ফেব্রুয়ারী এলেই!!
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৮:২৭:১৭ রাত
ফেব্রুয়ারী এলেই দেশকে ভালোবাসির শ্লোগানে মুখোরিত করি চারিদিক! আবহাওয়া ভারী হয় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারীর গানে! মনে হয় যেন আমরাই পৃথিবীতে দেশকে ভালোবাসির দলের একমাত্র সৈনিক! ফেব্রুয়ারী এলেই অমর একুশের বই মেলায় ভীর জমাই যেন বই কেনাতেই জীবনের সবকিছু আছে! বই মেলাতে ভীর জমিয়ে বই কিনলেই যেন দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি সব দায়-দায়িত্ব সব কর্তব্য পূরন হয়ে যায়!
দেশ প্রেমীক দলের সৈনিকেরা বছরে একবারই বই মেলাতে ভীর করে বই কিনেই যেন মনে করে বই কিনেই সব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে ফেলেছে! আসলে আমরা কতজনে এই বইমেলার বই গুলো পড়ে শেষ করি? নাকি বই কিনে কিনে বইয়ের সেলফ বোঝাই করি? একাকি নিরব নিভৃতে ভাবলেই নিজের জবাব নিজেই পাওয়া যাবে। বই কিনে কিনে বইয়ের তা'ক বোঝাই করা এরপর যখন ধূলো-বালি পড়ে পুরোনো হয় তখন সে বই হয় ভাঙারীর দোকানের সদাই, অবশেষে এই মহামূল্যবান বইয়ের পরিণতি হয় সদাই বহনের থোঙ্গায়, যার মূল্য মাল বহনের পরেই কমে যায়।
কোন কোন বইয়ের শেষ আশ্রয় হয় আগুনে দগ্ধ হয়ে পুঁড়ে ছাঁই হয়ে। আর এভাবেই দিচ্ছে বাঙালি বইয়ের মর্যাদা। বই পড়ে আমাদের কি উপকার হয়েছে? আমাদের স্বাধীনতার চেতনা, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, আমাদের সন্তানহারা মায়ের আর্ত্মাদ, স্বামীহারা বধূয়াদের বিলাপ, পিতাহারা সন্তানদের আহাজারি কখনো আমাদেরকে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে সহযোগীতা করেছে? বই পড়ে কি দেশ ও দশের প্রতি দায়িত্ববোধের উদয় হয়েছে আমাদের অন্তরে? বই পড়ে কি বন্ধ করেছি একে অপরের উপর জুলুম নির্যাতন?
হাজারও মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত সম্পদ আমাদের এই দেশকে কতটুকুন নিরাপত্তা দিতে পেরেছি? শুধু শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসলেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সব অধিকার আদায় হয়ে যায়? যদি কোনকিছুই না হয় আমাদের দ্বারা তবে আমরা কেমন বাঙালি? স্বাধীনতার পর এপর্যন্ত আমরা প্রতিজনে যদি একটি করে বই পড়ে ও তার থেকে একটি করে উপদেশ নিয়ে আমাদের জীবনে বাস্তব রুপ দিতে পারতাম তবে আজকের বাংলাদেশে দেখতে হতোনা নিজের ভাইয়ের হাতে ভাইকে হত্যার মত চরম ঘৃন্যকর্ম।
তাহলে শুধু ফেব্রুয়ারী মাসেই কেন বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে হবে? সারা বছর ভালো না বেসে? শুধু ফেব্রুয়ারী মাসেই কেন বই কিনতে বই মেলায় যেতে হবে? এমাসেই কেন গাইতে হবে শহীদদের প্রতি সমবেদনার গান? এমাসেই কেন পরতে হবে লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি? যারা সত্যিকার ভাবেই এদেশকে ভালোবাসবে বা বাসে তারা বা তাদের সকলের উচিৎ দিন ক্ষন বা মাস বেছে বেছে দেশকে না ভালোবাসা। তাদের উচিৎ দেশ ও দশের জন্য নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিলিয়ে দেয়ার। আমরা চাইনা শুধু এমাসেই শাড়ি পরে বাঙালি নারী হতে। আর এদেশের পুরুষেরও উচিৎ হবেনা শুধুমাত্র বছরে একদিন পাঞ্জাবী পরে বাংলার যুবকের রুপ ধারণ করতে। আমরা বাঙালি চিরদিনের বাঙালি হতে চাই শুধুমাত্র বছরের একমাসে বাঙালি হতে চাইনা।
২৪শে ফেব্রুয়ারী ২০১৫
বিষয়: সাহিত্য
১১০০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর লিখেছেন
আর মাঝে মাঝে নিজেদের দেশের ভালবাসার অভিনয় করি।
সুন্দর পোষ্টটিতে অনেক ভালো লাগা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন