"ওহুদ প্রান্তরের অনুভুতি"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২০ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৪৪:৪৩ দুপুর
আসরের পর পড়ন্ত বিকেল! ডুবন্ত সূর্য! যেন পৃথিবীকে আঁধারের কাছে সপে দিয়ে চলে যাচ্ছে ভোরের শর্ত পূরন করতে! আর এভাবেই সূর্য তার নিয়মে চলছে প্রতিদিন! কখনো মেঘ এসে বাঁধ সাধে পৃথিবীকে আলোকিত করতে! কখনো বা মেঘের আঁধার ভেদ করে বেড়িয়ে আসে পৃথিবী ও এখানে বসবাসকারি প্রাণীকূলের কষ্ট লাঘব করতে! সূর্য তার ওয়াদা পূর্ণ করতেই অস্তমিত হয়ে যাচ্ছে! আর কিছু ক্ষনের মধ্যেই সূর্য হারিয়ে যাবে রাতের আঁধারে! ভাগ্যক্রমে কেউ কেউ দেখতে পাবে আগামিকালের ভোরের সূর্যদ্বয়! আর কারো জীবনে হয়তো আর কখনোই সূর্যদ্বয় হবেনা! অস্তমিত সূর্য দেখাই জীবনের শেষ দেখা হয়ে থাকবে! আর কারো জীবন পৃথিবীতে আগমন করবে নতুন সূর্যদ্বয়ের হাতছানি নিয়ে।
পড়ন্ত বিকেলে অস্তমিত সূর্য দেখছি আজকে ওহুদ পাহাড়ে আমি এবং আমরা! মনে হচ্ছে যেন সূর্যটা ঘাড়ে হাত রেখে বলছে বন্ধুর মত করে আজ যাচ্ছিরে কাল দেখা হবে!বলেই যেন হাজার মাইলেরও বেশী বেগে ছুটছে তার গন্তব্যে! হারিয়ে গেছে সূর্য, ক্রমশ আঁধার এসে ভীড় করছে ওহুদ পাহাড়ের চারিপাশ! বিকেলের আলো থাকতেই দেখেছি হযরত হামযাহ (রাযিঃ) এর কবর মোবারক! যেন কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গেছিলাম সাড়ে চৌদ্দশত বছরের পূর্বে! কল্পনার ভেলায় চড়ে ভাবছিলাম এই দ্বীন ইসলামের জন্যই তো এত এত তাজা প্রান কোরবানি হয়েছে! যারাই এই কাজের জন্য মাল. জান নির্বিশেষে সবকিছু উজার করে বিলিয়েছেন তাদেরকেই মহান আল্লাহ আগত সকল আদম সন্তানের জন্য নিদর্শন স্বরুপ করে রেখেছেন! আর সকল মানুষকে বুঝিয়েছেন এই মহিয়সী ব্যক্তিগণরাই অনুসরনের উপযুক্ত! যারা নবী করিম (সঃ) এর ভালবাসায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন একসাথে! যারা জীবনের বাজি রেখেছিলেন নবীর ভালবাসায়, যারা জীবন দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন নবী (সঃ) এর ভালবাসায়, যারা জীবন বিলিয়েছেন দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার কাজে তারাই জগতের মাঝে ও পরকালের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছেন! তাদের কঠিন ত্যাগ ছিলো বলে তাদের অহরহ কোরবানি ছিলো বলে আমরা সহজেই দ্বীন ইসলাম পেয়েছি! এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন নিজের অজান্তেই কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে গেছে দু'চোখ থেকে! আসলে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ভালবাসা কখনো মুখ দেখে হয় আর কখনো না দেখে ও হয়!
আমার এ অনুভুতির প্রকাশ মহান ব্যক্তিদের না দেখেই হয়েছে! মুসলমান হিসেবে মুসলমানের প্রতি ভালবাসার প্রকাশ এটা! কখনো দেখেনি তাদরকে তারপরও কোথা থেকে যে এই ভালবাসার উদয় নিজেও বুঝতে পারিনি! তবে মনে হয়েছে আরো কিছু কথা! আজকে যদি আমরাও তাদের মত ত্যাগ করি, কোরবানি করি, ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে নিয়েজিত করি তবে আমাদের আগামিরা পাবে ইসলামের বৃক্ষতলে শান্তির আশ্রয়! পাবে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা! আর এই কাজের জন্য প্রয়োজন মুসলমানে মুসলমানে ঐক্যতা! প্রয়োজন সবার সহযোগীতা! একজন পিছ পা হবে আরেকজন এগিয়ে আসবে এমন নয় বরং সবাইকে সমান ভাবে এগিয়ে আসতে হবে! দায়িত্ব নিতে হবে নবীওয়ালা কাজের! এবং দায়িত্বশীলের মত কাজ করতে প্রতিজ্ঞ হতে হবে মরন পর্যন্ত! আমাদেরকে ইসলামের জন্য আরো অগ্রস্বর হতে হবে! হতে হবে আরো অগ্রগামী! সর্বদাই প্রস্তুত থাকতে হবে জীবন বাজি রেখে! আগত আদম সন্তানের জন্য প্রস্তুত করতে হবে সুন্দর জীবন পরিচালনার আদর্শ সিলেবাস তবেই হয়তো আগামিরা পাবে সুন্দরের ছোঁয়া নয়তো চির অজানা থেকে যাবে চির স্বরণীয় আল-কোরআন আল-হাদীস! মুসলমানের ঘরে জম্ম হবে, জম্মগত মুসলমান হবে কিন্তু হবে নাস্তিক! এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে যে মুসলমানের ঘরে জম্ম নিয়েও বেমুসলিম হবে?
যারা গত হয়ে গিয়েছে তাদেরকেই সামনে রেখে, তাদেরই অনুস্বরন করতে হবে! জানতে হবে নিজের জন্য, জানাতে হবে আগামির জন্য, আর কাজ করতে হবে আখেরাতের জন্য! এই কাজ করতে হবে পৃথিবীর আয়ু বৃদ্ধির জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আখেরাতে ক্ষমা পাবার জন্য। আজকে ১৪ই মার্চ ২০১৪ সালে আমি ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশে দাড়িয়ে প্রিয় রাসূল (সঃ) এর প্রিয়তম সাহাবা গণের কথা স্বরণ করছি! আমরা যেভাবে তাদেরকে জেনেছি ঠিক সেভাবেই আগামি একশত বছর পর কি আমাদের উত্তরসূরীরা তাদরকে জানতে পারবে? আগামির উত্তরসূরীর জন্য সেই ইতিহাস আমাকে আপনাকেই রচনা করতে হবে। আসুন আর দেরি নয় প্রতিদিন পুরোনো ইতিহাস গুলোকে একটু একটু চর্চা করে করে পৌছে দেই আগামি থেকে আগামির পানে। আমার খুব ঈর্ষা হয়, একথা মনে করে যে, সাহাবা আজমাইনের নামের পর কত সুন্দর করে উচ্চারন করি রাদ্বি আল্লাহু আনহু! (মহান আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট) এখানের যারা বাসিন্দা তারা কতই না সৌভাগ্যবান মহান আল্লাহ তাদের সকলের উপর সন্তুষ্ট আর পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্বরণ করবে। ইস; আমি আমরাও যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে যেতে পারতাম! তবে কতই না ভালো হতো। আল্লাহ সহায় হোন আমার আমাদের সকলের। যেন আমরা ও মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে চিরস্থায়ী জান্নাতের চাবি হাতে পাই আল্লাহ কবুল করুন। আমিন
আমার ওয়ের সাইট থেকে পড়ুন
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহু খাইর।
......কয়েক ফোঁটা অশ্রু .....
ইস; আমি আমরাও যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে যেতে পারতাম! তবে কতই না ভালো হতো। আল্লাহ সহায় হোন আমার আমাদের সকলের। যেন আমরা ও মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে চিরস্থায়ী জান্নাতের চাবি হাতে পাই আল্লাহ কবুল করুন। আমিন
সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া। হযরত হামযাহ রাঃ এর কবরের ছবিটি দেখতে মন চায় খুব। পারলে শেয়ার কইরেন। জাযাকিল্লাহ খাইর
লেখাটি ভালো লেগেছে। এই রকম আরো পাবো আশা রাখি।
মনকে ভীশন নাড়া দিয়ে গেলো প্রতিটি কথা! সুবহানাল্লাহ!
শুকরিয়া আপু আপনাকে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন