"হতবাক নির্বাক আমি" (ছোট্ গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২০ আগস্ট, ২০১৫, ০৪:৫৮:১৫ রাত
ভোরের শীতল বাতাস বইছে! নিরবে দুলছে গাছের সবুজ পাতাগুলো! গাছে গাছে ছোট পাখিরা কলকল কন্ঠে গান গাইছে! এলোমেলো হাওয়া নদীর ঢেউকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে! নির্ঝরণী ঝমঝম রবে ঝরে চলেছে! আকাশে উড়ে চলেছে সাদা মেঘের পালকি! মাচায় এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাউয়ের ডগাগুলো! ঘরের পীঁড়ায় বসে আছে বাড়ির সবার আদরের ছোট্ট বিড়ালটা! বাড়ির পেছনে শুঁকিয়ে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে আছে বটগাছটা! ঘরের দক্ষিন-পশ্চিম কোণে এখনো আছে তুলা গাছটা! সে এখনো ফলন দেয়! তবে তূলনা মূলক কমে গেছে! বাড়িতে প্রবেশের চিকন রাস্তার দু'পাশে এখনো সবুঝ ঘাসের গালিচা বিছানো আছে! বাড়ির ছোট মেয়েটার শখের বাগানে রজনী গন্ধা, গোলাপি, লাল, আর সাদা গোলাপের সমারোহ! অহরহ সুরভী বিলিয়ে যাচ্ছে! আজো প্রাকৃতির চারিদিকটার সবকিছু যেন আগের মতই রয়েছে! উঠোনের পাশে এখনো সেই মেহেদী গাছটা আছে! পাশে আছে বরই গাছের মিষ্টি ছায়া! আজো নদীর কূলে সাদা কাশফুল গুলো দুলে দুলে প্রাকৃতির সৌন্দর্য প্রকাশ করে যায়! আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমার মাতৃভূমির ভূবন ভুলানো দৃশ্য দেখে হৃদয় মনকে প্রশান্ত করি! আমি রাতের নীলাকাশ দেখি! দেখি মিটিমিটি জ্বলা তারার মেলা! আমার দৃষ্টি হারিয়ে যায় দিগ্বিদিগ! আমার মাতৃভূমির রুপ দেখতে দেখতে আমি যেন হয়ে যাই নেশাগ্রস্থের মতো! তবুও আমার মন ভরে না! গত কয়েক বছর ধরে প্রবাসে আছি এখন আর সেই আগের মতো করে আকাশ দেখা হয়না! দেখা হয়না মন ভরে ভোরের সূর্যদ্বয়! এখন আর আগের মত পাখির গান শুনে ঘুম ভাঙেনা! ঘুম ভাঙে মোবাইলের কর্কশ রিংটনে! নদীতে ছোট ছোট ঢেউয়ের সাথে বয়ে চলা মাঝির নৌকা এখন আর আমার দৃষ্টি কেঁড়ে নেয়না! আমি হারিয়ে যাইনা সেই ভালো লাগা আর প্রাকৃতির সেই ভালোবাসায়!
এখন আর আগের মতো নেই উল্লাস, উচ্ছাস, নেই মনের মাঝে উৎসবে মেতে উঠার আনন্দ! এখন আর চোখে পড়েনা একই পরিবারের ঈদের আনন্দের বন্যায় ভেসে যাওয়ার দৃশ্য! এখন আর সেই যৌথ পরিবার গুলোর সৌন্দর্য চোখে পড়েনা যেখানে একই সাথে বসবাস রত ছিলেন বাবা, চাচা, ফুপুদের আনন্দমুখর ক্ষন, দাদা-দাদীর হাসিমাখা উজ্জল মুখখানি, চোখে পড়েনা ভাতিজা, ভাতিজিকে কোলে তুলে আদর বিনিময়ের সেই কোমলীয় দৃশ্যের ছবি! সবই আগের মতোই আছে! শুধু মানব মনে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে! ডিজিটাল পায়েল পরে ডিজিটাল নৃত্যের তালে তালে আমার মা বোনেরা হেলে দুলে চলেছেন জাহান্নামের দারপ্রান্তে!
আমার মায়েরা ডিজিটাল না বুঝলেও বোনে ভাবিরা কম বুঝেনা! তাদেরকে ডিজিটালের মর্মার্থ বুঝাতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে আছে হাজারো টিভি চ্যানেল! তার মধ্যে দুটি চ্যানেলের কথা না বললেই নয় তা হলো স্টার প্লাস ও স্টার জলসা! এই স্টার প্লাস ও স্টার জলসার গুণাগুণ মানুষ এখন হাতে-নাতে পাচ্ছে! এখান থেকে শাশুড়ীরা শিখে নিচ্ছে কিভাবে ছেলের বউ পালতে হয়, আর বউয়েরা ও শিখে নিচ্ছে কিভাবে শাশুড়ীকে নাচাতে হয়! বউ শাশুড়ীর লড়াই পূর্ব থেকে থাকলেও এখন যেন মহামারির রুপ ধারণ করেছে! এই চ্যানেল গুলোতে কি যে ইনসানুল অহী নাযিল হয় আমি জানিনা! তবে দিব্যি বুঝতে পারছি কিভাবে আমার বোনেরা আমার ভাবিরা এতটা ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে? এই চ্যানেল গুলো যা শেখায় বাস্তবে তার চেয়ে বেশী চর্চা করেন আমার বৃদ্ধা মা চাচিরা আর যুবতী ভাবি বোনেরা! এই লেখাটা হয়তো কারোর মনপূত হবেনা! তাতে কি? সত্য কথা বাবার কোলে বসে বলবো!
একটি বাস্তবতা জেনে কী বোর্ডে হাত রেখেছি! আঙ্গুল চলছে সেখানে! মনটা ভেঙে খানখান! হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয়ে চলেছে অবিরাম! কি হচ্ছে অহরহ এই সুন্দর পৃথিবীতে? কিসের মোহেই বা মানুষ আজ পশুতে রুপ নিয়েছে? মনের মাঝে প্রশ্ন উঁকি মারে মানুষ কি চিরঞ্জীব? মানুষ তো মরনশীল! আর মরনশীল জেনেও কিভাবে একে অপরের হক্ব নষ্ট করে? কিভাবে একে অপরের উপর জুলুম অত্যাচার করে? আমি বুঝিনা! অনেক আগে ভাবতাম আগের দিনের রাজা-বাদশাহরা হয়তো জালেম প্রাকৃতির ছিলো, তারাই শুধু নিরিহ দূর্বল মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন চালাতো! কিন্তু এখন দেখছি শাশুড়ী বউয়ের উপর জুলুম করে, বউ শাশুড়ীর উপর জুলুম করে! ভাই ভাইয়ের উপর জুলুম করে! প্রতিবেশী প্রতিবেশীর উপর জুলুম করে! জুলুমের অবয়বের যেন শেষ নেই! বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রুপে আমাদের সামনে প্রকাশমাণ এই জুলুম!
বাস্তবতার আলোকে কয়েকটি ঘটনাঃ
ঘটনা একঃ চার ভাইয়ের একটি বোন! খুব আদরের হওয়াটাই স্বাভাবিক! কিন্তু সেই বোনের মাথাটা খারাপ করে দিলো নিয়মিত দেখা কয়েকটি চ্যানেল! কেঁড়ে নিলো বিবেগ বুদ্ধি, মানবিক জ্ঞানকে যেন ভোঁতা করে দিলো! মনের মাঝে নড়ে উঠলো বিবেগ-বুদ্ধিহীন শয়তানটা! সে উস্কানি দিয়ে এমন কাজ করালো যে, সমাজে, সংসারে কারোর সামনে আর মুখ তুলে দাড়ানোর সুযোগ নেই! বাবা, ভাইদের স্বজনদের কাছে হতে হলো লাঞ্চিত! একটি বোনের অপকর্মের কারনে বাবা, ভাইয়েরা হয়ে গেলো যেন জুতার তলার ধূলিকণার মতো? মানুষ ছিঃ ছিঃ বাক্যে কলরব তুললো এমন কাজ কেউ করে পাগল ছাড়া? ভাগিনার সাথে পালানো!
ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতায় গুগল!
চলছে চলবে.......। পরের পর্ব পড়ুন।
* আমার ওয়েবসাইট থেকে পড়ুন।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৫ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভোগবাদ আর অনৈতিকতার ভয়াল থাবা গ্রাস করছে সমাজ কে!
ধর্মীয় আভয়বের পুর্ণ বাস্তবায়ণই এ থেকে মুক্তি দিতে পারে!
সুন্দর লেখনীর জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকিল্লাহু খাইরান হে শ্রদ্ধেয়াজ্বী!
এখন তো মানুষ এটা বুঝেই না যে কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ। যাখানে এই বুঝ শক্তিটুকু নেই সেখানে আর কি আশা করা যায়....
-অসাধারণ!...অসাধারণ লেখনি!!.. অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন