আত্মার খোরাক (৯)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৭ এপ্রিল, ২০১৫, ০২:০৬:০৮ রাত
প্রতিবেশীর হক্ব সম্পর্কিত হাদীসঃ-
উম্মুল মু'মিনিন হযরত আয়েশা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সঃ) বলেছেনঃ জিব্রাইল (আঃ) নিয়তই আমাকে প্রতিবেশীর হক্ব সম্পর্কে তাকীদ দিচ্ছিলেন। এমন কি আমার ধারণা জন্মেছিলো হয়তো প্রতিবেশীকে সম্পত্তিতে হক্বদার (ওয়ারিছ) করা হবে।"
(বুখারী, মুসলিম)
"হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) (সাহাবাদের মজলিসে) বলেছেনঃ আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, সে লোকটি কিছুতেই ঈমানদার নয়, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, সে লোকটি কিছুতেই ঈমানদার নয়,আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, সে লোকটি কিছুতেই ঈমানদার নয়, সাহাবীদের মধ্য হতে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ( এমন হতভাগ্য) লোকটি কে? হুযুর (সঃ) বললেন, যার অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।"
(বুখারী, মুসলিম)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সঃ) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে পেটপুরে ভক্ষন করে, আর তার-ই পার্শ্বে তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্থ থাকে সে ঈমানদার নয়।"
(মিশকাত)
ব্যাখ্যাঃ- কোরআন হাদীসে প্রতিবেশীর হক্ব ও অধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যে সমাজের লোকেরা পরষ্পর প্রতিবেশীর প্রতি সদয় থাকে, ক্ষুধার্ত প্রতিবেশীকে খাদ্য দান করে, সে সমাজটি যে একটি আদর্শ সমাজ তা নিঃসন্দেহে বলা চলে। আর এই ধরণের আদর্শ সমাজই ইসলামের কাম্য। বর্ণিত হাদীস সমূহে রাসূল (সঃ) তার উম্মতকে প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতিশীল ও উপরোক্ত ধরণের একটি আদর্শ সমাজ গঠনের উৎসাহ দিয়েছেন।
হযরত আবু যার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ যখন তুমি সালুন পাকাবে, তখন তাতে কিছু অতিরিক্ত পানি দিবে, যাতে করে তুমি তোমার প্রতিবেশীর খবর নিতে পারো।" (অর্থ্যাৎ গোশত, মাছ বা তরি-তরকারি যা কিছু তোমরা পাকাও, তাতে অতিরিক্ত কিছূ ঝোল দিবে, যাতে তা থেকে কিছু তোমার প্রতিবেশীকে দিতে পারো।)
(মুসলিম)
"হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ হে মুসলিম রমণীরা! তোমরা প্রতিবেশীর বাড়িতে সামান্য বস্তু পাঠানোকে তুচ্ছ মনে করবে না। এমন কি তা যদি বকরীর পায়ের সামান্য অংশও হয়।"
(বুখারী, মুসলিম)
উম্মুল মু'মিনিন হযরত আয়েশা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, একদা তিনি নবী (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর নবী (সঃ)! আমার দু'জন প্রতিবেশী আছে, এর মধ্যো হতে কাকে আমি হাদীয়া প্রেরণের ব্যাপারে প্রাধান্য দিবো? হুযুর (সঃ) বললেনঃ তোমার দ্বার হতে যার দ্বার বেশী নিকটবর্তী তাকে।"
(বুখারী)
ব্যাখ্যাঃ- যদিও সব শ্রেণীর প্রতিবেশীর প্রতিই সদয় ব্যবহার করতে এবং সকলের অধিকারের খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু প্রতিবেশীর মধ্যে অধিকারের তারতম্য আছে। যেমন আত্মীয় প্রতিবেশীর অধিকার অনাত্মীয় প্রতিবেশী হতে অধিক। তেমনী প্রতিবেশীর মধ্যে যার বাড়ি বা ঘর বেশী নিকটে তার হক্ব বেশী। অর্থ্যাৎ নিকটতম প্রতিবেশীকে দূরের প্রতিবেশীর তুলনায় অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই আমরা সকলে কি সকলের প্রতিবেশীর হক্ব আদায় করি? যারা করি তারা তো আল্লাহর দরবারে ক্ষমা পেয়ে যাবো আর যারা প্রতিবেশীর হক্ব আদায় না করি তাদের উপায় কি হবে তা কি একবারও কেউ ভেবে দেখেছি? দুনিয়ার কষ্ট, যন্ত্রনা তো অতি সহজ ব্যপার আর আখেরাতের যন্ত্রনার তো শেষ নেই! একবার ভাবুন কি হবে সেই কঠিন বিচারে? আর সেই বিচারের শাস্তিকে ভয় করে সকল মানুষের হক্ব আদায় করতে সচেষ্ট হই মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথের অনুসারী বানান ও সে পথে অটল-অবিচল রাখুন আমরন! আমিন ছুম্মা আমিন!
বিষয়ঃ হাদীসের আলোচনা!
বিষয়: বিবিধ
৯৯৩ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই আমলটা করা খুব কঠিণ!!!! তা করতে গেলে আমাদের আত্ম সম্মানে খুব বাধে! এই আত্মসম্মনা ত্যাগ করে আমলটি করতে পারলে কতই না ভালো হবে! যখন ছোট ছিলাম, আমাদের আর্থিক অবস্থা নাকি খুব খারাপ ছিল, চার বোনের পরে আমরা দুই ভাই, কোথাও কেউ যদি একটা বিস্কিট দিতো, নিজেরা না খেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসত, ছোট ছোট টুকরা করে সবাই ভাগ যোগ করে খেতো, সবার আগে তুলে দিতো আমাদের দুই ভাইয়ের মুখে! তারপর বাড়িতে কারও ঘরে মেহমান মিষ্টি জাতীয় কিছু নিয়ে আসলে, তা একটু একটু করে সবার ঘরে বিতরণ করত! এখন আর এসব হয়য় না, পারপ্সরিক মেলবন্ধন অনেক হালকা হয়ে গেছে! ছোট বেলা থেকে এইসব শিখেও আজ নিজের জীবনে তা প্রয়োগ করতে পারছি না, আফসোস!
এখন হচ্ছে তার উল্টো, আপনরা হয়ে যায় পর, আর পর বা বানানো সম্পর্কগুলো থাকে দহরম মহরম।
বোন, এইভাবেই আত্মার খোরাকের ব্যবস্থা করেতো ব্যাপক সওয়াব নিয়ে নিচ্ছেন!
জাযাকাল্লহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন