গরীবের মেয়ে (বিদেশীর বউ)!!
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১১:২১:০৫ রাত
লাবন্য একজন দিন আনে দিন খায় পরিবারের মেয়ে! গায়ের রঙ কালো না হলেও গরীবই তার আসল দোষ! বিয়ে হয়েছে প্রায় সাত আট বছর! স্বামী প্রবাসী! বিয়ের কয়েকমাস পরেই চলে যায় প্রবাসে! বউকে রেখে যায় স্বামীর পিতা মাতার কাছে! আর লাবন্যের বিয়ের সময় ওর শশুর পরিবার বা স্বামী কেউই কোন সামানা-পত্র চায়নি! শুধু কিছু গহনা আর নগদ সালামি দিয়ে বিয়ে হয়ে যায়! লাবন্যের স্বামী খুব ভালো মনমানষিকতার হলেও তার পরিবার ততটা ভালো মনের না! সবাই তো আর এক রকম হয়না!
লাবন্যের স্বামী প্রবাসে চলে যাবার কিছুদিন আগে জানতে পারে লাবন্যের কোলে মেহমান আসার আছে! এই নিয়েও এক রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে লাবন্য ও তার স্বামী। লাবন্যের শাশুড়ী চায়না তারা এত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিক। কিন্তু লবন্যের স্বামীর বিশেষ অনুরোধে লাবন্য বাচ্চা নেয়। তার স্বামী বলে আমি চলে গেলে তোমার সময়গুলো কাটবে কি করে? একটি বাচ্চা হলে তো তুমি তাকে নিয়ে ভালো সময় কাটাতে পারবে। নয়তো তোমার একাকৃত্তের কষ্টে ভুগতে হবে। লাবন্যের স্বামী সুখবর শুনেও কিন্তু পৃথিবীর ধরা বাঁধা নিয়ম মেনে চলে গেছে প্রবাসে! আর লাবন্যকে রেখে গেছে মা-বাবার কাছে! লাবন্যের স্বামী মাকে বলে গেছে লাবন্য এখানে থাকলে হাজার খানেক টাকা ওকে দেবেন হাত খরচের জন্য! আর ওর বাবার বাড়িতে থাকলে দুই হাজার করে দেবেন! কিন্তু লাবন্য শুধু টাকার নাম শুনেই গেল টাকা কখনো হাতে পেলনা! এদিকে একজন প্রসূতি মায়ের যত্ন তো দুরে থাক তার নিয়মিত খাবারেরও কষ্ট হতে থাকে শশুরালয়ে! লাবন্য মুখ বুজে সব সহ্য করতে থাকে কারন বিয়ে জীবনে একটিই হয়! একদিন হয়তো এই কষ্ট থাকবেনা! আগামির কথা ভেবে লাবন্য অনেক কিছু হজম করে কিন্তু আগামি তো আর বর্তমানের পেট ভরিয়ে দেবেনা?
স্বামী চলে যাবার সময় একটি মোবাইলও দিয়ে যায়নি লাবন্যকে! তাই নিয়মিত খোজ খবর নেয়া দেয়া ও কঠিন এই বর্তমান সময়ে! শশুরালয়ে থাকলে শাশুড়ীর মোবাইল দিয়ে কথা বলে আর বাবার বাড়িতে থাকলে বাবার মোবাইল দিয়ে কথা বলে! বাবা ছোট খাট ব্যবসায়ী মানুষ নানা রকম কাজে বাহিরেই বেশী সময় থাকতে হয় কারন লাবন্যদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সংসারের খরচ যোগাতে লাবন্যর বাবার হিমশিম খেতে হয়! এই জন্য লাবন্য স্বামীর সাথে নিজের সব কথা বলার সুযোগও পায়না! লাবন্যের শাশুড়ীর ধারনা এবং ছেলেকেও বলেছে বউকে মোবাইল দিবিনা, কখনো একাউন্ট খুলে দিবিনা হাতে নগদ টাকা ও দিবিনা তবে আরেকজনের সাথে পালিয়ে যাবে! স্বামী বেচারাও এসব শুনে মায়ের কথা মতই কাজ করে চলেছে! পৃথিবীতে সব মানুষ যে এক রকম নয় সেটাও ভুলে গেলো লাবন্যের স্বামী! প্রবাসে যাওয়ার সময় লাবন্যকে বলে তোমাকে আল্লাহর হাওয়ালা করে গেলাম তিনিই দেখবেন তোমাকে!
লাবন্যের শাশুড়ী আরো বিশ্বাস করে বউকে বেশী আদর যত্ন করলে সে ঘাড়ে চেপে বসবে! সংসারে খাবার দাবারের সবকিছু নিজের হাতে রাখতে হবে! নয়তো বউ বেশী খাবে, বেশী সেয়ানা হয়ে যাবে এই কারনে লাবন্যের শাশুড়ী সবকিছু নিজের তত্তাবধানে রাখেন! বউ বেশি খায় কিনা প্লেট চেক করেন! বউ খাওয়ার পরে পাতিল দেখেন বেশী তরকারি খেল নাকি, বেশী খেলে মানুষের সাথে বলাবলি করেন আমাদের বউ ভাত বেশী খায় তরকারি বেশী খায়! এমন কি আত্মীয়-স্বজনদের সবাই মোটামুটি জানে যে লাবন্য তরকারি বেশী খায়! লাবন্য লজ্জায় পড়ে যায় ঘরের কথাগুলো কিভাবে অপর মানুষেরা জানে? লাবন্যের স্বামী প্রবাসে যাওয়ার আরো তিনমাস লাবন্য শশুরালয়েই থাকেন এই সময় তেল পায়না ঠিকমত, সাবান পায়না, খাওয়াও পায়না পেট ভরে! পায়না এই অবস্থায় কোন চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা! এক রকম কঠিন জীবন চলতে থাকে লাবন্যোর! এরপর চলে যান বাবার বাড়িতে!
সবাই বলে প্রবাসীর বউ, বিদেশী ওয়ালার বউ তুই এত কৃপন কেনরে? কি জামা কাপড় পরিস দেখলে মনে হয় তোর স্বামী দিন আনে দিন খায়! অথচ বিদেশে থাকে! লাবন্য সবার সব রকম কথায়ই চুপ থাকে! কারন সে চায়না তার স্বামী বা স্বামী পরিবারের লোকেরা মানুষের কাছে হেয় হোক! কিন্তু মানুষ তো মানুষকে দেখলেই অনেক কিছু বুঝতে পারে! লাবন্যোর বেলাতেও তাই হয়েছে! লাবন্য শারিরীক ভাবে খুবই দূর্বল! আর রক্ত শূন্যতা ও খুব বেশি ডাক্তার বলেছে ডেলিভারির সময় শরীরে ব্লাড ভরতে হবে আপনারা প্রস্তুত থাকবেন! নয়তো বাচ্চার মাকে নিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে! লাবন্যের বাবা ভয় পায় কি করবে মেয়েকে নিয়ে? কেন বিয়ে দিলো প্রাবাসীর কাছে নিজকে নিজে ধিক্কার দিতে থাকে! আমার মেয়েকে বোধ হয় নিজ হাতেই জমের হাতে তুলে দিলাম!
আরো চারমাস পরে বর্তমান যুগ অনুযায়ী লাবন্যের সিজার করে তার কোল আলোকিত করে ঘরে আসে এক চাঁদের টুকরা ইসরা! (লাবন্যোর শরীর বেশী দূর্বল হওয়াতে সিজার করাই লাগছে) ব্লাড দেয়ার কথা ডাক্তার বললেও লাবন্যোর বাবা রাজি হয়নি কারন স্ব-শরীরে ব্লাড পাওয়া না গেলে পরে নানান সমস্যা হওয়ার আশংকায়! বলেছে ভালো ভালো খাবার বেশী বেশী খাওয়ালে বেশী বেশী যত্ন নিলে তাড়াতাড়িই রক্ত হয়ে যাবে মেয়ের শরীরে! লাবন্যের মেয়ে সন্তান শুনে সেই যে শশুর একবার এসে চোখের দেখা দেখে গেছেন আর একটিফিন বাটি খাবার দিয়ে গেছেন ও পরের দিন শাশুড়ী একবার দেখে গেছেন সেই দেখাই শেষ! আর হাসপাতালে থাকার বাকি পাঁচদিন কোন খবরই নিলেন না! সেদিন এসেই বউয়ের হাতে আগে দিয়ে ছিলেন পাঁচহাজার টাকা বউ একহাজার টাকা খরচ করেছে বলে হাসপাতালে দিয়ে যান আরো ছয় হাজার টাকা ব্যসঃ উনাদের দায়িত্ব শেষ! হাসপাতালের বিল, লাবন্যোর ঔষধ, আরো নানান খরচের সকল চাপ চাপিয়ে দিয়ে যান লাবন্যোর বাবার ঘাড়ে!
চলছে..............চলবে।
আমার ওয়েব সাইট থেকে পড়ুন
বিষয়: বিবিধ
২৭৪১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অ-নে-ক দিন পর .........। লাবন্যের এত্তোগুলো কষ্ট নিয়ে উপস্থিত হয়েছো।
যা খুবই বেদনাদায়ক। অনাকাঙ্ক্ষিত।
তবুও বলতেই হয় মুমিন - মুমিনাগণের এটাই পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় লাবণ্যদের উত্তীর্ণ হতেই হবে।
শুধু মাত্র মেহেরবান প্রভূর সন্তুষ্টির জন্য।
কারণ যে মুমিন - মুমিনাগণ বিপদে ও লাঞ্ছনাদায়ক পরিবেশে ধৈর্য ও সবর করে তার বিনিময়ে রয়েছে উত্তম দাতার নিঃসীম কল্যাণ। আবার যিনি আনন্দ বিলাসে আল্লাহ্র শোকর করে তার জন্যও রয়েছে অপরিমিত কল্যাণ।
মুমিনের কল্যাণ সর্বাবস্থাই। তাই......।
প্রবাসী স্বামী বেচারা সময় মত টাকা পাঠালেও স্ত্রী রা পায় না শ্বশুর-শ্বাশুরীর কারণে!
এর বিপরীত ঘটনাও কম নয়! স্বামী অগাধ ভালবাসা ও দেয় টাকা-পয়সা নিয়ে চম্পট দেয়া নারীও কম নয়!
আল্লাহ সকল কে সঠিক বুঝ দান,আমিন!
শুরুটা অসাধারণ হয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। অনেক ধন্যবাদ।
বিয়ে হল একটা গেম । এখানে একজন আরেকজনকে ডমিনেট (কর্তৃত্ব ) করার চেষ্টা করবে । ইসলাম এই খেলাতে পুরুষদেরকে ডমিনেট করার কথা বলেছে । এটাও বলেছে যে একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়ে সে তার স্ত্রীকে প্রহারও করতে পারবে ।
আমাদের মুসলমান সমাজে মেয়েরা বিয়ে শরিয়ত অনুযায়ী করলেও সংসার শরীয়ত অনুযায়ী চালাতে দেয় না । আর বিপত্তির শুরু হয় এখান থেকেই ।
মেয়ে ও মেয়ের অভিভাবকেরা লোভে পড়ে প্রবাসীর কাছে মেয়ে বিয়ে দেয় । মিডল ইস্টের হলে বউকে রেখে চলে যায় আর ওয়েস্টের হলে দেখা যায় যে ছেলে ৯৯% ভাল, শুধু নাইট ক্লাবে যায় ।
কাহাফ ভাইয়ের মন্তব্যটাই যথাযথ মনে হচ্ছে। সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন