সুন্দর একটি হাদীস পড়ি সে মতই জীবন গড়ি!
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০২ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:২৭:২৪ সন্ধ্যা
একদিন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত আয়েশা (রাযিঃ) কে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! আজকে আমি অনেক খুশি, তুমি আমার কাছে যা চাইবে তাই দেব, বল তুমি কি চাও? হযরত আয়েশা (রাযিঃ) চিন্তায় পড়ে গেলেন, হঠাৎ করে তিনি এমন কি চাইবেন? আর যা মন চায় তা তো চাইতে পারেন না! যদি কোন ভুল কিছু চেয়ে বসেন, নবীজী (সঃ) যদি কষ্ট পেয়ে যান? এমন অনেক প্রশ্নই মনে জাগতে লাগলো!
আয়েশা (রাযিঃ) নবীজী (সঃ) কে বললেন, আমি কি আব্বুর কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিতে পারি? নবীজী (সঃ) বললেন, ঠিক আছে তুমি পরামর্শ নিয়েই আমার কাছে চাও। আয়েশা (রাযিঃ) উনার আব্বু হযরত আবুবকর (রাযিঃ) এর কাছে পরামর্শ চাইলেন। আবুবকর (রাযিঃ) বললেন, যখন কিছু চাইবেই, তাহলে তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে, মিরাজের রাতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আ'লামীন এর সাথে হইছে এমন কোন সিক্রেট (বা গোপন ) কথা জানতে চাও।
আর কথা দাও নবীজী (সঃ) যা বলবেন তা সর্বপ্রথম আমাকে জানাবে। আয়েশা (রাযিঃ) নবীজী (সাঃ) এর কাছে গিয়ে মিরাজের রাতের কোন এক গোপন কথা জানতে চাইলেন, যা এখনও কাউকে বলেন নি। মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হেসে দিলেন, বললেনঃ বলে দিলে আর গোপন থাকে কি করে? একমাত্র আবুবকর (রাযিঃ) ই পারেন এমন বিচক্ষণ প্রশ্ন করতে। মুহাম্মাদ (সাঃ) বলতে লাগলেন, হে আয়েশা (রাযিঃ) আল্লাহ আমাকে মিরাজের রাতে বলেছেনঃ "হে মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমার উম্মাতের মধ্যে যদি কেউ, কারো ভেঙে যাওয়া মন জোড়া লাগিয়ে দেয় তাহলে আমি তাহাকে বিনা হিসাবে জান্নাতে পৌঁছে দেব। সুবাহান আল্লাহ।
প্রতিশ্রুতি মত, আয়েশা (রাঃ) উনার আব্বু হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এর কাছে এসে নবীজী (সঃ) এর বলে দেওয়া এই কথাগুলো বললেন। শুনে আবুবকর (রাঃ) কাঁদতে শুরু করলেন। আয়েশা (রাঃ) আশ্চার্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আব্বু আপনি তো কত ভেঙে যাওয়া মন জোড়া লাগিয়েছেন, আপনার তো সোজা জান্নাতে যাওয়ার কথা কাঁদছেন কেন? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আয়েশা এই কথাটার উল্টা চিন্তা করে দেখো, কারো ভাঙা মন জোড়া লাগালে যেমন আল্লাহ সোজা জান্নাতে দিবেন, কারো মন ভাঙলে ও তো আল্লাহ যদি সোজা জাহান্নামে দিয়ে দেন, আমি না জানি নিজের অজান্তে কতজনের মন ভেঙেছি।
আল্লাহ যদি আমাকে জাহান্নামে দিয়ে দেন, সেই চিন্তায় আমি কাঁদতেছি (সুবাহান-আল্লাহ)। এই হলো আমাদের ইসলাম! দুনিয়ায় থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার পরেও এইভাবে চিন্তা করেন এই ভাবে অশ্রু বিসর্জন দেন। এভাবেই যুগে যুগে ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, কাউকে কষ্ট না দিতে, মানুষের কষ্টে পাশে দাড়াতে।
মুহাম্মাদ (সাঃ) আরো বলেছেন, যদি তুমি গোসত রান্না করতে চাও, তাহলে এক গ্লাস পানি বেশি দিয়ে দাও, যাতে তোমার গরীব প্রতিবেশীকে একটু শেয়ার দিতে পারো। আর যদি না দিতে চাও, তাহলে এমন সময় রান্না করবে, যখন প্রতিবেশীর বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকে, গোসতের ঘ্রান পেয়ে বাবা-মাকে গোসত খাওয়ার কথা না বলে, গরীব বাবা মা, গোসত কিনে খাওয়াতে পারবে না, তখন মনে অনেক কষ্ট পাবে।
এইভাবে ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদের কে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। মানুষের মন না ভাঙতে, মানুষকে কষ্ট না দিতে। আল্লাহ পাক রাব্বুল আ'লামীন আমাদেরকে মানুষের কষ্টে পাশে দাড়ানোর, মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে, মানুষের ভেঙে যাওয়া মন জোড়া লাগাতে, অন্যের কষ্ট শেয়ার করতে তৌফিক দান করুন। আর আমাদেরকে কবুল করুন তার প্রিয়জনদের সাথে, যারা তার সন্তুষ্টির পথে চলে গেছেন।
আমিন ছুম্মা আমিন!
বিষয়: বিবিধ
২০৬১ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আমাদের ইসলাম বুঝার তৌফিক দাও ,,,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
আমিন ছুম্মা আমিন!
আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকেই কবুল করুণ এবং ওনার প্রিয়জনের তালিকায় আমাদের জায়গা করে দিন। আমীন।
সবার দোয়ায় আ মী ন
আমার বাড়তিগুলো গোপন থাক
জাযাকুমুল্লাহ....
যোহরের নামাযের পূর্বে এই হাদীস খানা পড়ার পর সারাদিনই একজন মানুষের কথা মনে পরেছে।
আপনার এ লেখাটি পড়ে একটু হলেও ইসলামকে জানতে পারলাম! ধন্যবাদ।
অন্য কে বিনা কারণে কষ্ট দিয়ে মন ভাংগা- কৌতুক করে আঘাত দেয়া ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে আজ! অথচ এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা আমরা খেয়ালই করি না!
মহান আল্লাহ আমাদের কে হাদিস শরীফ আত্মস্থ করে অনুভূতি কে শাণিত করুন!আমিন!
জাযাকিল্লাহু খাইরান হে শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বী!!
আল্লাহর প্রতিশুরতি অবশ্যই সত্য এবং শুনা মাত্রই ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে ব্যক্তি মাত্রই, কিন্তু কাজটি অনেক কঠিন!!!! আর আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, কঠিন কাজগুলো সম্পাদনের মাধ্যমেই আসে পরিপূর্ণ সফ্লতা।
আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম জাযা দিন। হাদিসের মাধ্যমেই কি সুন্দর শিক্ষাই না উপস্থাপন করলেন।
চমৎকার লিখাটির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া আপু!
আপু কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম, হাদিসের রফারেন্স সহ দিলে পূর্ন তাৎপর্যড়া ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়!
জাযাকিল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন