"হে বোন তুমি জান্নাত হও (১ম পর্ব)"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:০৬:২৫ রাত
হে বোনঃ তোমাকেই বলছি তুমি তোমার স্বামীর জন্য জান্নাতের বাগান হও। সে বাহিরে থেকে ঘরে এলো হাসি মুখে কথা বলো। তোমার হাসিমাখা মুখ তার সারাদিনের পরিশ্রমের কষ্টকে ভুলিয়ে দেয়। হে বোনঃ তুমিই দুনিয়ার জীবনের তোমার স্বামীর জন্য জান্নাত। আর তুমিই জাহান্নাম। তুমি যদি আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান পেতে চাও, চিরস্থায়ী জান্নাত পেতে চাও তবে অবশ্যই অবশ্যই তোমার স্বামীর সাথে উত্তম আচরণ করো। তুমি তোমার স্বামীর কষ্টে শান্তনার বাণী শোনাও। তার পেরেশানিতে ধৈর্যের কথা শুনাও। তোমার স্বামীর আনুগত্যই তোমাকে পৌছে দেবে জান্নাতের অতি নিকটে। জেনে নাও হাদীসে আমাদের নারীদেরকে কত সম্মান আর কত মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আর জেনে জেনে আমল করো।
হযরত উম্মে সালামা (রাযিঃ) এর বর্ণনা মতে, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ কোন স্ত্রী লোক যদি এমন অবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিরমিযী)
১. স্বামীর আনুগত্য :
স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। তবে যে কোন আনুগত্যই নয়, বরং যেসব ক্ষেত্রে আনুগত্যের নিম্ন বর্ণিত তিন শর্ত বিদ্যমান থাকবে।
(ক) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহর বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়।
(খ) স্ত্রীর সাধ্য ও সামর্থ্যরে উপযোগী বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্বারোপ করেন না।
(গ) যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা। আনুগত্য আবশ্যক করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ. ﴿ البقرة :
সূরা বাকারাহঃ ২২৭
‘নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।'
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ. ﴿النساء :
সূরা নিসাঃ ৩৪
‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।’
উপরন্তু এ আনুগত্যের দ্বারা বৈবাহিক জীবন স্থায়িত্ব পায়, পরিবার চলে সঠিক পথে।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর আনুগত্যকে এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন—
إذا صلت المرأة خمسها، وصامت شهرها، وحصنت فرجها، وأطاعت بعلها، دخلت من أى من أبواب الجنة شاءت. مسند أحمد (মুসনাদে আহমাদ ১৫৭৩)
যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে, নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।
স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহর বিধানের অনুসরণ করা। স্ত্রীর মননশীলতা ও পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সত্য-কল্যাণ ও উত্তম চরিত্রের উপদেশ প্রদান করা কিংবা হিতাহিত বিবেচনায় বারণ করা। উপদেশ প্রদান ও বারণ করার ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ ও উন্নত মননশীলতার পরিচয় দেয়া। এতে সানন্দ চিত্তে ও স্বাগ্রহে স্ত্রীর আনগত্য পেয়ে যাবে।
২. স্বামী-আলয়ে অবস্থান: নেহায়েত প্রয়োজন ব্যতীত ও অনুমতি ছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়া অনুচিত। মহান আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নারীদের ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীদের সম্বোধন করে বলেন—সকল নারীই এর অন্তর্ভুক্ত—
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى. ﴿الأحزاب : সূরা আহযাবঃ ৩৩
‘তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না।’
স্ত্রীর উপকার নিহিত এবং যেখানে তারও কোন ক্ষতি নেই, এ ধরনের কাজে স্বামীর বাধা সৃষ্টি না করা। যেমন পর্দার সাথে, সুগন্ধি ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে বারণ না করা। ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لاتمنعوا إماء الله مساجد الله. البخاري
(বুখারী ৮৪৯)
আল্লাহর বান্দিদেরকে তোমরা আল্লাহর ঘরে যেতে বাধা দিয়ো না।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা: এর স্ত্রী যয়নব সাকাফী (রাযিঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলতেন—
إذا شهدت إحداكن المسجد فلا تمس طيبا. مسلم
(মুসলিমঃ ৬৭৪)
তোমাদের কেউ মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছে করলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।
৩. নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা।
স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
والمرأة راعية فى بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها. البخاري (বুখারীঃ ২৫৪৬)
‘স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’
৪. নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদিস এ মর্মে উল্লেখ করেছি যে, নিজেকে কখনো পরীক্ষা কিংবা ফেতনার সম্মুখীন না করা।
৫. স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া। হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমন ভাই-বেরাদার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন―
...ولكم عليهن أن لا يؤطئن فرشكم أحداً تكرهونه. مسلم (মুসলিম ২১৩৭)
‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’
স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ, রোজা নফল—আনুগত্য ফরজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
لا يحل للمرأة أن تصوم و زوجها شاهد إلا بأذنه، ولا تأذن فى بيته إلا باذنه. البخاري (বুখারী ৪৭৯৬)
নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়।
তৃতীয়ত : স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।
হযরত আবু হুরাইয়া (রাযিঃ) এর বর্ণনা মনে, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অপর কোন ব্যক্তির সামনে সিজদাহ করার জন্য নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদাহ করার জন্য। (তিরমিযী)
হযরম মু'য়াজ ইবনে জাবাল (রাযিঃ) এর বর্ণনা মতে, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ যখনই কোন নারী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিতে থাকে, তখনই (জান্নাতের) হুরদের মধ্যে তার সম্ভাব্য স্ত্রী বলেঃ (হে অভাগিনী!) তুমি তাকে কষ্ট দিওনা। আল্লাহ তোমায় ধ্বংস করুক! তিনি তোমার কাছে একজন মেহমান। অচিরেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন। (তিরমিযী)
হযরত আবু হুরাইরা (রাযিঃ) বলেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি তার বিছানায় স্বীয় স্ত্রীকে ডাকে; কিন্তু স্ত্রী তাতে সাড়া না দেয়ায় স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে রাত কাটায়, তাহলে ফেরেশতারা ভোর পর্যন্ত তার প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করতে থাকে । (বুখারী ও মুসলিম)
মহান আল্লাহ আমাদের সকল মু'মিনাত বোনদেরকে ইসলামের আলোয় আলোকিত হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।
ছবির জন্যে শুভেচ্ছান্তে গুগল।
বিষয়: বিবিধ
১৮৭১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসংখ্য ধন্যবাদ।
লেখাটি অথবা এই লেখার লিংক পাঠানোর মত আপাতত কোনো ঠিকানা নেই।
তবে কামনা করছি,সে যেন এমনসব লেখা আগেই পড়ে রাখে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন