@}- ভাল বন্ধু হয়ে!! (ধারাবাহিক গল্প ১১তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১০ এপ্রিল, ২০১৫, ০৬:৫৪:৩১ সন্ধ্যা
পরশকে আবারো কাছে পেয়ে রোকেয়া ভাবির মনে যেন আনন্দের বন্যা বাইছে। যখন রোকেয়ার স্বামী ঘরে আসে, রোকেয়ার মুখ দেখে বলে কি রে রোকে আজকে তুই এত খুশি কেন রে? রোকেয়া বলে আজকে আমার পরশ এসেছিলো আমার ঘরে তাই মনের মাঝে এত আনন্দের বন্যা বইছে। রোকেয়ার স্বামী বলে তুমি কি আমার চেয়েও পরশকে বেশী ভালোবাসো? রোকেয়ার জবাব আমি জানিনা তবে তুমি তোমার স্থানে আছো আর পরশের জন্য আমার যে ভালোবাসা তা অন্য রকম ভালোবাসা এর বেশী ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবোনা। শুধু বলবো পরশ আমার বোনদের চেয়েও আপন। অন্য রকম আপনজন আমার পরশ। পরশের পরশ ছাড়া আমি যেন মৃত পাথরের মত। রোকেয়ার স্বামী শুনে বলে এই ভাবেই আল্লাহ যেন তোমাদেরকে সব সময় আনন্দিত রাখেন। আমি তো পাগল গুনাহগার বান্দা এরচেয়ে আর বড় দোয়া করতে পারলাম না।
সেই রাতেই রোকেয়া ভাবি রাতের শেষাংশে উঠে নামাজ পড়ে ও জায়নামাজে বসে ভাবতে থাকে যদি পরশের সাথে পরিচয় না ঘটতো তবে আমি রোকেয়া নরকের কীটই থেকে যেতাম আর অবেশেষে ঠাঁই হতো জাহান্নামের পেটে। এখন তো অন্তত আল্লাহর কাছে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে পারছি এবং আল্লাহর কাছে আকাংখা ও করছি শুভ পরিণতির (অর্থ্যাৎ জান্নাতের)। আর পরশ আমাকে সেই নরক থেকে তুলে জান্নাতের বাগানে স্থান করে দিয়েছে। আমি যতদিন বাঁচি হে আল্লাহ; তুমি আমাকে তোমার সরল সঠিক পথে রেখ আর পরশকে দিও আরো উত্তম প্রতিদান দুনিয়া ও আখেরাতে। পরশ আপন ননদ না হলেও আমি সব সময় পরশের কল্যাণের জন্য দোয়া করে যাবো আল্লাহর কাছে কারন পরশ আমার অন্ধ চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে। সে আমার অশিক্ষিত অন্ধকারাচ্ছন্ন মনের মাঝে কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি ভুল পথের অনুসারী ছিলাম সে আমাকে নবী (সঃ) এর পথ দেখিয়েছে। আমি মূর্খ ও বেকুফ ছিলাম মৃতপ্রায় অবস্থায় সে আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে হে আল্লাহ তুমিও তাকে উত্তম জীবন দান করো।
পরশ হঠাৎ একদিন তাদের বাড়ী ওয়ালির কাছে জানতে পারলো রোকেয়া ভাবির বাড়ীওয়ালিরা পরশকে নিয়ে নানা রকম পঁচা মন্তব্য করতে শুরু করেছে এবং তার মাকে বলেছে আপনি কি জানেন পরশ বোরকা পরে কোথায় যায় কি করে? রোকেয়া তো একেবারে খারাপ, সে তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করে, মারামারি করে, বেপর্দা ভাবে চলা-ফেরা করে আর তোমার মেয়ে সেই মহিলার সাথে চলা-ফিরা করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তুমি কি তার খোজ খবর রাখো? দেখ এখন আমরা বলছি তুমি কানে তুলছো না আর এমন এক সময় কানে তুলবে তখন আর কোন লাভ হবেনা।
পরশের মা মানুষের কথাগুলো শুনে কাঁদে আর আবারো পরশকে সর্তক করে বলে পরশ তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি আর যাবিনা রোকেয়ার ঘরে কিন্তু তুই সে কথা রাখিস নি এটা ঠিক করিসনি পরশ। আমি তোর মা আর অন্য একজনের কারনে পরশ তুই আমার চোখের পানি ঝরাচ্ছিস? এটা কোন ভালো কাজ হতেই পারেনা। তুই কি আমাদের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করবি না? কেন আমি এমন সন্তান পেটে ধরলাম যে আমাদের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করেনা? কেন তোকে মাদ্রাসাতে পড়ালাম? তুই সেখানে পড়ে কি শিখলি? মা-বাবাকে কষ্ট দেয়া?
পরশের কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগে তাকে নিয়ে কেউ খারাপ কোন বিষয় বলাবলি করলে বা খারাপ মন্তব্য করলে। পরশ অত্যন্ত সরল মনের মানুষ সে অল্পতে কেঁদে অস্থীর হয়ে যায়। কোথাও কারো সাথে কোন ঝামেলার আঁচ করতে পারলে সে সেখান থেকে সরে যায় যেন কষ্টের আঁচ তার গায়ে না লাগে। পরশ বরাবরাই শান্ত মেজাজের নরম ভাষী সে তার মায়ের চোখের পানি দেখে কেঁদে অস্থীর। তার মনেও মায়ের কান্নায় যেন ঝড় উঠিয়ে দিয়েছে। সে কি করবে? ভাবি ওতো খুব কষ্ট পাবে তার সাথে সম্পর্ক না রাখলে। কিন্তু পরশ যখন কোরআন ও হাদীস শেখার আসরে থাকে তখন তার কণ্ঠ দিয়ে যেন মহান আল্লাহর রহমত বর্ষন হয়। তখন পরশ যেন অন্য পরশে রুপ নেয়। আজকে সেই পরশের চোখ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে অশ্রু ধারা। পরশ তার ব্যাপারে লোকজনের খারাপ ধারনা বা কথার খবর পেয়ে আস্তে আস্তে রোকেয়া ভাবির ঘরে আসা একেবারে বন্ধ করে দিলো। অন্য মাধ্যমে ভাবির খোজ-খবর নিতো।
চলছে............চলবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পরশের মতোন আমার চোখেও অশ্রুধারা বইছে। কেউ ভুল বুঝলে আমার খুব কষ্ট হয়! দোআর বিশেষ অনুরোধ রইলো আপু!
হৃদয়ছোঁয়া শিক্ষণীয় লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
হৃদয়ছোঁয়া শিক্ষণীয় লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন