প্রিয় নবীজি (সঃ) এর কসম
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০২:০৮:০৫ দুপুর
আসুন জেনে নেই নবীজি (সঃ) এর কসম কি? কেন তিনি কসম করেছেন, এবং কসমের মাঝে আমাদের কি জানার আছে? কি শেখার আছে? কি মানার আছে?
হযরত আবু কাবশাহ আনসারী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী করিম (সঃ) কে এই এরশাদ করতে শুনেছেন যে, আমি কসম খেয়ে তিনটি জিনিস বর্ণনা করছি এবং উহার উপর একটি কথা তোমাদেরকে বলবো। উহা ভালভাবে স্বরন রেখো।
তিনটি কথা যার উপর আমি কসম করছি, তাঁর প্রথমটি এই যে,
১/ সদকা করার দ্বারা কোন বান্দার মাল কম হয়না। দ্বিতীয়টি হল
২/ যার উপর জুলুম করা হয় এবং সে উহার উপর সবর করে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। তৃতীয়টি হল
৩/ যে ব্যক্তি কোন লোকের ভিক্ষার দরজা খুলে, আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর উপর অভাবের দরজা খুলে দেন।
অতঃপর তিনি এরশাদ করলেন, একটি কথা তোমাদেরকে বলছি তা স্বরন রেখো।
দুনিয়াতে চার প্রকারের মানুষ হয়।
১/ ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা’য়ালা মাল ও এলেম দান করেছেন। সে (আপন এলেমের কারনে) নিজের মালের ব্যপারে আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করে। (অর্থ্যাৎ তাঁর মর্জির বিপরীত খরচ করেনা বরং) আত্মীয়তা রক্ষায় (খরচ) করে এবং সে ইহা জানে যে, এই মালের মধ্যে আল্লাহে তা’য়ালার হক্ব আছে। (কাজেই নেক কাজে মাল খরচ করে) এই ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সর্বোত্তম মর্তবায় অবস্থান করবে।
সুবহানাল্লাহ
২/ দ্বিতীয়ঃ- ঐব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা’য়ালা এলেম দান করেছেন, কিন্তু মাল দেয় নাই। সে খাঁটি নিয়্যত রাখে এবং এই আকাংখা করে যে, যদি আমার মাল থাকতো তবে আমিও ঐব্যক্তির মত (নেক কাজে) খরচ করতাম। (আল্লাহ তা’য়ালা) তাঁর এই নিয়্যতের কারনে (তাঁকেও প্রথম ব্যক্তির ন্যায় একই সওয়াব দান করবেন) এই ভাবে তাদের উভয়ের সওয়াব সমান সমান হয়ে যায়।
৩/ তৃতীয়ঃ- ঐব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা’য়ালা মাল দিয়েছেন, কিন্তু এলেম দান করে নাই। সে এলেম না থাকার কারনে নিজের মালের মধ্যে গোল-মাল করে। (অপাত্রে খরচ করে) না সে আল্লাহ তা’য়ালাকে এই মালের ব্যপারে ভয় করে, আর না আত্মীয়তা রক্ষা করে। আর না উহা জানে যে, এই মালের মধ্যে আল্লাহ তা’য়ালার কি হক্ব আছে। এই ব্যক্তি কেয়ামতের দিন নিকৃষ্টতম মর্তবায় থাকবে।
৪/ ৪র্থঃ- ঐব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা’য়ালা না মাল দিয়েছেন, আর না এলেম দিয়েছেন। সে এই আকাংখা করে যে, যদি আমার নিকট মাল থাকতো তবে আমি তৃতীয় ব্যক্তির ন্যায় (অপাত্রে খরচ) করতাম। এই নিয়্যতের কারনে তাঁর গুনাহ হয়। এবং তার ও ঐ তৃতীয় ব্যক্তির গুনাহ সমান সমান হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ ভাল ও মন্দ অনুপাতে সওয়াব ও গুনাহ হয় যেমন ভাল অথবা মন্দ আমলের উপর হয়ে থাকে।
(তিরমিযী, নাসাই)
শিক্ষনীয় হলঃ- প্রথম যে তিনটি কথা বলেছেন তার মাঝে মূল কথা হল আমরা যদি আল্লাহর হুকুম পালন করতে সদকা প্রদান করি তবে আমাদের মালের কোন কমতি হবেনা। বরং আমাদের মালকে আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র করে দেবেন। আবার কেউ যদি আমাদের উপর জুলুম করে আর আমরা সবর করি আল্লাহ তা’য়ালা এর দ্বারা আমাদের সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন।
আর যে ব্যক্তি ভিক্ষার দরজা খোলে, আল্লাহ তা’য়ালা তার অভাবের দরজা খুলে দেন এর দুইটা অর্থ হতে পারে!
১/ কেউ শক্তি-সামর্থ থাকার পরো ভিক্ষার পথ বেছে নিলো, মহান আল্লাহ ও তার জন্য ভিক্ষার দরজাকেই উম্মুক্ত করে দিবেন! ২/ কেউ যদি কারো মাল বা সম্পদ আর্ত্মসাদ করে ভিক্ষা করার অবস্থানে পৌছে দিলো মহান আল্লাহ ও সেই ব্যক্তির জন্য ভিক্ষার দরজা খুলে দিবেন, যে এই ভোগ দখলী কাজ করলো!
আর নিয়্যতের কারনে প্রথম ব্যক্তি ও দ্বিতীয় ব্যক্তি সমান সমান সওয়াবের অধিকারী হয়ে যায়। আবার নিয়্যতের কারনেই তৃতীয় ও ৪র্থ ব্যক্তি সমান সমান গুনাহের অধিকারী হয়ে যায়। তাই আমরা যে কোন কাজ করার আগে আমাদের নিয়্যতকে যাচাই বাছাই করে নেবো তিন বার করে। একবার কাজের শুরুতে, এভাবে নিয়্যত করবো যে, কাজটি আমি কার জন্য করছি, আল্লাহর জন্য না কি লোক দেখানোর জন্য? মাঝখানে আবার যাচাই করবো কার জন্য করছি? আল্লাহর জন্য না কি লোক দেখানোর জন্য। আবার শেষে যাচাই করে নেব কার জন্য করছি? আল্লাহর জন্য নাকি মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্য? এই নিয়্যতের কারনে আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম সওয়াবের অধিকারী করবেন ইনশাল্লাহ
পরিশেষেঃ- আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের নিয়্যতকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই করে দিন। আর কবুল তরে নিন। আমরা যেন অল্প দান করেও অনেক সওয়াব পাই। শুধু নেক নিয়্যত করে।
আমিন! আমিন! ছুম্মা আমিন!
বিষয়: বিবিধ
১০৯৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পরিশেষেঃ- আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের নিয়্যতকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই করে দিন। আর কবুল তরে নিন। আমরা যেন অল্প দান করেও অনেক সওয়াব পাই। শুধু নেক নিয়্যত করে।
আমিন! আমিন! ছুম্মা আমিন!
আমরা বেহুদা জায়গায় মোটাদানে টাকা খরচ করলেও দুইটাকা দান খয়রাত করতে কলিজা ছিড়ে যায়! অথচ এখানে যতো বেশি দান করা হোক না কেন , কখনো কমে না।
আলহামদুলিল্লাহ্, অনেক সুন্দর উপকারী বিষয় নিয়ে লিখেছেন, ধন্যবাদ নেবেন।
আমিন!
আমিন!
ইসলামের সৌন্দর্য্যময় বিষয় 'সদক্বা' কে আমরা অপচয় মনে করে ভিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করছি সমাজে! নিজেদের স্বার্থে অন্য কেও ক্ষতিগ্রস্হ করছি অবলিলায়!
ধনবানদের সঠিক ইলম না থাকায় ওরাও বিভ্রান্ত!
হাদীসের আলোকে সমাজ পরিচালিত হলে এমন অবস্হা হতো না!
আল্লাহ আমাদের মনন কে পরিশুদ্ধ করে দিন!আমিন!
সুন্দর উপস্হাপনায় 'জাযাকিল্লাহু খাইরান' জানাচ্ছি হে শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বী!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন