Rose Rose অভিসাপ ও অনুতপ্ত!Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৫০:৫৯ রাত

ছোট গল্প!‍

শীতের বিদায় আর বসন্তের আগমণি বার্তা কারো কারো মনে আনন্দ দিলেও ফাল্গুণী হাওয়া সবার মনে দোলা দেয়না। বসন্তের রঙে অনেকেই নিজেকে রাঙিয়ে নেয় নতুন করে আর সবার মাঝে কেউ কেউ যেন শীতে ঝরে পড়া শুকনো পাতার মতই থাকে সব সময়।

আশার জীবনেও একটু ঝড় এসেছিলো যাকে হঠাৎ ঝড় ও বলা চলে। সেই একটু ঝড়ে সবকিছু সেদিন ঝরে না গেলেও এখন সে প্রায়ই অনুভব করে সেই ঝড়ের রেশ। এখনো যেন সেই ঝড়ের ক্ষতিকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি আশা নামের মেয়েটি। আশার যেন সব কিছুতেই এখন নিরাশায় ভরপুর। রঙ নম্বর কল এসে সবকিছু কেমন যেন পরিবর্তন করে দিলো আশার জীবনে! একটি রঙ নম্বর কলের এত শক্তি? এত ক্ষমতা যে আশার জীবনটাকে সম্পূর্ণ উল্টে দিলো? কি করার ছিলো সেদিন? মনের আবেগে কল ধরে গল্প করে সময়টা বেশ পাড় করছিলো আশা কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সে জানতে পারলো জাভেদ বিবাহিত! আরো জানতে পারলো দুই কণ্যা ও একটি পূত্র সন্তানের জনক সে! সেই জানাটিও এক ধরণের হঠাৎ করেই! আশা জাভেদকে খুব ভোরে কল করে সেই কলটি জাভেদ ধরতে পারেনি! ধরেছে তার স্ত্রী কিন্তু আশা তা বুঝতে পারেনি!

আশা তো কল করেই ওপাশের অপেক্ষাতে না থেকে নিজের সব কথা বলেই চলেছে! পরিশেষে ওদিক থেকে কোন সারা না পেয়ে মোবাইল কেটে দেয়! তার আরেকটু পরে অন্য আরেকটি নম্বর থেকে কল আসে আশার মোবাইলে! আশা কল রিসিভ করে সালাম দেয় কিন্তু ওদিক থেকে সালামের জবাব না দিয়েই একটি মেয়ে কন্ঠ কথা বলা শুরু করে! সে বলে যায় আমি জাভেদের বোন আমার নাম কানিজ পপি আপনি আপনাদের বিষয়টা বললে আমি মাকে বলে সবকিছুর ব্যবস্থা করবো এখন আমি যা যা জানতে চাই আপনি কোন কিছু গোপন না করে আমাকে বলুন আমি আপনার কল্যান চাই আপনি আমাকে হিতাকাংখি ভেবে সবকিছু খুলে বলুন আপনাদের সম্পর্কের কথা! কবে থেকে জাভেদের সাথে আপনার পরিচয়? কতদিন হলো সম্পর্কের? কোথায় কোথায় ঘুরতে গেছেন আপনারা? কি কি করেছেন সেখানে? সবকিছু একসাথেই জানতে চায় কানিজ পপি! আশা ও না বুঝে সবকিছু বলে যায়! একসময় পপি জানতে চায় জাভেদ কি কখনো আপনার হাত ধরেছে? আশা বলে হাঁ ধরেছে! কখনো কি আপনাকে বুকে নিয়েছে? আশা জবাব দেয়, না! আপনার ঠোঁটো কি কখনো চুমো দিয়েছে? আশার না জবাব!

কানিজ পপি আরো জানতে চায় তাদের মাঝে গভীরতা কতখানি! সম্পর্ক কেমন? আশা জানায় ভালোই তো তবে আমাদের সম্পর্ক বেশী দিন হয়নি, দিন আরো গড়ালে হয়তো আরো গভীর হবে! এবার ওপাশ থেকে কন্ঠ পরিবর্তন করে কানিজ পপি বলে আমি জাভেদের বোন নই আমি তার স্ত্রী!আমার দুইটি মেয়ে ও একটি ছেলে আছে! জাভেদ আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে! তুমি জাভেদের জীবন থেকে বিদায় হও ভালোভাবে! আল্লাহ তোমাকে কখনোই সুখী করবেনা কারন তুমি আমার সুখ হরণ করেছো! আল্লাহ তোমার বিচার করুন! আশার মাথায় যেন বাজ পড়লো সে যেন বোবা হয়ে গেছে! সে অনবরত কাঁদছে! নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না আশার সে কি শুনছে এসব? জাভেদ তাকে এত বড় ধোঁকা দিতে চাইলো? আর সে বুঝতেই পারলো না! না জাভেদ কল দিলে সে আর কথা বলবেনা! কেন জাভেদ তার সাথে এমনটি করলো? সে এতো প্রতারক কেন?

তার স্ত্রী সন্তান আছে তারপরও কেন সে আশার সাথে সম্পর্কে জড়ালো! আমিই কেন তাকে না জেনে, না শুনে পছন্দ করতে গেলাম? কেন আমি সেদিন রঙ নম্বারে তার কল ধরলাম? সেদিন যদি কল না ধরতাম তবে কি যে ভালো হতো! কানিজ পপির অভিসাপ পেতে? তবে কানিজ পপির অভিসাপ পেতে হতোনা! কি ভুল যে করেছি সেদিন! এর মাশুল যে কত দিতে হবে কে জানে? আমি তো আগেই ভালো ছিলাম কেন জাভেদের সাথে পরিচয় হলো? এরপর থেকে আশা প্রতিজ্ঞা করে জীবনে আর কখনো কারো নম্বর না চিনে ধরবেনা। সে স্বস্থিই পাচ্ছিলোনা। সে আবারো প্রতিজ্ঞা করে আমি আর কখনোই মোবাইল ব্যবহার করবোনা। কারন মোবাইল আমাকে নষ্টের শেষ পর্যন্ত পৌছে দিতে পারতো আজকের একটি কল যদিও তাতে কষ্টের ভাগটাই বেশী তারপরও সত্যিই সেই কল আসাতে আশার জীবনে অনেক বড় টর্নেডো থেকে বাঁচলেও কিছুটা ক্ষতি তো হয়েই গেছে।

যার মাশুল হয়তো জীবনের বাকিয়াংশে বয়ে বেড়াতে হবে। তবুও শান্তনা যে, সে আরো আগে বাড়েনি। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে সে। আল্লাহ আমার কল্যাণ চেয়েছে বলেই আমাকে কঠিন জীবনের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। নয়তো সতীনের সংসারে আশাকে কাষ্ঠ-খড়ীর মতো পুঁড়তে হতো। এরপর থেকে জাভেদ কয়েকবার কল করলেও আশা আর ধরেনি। সে অনেক অনেক মেসেজ দিয়েছে আশা আর রিপ্লাই করেনি। পরিশেষে সে সিম পরিবর্তন করে মোবাইলটাকে অকেজো জিসিনপত্রের সাথে রেখে দিয়েছিলো। আশার ছোট ভাই গেইম খেলার জন্য না বলে পকেটে পুরে নিয়ে যায়। আর সেও একসময় ভুলে যায় মোবাইলের কথা যখন টয়লেট সেরে উঠতে গেছে তখন ঝনঝন করে শব্দ হতেই আশার ভাইয়ের মনে পড়ে আপুর মোবাইলটা পকেটে ছিলো। সে ভয়ে কাউকে বলেনি। যখন বলেছে তখন মোবাইলের সবকিছু পানির সাথে বিলিন হয়ে গেছে। আশা সন্ধ্যার পরে জানতে পেরেও ছোট ভাইকে কিছুই বলেনি।

যদিও সবাই মনে করেছে আশা মোবাইলের জন্য রাগ করবে বা ছোট ভাইকে শাস্তি দেবে। নাঃ আশা কিছুই করেনি বরং সে মনে করেছে ভালোই হলো মোবাইলটা হারিয়ে যাওয়াতে। সে আর মনে করতে চায়না মোবাইল অতীতকে। সামান্য ক'টা দিনে জীবনটাকে একেবারে উলোট-পালোট করে দেয়া মোবাইলের শাস্তি এটাই ছিলো। তার আরো শাস্তি হওয়া উচিৎ। কেন মোবাইল নামের একটি ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্র রক্তে মাংসে গড়া মানুষের জীবনটাকে বদলে দেয়? মোবাইল নিষিদ্ধ করা উচিৎ। আশার না বলা কষ্ট গুলোকে সে আর মনে করতে চায়না কারন তার একটিই শান্তনা তা হলো জাভেদের স্ত্রী কল করে তার জীবনটাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সহায়তা করেছে। নয়তো জাভেদ তার আরো ক্ষতি করতো আর আশা কোনদিনও জানতেও পারতো না জাভেদ বিবাহিত। তাই শত কষ্টের পরও আশার মনে এই শান্তনা যে, সে তার সতীত্ব নিয়ে আছে। নয়তো জাভেদ নামের নর পশুটা যার স্ত্রী সন্তান থাকা সত্বেও আশাকে আবেগের ভেলায় চড়াতে চেয়েছে।

সে আসলে চেয়েছে আশার সতীত্বকে নষ্ট করে পালাতে। আল্লাহই আশাকে রক্ষা করেছে কানিজ পপির মাধ্যমে। তাই আশা কষ্টের কথাগুলো মনে পড়লেই কানিজ পপির জন্য দোয়া করে সবসময়। এভাবে কত জাভেদ যে, আশার মতো হাজারো মেয়ের সতীত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলে কে জানে? কানিজ পপির মতো কেউ কি কখনো এভাবে কল করে তাকে সর্বস্ব হারানো থেকে বাঁচাতে সহায়তা করবে? আশা ভেবে পায়না কেন যে মানুষ ছলনা করে। কেন মানুষের উপরের রুপের বাহিরেও ভেতরের রুপটাকে আড়াল রাখে? কেন যে নিজ স্ত্রী-সন্তান থাকার পরেও আশার মতো মেয়েদের পিছনে ছুটে? আশা এসব প্রশ্নের একটিই উত্তর পায় তা হলো নারীর সতীত্ব হরণ করতেই কতেক পুরুষের এই ছলনা। যদিও পুরুষের উপর থেকে কিছুটা বিশ্বাস কমে গেছিলো। আশার নিরাশাতে সময় কাটতে কাটতে হঠাৎ করে বিদেশী এক বর এসে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বিয়ে করে তিনমাস সংসার করে পরের তিনমাসে নিয়ে যায় প্রবাসে।

বাস্তব জীবনে আশা এখন অনেক অনেক সুখী। কারন সে একজন বিশ্বস্ত মানুষ পেয়েছে জীবনে যে তাকে সত্যিই ভালোবাসে। যার ভালোবাসাতে কোন ছলনা নেই। নেই আশাকে ঠকানোর মন-মানষিকতা। আশার এখন আর জাভেদের করা প্রতারনাকে বড় বলে মনে হয়না। মনে সেদিন লম্পট জাভেদের মুখোশটা না খুললে আশা হয়তো আজকের অবস্থানে আসতে পারতো না। তাই আল্লাহর প্রশংসার সাথে সাথে সে কানিজ পপির জন্যও প্রাণ খুলে দোয়া করে। আল্লাহ ওকে সবসময় ভালো রাখুন। তিন বছরের মাথায় আশার জীবনকে আলোকিত করে দুই কণ্যা সন্তান আসে। স্বামী ও সন্তানদেরকে নিয়ে আশার জীবনটা ভালোই কাটছে। সে ঘুনাক্ষরেও জাভেদকে মনে করে না। এখন মনে করে সেই সময়টা আসলে সময়ের অপব্যবহারই হয়েছে। সে মনে করে সেটা ছিলো একটি এক্সিডেন্ট যে এক্সিডেন্টে জীবনের তেমন ক্ষতি হয়নি। আশা এখন পাকা গৃহিনী হয়ে উত্তম স্ত্রী হয়ে উত্তম মা হয়েই বাকিটা জীবন কাটাতে চায়। এই সংসারেই আছে আশার জীবনের সার্থকতা।

আমার ওয়েব সাইট থেকে পড়ুন।

বিষয়: সাহিত্য

১৫০৩ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358077
৩০ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৩৯
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো। শীতের দিনের শীত শীত গল্প
১৯ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:৫৮
300813
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! উৎসাহ মূলক মন্তব্যে আমিও পুলকিত।
358083
৩১ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৪:২৫
কাহাফ লিখেছেন : আবেগের মোহে পড়ে কিছু কিছু ভূল জীবন কে ধ্বংশের অনেক কাছে নিয়ে যায়,ঐ সময়ে যদিও তা বুঝে আসতেও চায় না! খোদার একান্ত করুণায় কেউ কেউ হয়তো ফিরে আসে সেখান থেকে! যেমন পেরেছে 'আশা'!
এই পরিস্হিতির জন্যে আশাও কম দায়ী নয়! বরং কিছুটা বেশীই!
নিজের প্রয়োজনেই 'আশা'রা কাছে আসে! ঝামেলা সৃষ্টি হলে সব দোষ পুরুষদের উপর চাপিয়ে নিজেদের ধোয়া তুলসী পাতায় গণ্য করে!
গুটি কয়েক নারী ছাড়া অধিকাংশই ছলনাময়ী স্বার্থপর হয়!!
মুখোশী আশা দের জন্য.....।
১৯ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:৫৯
300814
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুন্দর বিশ্লেষন.....।
358436
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৫:৪৯
সাদাফ লুলু লিখেছেন : আশার ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৯ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:৫৯
300815
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! ঠিক তাই।
363782
২৭ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : কুরআন থেকে (সংক্ষিপ্ত তরজমা) -মাহবুবা সুলতানা লায়লা


বুবু, সন্ধা সাতটার সময় তরজমা পোস্ট করে দেবেন
২৭ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৪:৪১
301610
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ২৭ মার্চ রবিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধা ৭ টার আয়োজনে সকলের অংশগ্রহন কামনা করি। পরিচালক (গাজী সালাউদ্দিন) পোস্ট দেয়ার সাথে সাথে অন্যরা মন্তব্যের ঘরে অর্পিত দায়িত্ব আন্জাম দেব। পরিচালক তার পোস্টে ব্লগারের নামসহ এগুলো যোগ করে সবগুলোকে এক পোস্টে রুপায়িত করবেন।
২৭ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:২৯
301625
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! লেখার নাম কি দেব? পরামর্শ দেন। আমি আপনাদের অপেক্ষায় অপেক্ষমান আছি। আপনি লাইনে থাকলে পরামর্শ দিয়ে উপকৃত করেন প্লিজ।
২৭ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
301626
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : সরল অনুবাদ
আয়াত ( সংখ্যা )
সূরার নাম
মাহবুবা সুলতানা লায়লা
২৭ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
301627
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! লেখা পোস্ট করেছি দেখুন তো ঠিক আছে কিনা।
২৭ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
301632
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : হ্যাঁ ঠিক আছে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File