Rose Rose "অনুভূতি ও বিশ্বাসের দ্বিতীয় পাঠ" Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০১ জুন, ২০১৫, ০২:১৬:৫৩ দুপুর

"অনুভূতি ও বিশ্বাসের দ্বিতীয় পাঠ"

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর তা'য়ালার জন্য যিনি সারা জাহানের স্রষ্টা ও প্রতিপালক, যিনি আমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং সে পথে চলার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন অন্তরে আর সকল মানুষকে তিনিই উত্তম হিদায়াত নসীব করেন! আর অগণিত দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক মানব জাতির শিক্ষক ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপরও!

ঈমান বা আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসূল (সঃ) এর উপর বিশ্বাসের পরেই আসে নামাজ বা ইবাদতের স্থান! আমরা সবাই মনে করি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে, রমাদ্বন মাসে সিয়াম পালন করলে আর বছরে একবার যাকাত আদায় করলে, ও জীবনে একবার হজ্জ করলেই ইবাদত পূর্ণ হয়ে যায়। আসলেই কি ইবাদত পূর্ণ হয়ে যায়? আমাদের মনে কি একবারও আসে মহান আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ কি আমাদেরকে শুধু দুনিয়াদারি করার জন্যই পাঠিয়েছেন? নাকি ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য আছে সেটা কি কখনো জানার চেষ্টা করেছি? নাকি হেলা-খেলায় সময় পাড় করছি! একটু সময় নিয়ে চিন্তা-ফিকির করলেই আমরা বুঝতে পারবো মহান আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আর কি কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন?

আবদ্ শব্দের অর্থ গোলাম আর আবিদুন শব্দের অর্থ ইবাদতকারি! আর যার ইবাদত করা হয় তিনি হলেন মনিব বা স্রষ্টা! মনে করি, কোন লোক একজন গোলামকে ক্রয় করে নিলো সে গোলাম সারাদিনই তার মনিবের কথা মানতে বাধ্য! আর কোন ব্যক্তি কোন মালিকের সাথে কন্টেক্ট করলো প্রতিদিন আট থেকে দশ ঘন্টা নির্ধারিত একটি সময়ে কাজ করবে, এই নির্ধারিত সময়ে মালিক যে কাজের কথা বলবে সে সেই কাজ করতেই বাধ্য! এই আট ঘন্টা বা দশ ঘন্টার পর মালিকের আর কোন অধিকার থাকবেনা তাকে অন্য আরেকটি কাজের অর্ডার করতে! পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, লালন-পালন করছেন তাহলে তো সেই আল্লাহর ইবাদত আমাদের সর্বক্ষন করা উচিৎ। সূরা আল-জারিয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেনঃ ৫৬.) জিন ও মানুষকে আমি শুধু এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে।

এখন মূল কথা হলো আমাদেরকে ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আমরা মানুষ কি সঠিক পন্থায় সেই আল্লাহর গোলামি করছি? আমরা কি সত্যিকারর্থে প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আমরাই তার দাসত্ব করছি? আমাদের কর্মে ও বাস্তব জীবনে আমরা আমাদের দায়িত্বকে কতটুকুই বা বাস্তবমুখী করতে পেরেছি? আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রে কতটুকুই বা কায়েম (প্রতিষ্ঠিত) করতে পেরেছি? নিরবে নিভৃতে বসে ভাবলেই আমাদের জবাব দন্ডায়মান যে, আমরা আমাদের কর্মে, চিন্তায়, বাস্তবে, সমাজে রাষ্ট্রে আল্লাহর দেয়া দায়িত্বের কিছুই কায়েম করতে পারিনি। আমাদের সে চেষ্টা ও তেমন নেই। আমরা নো চিন্তা ডু ফূর্তিতে আছি মেতে। আল্লাহ ক্ষমা করুন আমাদের সকলকে।

আমাদের মৌলিক ইবাদত হলো ১/ আল্লাহ ও রাসূল (সঃ) উপর ঈমান আনা। ২/ নামাজ ৩/ রোজা বা সিয়াম পালন করা। ৪/ যাকাত আদায় করা। আর ৫/ সামর্থ থাকলে জীবনে একবার হজ্জ করা। আর আমরা এর কিছু অংশ পালন করেই নিজেকে খাঁটি মুসলমান মনে করছি। অথচ আমরা ভাবছি না আমরা যেহেতু আল্লাহর গোলাম সেহেতু ইবাদত বলতে আমরা বুঝবো সার্বক্ষনিক আল্লাহকে স্বরন করা উচিৎ। খালেস ভাবে আল্লাহর ইবাদত কবুলের শর্ত তিনটি।

১/ ঈমান থাকতে হবে।

২/ ইখলাস অর্থ্যাৎ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে।

৩/ রাসূল (সঃ) এর সুন্নত মোতাবেক হতে হবে।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন তার জবাব পেলাম। কিন্তু কি কাজ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবার সেই কাজ সম্পর্কে জানবো। সূরা বাকারার ত্রিশ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ

(৩০) আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই।” তারা(ফেরেশ্তারা) বললো, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও আপনার সন্তুষ্টি সহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি।” আল্লাহ বললেন, “আমি জানি যা তোমরা তা জানো না।”

খলিফাহ শব্দের অর্থ হলো প্রতিনিধি! মহান আল্লাহ পৃথিবীতে আমাদেরকে তার প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং আমাদেরকে কাজ দিয়েছেন হলো পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। জন্ম সূত্রেই প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাকে সব সময় সজাগ দৃষ্টি নিয়ে চলতে হবে এই কারনে যে, সে আল্লাহর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মুসলমান। যেনো-তেনো আর খেল-তামাশায় সময় কাটানো কোন মুসলিমের কাজ নয়। যদি ও এখন মুসলমানেরা নিজেদেরকে ভাসিয়ে দিয়েছি পৃথিবীর আনন্দ-বিলাসিতায়। আল্লাহ হিদায়াত নসীব করুন। প্রকৃত মুসলমান সবসময় তার চিন্তায়, গবেষনায়, মননে, কর্মে, সমাজে, রাষ্ট্রে এমন কি সে যখন যেখানে থাকবে সেখানে মানে পুরো পৃথিবীতেই দ্বীন-ইসলাম কায়েমের চেষ্টায় বিভোর থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর প্রত্যেক মুসলমান কোরআন ও হাদীস অধ্যয়ন করে জীবন পরিচালনা করাই ছিলো স্বাভাবিক।

কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়াই ছিলো অস্বাভাবিক। বর্তমানে মুসলমান তার উপর অর্পিত দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে বিপরীত পথেই কাজ করে চলেছে। যে কারনে আমাদের উপর আসীন হয়েছে জালেমের ক্ষমতার মসনদ। আমরা প্রতি নিয়তই পিষ্ঠ হচ্ছি সেই জালেমের পদতলে। এখানে যতই হাহাকার, চিৎকার, হোক না কেন, আমাদের ভুল কর্মনীতি অবলম্বনের কারনেই ভুল পদ্ধতিতে জীবন পরিচালনার কারনেই মহান আল্লাহর আরশ পর্যন্ত সেই হাহাকার, চিৎকার, ও আকাশ ফাঁটা কান্নার আওয়াজ পৌছে না। যতদিন না আমরা একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রাণ হবো ততদিন আমাদেরকে সেই জালেমের জুলুমের পদতলে পিষ্ঠ হতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পন্থায় জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দিন। সাথে হিদায়াতে কামেলা দান করুন ও হিদায়াতের উপর অটল অবিচল রাখুন। আমিন ছুম্মা আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৯১১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

323845
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:২৭
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : পড়লুম... জানলুম... শিখলুম... যাজাকাল্লাহ খাইরান...
০১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৮
265341
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! পড়া ও শিখার জন্য আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ খাইরান!
323854
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:০৫
আফরা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পন্থায় জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দিন। সাথে হিদায়াতে কামেলা দান করুন ও হিদায়াতের উপর অটল অবিচল রাখুন। আমিন ছুম্মা আমিন ।

জাজাকাল্লাহ খাইরান আপু ।
০১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৯
265342
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! আপনাকেও জাযাকুমুল্লাহ খাইরান!
323941
০১ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৪০
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ মদিনাপি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আলোকপাত করেছেন। আমরা যেহেতু আল্লাহর গোলাম সবসময়, তাই সমসময়ই তার আনুগত্যের মধ্যে থাকতে হবে। যেমন ধরুন ফজরের পর থেকে জোহর পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন ইবাদত নেই। এই সময়টাতেও কিন্তু আমি আল্লাহর গোলাম, তাই তার ইবাদত না করলেও নাফরমানী করা যাবে না। আর নাফরমানী না করাই হল বড় ইবাদাত। সুন্দর লিখাটির জন্য জাযাকিল্লাহ খাইর
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৩
266783
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সঠিক কথাই বলেছেন। আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!
323966
০১ জুন ২০১৫ রাত ১০:১৪
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আলহামদুল্লিলা আপু।যাহা বলেছেন খাটি বলেছেন।
আল্লাহ আমাদের সকল গোনাহ মাফ করে কবুল করুন।
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৩
266785
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!
324070
০২ জুন ২০১৫ দুপুর ১২:১৭
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, লিখাটা পড়ে খুব ভাল লাগলো, সুন্দর লিখাটির জন্য জাযাকিল্লাহ খাইর
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৩
266787
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!
324166
০২ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৪
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আল্হামদুলিল্লাহ!আপনার সারগর্ভ লেখা এবং বাস্তব উপলব্ধি প্রতিটি মু'মিন নরনারী জন্য একটি নির্দেশিকার মত কাজ করবে। সামনে রমাদ্বান মাস, এর প্রস্তুতিতে কাজে লাগবে সকলের। আপনাকে ধন্যবাদ।
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৪
266791
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! ইনশা-আল্লাহ! আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!
324555
০৪ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:১৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আপনার লিখাটা খুব খুব ভাল লেগেছে, আপনার লিখা গুলো আমি সব সময় পড়ি, দোয়া রইলো।
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
266792
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সবসময় পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File