নবীজি (সঃ) যেভাবে দোয়া করতেন
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৮ এপ্রিল, ২০১৫, ০২:২০:০৬ দুপুর
হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন হুজুর (সঃ) কে এক রাত্রে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করার পর আমি এই দোয়া করতে শুনেছি-
** আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনার খাস রহমত চাই, যা দ্বারা আপনি আমার দিলকে হেদায়াত নসীব করুন। এবং উহা দ্বারা আমার কাজকে সহজ করে দিন। আর সেই রহমত দ্বারা আমার পেরেশানীর অবস্থাকে দুর করে দিন। এবং আমার অনুপস্থিতির বিষয় গুলোর দেখা শুনা করুন। আর যা আমার নিকট আছে উহা সেই রহমত দ্বারা উন্নতি ও সম্মান নসীব করুন। এবং আমার আমলকে সেই রহমত দ্বারা (শিরক ও রিয়া) হতে পবিত্র করে দিন। আর সেই রহমত দ্বারা আমার অন্তরে এমন কথা ঢেলে দিন, যা আমার জন্য সঠিক ও উপযুগী হয়। এবং আমি যে জিনিস ভালবাসি সেই রহমত দ্বারা আমাকে উহা দান করুন। এবং সেই রহমত দ্বারা আমাকে সর্ব প্রকার খারাবী থেকে হেফাজত করুন।
** আয় আল্লাহ! আমাকে এমন ঈমান ও একিন নসীব করুন যার পর আর কোন কুফুর না থাকে এবং আমাকে আপনার সেই রহমত দান করুন, যা দ্বারা আমার দুনিয়া ও আখেরাতে আপনার পক্ষ হতে ইজ্জত ও সম্মানজনক স্থান লাভ হবে।
** আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ফয়সালা বা সিদ্ধান্তের বিশুদ্ধতা এবং আপনার নিকট শহীদের ন্যায় মেহমানদারী, ভাগ্যবানদের ন্যায় জীবন এবং শত্রুর মোকাবেলায় আপনার সাহায্য প্রার্থনা করি।
** আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আমার প্রয়োজন পেশ করছি। যদিও আমার বুদ্ধি অসম্পূর্ণ ও আমার আমল দুর্বল, আমি আপনার রহমতের মুখাপেক্ষী।
** হে কার্যসম্পাদনকারী ও অন্তর সমূহের শিফাদানকারী, যেমন আপনি আপন কুদরত দ্বারা (একই সাথে প্রবাহিত) সমুদ্র গুলোর একটি থেকে অপরটিকে পৃথক করে রাখেন। (অর্থ্যাৎ লোনাকে মিষ্টি হতে আর মিষ্টিকে লোনা হতে পৃথক রাখেন) তেমনী আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি যে, আমাকে আপনি দোযখের আগুন হতে এবং আযাব হতে, যা দেখে মানুষ হায়! হায়! (অর্থ্যাৎ মৃত্যু কামনা) করতে আরম্ভ করে এবং কবরের আযাব হতে দুরে রাখুন।
** আয় আল্লাহ! যে কল্যাণ পর্যন্ত আমার আকল বুদ্ধি পৌছতে পারেনা এবং আমার আমল উহা অর্জন করার ব্যপারে দুর্বল আছে, এবং আমার নিয়্যত ও সে পর্যন্ত পৌছে না, এবং আমি আপনার নিকট সে কল্যাণ সম্পর্কে আবেদনও করি নাই, যা আপনি আপনার মাখলুক হতে কোন বান্দার সাথে ওয়াদা করেছেন অথবা এমন কোন কল্যাণ যা আপনার কোন বান্দাকে দেয়ার ইচ্ছা করেছেন, হে সমস্ত জগতের পালনকর্তা, আমিও আপনার নিকট সেই কল্যাণের কামনা করি এবং আপনার উছিলায় উহা চাইছি।
** হে দৃঢ় অঙ্গীকারকারী ও নেক কাজের মালিক আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আযাবের দিন নিরাপত্তা ও কেয়ামতের দিন জান্নাতে ঐ সমস্ত লোকদের সঙ্গী হতে প্রার্থনা করছি, যারা আপনার নৈকট্যপ্রাপ্ত, আপনার দরবারে উপস্থিত, রুকু সিজদায় পড়ে থাকে, এবং অঙ্গীকার পালন করে। নিশ্চয়ই আপনি বড় মেহেরবান ওঅত্যন্ত মহব্বত করনেওয়ালা এবং নিশ্চয়ই আপনি যা চান তা করেন।
** আয় আল্লাহ! আমাদেরকে অন্যজনের জন্য সৎপথের প্রদর্শক ও স্বয়ং হেদায়াতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন। এমন করবেন না যেন নিজেও পথভ্রষ্ট হই অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করি। আপনার দোস্তদের সাথে যেন আমাদের সন্ধি হয়, আপনার দুশমনের সাথে যেন দুশমনি হয়। যে আপনার সাথে মহব্বত রাখে, তার সাথে আপনার মহব্বতের কারনে মহব্বত করি। আর যে, আপনার বিরোধিতা করে, তার সাথে আপনার দুশমনির কারনে যেন দুশমনি করি।
** আয় আল্লাহ! দোয়া করা আমার কাজ আর কবুল করা আপনার কাজ, আর ইহা আমার চেষ্টা এবং আমি আপনার জাতের উপর ভরসা রাখি।
** আয় আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর ঢেলে দিন, আমার কবর নূরানী করে দিন, আমার সামনে নূর, আমার পিছনে নূর, আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর, অর্থ্যাৎ আমার চারদিকে আপনারই নূর হোক, এবং আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর, আমার লোমে লোমে নূর, আমার চামড়ায় নূর, আমার গোসতে নূর, আমার রক্তে নূর, আমার হাঁড়ে হাঁড়ে নূরই নূর করে দিন।
** আয় আল্লাহ! আমার নূরকে বৃদ্ধি করে দিন, আমাকে নূর দান করুন, আমার জন্য নূর নির্ধারিত করে দিন। পবিত্র সেই সত্তা ইজ্জত যার চাদর এবং তার ফরমান সম্মানিত। পবিত্র সেই সত্তা, মহিমা ও মহত্ব যার পোষাক ও তার দান। পবিত্র সেই সত্তা, যার শানই একমাত্র দোষ হতে পবিত্র হওয়ার উপযুক্ত। পবিত্র সেই সত্তা, যিনি বড় অনুগ্রহ ও নেয়ামতের মালিক। পবিত্র সেই সত্তা, যিনি মহিমাময় সম্মানিত। পবিত্র সেই সত্তা, যিনি অতীব মর্যাদা ও দয়ার মালিক।
(তিরমিযী শরীফ)
এখানে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ- আল্লাহর হাবীব হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) বেগুনাহ মাসুম হওয়ার পরও, সমস্ত নবীগণের মাঝে শ্রেষ্ঠ হয়েও, মুসলমানদের একমাত্র সুপারিশকারী হয়েও কি ভাবে আকুল আবেদন করে আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। কি ভাবে তাহাজ্জুদ পড়তেন? কি ভাবে আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করতেন? আর আমাদের কি ভাবে করা উচিৎ? আমরা কি আণমনে ভেবে দেখেছি আমাদের আসল কাজ কি? আর এদুনিয়াতে আমাদের কি ভাবে চলা উচিৎ? তিরমিযী শরীফের আরেক হাদীসে আছে দোয়া-ই ইবাদত
আমাদের করণীয়ঃ- নবীজি (সঃ) এর এ দোয়া থেকে আমাদের করণীয় হল আমরা যতটুকুই ইবাদত করি না কেন বেশী বেশী দোয়া করি। আর মানুষের জন্য ভাল কামনা করি।
পরিশেষেঃ- আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীজি (সঃ) এর জীবনী দেখে দেখে আমল করার তৌফিক দিন, আর আমল গুলো কবুল করে নিন।
আমিন!
আল্লাহর নবী (সঃ) বাণীকে পৌছিয়ে দেয়া!
বিষয়: বিবিধ
১৭৭১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্নত মোতাবেক যেন আমরা চলতে পারি।
আয় আল্লাহ! আমাদেরকে অন্যজনের জন্য সৎপথের প্রদর্শক ও স্বয়ং হেদায়াতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন। এমন করবেন না যেন নিজেও পথভ্রষ্ট হই অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করি। আপনার দোস্তদের সাথে যেন আমাদের সন্ধি হয়, আপনার দুশমনের সাথে যেন দুশমনি হয়। যে আপনার সাথে মহব্বত রাখে, তার সাথে আপনার মহব্বতের কারনে মহব্বত করি। আর যে, আপনার বিরোধিতা করে, তার সাথে আপনার দুশমনির কারনে যেন দুশমনি করি।
আমীন, ইয়া রব্বুল আলামিন!
জাযাকি্ল্লাহু খাইর আপু!
মন্তব্য করতে লগইন করুন