"জীবনে পাওয়ার আবেদন"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ৩১ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৫২:৩৪ রাত
জীবনের চাওয়া গুলোর পূর্ণতা হয় পাওয়া দিয়ে। আর মানুষের জীবনের পাওয়ার সংখ্যাগুলো খুবই কম। আলহামদুলিল্লাহ জীবনে যাকিছুই মনে মনে বা স্ব-শব্দে কামনা করেছি মহান আল্লাহ তা দিয়ে পূর্ণ করেছেন। সাধনা বা অপেক্ষা আর প্রার্থনা নামের শব্দ গুলো ছিলো জীবনের চাওয়ার সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িতো। যখনই জীবনের চাওয়া গুলো একটি একটি করে পূর্ণ হতে থাকলো ঠিক তখন থেকেই মনের মাঝে এই ভয় জাগ্রত হলো যে, জীবনের সকল চাওয়াই তো পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তাহলে কি জীবনের সমাপ্তি লগ্ন অতি নিকটে?
কতটা বছর তো আকাংখা আর অপেক্ষা করতে করতে কাটিয়ে দিলাম তখন ছিলো আকাংখা পূরণের জন্য অপেক্ষা আর সাথে কায়মনো বাক্যে প্রার্থনা। আর যখনই আকাংখিত চাওয়া গুলোর সিংহভাগই পূর্ণতার রুপ পেতে থাকলো তখন মনের মাঝে উদয় হলো আরে সকল চাওয়াই তো পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তাহলে কি জীবন সূর্য অস্তমিত হবার সময় হয়ে এসেছে? জীবনের অপূর্ণ চাওয়া গুলো জান্নাতে দিয়ে পূর্ণতা দান করো। জীবনে মৃত্যুটাই চির সত্য কথা যে, জীবনের সূর্যদ্বয় যখন থেকে শুরু হয়েছে তারপর থেকে যেকোন সময় অস্তমিত হওয়াটাও কঠিন সত্য।
আসল কথা হচ্ছে, জীবনটা তো যেকোন ভাবে চলেই যাচ্ছে চাওয়া পাওয়া নিয়ে। আর না পেলেও জীবন চলেই যাবে। কিন্তু জীবনের এইক্ষনে এসে হিসাব কষতে খুবই কষ্ট হচ্ছে যে, জীবনে তো জীবনকে সাজাতে-গুছাতে অনেক আকাংখা করেছি কিন্তু যেখানে আজীবন থাকতে হবে সেখানের জন্য কতটুকুন কি করেছি? কিছুই করিনি। কি নিয়ে তবে পাড়ি দেব না-ফেরার দেশে? হে প্রতিপালক! হে অন্তর্যামী! তুমি তো জানো আমি কতটা অসহায়, কতটা দূর্বল, কতটা অপারগ, আমার সকল অক্ষমতা আর দূর্বলতা জেনেই আমাকে তুমি ক্ষমা করো।
ক্ষমা করো আমার পূর্ববর্তীদেরকে, ক্ষমা করো আমার পরবর্তীদেরকেও। আর আমাকেও ক্ষমা করে দাও। হে গফ্ফার! হে রাহমান! হে ক্বাদীর! হে আযীয! অন্তরের আকুল আবেদন কবুল করো। মুসলমানদেরকে ক্ষমা করো। মু'মিনকে ক্ষমা করো। আলেমদেরকে ক্ষমা করো। অতীতকে ক্ষমা করো। আগামিকে ক্ষমা করো। ক্ষমা করো হে ক্ষমাকারি মহান প্রভু। আমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশী তাদেরকেও ক্ষমা করো। ক্ষমা করো যারা আমার প্রিয়তমকেও এধমনীর আলো দেখাতে অন্তরের নির্যাস ঢেলেছেন তাদেরকেও।
ছোট্ট একটি গল্পের মাধ্যমে লেখাটি শেষ করি। এই লেখাটি কয়েকটি কথা দিয়ে শেষ করতে চাইলেও পারছিনা বলে দুঃখীত। আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, সবসময় আমাদেরকে বেশী বেশী দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। তিনি বলতেন, সময়ের আগেই আবেদন করে রাখো আল্লাহর কাছে তবে সময়মত পেয়ে যাবে। তখন এই কথার মর্মার্থ না বুঝলেও এখন বুঝছি পলে পলে। তাই সেই প্রিয় শিক্ষকের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করি মনে হলেই। আমার সেই প্রিয় পরম প্রিয় শিক্ষকের নামটা না বলে উল্লেখ করছি (আবু যুবায়ের) নামে।
তিনি আমাদেরকে যখন পড়াতেন তখন অবিবাহিত ছিলেন, তখন থেকেই তিনি আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করতেন যে, হে আল্লাহ আমাকে ভালো খাবার খাওয়াও যেন আমি বেশী বেশী তোমার ইবাদত করতে পারি। চোরে যদি চুরি করে ভালো খেতে পারে, খারাপ লোকে যদি খারাবি করে ভালো খাবার খেতে পারে তবে আমি তো তোমার মসজিদের খাদেম আমি কেন ভালো খেয়ে তোমার ইবাদত করতে পারবোনা? তাই তুমি আমাকে ভালো খাবার ও হালাল রিযিকের ব্যবস্থা করে দাও।
মানুষ যদি দামী পোষাক পরিধান করে গুনাহ করতে পারে, তবে আমি কেন দামী পোষাক পরিধান করে তোমার বান্দাদের ইমাম হতে পারবোন? তাই তুমি আমাকে দামী পোষাকের ব্যবস্থা করে দাও। আমাকে আমার আগামির বংশধরদের রিযিকের ও ব্যবস্থা করে দাও। আমাকে জীবন সঙ্গী দান করো চরিত্রবান বন্ধুর মতো। আর প্রথমেই আমাকে দান করো পূত্র সন্তান। আর মৃত্যু তো দেবেই তবে যখন আমার উপর অসন্তুষ্ট থাকো তখন দিওনা। যখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাকো, রাজি খুশি থাকো তখনই মৃত্যু দিও। আমাদের ক্লাসে আসলেই বলতেন জানিস, আজকে কি কি দোয়া করেছি? আমরা বলতাম; না বললে জানবো কেমনে ভাইয়া? তিনি তখন উনার প্রার্থনা গুলোকে আমাদেরকে বলে বলে শুনাতেন।
আমরা শুনে তো হাসতাম; আমাদের কয়েকবোন বলতো, ভাইয়া কোথায় কি আর আপনি এখনো বিয়েই করেননি আর ছেলে চেয়ে প্রার্থনা করছেন? তখন আবু যুবায়ের ভাইয়া বলতেন মাঘের গণনা আগেই গুণতে হয়। আবেদন করে রাখলাম জজের টেবিলে, সময়মত যেন মাকবুল হয়ে যায়। বাস্তবেও দেখলাম এই ভাইয়ার প্রতিটি দোয়াই কবুল হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। তখন ভাইয়া আমাদেরকে বলতেন প্রমাণ পেয়েছো তো আগে আবেদন করে রাখলে সময়মতো হাজির পাওয়া যায় কাংখিত বস্তুগুলো? আমরা তখন বলতাম ভাইয়া আপনি তো কামিয়াব, ভাইয়ার এই কর্মনীতি আমার ও খুবই ভালোলাগে। আমিও তাই করি। আল্লাহর রাহমতে আমিও বাস্তবতায় কাংখিত চাওয়া গুলোর পাওয়ার পূর্ণতা অনুভব করি।
মনের মাঝে উপলদ্ধি হয় তখন; আমরা প্রতিটি মুসলমানও যদি আমাদের পালনকর্তা জজের টেবিলে ক্ষমার আবেদন করে রাখি আর আবেদন করে রাখি জান্নাতুল ফিরদাউসের পূর্ব থেকেই তবে ইনশা-আল্লাহ সময়মতো ক্ষমা পেয়েই জান্নাতুল-ফিরদাউসের মালিকানা পেতে পারি। হে আল্লাহ! মৃত্যু তো অবধারিত! যেকোন সময় হবেই তবে সেই ক্ষনে নয় যখন তুমি অখুশি থাকো, সেই ক্ষনে দিও যেই ক্ষনে তুমি পূর্ণখুশি থাকো আমার উপর আমাদের উপর। আমাদের আগামির উপর। হে মহান প্রতিপালক! ক্ষনিকের জীবনে আখেরের জন্য কিছুই কামাই করতে পারিনি, তবে শুধু এই প্রার্থনা করি তুমি সর্বাবস্থায় আমার উপর আমাদের উপর আমাদের আগামির উপর খুশি থাকো! হে আমার স্রষ্টা মালিক কবুল করে নাও আজকের আবেদন আগামির জন্য........................।
মদিনা মনোয়্যারা সৌদি আরব
৩০ শে অক্টোবর ২০১৫
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসসালামুআলাইকুম আপু।
চমৎকার অভিব্যাক্তির জন্য শুকরিয়া।
কি নিয়ে তবে পাড়ি দেব না-ফেরার দেশে? - এই কতাহটি অহরহ ভাবিয়ে তুলে তবু ডানদিকের নিক্তি বুঝি শূন্যের কোঠায় রয়ে যায়!
জাযাকিল্লাহু খাইর।
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন