প্রশংসা করবো শির্ক নয়!
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:২০:২৮ বিকাল
প্রশংসার সবটুকুই মহান আল্লাহর! এই বিশ্বজাহানের সমস্ত ভালো, সমস্ত সৌন্দর্য, সমস্ত মাধুর্য, সমস্ত পূর্ণতা, সমস্ত অনুগ্রহ একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালার জন্যই নির্দিষ্ট! আমরা যে যা কিছুই পেতে চাই, পেতে আকাংখি হই, ব্যকুল হই, দূর্লভ চেষ্টা করি, প্রার্থনা করি, আবেদন করি, কাকুতি-মিনতি করি, রোনাজারি করি, ভরসা করি, একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছেই তা চাই! আর সেই চাওয়া পূর্ণ করতে পারেন একমাত্র মহান আল্লাহই! যখন সমস্ত সৃষ্টিই তার, আর তিনিই স্রষ্টা! এবং সকল ইচ্ছা পূর্ণ করার ক্ষমতাও তার তবে আমাদের সকলের উচিৎ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আল্লাহর প্রশংসায় মত্ত থাকা!
জীবনে যাকিছু পেয়েছি তার জন্যে তো প্রশংসা করা উচিৎই তারপর যা পেতে আকাংখি, বেকুল, যার জন্য দূর্লভ প্রচেষ্টা করি তার জন্য আরো বেশী বেশী প্রশংসায় লিপ্ত থাকা উচিৎ! আমাদের সকল বিষয়ে ইচ্ছা পূরণের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই! আমাদের প্রিয় রাসূল (সঃ) এর জীবনী পড়লে পাই তিনি কিভাবে আল্লাহ তা'য়ালার শানে প্রশংসা করতেন। আমরা দেখি; আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা বলতেন; আমি সেই আল্লাহর নামে শুরু করছি যার নামে শুরু করলে যমীন ও আসমানে কেউ কোন ক্ষতি করতে পারেনা, আর আল্লাহ তো সবকিছু শুনেন ও দেখেন। ( আবু দাউদ:৫০৮৮, ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৯)
আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, কেউ যদি কোন খারাপ কিছুর সম্মুখীন হয়, তখনও যেন বলে সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা। (ইবনে মাজাহ: ৩৮০৩)
আমরা আল্লাহ বান্দা-বান্দি বা গোলাম হিসেবে সুখের সময়ও আল্লাহর প্রশংসা করবো! আর বিপদের সময়ও আল্লাহরই প্রশংসা করবো! কারন যেকোন বিপদ থেকে তিনিই উদ্ধারকারি! তাই আমরা আল্লাহর প্রশংসা করবো অত্যধিক! আর মানুষের প্রশংসা করতে গেলেও প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করে বলবো মহান আল্লার ইচ্ছায় আপনার কাজটা সুন্দর হয়েছে! অথবা বলবো আল্লাহর প্রশংসা যে, তিনি আপনাকে যোগ্যতা দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ! কারো গুণ আমাদের সামনে প্রকাশিত হলে বলবো মাশ-আল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তো আপনাকে অনেক গুণ দিয়েছেন! অতিরিক্ত প্রশংসা করবো না কারন অতিরিক্ত প্রশংসা মানুষের মনে স্বাভাবিক ভাবেই অহংকার সৃষ্টি করে দেয়! আর অহংকার পতনের মূল বলে একটা প্রবাদবাক্য আছে। তাই আমরা অহংকারী হতে চাইনা আর প্রশংসার ক্ষেত্রে অতি রঞ্জিত করে কাউকে গুনাহগার ও বানাতে চাইনা।
আমরা সব কাজে, সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর প্রশংসা করবো অধিকহারে এবং সে প্রশংসা করবো অন্তর থেকে! যেন সেই প্রশংসায় আল্লাহ আমাদের কর্মে, চলনে, বলনে, আমাদের অক্ষমতায়, আমাদের দূর্বলতায়, আমাদের কমিতায় সর্ব বিষয়ে খুশি হয়ে যান! প্রশংসার ক্ষেত্রে মুখে এক আর অন্তরে আরেক যেন না হয়! আরবী ভাষায় হামদ্ অর্থ নির্মল ও সম্ভ্রমপূর্ণ প্রশংসা! আর প্রশংসা পাওয়ার একমাত্র উপযুগী আমাদের মহান পালনকর্তা! গুণ ও সিফাত সাধারনত দুই প্রকারের। ১/ ভালো গুণ ও ২/ মন্দ গুণ। কিন্তু হামদ শব্দটি শুধুমাত্র ভালো গুণের অর্থই প্রকাশ করে থাকে! প্রশংসা যেহেতু আল্লাহর, সে জন্য আমরা মানুষের বেশী বেশী প্রশংসা করবোনা!
৮কোরআন হাদীস হতে সুস্পষ্ট রুপে জানা যায় যে, সাধারণ ভাবে মানুষের বিভিন্ন গুণ থাকতেই পারে। তাই কোন ব্যক্তির গুণ- সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এতখানি প্রশংসা করা উচিৎ নয়, যাতে করে গুণবান ব্যক্তিত্বকেই অসাধারণভাবে বড় করে তোলা হয় এবং সে আল্লাহর সমকক্ষতার পর্যায়ে পৌছে যায়। মূলতঃ মানুষের অতিরিক্ত প্রশংসাই মানুষকে তাদের পূজার কঠিন পাপে নিমজ্জিত করে! সেই জন্যই আমাদের প্রিয় রাসূল (সঃ) প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিকে বলেছেন; "যখন বেশী বেশী প্রশংসাকারীদের দেখবে, তখন তাদের মুখের উপর ধূলি নিক্ষেপ করো।"
(মুসলিম: ৩০০২)
এই হাদীস পড়ে আমরা জানতে পারি যে, অতিরিক্ত প্রশংসা মানুষকে গৌরব ও অহংকারী করে তোলে! হয়তো অতিরিক্ত প্রশংসার কারনে যার প্রশংসা করা হলো সে মনে করতে পারে যে, আমি বহুবিধ গুণ-গরিমার অধিকারী, আমার বিরাট যোগ্যতা ও ক্ষমতা আছে। আর কোন মানুষ যখন এই ধারণা মনের মাঝে আশ্রয় দেয় তখন থেকেই তার পতন হতে শুরু করে। এবং সে পতন হতে উদ্ধার হওয়া কিছুতেই সম্ভব হয়না।
কোন মানুষ যখনই অপর কোন মানুষের গুণ-সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তার অতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুরু করে তখন যার প্রশংসা করা হলো সে তার প্রশংসার কারনে তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধার জালে বন্দী হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সে মানুষের দাসত্ব ও মানুষের পূজা করতে শুরু করে। আমরা এসব কারনে না জেনে, না বুঝেই শির্ক করে ফেলি! মহান আল্লাহ আমাদের এই অবস্থা থেকে সংরক্ষন করুন। এই অবস্থা যে কোন মানুষকে শেষ পর্যন্ত চরম পঙ্কিল শির্কের পথে পরিচালিত করতে পারে তাই যারাই আমাদের সামনে আমাদের কারোর বেশী বেশী প্রশংসা করবে তখন সেই অবস্থায় (আউজুবিল্লাহি মিনাশ-শাইত্বনির রাজীম) পড়ে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া উচিৎ! এজন্যই আমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর প্রশংসা করার জন্যই শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, বা জানি যে, আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে কাউকে শরীক করলে বা সমকক্ষ মনে করলেই শির্ক হয়! আসলে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করলেও অতিরিক্ত প্রশংসা বা বান্দার প্রশংসার ক্ষেত্রে অতি রঞ্জন করণও কখনো কখনো শির্কের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যায়। মানুষের কাজে, সৌন্দর্যে, কথায়, তাদের ভিন্ন ভিন্ন গুণের প্রশংসা করবো তবে নিজেদের ঈমান বাঁচিয়ে। নিজেকে শির্কের সাথে জড়িয়ে নয়। আর মানুষের প্রশংসার ক্ষেত্রে অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহর প্রশংসা আগে বলে নিবো যাতে করে আমাদের ঈমানের ক্ষতি না হয়। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে শির্ক থেকে বাঁচান! ও শির্ক মুক্ত আমল করার তৌফিক দিন!
আমার ওয়েবসাইট থেকে পড়ুন
বিষয়: বিবিধ
১৮৯১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জিলা চট্টগ্রাম রে বার আউলিয়ার স্থান,
নাসিরা বাদ পাহাড়েতে আছে তার প্রমাণ, রে.. বার আউলিয়া
অন্যটি হল:
এই দুনিয়ায় দিতে নাইরে তুলনা,
নূরের পুতলা বাবা মাওলানা
মাওলানা মাওলানা মাওলানারে.... নূরের পুতলা বাবা..
ইমান ধ্বংসকারী মারাত্মক গান দুটির রচয়িতা কিন্তু হিন্দু! ইসলামের জন্য এত কান্নাকাটি কিন্তু মুসলমান হয়নি!
সুরা বাকারায় শেয় আয়াতে বলা হয়েছে,
আনতা মাওলানা ফানছুরুনা আলাল কাওমিল কাফিরীন।
অর্থাৎ মাওলা একমাত্র তুমি আল্লাহ, তুমি কাফেরদের প্রতিকূলে আমাদের বিজয় দান কর।
এভাবে প্রসংশা ও শ্রদ্ধা করে মানুষের ইমান আকিদা কতভাবে নষ্ট হয় তা একমাত্র আল্লায় ভাল জানে। অনেক ধন্যবাদ
বিশ্বাসের জায়গায় (অন্তরে) শির্ক না থাকলেও কথায়-কাজে বাহ্যতঃ শির্ক মনে হতে পারে, এমন ব্যাপারগুলো সাধারণতঃ দ্বীনের বিধিবিধান সম্পর্কে আিজ্ঞদের ক্ষেত্রেই বেশী ঘটে থাকে!
আশা করা যায় আল্লাহতায়ালা তাঁদের অজ্ঞতাপ্রসূত কথা ও কাজ ক্ষমা করে দিবেন!!
তবে যারা গোঁয়ার্তুমি করে দ্বীনের বিধান মানতে চায়না- অহেতুক বিতর্ক করে তাদের ব্যাপারটা ভয়ানক!!
জাযাকিল্লাহ..
আর কে না জানে নারীর রুপ ও গুনের প্রশংসা করে যুগে যুগে অজস্র গান ও কবিতা বের হয়েছে কবিদের হাত দিয়ে ।
এসব পড়ে মেয়েরা মুগ্ধ হয়েছে এবং পুলক অনুভব করেছে , সাথে অহমিকাও গড়ে উঠেছে তাদের মনে ।
কখনও কোন মেয়েকে এসব গান ও কবিতার প্রতিবাদ করতে শুনি নি এই ভাবে যে '' আমাদের জন্য এসব প্রশংসা করা উচিত হচ্ছে না , সমস্ত প্রশংসা তো আল্লাহর জন্যই।''
আমরা ভুলে যাই যে একজন মেধাবি লোকের মেধাও আল্লাহর দেওয়।
-এ দো'আটিকে আমার উপলব্ধিতে-জীবনে ঢালের মত পেয়ে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ্।
মন্তব্য করতে লগইন করুন