"হে ভাইয়া (বিবাহিত/ অবিবাহিত) আপনাকেই বলছি"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:১৭:৩২ রাত
মনে বড্ড কষ্ট আর আফছূছ নিয়ে লিখছি। সামাজিক অবক্ষয়ে আমি আপনি আমরা সবাইও কি ভেসে বেড়াবো? নন-প্রাকটেসিং পরিবারে আমার দ্বীন প্রাকটেসিং ভাইবোনগুলো সবথেকে যে সমস্যাটির মুখোমুখি হন তা হল বিয়ে নিয়ে। "দুনিয়াটাই সবুজ আকর্শণীয় সম্পদে ভরপুর, আর দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে নেককার স্ত্রী।" বুখারী-মুসলিম।
প্রিয় ভাইয়ারা এ অমূল্য সম্পদ রক্ষা ও হেফাজত করতে অনেক বোনেরা খুব বেশী ভুগছেন তবে ভাইয়ারাও কম নয়। আসুন না আজকে না হয় ভাইয়াদের সমস্যাগুলো নিয়েই আলোচনা করি। এই লেখা দিয়ে ভাইয়াদেরকে একটু পরামর্শ দেয়া যায় কিনা! ভাইয়ারা যখন বিয়ের জন্য দ্বীনি পাত্রী খোঁজে তখনই সমস্যা গুলোর সূচনা। মায়ের পছন্দ সুন্দরী মেয়ে, ভাইয়ের পছন্দ স্মার্ট মেয়ে, বাবার পছন্দ শিক্ষিত মেয়ে, দুলাভাইয়ের পছন্দ চালাক-চতুর মেয়ে, বোনের পছন্দ শান্ত নমণীয় ব্যবহারের মেয়ে, আর আপনার নিজের পছন্দ দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত মেয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। যে মেয়ে প্রত্যেকের হক্ব বুঝবে পর্দায় থাকবে।
সবার মত আর মতানৈক্য নিয়ে টেনেটুনে বিয়ে পর্যন্ত যখনই গড়ায় তখনই শুরু হয় আরো নতুন নতুন সমস্যার। রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ মহিলাদের চারটি জিনিস দেখে বিয়ে করোঃ
১/ সম্পদ
২/ বংশ
৩/ সৌন্দর্য
৪/ দ্বীনদারিতা। আর দ্বীনদারিতাকেই বেশী প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। (বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৯৯)
কিন্তু যখনই ভাইয়ারা দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিয়ে কোন দ্বীনি মেয়েকে বিয়ে করেন তখনই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বিপাকে পড়ে যায়। "বউকে বিয়ের পরবর্তীতে সবার সাথে পরিচয় পর্বে যা করানো হয়। শাশুড়ী এসে বলেন "এত পর্দা করতে হবেনা, মুখটা না ঢাকলে কি হবে তোমার দুলাভাই হয়তো?" "এই যে তোমার দেবর একটু কথা বলো" "মুখটাকে এমন গোঁমরা করে রেখোনা আত্মীয়-স্বজন আসলে তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলো। ইনি তোমার চাচা শশুর" "উনি তোমার জা'য়ের ভাই" "এই তো দেখ ও আমার ভাতিজা" "এই আমার ভাগিনা" এদের সাথে সবসময় ভালো সম্পর্ক রাখবে। "এই আমার বোনের জামাই তোমার খালু শশুর" এত সময় ধরে নামাজ পড়লে বাকি কাজ কখন করবে? এমন কথার মার প্রতি নিয়ত খেতে হয় একজন দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত বোনকে। একজন পর্দানশীল স্ত্রীকে।
একবারও ভাবেন না একজন শাশুড়ীর নিজের কতটা দ্বীনি জ্ঞান রাখা দরকার অথচ তিনি তা না রেখে তিনি একজন পর্দানশীলা পূত্রবধূকে বিয়ের প্রথমদিন থেকেই বেহায়া আর নির্লজ্জতা শেখাচ্ছেন। তিনি নিজেও বুঝতে পারেন না কিভাবে গুনাহের অতলে ঠেলে দিচ্ছেন নিজের পরিবারকে। এরপর থেকে শুরু হয় দুলাভাইয়ের, দেবরদের, রসিক রসিক কথার। কখনো কখনো এখানে ওখানে খোঁচা দেয়া, মাঝে মধ্যে হাত ধরে নাক ধরে টানাটানিও কিন্তু বাদ যায়না। (নাউজুবিল্লাহ) কত জঘন্য রুচি। কিছু কিছু মানুষের মন-মানষিকতা কখনো পরিবর্তন হয়না। আর মুরুব্বীদের প্রশ্রয় দেয়াটা এজন্য খুবই বেশী দায়ী। ভাইয়ারা ভাবছেন এক্ষেত্রে কি করা উচিৎ?
আপনি লজ্জায় চুপচাপ আল্লাহর উপর ভরসা করে তাকিয়ে তাকিয়ে সহ্য করলে হবেনা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেনঃ অন্যেয়ের বিরুদ্ধে লড়তে, চেষ্টা আর ভরসা দু'টোই থাকতে হবে। আপনাকে প্রতিবাদি হতে হবে। আপনাকে কারো কারো কাছে লাঞ্চিত হবার মানষিকতা থাকতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে আঘাত পাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ভাইয়ারা একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে আপনার স্ত্রী শুধুই আপনার একার সম্পদ। এসম্পদ আর কারোর না। আপনি অনেক প্রতিরক্ষার পর যে সম্পদ পেয়েছেন তা কি এত সস্তা? আপনাকে স্বার্থপর হতে হবে এসম্পদ রক্ষার্থে। কখনো তাকে তার নিজের উপর ও মুরুব্বীদের কথার উপর ছেড়ে দিবেন না।
যখন আপনার মা বলে বউমা তোমার দেবর এসেছে, শুনে আপনার স্ত্রী মুখ লুকাচ্ছে বা দৌড়ে আড়ালে যেতে চাইছে আপনার মা বলছে এতো মুখ লুকাতে হবেনা। তাকে আপ্যায়ন করো। তখন আপনি বলুন " মা পর্দা করেও কিন্তু আপ্যায়ন করা যায়।" আর নরম ভাষায় আপনার পরিবারকে আল্লাহর বিধি-নিষেধ সম্পর্কে অবগত করুন। যখন আপনার দুলাভাই তামাশার ছলে অশ্লীল কথা বলে তখন দুলাভাইয়ের প্রতি সম্মান দেখানো বাদ দিয়ে আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান দেখান আপনার পর্দানশীল স্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখান কেননা আপনার দুলাভাই এখানে অপরাধী। আপনি বলুন; " আমার স্ত্রীর সাথে মার্জিত ভাষায় কথা বলুন। এবং প্রয়োজনীয় কথার বাহিরে কথা বলবেন না।"
ভাইয়া ভুলে যাবেন না আপনি তার সম্পদের মালিক, আপনার স্ত্রীর সুষ্ঠু রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব শুধুই আপনার। আর আপনার অধীনস্তদের ব্যপারে মহান আল্লাহ আপনাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। অনেক বড় বড় আলেমকে দেখেছি, তাঁর বালেগ হওয়া ছোট ছেলেকে দিয়ে বড় ছেলের বউকে বাপের বাড়ি থেকে শশুরবাড়ি আনা-নেয়া করায়।" এতে নিজেও গুনাহগার হচ্ছেন আর তাদেরকেও গুনাহ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। আমি বলছি না সবাই এক রকম। তবে যে সকল ভাইয়ারা প্রবাসে থাকেন তাদের স্ত্রীদের বাপেরবাড়ি আনা বা নেয়ার ক্ষেত্রে বা আপনার পূত্রবধুকে আপনি তার বাবার বাড়িতে দিয়ে আসবেন নিয়ে আসবেন।
আর কখনো সমস্যা দেখা দিলে মেয়ের বাবা বা ভাইয়ারা দিয়ে যাবে। আমাদের কারনেই আজকে ইসলামধর্ম বিপন্ন। কতেক আলেমের এই আচরণের কারনে জনসাধারন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। এই যে তাদরকে সুযোগ করে দিচ্ছেন প্রশ্ন করতে তখন আপনি নিজেই হেয় হচ্ছেন তাদের কাছে। আপনি আলেম অবশ্যই আপনি কোরআন ও হাদীসের অনুসরনে জীবন পরিচালনা করবেন। এতে করে সাধারনেও আপনার অনুসরন করবে। আপনাদের খামখেয়ালির কারনে ইসলামকে ছোট করবেন না।
বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ তা'আলা এর চির স্থায়িত্ব পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন। হযরত আবু নাজি (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সাঃ) বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে, অথচ বিয়ে করে না, তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।' (আত তারগিব)
হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'যখন কোনো বান্দা বিয়ে করল তখন তার দ্বীনদারির (ধর্মপালনের) অর্ধেক পূর্ণ করল। এখন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় পাওয়া প্রয়োজন।' (আত তারগিব)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'হে যুবকরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্ত্রীর ভরণপোষণ দানে সক্ষম, তার বিয়ে করে নেওয়া উচিত। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান পবিত্র রাখে। আর যে ভরণ-পোষণ দানে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা তার জন্য পৌরুষহীনতার মতো (উত্তেজনা প্রশমিত করে)।' (মেশকাত শরিফ, ইমদাদুল ফতোয়া : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা: ২৫৮)
হযরত আবু নাজি (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুখাপেক্ষী! মুখাপেক্ষী! ঐ পুরুষ, যার স্ত্রী নেই। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, যদি তার অনেক সম্পদ থাকে, তবুও কি সে মুখাপেক্ষী? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'যদিও তার অনেক সম্পদ থাকে, তবুও সে মুখাপেক্ষী। তিনি আরো বলেন, মুখাপেক্ষী! মুখাপেক্ষী ঐ নারী, যার স্বামী নেই। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, যদি তার অনেক সম্পদ থাকে, তবুও কি সে মুখাপেক্ষী? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'যদিও তার অনেক সম্পদ থাকে, তবুও সে মুখাপেক্ষী।" (রাজিন) কেননা সম্পদের উপকারিতা, প্রশান্তি বা পার্থিব চিন্তামুক্ত সেই পুরুষের ভাগ্যে জুটে না, যার স্ত্রী নেই। সে নারীর ভাগ্যেও জুটে না, যার স্বামী নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, বিয়েতে জাগতিক ও পরকালীন অনেক বড় বড় উপকার রয়েছে। (হায়াতুল মুসলিমিন; পৃষ্ঠা : ১৮৭)
হযরত মাকাল ইবনে ইয়াসার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'তোমরা অধিক সন্তান প্রসবকারী নারীকে বিয়ে করো। কেননা আমি তোমাদের আধিক্যতা দ্বারা অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করব যে, আমার উম্মত এত বেশি!' [আবু দাউদ ও নাসায়ি শরিফ]
হযরত আবু জর গিফারি (রাযিঃ) থেকে এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আক্কাফ (রাযিঃ)-কে বলেন, হে আক্কাফ! তোমার স্ত্রী আছে? তিনি বললেন, 'না।' রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, 'তোমার কি সম্পদ ও সচ্ছলতা আছে? তিনি বললেন, 'আমার সম্পদ ও সচ্ছলতা আছে।' রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, 'তুমি এখন শয়তানের ভাইদের দলভুক্ত। যদি তুমি খ্রিস্টান হতে তাদের রাহেব (পাদ্রী) হতে। নিঃসন্দেহে বিয়ে করা আমাদের ধর্মের রীতি। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হলো যে অবিবাহিত। তোমরা কি শয়তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাও? শয়তানের কাছে নারীর চেয়ে ভয়ংকর কোনো অস্ত্র নেই। যা ধর্মভীরু মানুষের ওপরও কার্যকর। তারাও নারী সংক্রান্ত ফেতনায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যারা বিয়ে করেছে, তারা নারীর ফেতনা থেকে পবিত্র। নোংরামি থেকে মুক্ত।' এরপর বললেন, 'আক্কাফ! তোমার ধ্বংস হোক। তুমি বিয়ে করো, তা না হয় তুমি পশ্চাৎপদ মানুষের মধ্যে থেকে যাবে।' (মুসনাদে আহমাদ, জামেউল ফাওয়ায়েদ, ইমদাদুল ফতোয়া : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫৯)
পবিত্র আল-কোরআনে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন- 'আল্লাহপাক তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জোড়া (সঙ্গী) সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের থেকে শান্তি লাভ করো। আর তিনি তোমাদের মাঝে দান করেছেন ভালোবাসা ও দয়ার্দ্রতা।'
অন্যত্র বলেন- 'তোমাদের স্ত্রীরা (সন্তান উৎপাদনের জন্য) তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ।' স্ত্রীকে বানানো হয়েছে পুরুষের আরাম ও শান্তির জন্য। বিষন্নতা, দু'শ্চিন্তা ও নানা কর্মব্যস্ততার মাঝে স্ত্রী শান্তি ও স্বস্তির মাধ্যম। মানুষ প্রাকৃতিক ভাবেই ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের অনুরাগী। স্ত্রীর সঙ্গে মানুষের বিরল ও আশ্চর্য ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়।
মেয়েরা সৃষ্টিগত ভাবে দূর্বল। সন্তান প্রতিপালন, গৃহব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীল ও সব কাজের শ্রেষ্ঠ সহযোগী। ফলে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। স্ত্রী ইজ্জত, সম্মান, সম্পদ ও সন্তান সংরক্ষণকারী এবং এর পরিচালক। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে তার সম্পদ, সম্মান ও দ্বীনের সংরক্ষণ করে। মানুষ সৃষ্টিগতভাবে জৈবিক চাহিদা বা কামভাবের অধিকারী। স্ত্রী পুরুষের কাম-চাহিদা পূরণ করে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 'স্ত্রীরা তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ।' তারা বীজ উৎপাদনের উপযোগী। যেভাবে ক্ষেতের সেবা-যত্ন করা হয় ও তার একটি উদ্দেশ্য থাকে। তেমনি স্ত্রীরও বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে, যা থেকে উপকৃত হওয়া উচিত।
নারীর প্রতি পুরুষের যে আগ্রহ ও চাহিদা রয়েছে এবং পুরুষের প্রতি নারীর যে আগ্রহ ও চাহিদা রয়েছে, তা প্রাকৃতিক। বিয়ের মাধ্যমে তা পূরণ করলে মানুষের অন্তরে প্রকৃত ভালোবাসা ও পবিত্র চিন্তা-চেতনা তৈরি হয়। আর অবৈধভাবে পূরণ করা হলে তা মানুষকে অপবিত্র জীবনের প্রতি নিয়ে যায়। অন্তরে নোংরা চিন্তা ও কল্পনা সৃষ্টি করে। সুতরাং বিয়ে পবিত্র জীবনের অনুগামী করে এবং নোংরা জীবন থেকে ফিরিয়ে রাখে। [আল মাসালিহুল আকলিয়্যা: পৃষ্ঠা : ১৯২]
স্ত্রীর মোহরানা প্রদানে এরশাদ হচ্ছে―
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَى بَعْضُكُمْ إِلَى بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنْكُمْ مِيثَاقًا غَلِيظًا. ﴿النساء : (সূরা নিসা ২০)
"তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে? অথচ তোমরা পরষ্পর শয়ন সঙ্গী হয়েছ। সাথে সাথে তারা তোমাদের থেকে চির বন্ধনের সুদৃঢ় অঙ্গীকারও নিয়েছে।
এ চুক্তিপত্র ও মোহরানার কারণে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কতক দায়দায়িত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যা বাস্তবায়নের ফলে দাম্পত্য জীবন সুখী ও স্থায়ী হবে— ইনশা-আল্লাহ এতে সন্দেহ নেই। সে সব অধিকারের প্রায় সবগুলোই সংক্ষেপ আকারে বর্ণিত হয়েছে কোরআনের নিম্মক্ত আয়াতে—
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللَّهُ
عَزِيزٌ حَكِيمٌ. ﴿البقرة : (সূরা বাকারাহ ২২৭)
যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমন তাদের জন্যও অধিকার রয়েছে ন্যায্য-যুক্তি সংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ তা'আলা এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে। যদিও আনুগত্য এবং রক্ষনা-বেক্ষন ও অভিভাবকত্বের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের।
হে ঈমানদারগণঃ তোমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।”-আল কোরআন
স্ত্রীদের নিকট হতে তোমাদের যেমন ভাল ব্যবহার পাওয়ার অধিকার আছে , তেমনি স্ত্রীদেরও তোমাদের নিকট থেকে অনুরুপ ব্যবহার পাওয়ার অধিকার আছে। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম ,যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম বলে বিবেচিত হবে। আল-হাদিস
তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করো। আমিও আমার বিবিগণের সহিত উত্তম ব্যবহার করে থাকি। আল-হাদিস
স্ত্রীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে। নারীদের প্রতি দূর্ব্যবহার ও অত্যাচার করার বেলায় আল্লাহর দন্ডকে ভয় করে চলো।
এখানে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে বিরাজমান কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার স্তর ও মানের ভিত্তিতে উল্লেখ করছি।
প্রথমত: যে সব অধিকারের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সমানঃ
১. দাম্পত্য জীবনে পারষ্পারিক সততা, বিশ্বস্ততা ও সদ্ভাব প্রদর্শন করা। যাদের মাঝে নিবিড় বন্ধুত্ব, অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক, অধিক মেলামেশা, সবচেয়ে বেশি আদান-প্রদান তারাই স্বামী এবং স্ত্রী। এ সম্পর্কের চিরস্থায়ী রূপ দিতে হলে ভাল চরিত্র, পরষ্পর সম্মান, নম্র-ভাব, হাসি-কৌতুক এবং অহরহ ঘটে যাওয়া ভুল ত্রুটি সমূহ ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা অবশ্যম্ভাবী। এবং এমন সব কাজ, কথা ও ব্যবহার পরিত্যাগ করা, যা উভয়ের সম্পর্কে চির ধরে কিংবা মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেনঃ—
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ سورة النساء. ﴿النساء : (সূরাহ নিসা ১৮)
তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে আচরণ কর।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي. ابن ماجه ( ইবনে মাজা ১৯৬৭)
তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে ভাল।
পরষ্পর সদ্ভাবে জীবন যাপন একটি ব্যাপক শব্দ। এর মাঝে সমস্ত অধিকার বিদ্যমান।
২. পরস্পর একে অপরকে উপভোগ করা। এর জন্য আনুষঙ্গিক যাবতীয় প্রস্তুতি ও সকল উপকরণ গ্রহণ করা। যেমন সাজগোজ, সুগন্ধি ব্যবহার এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সহ দূর্গন্ধ ও ময়লা কাপড় পরিহার ইত্যাদি। স্বামী ও স্ত্রী প্রত্যেকের এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা। অধিকন্তু এগুলো সদ্ভাবে জীবন যাপনেরও অংশ।
ইবনে আব্বাস রা. বলেন—
إني لأحب أن أتزين للمرأة كما أحب أن تتزين لي.
আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’ তবে পরস্পর এ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উভয়কেই হারাম সম্পর্ক ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।
৩. বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করা। সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
إنّ من أشرّ الناس عند الله منزلة يوم القيامة: الرجل يفضي إلى امرأته و تفضي إليه ثم ينشر سرها. مسلم (মুসলিম ২৫৯৭)
কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়।
৪. পরষ্পর কল্যাণ কামনা করা, সর্ব বিষয়ে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া। আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে অপর থেকে উপদেশ পাওয়ার অধিক হকদার। দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা উভয়েরই কর্তব্য। আর এর অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে, পরষ্পর নিজ আত্মীয়দের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা। সন্তানদের লালন-পালন ও সু-শিক্ষার ব্যাপারে উভয়েই সমান, একে অপরের সহযোগী।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى. ﴿المائدة : (সূরাহ মায়েদাহ ২)
তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কর।
নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ. ﴿النساء : সূরাহ নিসাঃ ৩৪
পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তা'আলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে। উপরন্তু এ আনুগত্যের দ্বারা বৈবাহিক জীবন স্থায়িত্ব পায়, পরিবার চলে সঠিক পথে।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর আনুগত্যকে এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন—
إذا صلت المرأة خمسها، وصامت شهرها، وحصنت فرجها، وأطاعت بعلها، دخلت من أى من أبواب الجنة شاءت. مسند أحمد (১৫৭৩)
যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে, নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।
স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহর বিধানের অনুসরণ করা। স্ত্রীর মননশীলতা ও পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সত্য-কল্যাণ ও উত্তম চরিত্রের উপদেশ প্রদান করা কিংবা হিতাহিত বিবেচনায় বারণ করা। উপদেশ প্রদান ও বারণ করার ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ ও উন্নত মননশীলতার পরিচয় দেয়া। এতে সানন্দ চিত্তে ও স্বাগ্রহে স্ত্রীর আনগত্য পেয়ে যাবে।
স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।
১. দেন মোহর: নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংবা অন্য কারো নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন—
وَآَتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً. ﴿النساء : (সূরাহ নিসা ৪)
তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।
২. ভরন পোষণ:সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর মর্তবার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে। অনুরূপ ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آَتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آَتَاهَا. ﴿الطلاق : (সূরাহ ত্বালাক ৭)
বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।
৩. স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়া-পরবশ থাকা। স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
(... واستوصوا بالنساء خيرا , فإنهن خلقن من ضلع , وإن أعوج شيء في الضلع أعلاه , فإن ذهبت تقيمه كسرته , وإن تركته لم يزل أعوج , فاستوصوا بالنساء خيرا )
তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচেয়ে বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।
৪. স্ত্রীর ব্যাপারে আত্মমর্যাদাশীল হওয়া।
হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সু-পথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগত ভাবে দূর্বল, স্বামীর যে কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যত্ন সহকারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন—
ما تركت بعد فتنة أضر على الرجال من النساء. البخاري (বুখারী ৪৭০৬)
আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে আসিনি।
নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
أتعجبون من غيرة سعد، أنا أغير منه، والله أغير منى. مسلم (মুসলিম ২৭৫৫)
তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছো? আমি তার চেয়েও বেশি আত্মসম্মানবোধ করি, আবার আল্লাহ আমার চেয়েও বেশি অহমিকা সম্পন্ন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। হাদিসে এসেছে—
لا يدخل الجنة ديوث. الدارمي (দারিমী ৩৩৯৭)
দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
মানুষের সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদার বিষয় নিজের পরিবার। এর ভেতর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্বীয় স্ত্রী। অতঃপর অন্যান্য আত্মীয়, স্বজন এবং অধীনস্থগণ।
পরিশেষে নির্ঘাত বাস্তবতার কথা স্বীকার করে বলতে হয়, কোন পরিবার সমস্যাহীন কিংবা মতবিরোধ মুক্ত নয়। এটাই মানুষের প্রকৃতি ও মজ্জাগত স্বভাব। এর বিপরীতে কেউ স্বীয় পরিবারকে নিষ্কণ্টক অথবা ঝামেলা মুক্ত কিংবা ফ্রেশ মনে করলে, ভুল করবে। কারণ, এ ধরাতে সর্বোত্তম পরিবার কিংবা সুখী ফ্যামিলির একমাত্র উদাহরণ আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিবার ও ফ্যামিলি। সেখানেও আমরা মানবিক দোষ-ত্রুটির চিত্র দেখতে পাই, ( আল্লাহ ক্ষমা করুন নবী (সঃ) এর পরিবারের ব্যপারে আমাদের কোন মন্তব্য নেই)। তবে অন্য পরিবারের পবিত্রতা কোথায়?
জ্ঞানী-গুণীজনের স্বভাব ভেবে-চিন্তে কাজ করা, ত্বরা প্রবণতা পরিহার করা, ক্রোধ ও প্রবৃত্তিকে সংযমশীলতার সাথে মোকাবিলা করা। কারণ, তারা জানে যে কোন মুহূর্তে ক্রোধ ও শয়তানের প্ররোচনায় আত্মমর্যাদার ছদ্মাবেশে মারাত্মক ও কঠিন গুনাহ হয়ে যেতে পারে। যার পরিণতি অনুসূচনা বৈকি? আবার এমনও নয় যে, আল্লাহ তা'আলা সমস্ত কল্যাণ ও সু-পথ বান্দার নখদর্পে করে দিয়েছেন। তবে অবশ্যই তাকে মেধা, কৌশল ও বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে।
হযরত আবু হুরাইয়া (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সবচাইতে উত্তম, ঈমানের দৃষ্টিতে সে-ই পূর্ণাঙ্গ মু'মিন। তোমাদের মধ্যে সেই সব লোক উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের
কাছে উত্তম। তিরমিযী)
পরিশেষে বলবো প্রত্যেক ভাইয়াকে তার স্ত্রীর জন্য সহজ করন করতে হবে। পর্দানশীলা হতে সহযোগীতা করতে হবে। আপনাকে হতে হবে আপনার স্ত্রীর স্বামী, শিক্ষক, বন্ধু, সহধর্মীনি। আপনার স্ত্রী হবে আপনার আনন্দের উৎস। আপনি তাকে দ্বীন শিখাবেন তাই আপনি শিক্ষক। আপনি তার সকল কাজে সুন্দর পরামর্শদাতা ও তার ভূলত্রুটি মার্জনাকারি তাই আপনি তার বন্ধু। আর দুনিয়াবী সকল কাজও ইসলাম ধর্মের সকল কাজে আপনি তার একমাত্র সহযোগী তাই আপনি সহধর্মীনি। আপনার সহযোগীতা আপনার অনপ্রেরণা আপনার তার প্রতি দায়িত্বশীলতাই আপনার স্ত্রীকে একজন খাঁটি মু'মিনাহ হতে সহায়ক। আমার এই লেখা কাউকে হেয় করার জন্য নয়। বরং দ্বীনের কাজে উৎসাহ প্রদান ও দুনিয়ার সুখ আর চিরপ্রাপ্তির স্থানে চিরস্থায়ী জান্নাত পাওয়াই মূল হেতু। মহান আল্লাহ আমাদের সকল কাজকে ত্রুটি মুক্ত করে কবুল করুন। আমিন। লেখাটি অনিচ্ছা স্বত্বেও বড় হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখীত।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৪৮ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একথাটি পড়তে অন্তরে ভয় লেগেছে। সেখানেও আমরা মানবিক দোষ-ত্রুটির চিত্র দেখতে পাই এ কথাটি না থাকলে ভালো হতো। জাযাকিল্লাহ খাইর
একজন বেষ্ট আলেমা। আপনার জন্য ভিডিও। আমাদের এখানের মহিলা মসজিদ।
যথেষ্ট পড়া শুনা রয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন