"আসুন এই রমাদ্বানে নিজেকে সাজাই"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৫ জুন, ২০১৫, ০১:০১:১৫ দুপুর
ত্বাকওয়া অর্জন ও নিজেকে গুনাহ থেকে পবিত্র করার এ মোবারক মাস আমরা যারা পেয়েছি তারা সকলেই অন্তরের অন্তস্থল থেকে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি এবং বলি সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহর যিনি আমাদের নসীবে এই পবিত্র মাহে রমাদ্বান রেখেছেন! এই পবিত্র মাহে রমাদ্বানে সকল মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচার বিশাল সুযোগ দেয়া হয়েছে! এই মাহে রমাদ্বানে রয়েছে নেকী বৃদ্ধি করার সূবর্ণ সুযোগ! অল্প আমল করেও বেশী নেকী অর্জন করা যায় এই রহমতের মাসে!
আসুন এই রহমতের মাসে নিজেকে সাজাই! কিভাবে? শ্রেষ্ঠ মানব রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবনে থেকে উত্তম আদর্শের বীজ তুলে আমাদের জীবনে বোপন করে নেই! এবং সেই জীবনাদর্শকে বাস্তবে ফলপ্রসূ করতে সচেষ্ট হই মহান আল্লাহর কাছে রমাদ্বানের হক্ব সঠিক ভাবে আদায়ের তৌফিক চাই! দেখে নেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবনী থেকে তিনি কোন কোন কাজ রমাদ্বানের রোজা ছাড়া ও বেশী বেশী করতেন এবং সকলকে উৎসাহ দিয়েছেন সেসব জেনে জেনে আমরাও আমল করার চেষ্টা করি!
জেনে নেই রমাদ্বানে রোযাদারকে ইফতার করানোর প্রতি কিভাবে উৎসাহ দিতেন?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করায়, সে উক্ত রোযাদারের সাওয়াবের কোনরূপ ঘাটতি না করেই তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে"।
সুনানে তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ
আমরা তো সকলেই ইফতার করবো এই রহমতের মাসে এবং সেই আয়োজনে থাকবে রকমারি খাবার! হতে পারে দামী কম দামী খাবার তবুও আসুন না প্রতিদিনের তালিকাতে আমাদের ইফতারের আয়োজনে রোজাদারকে ইফতার করাই যতটুকুন আমাদের সামর্থ আছে! সে অনুযায়ী না পারলে একটি খেজুর বা এক গ্লাস শরবত না হলে, এক গ্লাস সাদা পানি দিয়ে! আর সবাইকে জানাই ইফতারি করানোর ফজিলত তথা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বাণী!
ক্বিয়ামুল লাইল/তারাবীহের নামায; "যে ব্যক্তি রমাদ্বান মাসে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় (রাতের নামাযে) দাঁড়ায় তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে"।
বুখারী, মুসলিম।
সুনানের গ্রন্থসমূহে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : "যে ব্যক্তি ইমাম নামায থেকে বিরত হওয়া পর্যন্ত ইমামের সাথে (ক্বিয়ামুল লাইলে) দাঁড়াবে, তাহলে তার এ আমল রাত্রিভর ক্বিয়ামের সমতুল্য হিসাবে লিখা হবে"।
সুনানে আত-তিরমিযী, সুনানে আন-নাসাঈ
রহমতের এই মাসে পূণ্যের কাজে নেকী বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে! আসুন বেশী বেশী নেকী অর্জন করে আমাদের আমলকে আমলের ভান্ডারে পরিণত করি! এমাসে বেশী বেশী কোরআন তেলাওয়াত করা এবং কোরআনের অর্থের উপলব্ধি করতে চেষ্টা করা!
ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: "জিবরাইল (আঃ) রমাদ্বান মাসের প্রতি রাতে এসে রাসূল (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাকে নিয়ে কুরআন পাঠ করতেন"।
সহীহ বুখারী
আসুন আমরা সকলে ও এই রহমতের মাসে বেশী বেশী কোরআন তেলোয়াত করি! এই বরকতের মাসে নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে মত্ত রাখি! এই মাসে আল্লাহর রাস্তায় বেশী বেশী দান ও সদকা করা ও সকলকে উৎসাহ প্রদান করা;
আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা ও ব্যয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। সব সময় যাতে সামর্থবান ব্যক্তিবর্গ এ ইবাদাত পালন করে সে ব্যাপারে ইসলাম ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করেছে। আর রমাদ্বান মাসে এ ইবাদাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।
ইবনু আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “রাসূল (সাঃ) সকল মানুষের চেয়ে বেশী দানশীল ছিলেন। আর রমাদ্বান মাসে যখন জিব্রাইল (আঃ) তার সাথে সাক্ষাতে মিলিত হতেন তখন তিনি আরো দানশীল হয়ে উঠতেন.....।
অন্য বর্ণনায় এসেছে: জিব্রাইল (আঃ) এর সাক্ষাতে তিনি বেগবান বায়ুর চেয়েও বেশী দানশীল হয়ে উঠতেন”। বুখারী।
উমরাহ পালন; রাসূলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :‘‘রমাদ্বান মাসে উমরাহ করা হজ্জের সমতুল্য’’ অথবা ‘‘আমার সাথে হজ্জ করার সমতুল্য’’। বুখারী,
ইতেকাফ; রমাদ্বান মাসের শেষ দশদিন ইতে'কাফে বসা অতি উত্তম ইবাদাত। রাসূলাল্লাহ (সাঃ) রমাদ্বানের প্রথম দশদিন ইতে'কাফে বসেন। এরপর লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে মাঝের দশদিন ইতে'কাফে বসেন। এরপর যখন লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশদিনে হওয়া স্পষ্ট হয়ে গেল, তখন থেকে তিনি শেষ দশদিন ইতে'কাফে বসতে লাগলেন।
রমাদ্বানের শেষ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকা; রাসূলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রিতে (নামাযে) দাঁড়ায়, তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হল”। বুখারী।
ইমাম মুসলিম আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,‘‘রাসূল (সাঃ) রমাদ্বানের শেষ দশদিনে আল্লাহর ইবাদাতে এতটা পরিশ্রম করতেন যা তিনি অন্য সময় করতেন না”। মুসলিম।
রমাদ্বান মাস আমাদের গুনাহ মাফির মাস! এই মাসে আমরা আমাদের গুনাহকে ক্ষমা করিয়ে নেয়ার উত্তম সময়! বেশী বেশী দান সদকা করি ও অপরকে উৎসাহ প্রদানে নিজেকে নিয়োজিত করি! মহান আল্লাহ জাল্লাহ শানহু এইমাসের বরকতে সকলকে সুস্থতার সাথে রাখুন! সকলকে বেশী বেশী ইবাদত করার তৌফিক দিন! এই মাসের পরিপূর্ণ মূল্যায়ন যেন সবাই করতে পারি সে জন্য আল্লাহর কাছে তৌফিক চাই! মহান আল্লাহ আমাদের সকলের সকল গুনাহ ক্ষমা করে আমাদেরকে কবুল করে নিন! আমিন ছুম্মা আমিন!
ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা গুগল মামুকে.....।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫২ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহতায়লা আমাদের রমজান এর সর্বোচ্চ ব্যাবহার এর তওফিক দিন।
জাজাকিল্লাহ খাইরান আপু ।
মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন জিবনে একবার হলেও এই রাত টা পাই,
খুব ভাল লাগলো, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন