Rose Rose রাতে চুরি করে দিনে হারাম খায়!Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৩ মে, ২০১৫, ০৭:০৯:৩০ সন্ধ্যা

"এক লোক রাতে চুরি করে দিনে হারাম খায়

সেই লোক হাসতে হাসতে জান্নাতে যায়"!

কথাটা পড়ে অবাক হচ্ছেন সবাই? না অবাক হওয়ার কিছুই নেই! আমিও কথাটা শুনে প্রথমে অবাকই হয়েছিলাম! কিন্তু পরে বুঝলাম অবাক হওয়ার কিছুই নেই! বাস্তব কথা এটা! সাথেই থাকুন সামনে ব্যাখ্যা আসছে! তখন বুঝতে পারবেন আমি আসলে মিথ্যা কথা বলছি না!

এক লোক রাতে চুরি করে দিনে হারাম খায়

সেই লোক হাসতে হাসতে জান্নাতে যায়! এই কথার ব্যাখ্যাঃ

মনের মাঝে প্রশ্ন আসলো রাতের বেলা চুরি করে আর দিনের বেলাতে হারাম খায় সে কিভাবে জান্নাতে যায়? রাতে চুরির অর্থ হলো রাতের বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সে একাকি উঠে আল্লাহর সামনে হাজির হয়! নিজের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়! আল্লাহর কাছে রোনাজারি করে ক্ষমা প্রার্থনা করে! আর দিনের বেলা যে কেউই তাকে মন্দ-ছন্দ যাই বলুক সে প্রতিবাদ করার শক্তি থাকা সত্যেও কোনই প্রতি উত্তর করেনা হজম করে নেয়! মানে তাদের কথার পরিবর্তে সে প্রতিবাদ করেনা! আর তার গুনাহ ও হয়না! সে সেই কথাকে সেই গুনাহকে হজম করে নেয়! (গুনাহ হারাম) তাই এই কথাকে এভাবে বলা হয়েছে যে, হারাম খায়!

مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ وَلَا يَجِدْ لَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا

‘যে মন্দকাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না’-(সূরা আন্-নিসা, ১২৩)।

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "إن المؤمن إذا أذنب ذنباً كانت نكتةٌ سوداء في قلبه. فإن تاب ونَزَع واستغفر صُقِل منها، وإن زاد زادت حتى يغلَّف بها قلبه، فذلك الران الذي ذكر الله في كتابه: { كلا، بل ران على قلوبهم }". رواه الترمذي، وصحَّحه، والنسائي وابن ماجه وابن حبان في صحيحه، والحاكم.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন কোনো গুনাহ করে, তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে, এরপর যদি সে তাওবা করে, গুনাহ মাফ চায়, তার অন্তর অমলিন হয়ে যায়। আর যদি তাওবা না করে, তবে তা বেড়েই চলে, এমনকি এক পর্যায়ে তা পুরো অন্তরের উপরেই ছেঁয়ে যায়।’ [তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ। তিরমিযি বলেছেন, হাদিসটি হাসান-সহিহ।] এটাকে আল-কোরআনে ‘ঢেকে-দেওয়া’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

‘কখনো নয়, বরং তারা যা অর্জন করত তা-ই তাদের অন্তরসমূহকে ঢেকে দিয়েছে’-(সূরা আল মুতাফ্ফিফীন, ১৪)।

আলেমদের কেউ একজন বলেছেন, গুনাহর ছোটত্বের প্রতি তাকিয়ো না, যার গুনাহ করছ তার কথা মাথায় রেখো। হাসান আল বসরী (রহঃ) বলেছেন, গুনাহ পরিত্যাগ করা তাওবা প্রার্থনার চাইতে সহজ। [দেখুন আয্যাওয়াজের আন ইকতিরাফিল কাবায়ের ১/১২] একটি সহিহ হাদিসেও এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘আমি যা-কিছু থেকে তোমাদের বারণ করেছি, তা থেকে তোমরা বিরত থাকো, আর যে সবের নির্দেশ আমি তোমাদের দিয়েছি, সাধ্যমতো তোমরা তার ওপর আমল করো।’ [বুখারি ও মুসলিম]

হযরত আবু বকর(রা) এর অনুশোচনাঃ

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত আছে,

একদা এক ব্যক্তি নবী ﷺ এর উপস্থিতিতে এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর সিদ্দীক(রাযিঃ) কে গালি দিচ্ছিল। সেখানে রাসূল(সা) আর রাসূল ﷺ আশ্চার্যন্বিত হয়ে শুনতে থাকেন । আবু বকর(রাযিঃ) কোনো বাদ প্রতিবাদ না করে নিরবে গালি শুনতে লাগলেন। (ঐ ব্যক্তির বার বার গালি দেওয়া এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর সবর ও চুপ থাকার উপর খুশি হয়ে) মুচকি হাসতে

থাকেন। কিছুক্ষণ পর হযরত আবু বকর সিদ্দীক(রাযিঃ) ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। তিনি ঐ ব্যক্তিতে তারই দেয়া একটি গালি ফেরত দিলেন। তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ(সা) এর মুখে অসন্তোষের চিহ্ন ফুটে উঠল। তিনি উঠে বাড়ীতে চলে গেলেন। হযরত আবু বকর(রাযিঃ) ঘাবড়ে গেলেন। তিনি কালবিলম্ব না করে রাসূলুল্লাহ(সা) এর কাছে ছুটে গেলেন এবং বললেন, “হে রাসূল! লোকটি যখন আমাকে গালি দিচ্ছিল আপনি চুপচাপ শুনছিলেন। যেই আমি জবাব দিলাম অমনি অসন্তুষ্ট হয়ে উঠে চলে এলেন।”

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, “শুন আবু বকর, যতক্ষণ তুমি চুপ ছিলে এবং ধৈর্য ধারণ করছিলে, ততক্ষণ তোমার সাথে আল্লাহর একজন ফেরেশতা ছিল, যিনি তোমার পক্ষ হতে জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু যখন তুমি নিজেই জবাব দিতে শুরু করলে তখন ঐ ফেরেশতা চলে গেলেন এবং মাঝখানে এক শয়তান এসে গেল। সেই ফেরেশতা চলে গেল আর) শয়তান মাঝখানে এসে গেল।" সে তোমাদের উভয়ের মধ্যে গোলযোগ তীব্রতম করতে চাইছিল। (তাই তিনি ﷺ শয়তানের সাথে না বসে উঠে

চলে আসেন) তারপর তিনি ﷺ বললেনঃ হে আবু বকর! মনে রেখ কোনো বান্দার উপর যদি যুলুম ও বাড়াবাড়ি হতে থাকে এবং সে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা ক্ষমা করতে থাকে এবং কোনো প্রতিশোধ নেয়া হতে বিরত থাকে, তবে আল্লাহ যুলুমকারীর বিরুদ্ধে তাকে সর্বাত্মক সাহায্য করে।”

হযরত আবু বকর(রা) অনুতপ্ত হলেন যে, ধৈর্যহারা হয়ে তিনি আল্লাহর ফেরেশতার সাহায্য হতে বঞ্চিত হয়ে গেলেন। তারপর তিনি ﷺ আরো বললেন, "হে আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) ! এমন তিনটি ব্যাপার আছে, যার প্রত্যেকটি অকাট্য সত্য -

যে বান্দার উপর কোন জুলুম করা হয় এবং সে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ আয্যা-ওয়া-জাল্ (পরাক্রমশালী ও মহিমান্বিত) তাকে নিজ সাহায্য দ্বারা শক্তিশালী ও সম্মানিত করেন। যে ব্যক্তি দানের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় এবং এর মাধ্যমে স্বজন-প্রতিবেশীর

সাথে অনুগ্রহের ইচ্ছা পোষন করে, আল্লাহ তা'আলা তার ধন-সম্পদ আরও বৃদ্ধি করে দেন। আর যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য (মানুষের কাছে) ভিক্ষার (চাওয়ার) দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়, আল্লাহ তা'আলা তার সম্পদ আরও কমিয়ে দেন।"

[ মুসনাদে আহমদ, মিশকাত/৪৮৭৫ ].

শিক্ষাঃ এই ঘটনা আমাদের সামনে ধৈর্যের শিক্ষাই নতুন করে তুলে ধরেছে। রাসূল(সা) বলেছেনঃ “ধৈর্য এমন একটা গাছ, যার সারা গায়ে কাঁটা, কিন্তু এর ফল অত্যন্ত মজাদার।” সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত চরম উস্কানীর মুখেও ধৈর্য ধারণ করা ও ক্রোধ সম্বরণ করা। উস্কানীর মুখে ক্রোধ সম্বরণের সহজ পন্থা হলো সালাম দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করা, নচেত ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযূ করা। আমরা সবাই যেন এসব ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে ফেরেশতাদের দোয়ার অংশীদার হতে পারি। আর এই ঘটনা থেকে আরো শিক্ষা নিতে পারি যে, শেষ রাতে উঠে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চেষ্টা করতে পারি! আল্লাহ সদাই আমাদের সহায় হোন! আমিন ছুম্মা আমিন!

বিষয়: বিবিধ

১৩৩১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

319858
১৩ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৩
আফরা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম আপু !
রাতে চুরির অর্থ হলো রাতের বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সে একাকি উঠে আল্লাহর সামনে হাজির হয়! নিজের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়! আল্লাহর কাছে রোনাজারি করে ক্ষমা প্রার্থনা করে!
আপু এটুকু রাতে চুরির মানেটা বুঝলাম ।

আর দিনের বেলা যে কেউই তাকে মন্দ-ছন্দ যাই বলুক সে প্রতিবাদ করার শক্তি থাকা সত্যেও কোনই প্রতি উত্তর করেনা হজম করে নেয়!

কিন্তু এটুকুর মানে হারাম খাওয়া হল কি ভাবে ?
১৩ মে ২০১৫ রাত ০৮:০৭
260920
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু হে প্রিয় ছোট্ট বোন আমার! এখানে হারাম খাওয়ার অর্থ হলো গুনাহের পরিবর্তে সে গুনাহ না করে হজম করে নিলো! যেহেতু গুনাহ করা হারাম তাই এখানে হারাম খাওয়া বলা হয়েছে। বুঝাতে পেরেছি বোন? পড়ে মন্তব্যের জন্যে জাযাকুমুল্লাহ!
319863
১৩ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আফরার সাথে একমত!
১৩ মে ২০১৫ রাত ০৮:০৯
260921
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ভাইয়া! এখানে হারাম খাওয়ার অর্থ হলো গুনাহের পরিবর্তে সে গুনাহ না করে হজম করে নিলো! যেহেতু গুনাহ করা হারাম তাই এখানে হারাম খাওয়া বলা হয়েছে। বুঝাতে পেরেছি ভাইয়া? পড়ে মন্তব্যের জন্যে জাযাকুমুল্লাহ!
319871
১৩ মে ২০১৫ রাত ০৮:২৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মা শা আল্লাহ চমৎমার উপদেশমালা সহ হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার জন্য জাযাকিল্লাহু খাইরান।
১৩ মে ২০১৫ রাত ০৮:৪১
260926
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! পড়ে মন্তব্যের জন্যে জাযাকুমুল্লাহ!
319876
১৩ মে ২০১৫ রাত ০৮:৫৮
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : অসাধারন একটি পোষ্ট প্রথমে থমকে গিয়েছিলাম পরে বুঝলাম মাহবুবা জিনিয়াস.....
১৩ মে ২০১৫ রাত ১০:১৩
260947
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া!মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!
319935
১৪ মে ২০১৫ রাত ০২:৩৪
আহসান সাদী লিখেছেন : ভালো পোস্ট। ধৈর্য ধরা এবং ক্ষমা করে দেয়া সম্পর্কিত হাদীসটা আমার খুব ভালো লেগেছে। এই হাদীস আগে কখনো পড়ি নি। উপকৃত হলাম খুব।

জাযাকিল্লাহ।
১৪ মে ২০১৫ দুপুর ০২:১৯
261090
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া!মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!
319943
১৪ মে ২০১৫ রাত ০২:৫৯
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম আপু। শিরোনাম পড়ে বুঝতে পারিনি, বিস্তারিত পড়ে বুঝলাম। জাজাকাল্লাহ Rose Good Luck
320014
১৪ মে ২০১৫ দুপুর ০২:২০
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া! মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!
320060
১৪ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫১
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ভালো লাগলো. অনেক ধন্যবাদ
১৪ মে ২০১৫ রাত ০৮:০৮
261142
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া! মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!
320131
১৫ মে ২০১৫ রাত ০১:২১
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খায়ের Good Luck Good Luck
১৫ মে ২০১৫ রাত ০৩:৩৪
261240
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া! উৎসাহ মূলক মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে জাযাকুমুল্লাহ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File