"হতবাক নির্বাক আমি" (ছোট গল্পের শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২২ আগস্ট, ২০১৫, ০২:৫৬:৪৯ দুপুর
বড়বউ মেয়েকে নিয়ে চলে যায় বাপের বাড়িতে! সেখানে গিয়ে বাপের মোবাইল দিয়ে প্রবাসী স্বামীর সাথে কথা বলে! তাকে জানায় মেয়ের বর্তমান অবস্থা! সে তো শুনেই অস্থীর! কেন আগে তাকে জানানো হলোনা? বউ বলে জানালে তো তুমি স্টোক করবে কেন জানাবো? স্বামী বলে এখানে থাকো পনেরোদিন এরপর এখানেই ডাক্তার দেখাও আমি পরে টাকা ম্যানেজ করে দেব! তখন স্ত্রী বলে তোমার টাকার আমার কোন দরকার নেই, তোমার টাকা তোমাকে বাপ ডাকলেও আমাকে মা ডাকবেনা! তুমি তোমার টাকা নিয়ে থাকো আর মনে রেখ মানুষের জীবনের চাইতে টাকা বড় নয়! টাকার চাইতে মানুষের জীবনের দাম অনেক বেশী! আর শুনে রাখো আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করে খেলেও তোমার বাড়িতে আর যাবোনা! কারন সেখানে আমার ও আমার মেয়ের খাবারের কষ্ট হয় বলেই ফোন রেখে দেয় বউ!
যখন ছেলে ফোন করে বাবা-মাকে বলে জীবনের চেয়ে টাকা বড় নয়, টাকার চেয়ে জীবনের দাম অনেক অনেক বেশী তখন তারা টাকা নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসে নাতনীকে ডাক্তার দেখাতে! একসাথে দুই পরিবারের মেয়ের দাদা-দাদী ও নানা-নানী সহ সেখানে একজন মহিলা শিশুবিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখালে বলে মেয়েকে তো পুরোই শেষ করে এনেছেন! জানতে চায় কি খাবার খাওয়াই মেয়েকে? মেয়ের মা জানায় দুধের সাথে সুজি মিশ করে খাওয়াই আর একটি করে ডিম। ডাক্তার মেয়েটাকে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে জানতে চায় কতমাস বয়ষ থেকে সুজি খাওয়াচ্ছেন? সে বলে চারমাস বয়ষ থেকে! এবার ডাক্তার বলে সন্তানের মা হয়েছেন বুঝবেননা কখন কি খাওয়াতে হবে বাচ্চাকে? কে বলেছে আপনাকে এত অল্প বয়ষে বাচ্চাকে সুজি খাওয়াতে বউ না বুঝেই বলে দেয় আমার শাশুড়ী! শাশুড়ী উপস্থিত থাকায় ডাক্তার শাশুড়ীকে বলে আপনি সন্তান পালন করেই তো বৃদ্ধ হয়েছেন কিন্তু কেন এই পরামর্শ দিলেন আপনার নাতনীকে সুজি খাওয়াতে? তাকে তো পুরোই শেষ করে এনেছেন! ডাক্তার খুব ভালো করে আরো জানতে চায় কতসময় পেটে খাবার রাখে! মেয়ের মা আরো বলে কোন খাবারই পেটে রাখেনা! খাওয়ানোর পর পরই বমি করে দেয়! এবার ডাক্তার বলতে থাকে একটি বাচ্চা শিশুর ছয়মাসের পর থেকে বাড়তি খাবারের উপযুগী হয়! তবে সেই খাবারটা বেশী ঘনও না আবার একেবারে তরলও না! তরল থেকে হালকা ঘন! যেন সেই খাবারটা সে খেয়ে হজম করতে পারে! আপনারা শুরুতেই বাচ্চাটিকে এতবেশী ঘন খাবার দিয়েছেন যে, তার হজম শক্তি পুরোই নষ্ট করে ফেলেছেন! সে আর কোনদিন মোটা বা ঘন খাবার খেতে পারবেনা! তাকে সবসময় তরল খাবারই দিতে হবে! এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি মেয়েটাকে হজম শক্তি ফিরিয়ে দেন! নয়তো বড় হলেও তার এই সমস্যা থেকে যাবে! মেয়ের মা তো কাঁদতে থাকে! আর আফছূছ করতে থাকে! কেন প্রবাসীর কাছে বিয়ে হলো? বড় বউয়ের স্বামী পছন্দ হলেও সংসারের এসব ঝামেলায় অসহ্য হয়ে যায়! স্বামীকে সব কথা বলতেও পারেনা আবার নিরবে আর সহ্য ও করতে পারেনা! এখন মা তো মেয়ের জন্যে প্রাণ ভরে দোয়া করতে থাকে আর তার সেবায় নিজেকে ব্রতী রাখে! এরপর বড় হলে আল্লাহ দয়া করে হজম শক্তি বাড়িয়ে দিলে হয়তো ঘন খাবার খেতে পারবে মেয়েটা! নয়তো কোনদিনই পারবেনা! আল্লাহ তুমিই আমার মেয়ের সহায় হইও!
পাঁচদিনের ঔষধ দিয়ে পাঁচদিন পর আবার নেয়ার কথা জানিয়ে দেয় ডাক্তার! পাঁচদিন পরে নানা-নানী ও মেয়ের মা নিয়ে যায় ডাক্তারের কাছে! ডাক্তার এবার মেয়ের নানাকে ইচ্ছেমত কবে দেয়! কেন প্রবাসী দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন? দেশে কি দেশের ছেলের অভাব? আজকে যদি মেয়ের বাবা দেশে থাকতো সবসময়, মেয়ের এই অসুস্থতার সময় ঠিকই ডাক্তার দেখাতো! বউয়ের অবস্থা দেখে ডাক্তার আরো বলেন আপনারা দুটি জীবন একসাথে মারার ব্যবস্থা করেছেন প্রবাসীর কাছে বিয়ে দিয়ে! কেন যে আপনারা বাবা-মা হয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেন? আমার বুঝে আসেনা! আপনারা আপনার জামাইর সাথে সরাসরি কথা বলেন! তাকে জানান সবকিছু! নয়তো মেয়েকে ছাড়িয়ে আবার বিয়ে দোয়ার ব্যবস্থা নিন! ডাক্তার মহিলাটি আবেগে আপ্লুতো হয়ে মেয়ের বাবাকে অনেক কথাই বলেন! এরপর নিজেকে কন্ট্রোল করেন! তখন হয়তো তার মনে পড়ে সে সমাজের একজন ডাক্তার! তখন মেয়ের বাবাকে এসব বলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নেন! চাচা আমি যদিও একজন ডাক্তার তথাপি আমি একজন স্ত্রী, একজন মা! আমিও ভুক্তভুগী! তাই আপনার মেয়ের কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারিনি! আমাকে ভুল বুঝবেন না! এবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে, বোন আমাদের এই সমাজে বড়বউদের অনেক জুলুম সহ্য করতে হয় তারা বড় হয়েছে বলে! এরপর মেজু, ছোটরা এলে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়! তারা ঠিক করে দেয়! দেখা যায় আপনি মুরগী রান্না করে আপনার শাশুড়ীকে খাবার দিয়েছেন! সে আপনার দোষই প্রকাশ করবে, এরপর যখন মেজু, সেজু, ও ছোট বউ এসে মুরগী রান্না করে নিজেরা খায় আর শাশুড়ীকে শুধু ডিম ভাঁজা করে খেতে দেয় তবুও তারা প্রসংশা পায়! সময় গড়িয়ে এমন সময় এসে উপনীত হয় তখন শাশুড়ী বড়বউকেই বুকে টেনে নেয়! আমার বেলাতেও তাই হয়েছে! মেয়েটি ডাক্তারের কথা গুলো মন দিয়ে শুনে! ডাক্তার আরো বলে, বোন তুমি তোমার স্বামীকে বুঝাও, ধৈর্য ধরা ভালো তবে তোমাদের এমন বিষয়গুলো সহ্য করা ঠিক নয় যা তোমার সন্তানের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে! মনে রেখ তোমার সন্তান শুধু তোমারি, তার কোন ক্ষতি হলে তোমারি ক্ষতি, সারা জীবন তোমাকেই পস্তাতে হবে! মেয়েটি বলে আপা আমি কি করতে পারি? ডাক্তার বলে, তোমার স্বামীকে বুঝাও সে যতদিন না আসে তুমি তোমার বাবার তত্ত্বাবধানে থাকবে! সে আসলে শশুরালয়ে যাবে! মেয়েটি এবার বলে আপা তবে কি আমার সংসার টিকবে? ডাক্তার তখন বলে বোন ধৈর্য ধরা নারীর গুণ হলেও এমন বিষয়ে ধৈর্যধরা জুলুমও যে বিষয়গুলো তোমার, তোমার সন্তানের জীবন বিপন্ন হয়! তুমি তোমার মত করে বুঝাতে ট্রাই করো! এরপর থেকে যখনই ডাক্তারের কাছে শিশুটিকে নিয়ে আসা হতো মনে হয় যেন ডাক্তারকে দেখলেই শিশুটি সুস্থ হয়ে যেত! আর ডাক্তারও শিশুটিকে খুব আদর করতো!
ডাক্তারের পরামর্শে মেয়েটি স্বামীকে বুঝাতে থাকলো এই বলে যে, তুমি হাদীস পড়ো এবং ভালো করে জেনে নাও বউয়ের কোন হক্ব আছে কিনা, সন্তানের কোন হক্ব আছে কিনা! লোকটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতো মায়ের পদতলে জান্নাত! লোকটা প্রথমে বুঝতে ভুল করে হিতে বিপরীত হয়ে মেয়েটির সংসার একেবারে ভাঙার অবস্থায় আসে! স্বামী কঠিন শব্দে জানিয়ে দেয় আমার মেয়েকে রেখে তুমি চলে যেতে পারো! মেয়েটি যখন স্বামীকে কোন ভাবেই বুঝাতে পারেনা তখন স্বামীকে এই ভাবে জানিয়ে দেয় যে, গাধা শুধু চিনির বোঝাই বহন করে, খেয়ে দেখেনা তার গুণাগুণ! তুমিও কোরআন হাদীস পড়ো কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার শেখোনি! আর তাই আমি তোমার থেকে সরে যাবো শুধুমাত্র মেয়েটি দুধের হক্ব আদায় হলে!
এরপর ভাঙি ভাঙি করে অদৃশ বেড়ীতে বাঁধা সংসার! দু'জনের মাঝে মাঝখানে অনেকদিন কথা বার্তা হয়নি! মেয়েটি মনে মনে কষ্ট পেলেও কি করা? ঘুমন্ত মানুষকে অল্পতেই জাগানো যায়, কিন্তু যে ঘুমের ভান করে তাকে কোনদিনও জাগানো যায়না! লোকটার একতরফা ভক্তি বিশ্বাসেই বউকে অবজ্ঞা-অবহেলা করেছে! সন্তানের ব্যপারে অনৈতিকতা দেখিয়েছে! বউয়ের বুঝানোতে অনেক পরে কাজ হয়েছে, লোকটা এরপর থেকে বউকে আলাদা করে হাত খরচ ও বাচ্চার খরচ দেয়ে শুরু করেছে! প্রবাসী লোকটা স্ত্রীর অনেকদিন কথা বলা বন্ধ রাখলেও সেদিন গুলোতে হাদীসের চর্চা করেছে, কোরআনের ব্যাখ্যা পড়ে জেনেছে,প্রত্যেকের হক্ব! লোকটা অনেক পরে হলেও বুঝেছে যে, শুধু মায়ের পদতলেই জান্নাত নয়! স্ত্রীর হক্ব, সন্তানের হক্ব, স্বজনদের হক্ব, প্রতিবেশীর হক্ব, দেশবাসির হক্ব, প্রত্যেকের হক্বই আলাদা আলাদা! আর প্রত্যেকটির ব্যপারেই আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন!
কোরআন এং হাদীস আপনার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে! এরপর থেকে মেয়েটিকে তার প্রবাসী স্বামী শশুরালয়ের পাশে একটি বাসা ভাড়া করে দেয় এবং নিয়মিত খরচ-পাতি দেয়! কাছাকাছি থেকে সম্পর্ক নষ্টের চেয়ে দুরে থেকে সম্পর্ক ভালো থাকাই ভালো! মেয়েটি আলাদা থাকলেও সপ্তাহে সপ্তাহে খাবার রান্না করে নিয়ে এসে শশুর-শাশুড়ীকে দেখে যায়! আর তাদের সম্পর্কও এখন আগের তুলনায় অনেক অনেক ভালো! বউটি সময়ের কষাঘাতে দুরে চলে গেলেও ননদটি এখনো তাদের সাথেই আছে! মেয়েটি আল্লাহর অসংখ্য অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করে ও সকল মুসলিম উম্মাহের জন্য এই বলে দোয়া করে যে, প্রত্যেক মানুষই যদি কোরআন-হাদীসের চর্চা করে বাস্তবে পরিচালিত করতো, সংসার জীবনে বাস্তবায়ন করতো তবে পৃথিবীর প্রতিটি ঘরেই জান্নাতের সুখ বিরাজ করতো! মহান আল্লাহ সকল নারীকেও সঠিক বুঝ দিন ও সকল পুরুষকেও সঠিক বুঝ দিন!
স্ত্রীদের ব্যপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ
তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।
তিরমিযী, সদাচার ও সুসম্পর্ক অধ্যায়।
তৃতীয় ঘটনাঃ- একজন মা তার ছেলেকে আপনার বোনের মেয়েকে বিয়ে করিয়েছে! কারন অন্য পরিবার থেকে কাউকে আনলে হয়তো তাকে খেদমত করবেনা! বা সম্মান করবেনা! সেই বোনেরা মেয়ে বিয়ের আগে খালাকে যতটা খেদমত করতোম যতটা সম্মান দেখাতো বিয়ের পর ততটাই অবজ্ঞা ও অসম্মান করেন! একমেয়ে একছেলের সংসারে ছেলেটি ছোট, আর মেয়েটির বিয়ে হয়ে শশুরালয়ে! ছেলেটি সংসারে ছোট হলেও বাবা জীবিত না থাকার কারনে মায়ের দায়িত্ব ছেলেটিকেই নিতে হয়েছে! আপন খালাতো বোন! এখন জীবন সঙ্গীনি! নিশ্চয়ই আমার মাকে খুব খেদমত করবে! সম্মান করবে! মা ছেলের এই অন্ধ বিশ্বাসকে ভেঙে দিয়ে মেয়েটি এখন উল্টো হয়ে গেছে!
তাদের সংসারে প্রথমে দুইটি জমজ সন্তান হয়ে মারা গিয়ে পরের দুইটি ছেলে সন্তান বর্তমান আছে! আর তাদের দেখাশুনা দাদিই করেন! দাদি নাতী দুজনকে জীবনের চেয়েও ভালোবাসেন! কিন্তু সেই কাংখিত ছেলের বউ যাকে নিয়ে শাশুড়ী আত্মীয়-স্বজনদের সাথে গর্ববোধ করতো! আমার বউ আমার সেবা করবে, আমাকে সম্মান করবে, কিন্তু নষ্ট সময়ের উপস্থিতি কারনে বউ এখন আর সেবা, সম্মান তো দুরে থাক রীতিমত শাশুড়ীকে মারেন! ছেলে যখন বাড়িতে না থাকে তখন নানান কারনে শাশুড়ীকে অত্যাচার করনে! কটূকথা বলেন! বৃদ্ধ মহিলা নিরবে তা সহ্য করে যান! কারন একটি ছেলে ছাড়া তার আর দাড়ানোর কোন জায়গা নেই! এসব অত্যাচারে শাশুড়ীটি একসময় স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন! ভুলে যান তার অতীত! এই হাসেন তো এই কাঁদেন! আর সবাইকে বলতে থাকেন তোমরা আমার মেয়েকে ছেলেকে মেরনা! তাদের বাপ বেঁচে থাকলে খুব আদর করতো! আবার মধ্যরাতে ঘর থেকে বাহিরে চলে যান!
আত্মীয়-স্বজনরা কিছুদিন নিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বৃদ্ধ মহিলার অস্বাভাবিক আচরণে অতিষ্ট তারাও! অনেক চড়াই-উতড়াই করার পরে মহিলাটি কিছুটা সুস্থতা লাভ করেন তারপর আবারো ছেলের সংসারই আশ্রয়স্থল! বউ আবারো শুরু করেছে শাশুড়ী নির্যাতন! যতক্ষন ছেলে বাড়িতে থাকে ততক্ষন মা নিরাপদে থাকেন আর ছেলে চলে গেলেই শুরু হয় অমানবিকতা! এইতো গত সপ্তাহে আমার এই আত্মীয়ের কথা খুব মনে পড়াতে আমি কল করি, তখন জানতে পারি, বৃদ্ধা মহিলাটি আত্মীয়তার সম্পর্কে আমার দাদি হয়! জানতে পারি তার বর্তমানে এই অবস্থা! ছেলেটি আমার সম্পর্কে চাচা হয়, তাকে বললাম আপনি কেন শাসন করছেন না? কেন একজন মাকে আপনি যথাযথ সম্মান করতে পারছেন না? সে শুধু বলল, কি করবো মারে? আমি তো দুইদিকই সামাল দিতে চেষ্টা করি কিন্তু পারছিনা! আরো বলল, দুইটা টিভি চ্যানেল আমাদের জীবনটাকে দূর্বিসহ করে তুলেছে! স্টার প্লাস ও স্টার জলসা! কয়েকবার এই চ্যানেলগুলো দেখতে বারণ করেছি তখনই ঘরের আসবাব ভাঙা শুরু করেছে! সংসারে অশান্তির অনল জ্বলছে! শুধু দুইটি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু সহ্য করছি! আর ওর অত্যাচারেই আমার মা একবার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পাগল হয়েছিলো, এখন আবার সেই অবস্থা শুরু হয়েছে! আমি কি করবো? বলে দে!
আমি বললাম দাদিকে মোবাইল দেন! যখন দাদিকে মোবাইল দিলো আমি সালাম দিয়ে জানতে চাইলাম দাদি কেমন আছেন? তিনি প্রথমে সবকিছু লুকাতে চাইলেন! আমি বললাম দাদি আমি জানি আপনি ভালো নেই! তখনই তিনি এত কাঁদতে লাগলেন যে, আমি হতবাক নির্বাক হয়ে গেলাম! তিনি বললেন বোনরে,আমার সাদের বউ আমারে কথায় কথায় মারে, আজকে সে রাগ করে চলে যাচ্ছিলো আর আমি তাকে পথ রোধ করে বলি তুই কেন তোর সংসার ছেড়ে যাবে? তোর ছেলেদের কে দেখবে? আমি ভালো মনে ওকে ধরতে গেছি আর ও আমাকে ইচ্ছামত মারলো! আমি ওর হাত ধরে ঘরে রাখতে চাইলাম আর ও আমার হাতে এতজোরে কাঁমড় দিলো যে, হাতের কব্জির চামড়া উঠে রক্ত বের হয়ে গেলো! ব্যথার যন্ত্রনায় আমি অস্থীর! আমার জন্য দোয়া কর আল্লাহ যেন আমাকে তুলে নেন! আমি যেন তাড়াতাড়ি মরে যাই! আর কি বলে বলে কাঁদতেই থাকলো! শেষের কথাগুলো আমি বুঝতেই পারলাম না! আমি মোবাইল ধরে রাখতে পারছিলাম না! আমি কি বলে শান্তনা দিবো সে ভাষাও খুজে পাচ্ছিলাম না! শুধু বললাম দাদি আপনি আমাদের বাসায় চলে যান! তিনি বললেন কারো বাসায়ই যাবোনা, নিজের ছেলের কাছে যখন থাকতে পারছিনা তখন আর কারোর বোঝা হতে চাইনা! আমাকে বলেন, বলতে পারিস কোন অপরাধে আমার এই শাস্তি? তোর দাদা মারা যাওয়ার পর আমার ভাইয়েরা আবারো বিয়ে দিতে চাইলো, আমি রাজি হইনি এই ছেলেটি ছোট ছিলো বলে, আর আজ এই ছেলের বউ আমাকে এ অপদস্থ করছে! প্রতিদিন এতলোক মারা যায় কেন আমি মরিনা? আমি বললাম দাদি আপনি এভাবে বলবেন না! তিনি বলতে থাকলেন, এই যন্ত্রনার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো! কেন মরন আসেনা? আমি বুঝাতে চেষ্টা করলাম! পারলাম না! ঘৃনায় কাকাকে কিছু বলতে পারলাম না মোবাইল কেটে দিলাম!
আর সমাজের এই কঠিন চিত্র তুলে ধরার জন্যই কী বোর্ডে হাত রাখলাম! ভেবছিলাম একটি গল্পেই লেখা শেষ করবো! তাই ছোট গল্প নামের সাথে উল্লেখ করেছি! কিন্তু পারলমা না! তাই তিন পর্বটা বড় হলেও শেষ করে দিলাম! স্টার প্লাস ও স্টার জলসা নামক দুটি ব্যধি বর্তমান নারী মনকে গ্রাস করেছে! নিয়ে যাচ্ছে নির্ঘাত জাহান্নামের দিকে! এখন আমার মা, বোনেরা না বুঝলে এমন সময় বুঝতে পারবে তখন আর কোন লাভই হবেনা! এই দুইটা চ্যানেল, শাশুড়ীকে করেছে বউয়ের কাছে জালেম, বউকে করছে শাশুড়ীর কাছে জালেম! নদন ভাবির মাঝে চুলাচুলি, স্বামী স্ত্রীর মাঝে ফেতনা-ফ্যাসাদ, ভাইয়ে ভাইয়ে দুশমনি, আমি বলবো এটি একটি কঠিন ব্যধি! এর সু-চিকিৎসা করাতে হলে আমার মা, বোন, ভাবি, চাচিদেরকে অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করতে হবে ও কোরআন ও হাদীসের বেশী বেশী চর্চা করতে হবে! এর বিকল্প কোন পথ নেই! আমার প্রিয় বোনদেরকে বলতে চাই, মেসেজ দিতে চাই, হে বোনেরা, হে ননদেরা হে ভাবিরা তুমিও একদিন মা হবে, শাশুড়ী হবে, দাদি হবে তবে কেন অপসংস্কৃতির চর্চা করছো? কেন নিজেদের আখেরাত বর্বাদ করছো? কেন নিজেদেরকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করছোনা? ইসলাম সার্বজনীন এক জীবনাদর্শের নাম, যা মানুষকে এমন নীতি-নৈতিকতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে থাকে যার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, ধন-সম্পদ ও মান-মর্যাদার বৃদ্ধি হয় ও হিফাজত হয়। ইসলাম মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে জীবনের প্রতিটি বিষয় সুবিন্যস্ত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর থেকে মানুষের যা কল্যাণ তা গ্রহণ এবং যা অকল্যাণ তা পরিহার করার জন্য সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশ রয়েছে। তাই হাদীস ও মহাগ্রন্থ আল-কুরআন গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন আল্লাহর নবী (সঃ) এবং সাহাবায়ে কেরামগণ প্রাণান্তকর চেষ্টা-সাধনা করেছেন। আবার কখনো কখনো নিজেদের অবসাদ দূর করার জন্য মাঝে মধ্যে বিনোদন, কবিতা পাঠ এবং আমোদ-প্রমোদ, আহ্লাদ করেছেন। কিন্তু এ বিষয়গুলো এমনই যে, এর সীমা খুবই নিয়ন্ত্রিত। এর বাইরে গেলে তা হবে হারাম, (নিষিদ্ধ) মাকরুহ, (নিন্দনীয়) মাকরুহ তানযিহী অর্থ্যাৎ, অনুত্তম।
যে বিনোদন দ্বীন থেকে পথভ্রষ্ট হওয়ার অথবা অপরকে পথভ্রষ্ট করার উপায় হয়, তা অবৈধ। আর যে আমোদ-প্রমোদ বা আনন্দ অনুষ্ঠান, মানুষকে কুফরের দিকে নিয়ে যায় না বা গোমরাহ হতে সহায়তা করে না, তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। আল্লাহ তা’আলার বান্দা-বান্দি হিসাবে প্রত্যেক মুসলিমকে তার জীবনের প্রতিটি পর্বকে সাজাতে হবে মহান আল্লাহ তা’আলার নির্দিষ্ট রীতি-নীতি অনুযায়ী। যাতে তার মধ্যে আল্লাহ তা’আলার দাসত্ব পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হয়। এই মর্মে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : আপনি বলুন : আমার নামাজ, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।
(সূরা আনআ’ম-১৬২/১৬৩)
লেখাটি অনিচ্ছা সত্বেও বড় হয়ে যাওয়ার কারনে ক্ষমাপ্রার্থী! পাঠককে বিরক্ত করতে নয় সচেতন করতেই এই লেখা! সকলেই নিজ নিজ পরিবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ! কেউই যেন জালেম না হয়! সবাই আদম (আঃ) সূত্রে ভাই বোন, আত্মীয়! তাই সকলেই সকলের প্রতি সদয় হই! আল্লাহ তৌফিক দিন!
প্রথম পর্ব পড়ুন।
দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন।
*লেখাটি আমার ওয়েবসাইট থেকে পড়ুন।
বিষয়: বিবিধ
৩১৬০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কে বললো আমি বুঝবোনা। আমি কি সমাজ সংসারের বাইরে আছি ?
বাবা-মা,স্ত্রী-সন্তান,ভাই-বোন, আত্বীয়-স্বজন প্রত্যেকেরই হক্ব আছে। প্রত্যেকের হক্ব আদায় করা একজন মুমিনের কর্তব্য। এই জন্যই তো বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীকে বলেছিলাম,তোমার যতটুকু ভালবাসা পাওয়ার হক্ব আছে কম দেখলে আদায় করে নিও। তবে আমার অন্যের ভালবাসায় ভাগ বসাতে যেওনা।
আমি আমার মন্তব্যে বুঝাতে চাচ্ছি শুধু প্রবাস নয়, আমাদের সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্হাও দায়ী। ধন্যবাদ
আপনার দাওয়াত কবুল করেছি। আল্লাহ যেন আমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমাদেরকে তার ঘর তাওয়াফের,নবীর রওজা যেয়ারতের তাওফিক দেন সে দোয়া করবেন। ফি আমানিল্লাহ।
হক্ব বিষয়টি সচেতন ভাবে নিজেদের মাঝে উপলব্ধি করতে পারলেই কেবল সংসারে শান্তি আসতে পারে।
অনেক কিছুই শিখলাম, ধন্যবাদ।
এই সমস্ত ডাক্তারও রোগী ও পরিবার নষ্ট করার জন্য কম দায়ী নয়। সমস্যা হয়েছে বলেই, মানুষ ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের মুখ যিদ বিষ ঢেলে দেবার কাজে ব্যবহার হয়, রোগের সাথে ভোগের মাত্রাও বাড়বে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন