‘’কিছু কথা ও একটি হাদীস’’
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১০ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৩৯:৪৪ সন্ধ্যা
কত মোহনীয় এপৃথিবী। কত সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই ধমনী। যার মাঝে অমানিশি আলো-আঁধারের খেলা। যে ধরার রঙ, রুপ বদলায় ক্ষনে ক্ষনে, সেই রঙ বদলানো পৃথিবীর আলো-আঁধারের খেলাতে আমরা সবাই যেন মেতে উঠেছি, সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও।
পৃথিবীর ঋতু বদলানোর মতই আমরা নিজেদেরকে বদলে ফেলছি প্রতিনিয়ত, এখেলায় মত্ত হয়ে হারিয়ে ফেলছি আমাদের মনোসত্যবোধ। হারিয়ে ফেলছি চিরমূল্যবান ঈমান। নষ্ট করে ফেলছি আমাদের আখ-লাককে, পৃথিবীর মোহে পড়ে হারিয়ে ফেলছি আমাদের একমাত্র আমলকে, বেধর্মীদের মত বিলিয়ে দিচ্ছি আমাদের সৌন্দর্যকে, হৃদয় ঝুলিতে ভরে নিচ্ছি কাল আঁধারের মত পাপকে,
মিথ্যার চাদরে ঢেকে দিচ্ছি সত্যকে, কথায় কাজে সামনে রাখছি মিথ্যাকে, এভাবে যাবে কি জীবন? নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আমরা মুসলমান! কি করেছি মুসলমান হয়ে? ন্যায়ের পথে চলছি? না কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি? তবে আমরা কিসের মুসলমান হলাম? নামের মুসলমান? না কি লোক দেখানোর মুসলমান?
হাদীস শরীফঃ- হযরত আবু যার (রাযিঃ) হতে বর্র্ণিত আছে যে, নবী করিম (সঃ) এক হাদীসে কুদসীতে আপন রবের এই এরশাদ বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন।
হে আমার বান্দাগণ! আমি নিজের উপর জুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও উহা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একে অন্যের উপর জুলুম করনা।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলে পথভ্রষ্ট, ঐব্যক্তি ব্যতীত যাকে আমি হেদায়াত দান করি। সুতরাং আমার নিকট হেদায়াত চাও আমি তোমাদেরকে হেদায়েত দান করবো।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত, ঐব্যক্তি ব্যতীত যাকে আমি আহার করাই, সুতরাং তোমরা আমার নিকট রিযিক চাও, আমি তোমাদেরকে আহার করাবো।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলেই বস্ত্রহীন, ঐব্যক্তি ব্যতীত যাকে আমি পরিধান করাই, সুতরাং তোমরা আমার নিকট বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্র পরিধান করাবো।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাত্র-দিন গুনাহ কর, আর আমি গুনাহসমূহকে মাফ করি। সুতরাং তোমরা আমার নিকট মাফ চাও, আমি তোমাদেরকে মাফ করে দিবো।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমার ক্ষতি করতে চাইলে কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর তোমরা আমার উপকার করতে চাইলেও কখনো উপকার করতে পারবে না।
হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানুষ ও জিন, সকলে ঐব্যক্তির মত হয়ে যায়, যার অন্তরে তোমাদের সকলের চেয়ে বেশী আল্লাহ তা’য়ালার ভয় আছে, তবে আমার রাজত্বের একটুও বৃদ্ধি করতে পারবে না।
হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানুষ ও জিন, সকলে ঐব্যক্তির মত হয়ে যায় যে, তোমাদের মধ্যে সকলের চেয়ে বেশী বদকার হয়, তবে ইহাও আমার রাজত্বের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানুষ ও জিন, সকলে খোলা ময়দানে একত্রিত হয়ে আমার কাছে চায়, আর প্রত্যেককে তার চাহিদা অনুপাতে দান করি, তবে ইহাতে আমার ভান্ডার সমূহে এই পরিমাণ কম হবে, যে পরিমাণ সমুদ্রে সুঁই ডুবিয়ে উঠালে সমুদ্রের পানি কম হয়। (এই সামান্য কম হওয়া কোন ধর্তব্য নয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তা’য়ালার ভান্ডারসমূহেও সকলকে দেয়ার কারনে কম হয় নাই। (সুবহানাল্লাহ)
হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের আমল গুলি যা আমি তোমাদের জন্য সংরক্ষণ করছি। অতঃপর তোমাদেরকে উহার পরিপূর্ণ বদলা দান করবো। সুতরাং যে ব্যক্তি (আল্লাহর তৌফিকে) নেক আমল করে, তার উচিৎ সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, আর যার দ্বারা কোন গুনাহ হয়ে যায়, সে যেন স্বীয় নফসকেই তিরষ্কার করে, (কেননা নফসের প্রলোভনেই তাঁর দ্বারা গুনাহ প্রকাশ পেয়েছে)।
(মুসলিম)
শিক্ষনীয়ঃ- আল্লাহ নিজের উপরও জুলুমকে হারাম করেছেন! এবং আমাদের উপরও জুলুমকে হারাম করেছেন। এখন আমাদের নিজেদেরই চিন্তা করে দেখা উচিৎ নিজে নিজেকে কতটুকু হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি।
আমরা সকলেই গোমরা! আল্লাহ যাকে হেদায়াত দিয়েছেন সে ছাড়া। আর আল্লাহ তো হেদায়াত নিয়ে বসে আছেন। আমরা ভেবে দেখি নিজের জন্য কতটুকু হেদায়াত চাইছি প্রতিনিয়ত।
আমাদের সকলেই ক্ষুধার্ত! যাকে আল্লাহ আহার করান সে ছাড়া। আল্লাহ তো দেয়ার জন্য বাহানা খুজছেন যে, আমরা কতবার আল্লাহর নিকট আহার চাই।
আমরা তো বস্ত্রহীন! তবে আল্লাহ যাকে পরিধান করান সে ছাড়া। এখন আমরা কতজনে আল্লাহর নিকট উত্তম বস্ত্র চাই।
আমরা গুনাহ করি! আর আল্লাহ ক্ষমা করেন। এখন ভেবে দেখুন তো আমরা গুনাহ করার পর, সব সময়ই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই কি না।
আমরা সকলে মিলেও মহান আল্লাহর! কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবো না। আর কোন উপকারও করতে পারবো না। আল্লাহর রাজ্যে কোন কিছু বৃদ্ধি পাবে না! যদিও পূর্বের ও পরের সকল লোক একত্রিত হয়।
আর পূর্বের ও পরের সকল বান্দাগণ একত্র হলেও মহান আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
আল্লাহর রাজ্যে সামান্য পরিমাণও কমবে না! যদি পূর্বের ও পরের সকল মানুষ একত্রিত হয়ে আল্লাহর কাছে নিজের চাহিদা প্রকাশ করে। আল্লাহ সবার চাহিদা অনুপাতে তা আল্লাহ দান করেন। আসুন নফসকে ঈমানের শক্তি দিয়ে তিরষ্কার করি। কারন নফসের দ্বারাই সকল গুনাহ হয়ে থাকে।
আর মুসলমান হয়ে আমাদের কি করা উচিৎ আর আমরা কি করছি? এর হিসাব নিয়ে নেই মহান আল্লাহ তা’য়ালা হিসাব নেয়ার আগে। মহান আল্লাহর আদালতে দাড়ানোর আগে নিজেরা নিজেদের বিবেকের আদালতে দাড়িয়ে রায় দেই নফসের বিচার করে।
পরিশেষেঃ- মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া রাখি,
হে আল্লাহ! হালালের উপর জীবন-যাপন করাও।
হে আল্লাহ! হালাল বস্ত্র পরিধান করাও।
হে আল্লাহ! হেদায়াত দাও। আর
হে আল্লাহ! ঈমান পরিপূর্ণ করে দাও।
হে আল্লাহ! সৎ লোকের সহচর্যে রাখো।
হে আল্লাহ! সৎভাবে চালাও।
হে আল্লাহ! চরিত্রকে উত্তম করে দাও।
হে আল্লাহ! যত গুনাহ আছে সবগুলো থেকে বাঁচিয়ে রাখো।
হে আল্লাহ! যত নেকির কাজ আছে সব করাও।
হে আল্লাহ! পরিপূর্ণ মাফ করে দিয়ে মৃত্যু দিও।
হে আল্লাহ! এমন অনেক গুনাহ, আমরা করে ফেলি যার জন্য সাথে সাথে মাফ চাই, আবার এমন অনেক গুনাহ আছে, সে গুলো যে গুনাহ সেটা আমরা বুঝিই না। সে ক্ষেত্রে তুমি অনুগ্রহ করে মাফ করে দিও। কারন আমরা তো তোমারই বান্দা-বান্দী।
হে আল্লাহ! আমাদের কত চাহিদা আছে আমরা তোমার কাছে চাই, আর কত চাহিদা আছে যেগুলো চাইতে পারি না তুমি সে গুলো সম্পর্কে তো জানো, তুমি সে গুলো পূরন করে দাও।
হে আল্লাহ! তুমি আমাকেও ক্ষমা করে দাও, আর সমস্ত মুসলমান ভাই ও বোনদেরকেও ক্ষমা করে দাও।
আমিন! আমিন! আমিন!
বিষয়: বিবিধ
১৬১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন