযের কোনো সুনির্ধারিত নিয়ম হাদীসে বলা হয় নি। অমুক সূরা অতবার পড়ে অত রাকাত সালাত আদায় করলে অত সাওয়াব ইত্যাদি যা কিছু বলা হয় সবই জাল ও বানোয়াট কথা।
মু'মিন তার সুবিধামত যে কোনো সূরা দিযে যে কয় রাকআত সম্ভব সালাত আদায় করবেন এবং দু'আ করবেন।
দ্বিতীয়ত, যিয়ারত, দু'আ ও সালাত সবই একাকী আদায় করাই সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ বা সাহাবীগণ কেউ কখনোই এ রাতে মসজিদে সমবেত হন নি বা সমবেতভাবে কবর যিয়ারত করতে যান নি। সকল নফল নামায ও তাহাজ্জুদের মত এ রাতের নামাযও নিজের বাড়িতে পড়া সুন্নাত। হাদীস থেকে আমরা জানি যে, এতে বাড়িতে বরকত নাযিল হয়। এছাড়া এতে স্ত্রী ও সন্তানগণও উৎসাহিত হয়।
শবে বরাত হলো ইবাদত বন্দেগি ও দু'আ-ক্রন্দনের রাত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা একে খাওয়া-দাওয়া ও উৎসবের রাত বানিয়ে ফেলেছি। এ রাতে হালূয়া-রুটি বা ভাল খাবার খাওয়া ও এরূপ করার মধ্যে কোনোরূপ সাওয়াব আছে বলে কল্পনা করা ভিত্তিহীন কুসংস্কার ছাড়া কিছুই নয়। এ রাতে আলোকসজ্জা, কবর বা গোরস্তানে আলোকসজ্জা, বাজি ফোটানো ইত্যাদি আরো গুরুতর অন্যায়। এগুলি মূলত এ রাতের ইবাদত ও আন্তরিকতা নষ্ট করে এবং মুমিনকে বাজে কাজে ব্যস্ত করে।
ফরয ও নফলের সীমারেখা অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে শবে বরাতে রাত্রিতে কম বেশি কিছু নামায পড়েন, কিন্তু সকালে ফযরের নামায জামাতে পড়ছেন না বা মোটেই পড়ছেন না। এর চেয়ে কঠিন আত্ম-প্রবঞ্চনা আর কিছুই হতে পারে না। শবে বরাত বা অনুরূপ রাত বা দিনগুলিতে আমরা যা কিছু করি না কেন সবই নফল ইবাদত। সারা জীবনের সকল নফল ইবাদতও একটি ফরয ইবাদতের সমান হতে পারে না। জীবনে যদি কেউ শবে বরাতের নামও না শুনে, কিন্তু ফরয-ওয়াজিব ইবাদত আদায় করে যায় তবে তার নাজাতের আশা করা যায়। আর যদি জীবনে ১০০টি শবে বরাত পরিপূর্ণ আবেগ নিয়ে ইবাদত করে কাটায়, কিন্তু একটি ফরয ইবাদত ছেড়ে দেয় তবে তার নাজাতের আশা থাকে না। আল্লাহর ফরয নির্দেশ অমান্য করে এক রাতে কাঁদা-কাটা করে তাঁর কাছ থেকে ভাল ভাগ্য লিখিয়ে নেওয়ার মত চিন্তা কি কোনো পাগল ছাড়া কেউ করবে?
ফরয ইলম, আকীদা, নামায, যাকাত, রোযা, হজ্ব, হালাল উপার্জন, সাংসারিক দায়িত্ব, পিতা-মাতা, সন্তান ও স্ত্রীর দায়িত্ব, সামাজিক দায়িত্ব, সৎকাজে আদেশ অসৎকাজ থেকে নিষেধ ইত্যাদি সকল ফরয ইবাদত, যার ক্ষেত্রে যতটুকু প্রযোজ্য, পালন না-করে শবে বরাতের সারারাত নফল ইবাদত করা হলো দেহের ফরয সতর আবৃত না করে উলঙ্গ অবস্থায় টুপি-পাগড়ি পরে ফযীলত লাভের চেষ্টার মতই অবান্তর ও বাতুল কর্ম।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, মুমিন যদি একটু আগ্রহী হন তবে প্রতি রাতই তার জন্য শবে বরাত। বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ইমাম সংকলিত সহীহ হাদীসে রাসূলুলাহ বলেন:
يَنْزِلُ اللَّهُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا كُلَّ لَيْلَةٍ حِينَ يَمْضِي ثُلُثُ اللَّيْلِ الأَوَّلُ فَيَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَنَا الْمَلِكُ مَنْ ذَا الَّذِي يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ ذَا الَّذِي يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ ذَا الَّذِي يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ فَلا يَزَالُ كَذَلِكَ حَتَّى يُضِيءَ الْفَجْرُ
“প্রতি রাতে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে বলেন, আমিই রাজাধিরাজ, আমিই রাজাধিরাজ।
আমাকে ডাকার কেউ আছ কি? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে প্রদান করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। প্রভাতের উন্মেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে তিনি বলতে থাকেন।” (মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫২২।)
অন্যান্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, মধ্যরাতের পরে এবং বিশেষত রাতের দু-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পরে তাওবা কবুল, দুআ কবুল ও হাজত মেটানোর জন্য আলাহ বিশেষ সুযোগ দেন।
তাহলে আমরা দেখছি, শবে বরাতের যে ফযীলত ও সুযোগ, তা মূলত প্রতি রাতেই মহান আলাহ সকল মুমিনকে প্রদান করেন। শবে বরাত বিষয়ক যয়ীফ হাদীসগুলি থেকে বুঝা যায় যে, এ সুযোগ সন্ধ্যা থেকেই। আর উপরের সহীহ হাদীসগুলি থেকে জানা যায় যে, প্রতি রাতেই এ সুযোগ শুরু হয় রাতের এক তৃতীয়াংশ- অর্থাৎ ৩/৪ ঘন্টা রাত অতিবাহিত হওয়ার পরে, রাত ১০/১১ টা থেকে। কাজেই মুমিনের উচিত শবে বরাতের আবেগ নিয়ে প্রতি রাতেই সম্ভব হলে শেষ রাত্রে, না হলে ঘুমানোর আগে রাত ১০/১১ টার দিকে দু'চার রাকআত সালাত আদায় করে মহান আল্লাহর দরবারে নিজের সকল কষ্ট, হাজত, প্রয়োজন ও অসুবিধা জানিয়ে দুআ করা, নিজের যা কিছু প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং সকল পাপ-অন্যায় থেকে ক্ষমা চাওয়া। হাযেরীন, কয়েকমাস এরূপ আমল করে দেখুন, জীবনটা পাল্টে যাবে। ইনশা আল্লাহ নিজেদের জীবনে আল্লাহর রহমত অনুভব করবেন। আল্লাহ আমদের তাওফীক দিন।
শবে বরাতকে কেন্দ্র করে যে সব বিদাত ও বাতিল আকীদা:
১. শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী মনে করা।
২. এ রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে ধারণা করা।
৩. এ রাতে আল্লাহ সাধারণ ক্ষমা করেন আকীদা পোষণ করা।
৪. এ রাতে বয়স ও রিজিক নির্ধারণ করা হয় মনে করা।
৫. এ রাতে ভাগ্য পরিবর্তন হয় বিশ্বাস করা।
৬. এ রাতকে লাইলাতুল কদরের সম মানের এ আকীদা রাখা।
৭. এ রাতকে লাইলাতুল কদরের চাইতেও বেশি প্রাধান্য দেওয়া।
৮. এ রাতে জটা-ঘটা করে কবর জিয়ারত করা।
৯. এ রাতে নির্দিষ্ট করে মৃতদের নামে বিশেষভাবে দান-খয়রাত করা।
১০. এ রাতে হালুয়া, রুটি ও মাসং পাকানো।
১১. এ রাতে আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালানো এবং আলোকসজ্জা করা।
১২. এ রাতে গোসল করা এবং নতুন কাপড় পরে সারারাত নামাজ পড়া।
১৩. এ রাতের সকালে দিনে রোজা রাখা।
১৪. এ রাতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করা।
১৫. এ রাতে বিধবাদের স্বামীর প্রিয় খানা পাকিয়ে তা সামনে করে রাতভর রুহানী সাক্ষাতের আশায় বসে বসে অপেক্ষা করা।
১৬. গত এক বছরে মৃত মানুষের রুহগুলোর আগের রুহের সাথে মিলানো অনুষ্ঠান করা। ১৭. এ রাতে সূরা দুখান পাঠকারীর জন্য সারা দিন ৭০ হাজার ফেরেশতা দোয়া করবে মনে করে তা পাঠ করা। [জাল হাদীস]
১৮. এ রাতে সূরা ইয়াসীন তিনবার পাঠ করা। প্রথমবার বয়স বৃদ্ধির জন্য, দ্বিতীয়বার বালা-মসিবত দূর করার জন্য এবং তৃতীয়বার কোন মানুষেরমুখাপেক্ষীর না হওয়ার জন্য। ১৯. এ রাতে জমজমের পানি অন্যান্য দিনের চেয়ে বৃদ্ধি পায় ধারণা করা।
২০. এ রাতে শিয়া-রাফেযীদের মিথ্যা কল্পিত ইমাম মাহদীর জন্ম দিবস পালন করা। উপসংহার শবে বরাতের মূল রহস্য দুইটি: এক) শিয়া-রাফেযীদের বাতিল আকীদা যে, তাদের ১২তম ইমাম মাহদীর জন্ম হয়েছে ১৫ শা‘বানে। তিনি এখন আত্মগোপন করে আছেন। তাদের কল্পিত ইমামের ১৫ শা‘বানে জন্ম বলেই এ রাত নিয়ে এতো ওস্তাদদের বাড়াবাড়ি এবং তাদের ছাত্র সূফীদের ছড়াছড়ি। শিয়ারা এ রাতে তাদের ইমামকে আহবানের উদ্দেশ্যে পত্র লেখে এবং তা সাগরে, নদীতে, কূপে, জঙ্গলে, গুহাতে ও মরুভূমিতে নিক্ষেপ করে থাকে। আর বলে: আমাতের প্রতি সুন্নী মুসলমানরা জুলুম করছে আপনি তাড়াতাড়ি বের আসুন ও প্রতিশোধ গ্রহণ করুন এবং আমাদেরকে মুক্তি করুন---। দুই) পেট ও পকেটের ধান্দাবাজদের ধর্মের নামে জমজমাট ব্যবসা। যে ব্যবসায় লাগে না কোন পুঁজি, লাগে না লাইসেন্স। আর নাই কোন চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজি ও নাই কোন নোকসান শুধু লাভ আর লাভ। ইহা বন্ধ করে দেন সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদেরকে কিছু বলতে হবে না বরং তারাই বন্ধ করে দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বিষয়: বিবিধ
২৬৪৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার অসাধারণ পোস্টটির জন্য জাযাকাল্লাহ খায়ের।
বিনীত নিবেদন করবো নিচের মন্তব্যটি পাঠ করার জন্য। একত্রে রাত্রি যাপন করে পালন করার মত এ রাতটি নয়, এটি একাকী নফল ইবাদতের রাত।
: https://islamhouse.com/bn/articles/43454/
সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল উঠানো হয়, এ সংক্রান্ত হাদীসটি আজই শুনলাম।
দাড়ি প্রসংগ যখন তুলেছেন, তখন যত দ্রুত সম্ভব এই বিষয়ে একটা পোস্ট করার সুতীব্র অনুরোধ রইল।
আল্লাহ কোথায় বলেছেন, তা উল্লেখ করেননি কেন আপা? উল্লেখ করেন।
আপা, খুবই ভালো লিখেছেন। পুরোটাই পড়লাম। কিন্তু লেখাটা দুইভাবে দিলে ভালো হতো।
এই রাতে পার্সোনালি ইবাদত করা যেতে পারে, তবে মসজিদে একত্রিত হয়ে ইবাদত বন্দেগী করা যাবেনা।
তাহলে, আমার পাড়ায় একবার ঘুরে আসবেন, ব্লগ আয়োজন নিয়ে আপনার জন্য একতা মেসেজ আছে
সাকা ভাইয়া আপনার অনুরোধ রাখার চেষ্টা করবো ইনশা-আল্লাহ অন্য কোন সময়।
আপনার আরোচনাটি ভালো লেগেছে, তবে কয়েকটি প্রশ্ন থেকে যায়: শবে বরাত মানে ভাগ্য রজনী ব্যখ্যাটি কোথায় থেকে পাওয়া?
প্রথম কথা হলো براءة অর্থ ভাগ্য কোন ভাষায়? আমি লোগাত খুলে দেখলাম: براءة অর্থ মুক্ত হওয়া, মুক্ত করা, বিমুখ হওয়া, দোষশূন্যতা, নিরীহতা, নির্দোষ ইত্যাদি।
কিন্তু "ভাগ্য" এ কথাটি কোথাও পাচ্ছি না, যার উপর ভিত্তি করে আপনার এত বড় পোষ্ট, অবশ্য "ভাগ্য" বললে আপনার মত আমারও আপত্তি থাকতো।
জি না আপু, এটা একমাত্র হাদিস নয়, আরো সহীহ হাদিস আছে, নিচে একটি পেশ করলাম:
আশাকরি বুঝবেন, বিস্তারীত জানতে এখানেও দেখতে পারেন। Click this link
সর্বশেষ কথা হলো: আরব দেশেও এর আমল যথেষ্ট রয়েছে, তবে কোন অনুষ্ঠান ছাড়া, যেমনটি উপরে আলোচনা করলাম, গত পরশু জুমআ'তে আমিরাতের আওকাফের পক্ষ থেকে খুৎবায়ও এ রাতের নফল ইবাদাতের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আরো জানতে দেখুনঃ http://www.awqaf.ae
ভাই আবু জান্নাত, উল্লেখিত হাদিসে কি কি ইবাদাত করার কথা বলা হয়েছে????
এই হাদিসে কি বলা আছে যে, কেউ যদি এ রাতে ইবাদাত না করে তবে আল্লাহ্ তাকে মাপ করবেন্না যদিও সে মুশরিক ও হিংসুক না হয়????
দয়া করে জানাবেন।
আপনার উত্তর ও পেয়ে যাবেন।
শবে বরাতে কি নির্দিষ্ট কোন নামায আছে?
আমদের সমাজে অনেক অনির্ভরযোগ্য বইপুস্তকে এই রাতের নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এর কোন প্রমান নাই। এমন কি কোন ফাতওয়ার কিতাবেও এই বিষয়ে উল্লেখ নাই। এগুলো মানুষের মনগড়া বানানো ইবাদত ছাড়া আর কিছু নয়।
সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইস্তেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো।
আবার অনেককে দেখা যায় রাত জেগে ইবাদত করে আর তাদের ফযরের নামায কাযা হয়ে যায়। আবার অনেক এমন আছেন, যারা ফযরের নামাযই পড়েন না।
তাই লক্ষ রাখতে হবে এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।
আমরা এই রাতে বেশী বেশী করে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া চাইবো।
আমারা এই রাতে নফল নামাযের সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশী বেশী দোয়া করবো।
ইমাম শাফী রহঃ তার রচিতগ্রন্থ কিতাবুল উম-এ বলেন,
إن الدعاء يستجاب في خمس ليال في ليلة الجمعة و ليلة الأضحى و ليلة الفطر و أول ليلة من رجب و ليلة النصف من شعبان
অর্থ, নিশ্চয় পাঁচ রাতে দোয়া কবুল হয়। এক, জুমার রাত। দুই, কুরবানির ঈদের রাত। তিন, ঈদুল ফিতরের রাত। চার, রযব মাসের প্রথম রাত। এবং পাঁচ নম্বার রাত হলো লাইলাতুন নিছ্ফ মিন শাবান তথা শবে বরাতে।
(ইমাম শাফী রহঃ এর রচিতগ্রন্থ কিতাবুল উমঃ ১/২৬৪, আল-মাজমূ লিল ইমাম নববীঃ ৫/৪৩ , তলখীসুল হাবীর লিল ইবনে হযর আসকলানীঃ ৮/৬)
একই ধরনের কথা ইমাম বাইহাকী রহঃ তার রচিতগ্রন্থ শুআবুল ঈমান-এর ৩৭১১ হাদীস নং হাদীসের আলোচনায় উল্লেখ করেছেন ৩/৩৪১।
হযরত ইবনে ওমর রাঃ বলেন:
عن ابن عمر قال خمس ليال لا يرد فيهن الدعاء ليلة الجمعة و أول ليلة من رجب و ليلة النصف من شعبان و ليلتا العيد
অথর্, পাঁচ রাত এমন আছে যে সব রাতে দোয়া ফেরত দেয়া হয় না তথা দোয়া কবুল করা হয়। এক, জুমার রাত। দুই, রযব মাসের প্রথম রাত।তিন, লাইলাতুন নিছ্ফ মিন শাবান তথা শবে বরাতে। চার এবং পাঁচ নম্বার রাত হলো দুই ঈদের রাত।
(শুআবুল ঈমান লিল বাইহাকী ৩/৩৪২ , হাদীস নং ৩৭১৩)
এই সব বর্ণনা সামনে রেখে উলামাগণ বলে, এই রাতে বেশী বেশী আল্লাহর কাছে দোয়া করা । কারন, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন। কারো দোয়া ফেরত দেন না। তাই সকলে আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশী বেশী দোয়া করা, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে মাফ করে জান্নাতীদের খাতায় নাম লিখান।
উল্লিখিত বিস্তারিত আলোচান থেকে এটাই প্রমানীত হয় যে, শবে বরাতের ফযীলত ছহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানীত। রাসূল সাঃ এই রাতে বেশী বেশী নফল নামায পড়েছেন। তাই আমরাও এই রাতে বেশী বেশী নফল নামায পড়তে পারি। এই রাতে দোয়া কবুল হয়। তাই আমরা এই রাতে বেশী বেশী আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের যে কোন প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে পারি। বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি। আরো যত ধরনের নফল ইবাদত আছে আমরা সে সব ধরনের নফল ইবাদত এই রাতে করতে পারি।
এই রাতে কি কোন সম্মেলিত আমল আছে?
শেষ কথা হলো, আমাদের সমাজে দেখা যায় যে, কিছু এলাকায় শবে বরাতকে কেন্দ্র করে কিছু সংখ্যক লোক সম্মেলিত অমল করে থাকে। আমাদের এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে, এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। এখানে কিছুতেই সম্মেলিতভাবে কিছু করার সুযোগ নাই।
এশার নামায তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সহিত আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে একে অপরকে ডেকে ডেকে মসজিদে নিয়ে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না।
(মারাকিল ফালাহ ২১৯)
অবে হ্যাঁ কোন আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, আর তারা সবাই নিজ নিজ আমলসমূহ একা একা আদায় করে তাহলে কোন সমস্যা নাই।
কোন কোন জায়গায় এই রেওয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা ইশার পর থেকেই ওয়াজ-নসীহত আরম্ভ হয়। আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। কোথাও তো সারা রাত খতমে-শবীনা হতে থাকে। উপরন্তু এসব কিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে, এসব কিছুই ভুল। তবে হ্যাঁ কেউ রাতে আমল করতে আসলে ইমাম সাহেবকে কিছু প্রশ্ন করলে ইমাম সাহেব সে বিষয়ে কিছু বললে তখন যদি তা শুনার জন্য কয়েক জন লোক একত্রিত হয়ে যায় তাতে কোন সমস্যা নাই।
শবে বরাতে বর্জনীয় কাজঃ
আমাদের শবে বরাতে সে সব কাজ বর্জন করতে হবে তা হলো,
এক, হালুয়া রুটির আয়োজন করা।
দুই, মসজিদে মসজিদে আলোকসজ্জা করা।
তিন, হিন্দুদের মত আতশবাজি পুটানো।
চার, দলবদ্ধ ইবাদতকে আবশ্যক মনে করে মসজিদে বা কোথাও একত্র হওয়া এবং এবাদত করা।
পাঁচ, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা।
এবং ছয়, দলবদ্ধ হয়ে কবর যেয়ারত করা। শবে বরাতে রাসূল সাঃ এর কবর যেয়ারত করার যে হাদীসটি আছে তা যয়ীফ হাদীস। তাই এই রাতে বকর যেয়ারত করাকে আলাদা ফযীলতের মনে করে কবর যেয়ারত করা জায়েয হবে না।
সম্মানীত ভাইয়েরা, আসুন আমরা এই রাতে বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি না করে সঠিক মতটা গ্রহন করে আল্লাহ তায়ার ইবাদতে মশগুল হই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে যথাযথ মর্যাদায় শবে বরাতে সঠিক নিয়মে আমল করার তৌফিক দান করুন।
আমীন।
আপনার জানার থাকলে এখান থেকে জেনে নিন।
https://islamhouse.com/bn/articles/43454/" />
মন্তব্য করতে লগইন করুন