আত্মার খোরাক (১৪)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৮ এপ্রিল, ২০১৫, ০৪:২৫:৪২ বিকাল
পশু-পক্ষীর হক্ব সম্পর্কে হাদীসঃ-
হযরত সোহাইল ইবনে হানযালিয়া (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা নবী করীম (সঃ) এমন একটি উটের কাছে দিয়ে যাচ্ছিলেন, (ক্ষুধায়) যার পেট-পিঠ এক হয়ে গিয়েছিলো হুযুর (সঃ) বললেনঃ এ বাকহীন পশুগুলোর ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা উত্তম অবস্থায় এর উপর আরোহণ করবে এবং উত্তম অবস্থায় তাকে ছেড়ে দিবে। (অর্থ্যাৎ সুস্থ-সবল অবস্থায় এর উপর আরোহণ করবে এবং ক্ষুধায় কাতর হওয়ার পূর্বেই পিঠ হতে অবতরণ করবে)।"
(আবু দাউদ)
হযরত আবু হোরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ প্রাচুর্যের পথে তোমরা যখন সফর করবে, তখন তোমরা তোমাদের উটগুলোকে মাটি থেকে তার হক্ব (ঘাস-পানি) নিতে অবকাশ দিবে। আর তোমরা যখন অজন্মার সময় (ঘাস-পানি বিহীন এলাকা হতে) সফর করবে তখন তড়িৎ উটগুলোকে চালাবে।(যাতে উটগুলো পথিমধ্যে ঘাস পানির অভাবে কষ্ট না পায় এবং মনযিলে পৌছে খাদ্য ওবিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে।"
(মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ-ইসলাম একটি কল্যাণকর ও সুবিচার পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। যেখানে শুধু মানবজাতির ক্ষেত্রেই সুবিচার করার আদেশ করা হয়নি। বরং পশু-পক্ষী প্রভৃতি বাকহীন জীবের বেলায় ও সুবিচার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপরের বর্ণিত হাদীস দু'টিতে আল্লাহর নবী (সঃ) ভারবাহী পশুর যত্ন নেয়া, তাকে ঠিক মত খাদ্য-পানীয় দেয়া এবং তার থেকে সাধ্যের অতীত কোন কাজ না নেয়ার জন্যে আমাদেরকে হেদায়াত দিয়েছেন। সুতরাং যারা লাঙ্গল চষা, গাড়ি টানা এবং সোয়ারী ইত্যাদি কাজে গরু-মহিষ, উট-ঘোড়া ইত্যাদি জানোয়ার ব্যবহার করে তাদের উচিৎ সব বাকহীন পশুগুলোর যথাযথ সেবা শুশ্রুষা করা এবং এগুলোকে সাধ্যের অতীত কোন কষ্ট না দেয়া।
হযরত আবু হোরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ একদা এক ব্যাক্তি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ তার ভয়ংকর পানির পিপাসা হলো। সামনে সে একটি পানির কূপ পেয়ে তাতে নেমে পানি পান করে যখন উপরে আসলো, তখন সে একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে হাঁপাতে এবং (পিপাসার জালায়) ভিজা মাটি চাটতে দেখলো। লোকটি মনে মনে ভাবলো একটু আগে আমার যেরুপ পানির পিপাসা হয়েছিলো। এ কুকুরটিরও ঠিক অনুরুপ করে পানির পিপাসা হয়েছে। লোকটি তৎক্ষণাৎ কূপের ভীতরে অবতরণ করে তার চামড়ার মোজায় পানি ভরে মুখে কামড়িয়ে ধরে উঠে আসলো এবং তৃষ্ণার্ত কুকুরটিকে তা পান করায়ে আল্লাহর শোকর আদায় করলো। প্রতিদানে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিলেন সাহাবায়ে-কেরামগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি দয়া করলেও কি আমরা সওয়াবের অধিকারী হবো? হুযুর (সঃ) বললেনঃ হাঁ যে কোন জীবের প্রতি দয়া করলে তোমরা সওয়াবের অধিকারী হবে।"
(বুখারী, মুসলিম)
শিক্ষনীয়ঃ- এই হাদীস সমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারি তা হলো শুধু মানুষের প্রতি দয়া করতে হবে এমন নয়। মানুষের প্রতি ও দয়া করতে হবে! সাথে বাকহীন পশু-পক্ষীর প্রতিও দয়া করতে হবে। এই হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, ইসলাম শুধু মানুষের অধিকার সংরক্ষন করেছে তা নয়। ইসলাম পশু-পক্ষীর অধিকারও সংরক্ষন করেছে। তাই আমাদের উচিৎ মানুষ সহ সকল জীবের প্রতি দয়া করে করে আমাদের গুনাহ সমূহকে মাফ করিয়ে নেয়া এবং আমাদের সম্মানিত অবস্থানকে ঠিক রাখার!
বিষয়: বিবিধ
১০১৬ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্লগে প্রবেশ করেই হাদীস পড়লাম আলহামদুলিল্লাহ! আপনাকে অনেক শুকরিয়!
এখন মানুষ মানুষের অধিকার সম্পর্কেই উদাসিন।
আর হ্যাঁ আপু একটি বিষয় উল্লেখ না করলে আমার মনোঃকষ্ট থেকে কিছুতেই মুক্তি মিলছে না। তাই এই ছোট্ট ব্যাখার প্রয়োজন আপুম্নি। আপনি আমাকে বড় বোনের মর্যাদায় আসীন করেছেন জেনে আমি খুবিই আনন্দিত আলহামদুলিল্লাহ্। আপনার দেয়া হৃদয় ছোঁয়া মন্তব্যটি পড়ে ব্যস্ততার কারণে ভেবেছিলাম পরে সুন্দর করে প্রতি মন্তব্য করবো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ পরে একদম ভুলে গিয়েছিলাম আপু। আশাকরি বড় বোনের এই অনিচ্ছাকৃত অপরাধ ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে নিবেন। জাজাকাল্লাহু খাইর হে আমার অতি প্রিয় ছোট বোন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন