আমি যে মা!
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৮ মার্চ, ২০১৫, ০৫:১৩:১৬ সকাল
গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত ও বসন্ত এই ঋতু গুলোই বছরে ঘুরে ঘুরে আসে! একেকটি একেক গুণে গুণান্বিত এই ঋতু সমূহ! কাউকে ফেলে কেউ অগ্রগামি নয়। একটিকে ছাড়া অপরটি অচল! যখন যে ঋতুটি চলে যায় সেই যেন দামি হয় সবার কাছে! যখনই গ্রীষ্ম আসে তাকে পেয়ে গরমের অস্থীরতা প্রকাশ করি! আবার যখন সে চলে যায় বর্ষার আগমনি বার্তা শুনিয়ে তখন বর্ষায় যেন কাঁদতে বসি কেউ কেউ! বৃষ্টির কারনে যেন কোন কিছুই হয়ে ওঠেনা! শুধু হতাশা আর নিরাসা বিরাজ করে কতেক মানুষেতে! এরপর বর্ষা ও চলে যায় আসে শরৎ তাকে নিয়েও আমাদের কানাঘুসা চলে! শরতের কানাকানির পর শুরু হয় হেমন্তের! তাকে নিয়ে ও আমাদের অতৃপ্তার শেষ নেই! আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করতে মনের ঘরে শান্তি আনয়ন করতে আগমন ঘটে শীতের! সে ও যেন অপরাধি রুপে আসে আমাদের মাঝে বৃক্ষরাজির রুপকে পরিবর্তন করে! সবুজ লতা-পাতা ফুলে সাজানো গাছগুলোকে শূন্য করে! শীতের এই আগমন কিছুটা তৃপ্তিদায়ক হলেও এরমাঝে শূন্যতা বিরাজ করে খুবই বেশী! শীতের অপরাধ ঢাকতে আগমন ঘটে বসন্তের! চারিদিকে সুবজ পাতা জন্মে! গাছে গাছে আমের মুকুলে ছেঁয়ে যায়! বাগানে বাগানে নতুন ফুলের সৌরভ ভেসে বেড়ায়! তারপরও আমরা তৃপ্ত হইনা হতে পারিনা! কারন আমরা বুঝিই না কোনটা যে আমাদের জন্য কল্যাণকর!
মহান স্রষ্টা আমাদের কল্যাণের জন্য ঋতুর বদল করেছেন যেন আমরা অতৃপ্ততা বোধ না করি! এরপরও মহান আল্লাহ আমাদের সুবিধার্থে ঋতুকে মালা বদলের মত করে অদল-বদল করে দেন যেন আমাদের এক ঘেঁয়েমি না লাগে তবুও আমরা আত্মোস্থীরতায় ভুগি! আত্মোতৃপ্ততা হয়না কোন ঋতু নিয়ে! তবুও বছরের পর বছর চলছে এভাবেই! কারো অন্তর তৃপ্ত হলো বা না হলো তাতে কি? ঋতু বদল হচ্ছে তো হচ্ছেই এক মহা-মহীয়ানের ইশারায়!
একটি দ্বীন শিখার আসরে যেদিন কয়েকটি কলি সমৃদ্ধ ফুলের উপস্থিতি ছিলো! কয়েকটি অন্তর সে ফুল ফোটার অপেক্ষাতে ছিলো! কারো কারো বাগানে ফুল ফুটেও ছিলো সেই অনেকগুলো ফুলের মাঝে একটি ফুলের কলি অকালেই ঝরে গেলো! মাত্র একটু সময়ের ব্যবধানে সবকিছু যেন কোন কাল-বৈশেখী ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গেলো এ যেন সারাদিন পানি সেঁচে সন্ধ্যায় মাছ ধরতে গিয়ে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার মত অবস্থা! কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই! আমাদের বাগান সাজিয়ে দিয়েছেন যিনি তিনিই সে বাগানের আশেপাশে ঝড় উঠিয়েছেন আবার ভেঙেও দিয়েছেন! সাথে জানিয়েছেন ধৈর্য ধরলে প্রতিদান লাভজনক হবে সেই কাংখিত আকাংখায় বুক বেঁধে পড়ে আছি আমি বা আমরা অকালে ঝরে পড়া কলির অবশিষ্ট লতা হয়ে!
কখনো কখনো মানুষের কিছুই করার থাকেনা বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েও! অনেক কিছু জানা ও বোঝার পরেও আমরা আমাদের তাঁড়িত আবেগে অনেকদূর এগিয়ে যাই আর তখনই পা পিছলে হোঁচট খাই! এই জন্যে জীবনের প্রতিটি ক্ষনে এমন একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে বা রাখা উচিৎ,যে ভারসম্যের কারনে বিরহের পরিবেশ সৃষ্টি না হতে পারে বা কষ্ট এসে ভীড় করতে না পারে! তবে আমরা মানুষ কখনই সবদিক ঠিক রেখে চলতে পারি না চলা সম্ভব হয়না এটা আমাদের সিমাবদ্ধতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে! এই সিমারেখার বাহিরে কেউই যেতে পারেনা বরং এই সিমা রেখার মাঝেই শতকষ্ট পেয়েও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয় মহান আল্লাহর কাছে তবেই যে আমরা উর্ত্তীণ হবো কঠিন কাঠগড়ায়! আমি জানি মহান আল্লাহ যা করেন তাই আমাদের কল্যাণের লক্ষেই করেন! কিন্তু সবাই কি সেই সময় ধৈর্য ধরতে পারেন? বা ধৈর্য ধরা কি যায়? মহান আল্লাহই তখনও ধৈর্য নামের পাথর আমাদের অন্তরের মাঝে বসিয়ে দেন! আমরা যে যা কিছুই হারাই মহান আল্লাহর কাছে মূল্যবান প্রতিদানের আকাংখাতেই ধৈর্য ধরি! আমরা ধৈর্য ধরতে পারিনা তবুও তিনিই ধৈর্য ধরার ক্ষমতা দান করেন!
আজ সন্ধ্যায় একটি দ্বীনি প্রোগ্রামে সেই কয়েকটি কলি সমৃদ্ধ ফুলের উপস্থিতি ছিলো! কয়েকটি গাছের কলি ফুটে তা পরিপূর্ণ হয়েছিলো দেখতে খুবই ভালো লাগলেও মনের মাঝে কোথাও যেন শূন্যতা অনুভব করলাম! আমার বাগানেও তো এখন এমন একটি কলি ফুল হয়ে ফুটে উঠতো! আমি যে মা! মা কি কখনো ভুলতে পারে তার নারী ছেঁড়া ধনকে? মা কি ভুলতে পারে হারিয়ে যাওয়া মানিককে? মা কি ভুলতে পারে একটুক্ষনের জন্যে? মা তো মা-ই আর মায়ের রোদন আজীবন! মহান আল্লাহ সাথে আছেন বলেই জীবনকে নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছি!
কিন্তু মহান স্রষ্টার মর্জির উপর কারো কিছুই করার নেই তাই সাথে সাথেই সেই প্রজ্ঞাময় মহা-মহীয়ানের কাছে ধৈর্য চেয়ে প্রার্থনা করি তিনি আমাকে আমাদেরকে উত্তম ধৈর্য ধরার তৌফিক দিন! আর অকালে ঝরে পড়া কলিটিকে বানিয়ে দিন দুটি আত্মার, চার জোড়া চোখের প্রশান্তির স্থান! সেই কলিটিকে উছিলা বানিয়ে দিন চিরশান্তির আবাস-স্থলে যাবার সহজ উপকরণ! এই বাগানের কলি আজি সেই বাগানে শোভা পাচ্ছে! সেই শোভায় পরিমন্ডিতো হোক কাংখিত উদ্যান! আর সেই উদ্যানেই মিলন হবে এক জোড়া আত্মার সাথে আরেকটি আত্মার! দু'জোড়া চোখের সাথে একজোড়া চোখের! আর এই বাগানে ফুটিয়ে দিন মূল্যবান মুকুল, উত্তম কলি, আর পরিশেষে তা ফুটিয়ে দিন আপন মহিমায় যেন ফুলটি হয় সবচেয়ে দামী, যেন সে ফুলটি হয় সকলের কল্যাণকামি! সে ফুলটি হয় যেন মহান স্রষ্টার মনোণীত! রাসূল (সঃ) এর আদর্শে আদর্শিত! হে মহান প্রতিপালক আমাদেরকে উভয় জাহানেই কল্যাণ দান করুন! উত্তম ধৈর্য দান করুন যেন কঠিন ঝড়ের মোকাবেলায় পাহাড়ের মত অটল থাকতে পারি! আমাদেরকে কবুল করুন আপনার সন্তুষ্টির রাহে..............! আমরা যে আপনারই করুনার প্রত্যাশায় আছি হে মহান মহীয়ান অন্তর্যামী আপনি আমাদের সেই কাংখিত চাওয়াটি পূর্ণ করুন! আমিন ছুম্মা আমিন!
বিষয়: বিবিধ
১২৭৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি আবেগে আপ্লুত!!! সত্যি কমেন্ট করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। কমেন্ট করা আমার কাছে খুব মামুলি ব্যপার, কিন্তু পারছি না! আল্লাহর সাহায্য না থাকলে এমন পাহাড়সম কষ্ট নিয়ে খুব দুরূহ। আমি বাবা মায়ের যমজ সন্তান, সাথের বোনটা এক বছর পরে মারা যায়। মা যখনই তাঁর কথা বলতে যেতেন, তখনই কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন, মনে করিয়ে দিলেন, মায়ের সেই কান্না দেখে তেমন কিছু বুঝতাম না, শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম। আমি মায়ের কোলের অর্ধ্বেক শূন্যতা পূর্ণ করেছি, বাকী অর্ধ্বেক বোনটা চিরতরে খালি করে গেছেন। আপনাকে সান্ত্বনা দিয়ে দুঃখ বাড়াবো না, যিনি আপনার আমার মালিক তিনিই আপনার মনোকষ্ট দূর করবেন।
ভাইয়া পৃথিবীর সব হারানো জিনিসের স্থলাভিষিক্ত হয়, করা যায় কিন্তু মানুষ চলে গেলে সে স্থান কিছু দিয়েই আর পূর্ণ করা যায়না! দোয়া করবেন মহান আমাকে, আমাদেরকে ছবরে জামিলা দান করেন! আর তার প্রিয় বান্দা-বান্দিদের অন্তর্ভুক্ত করেন! আমিন ছুম্মা আমিন!
মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সবরে জামীল করার তাওফীক দান করুন।
মালা বদলটি কি আপু, এই কথাটি বুঝলাম না। জাযা কিল্লাহ খাইর।
ভাইয়া পৃথিবীর সব হারানো জিনিসের স্থলাভিষিক্ত হয়, করা যায় কিন্তু মানুষ চলে গেলে সে স্থান কিছু দিয়েই আর পূর্ণ করা যায়না! দোয়া করবেন মহান আমাকে, আমাদেরকে ছবরে জামিলা দান করেন! আর তার প্রিয় বান্দা-বান্দিদের অন্তর্ভুক্ত করেন! আমিন ছুম্মা আমিন!
চমৎকার শব্দমালায় সাজানো সুন্দর অনুভূতির পরশ নিতে গিয়ে একপর্যায়ে স্তব্ধ হয়ে থেমে রইলাম! বারবার পড়ালাম!চোখের কোনেচলা আসা পানি নিয়ে মনকে বললাম, মূল্যবান জিনিষ হারানোর প্রকৃত বেদনা যিনি হারিয়েছেন তিনিই সঠিক বুঝেন!পৃথিবীর কোনকিছুই যে এর সমতুল্য হতে পারে না!
যে ফুলটি দুনিয়ার বাগানে এসে প্রষ্ফুটিত হতে পারে নি সে তো আখিরাতের বাগানে অধীর আগ্রহে চারাগাছ হয়ে অপেক্ষায় থাকবে তাঁর অভিভাবক বৃক্ষের জন্য! জান্নাতের গাছে গাছে সবুজ পাখি হয়ে উড়বে! ইব্রাহীম আলাইহিসসালামের সাহচার্যে থাকবে! ফুলটির জন্য যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের প্রকৃত সবরের ফলাফল হবে বাইতুল হামদ!
“নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রাণ এবং ফলের (ফসলের) নোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।” (সূরা বাকারাহ ১৫৫ আয়াত)
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার মু’মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নিই এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে ।(বুখারি, মুসলিম)
বোন, আপনার জন্য অন্তর থেকে দোআ রইলো! আল্লাহ আমার বোন এবং বোনের আহলকে সবরুন জামিল দান করুন! সকল পেরেশানী ও অস্থিরতা থেকে হিফাজত করুন! আপনাদের হায়াত তাইয়্যেবা দান করুন!দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান দান করুন! আমীন!
সদ্য হাঁটতে ও কথা বলতে শেখা আমার অতি আদরের ছোট্ট বোনটি বিদায় হয়েছে ৩৮বছর আগে- এখনা মনে হয় যেন "গতকাল"-
তাহলে মায়ের মনে কেমন লাগতো!!
অবর্ণনীয়!!
আল্লাহপাক মায়ের চেয়েও হাজারকোটিগুন রহমশীল!! তিনি যেন আমাদের রহমতের ছায়ায় রাখেন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন