অনুভুতি!!
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০২:৩৭:২৩ রাত
এই তুমি কি দেখছো এমন করে? প্রশ্ন শুনার পরও কোন জবাব না দিয়ে লিটন সাহেব কি যেন দেখছেন অবাক নেত্রে তাকিয়ে। বারংবার পিছনে ফিরে ফিরে কি যে দেখছে লিটন আজকে তার স্ত্রী বুঝতে না পেরে আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলেন লিটন সাহেবের দিকে কি দেখছো? কি বুঝছো? লিটন সাহেব তার স্ত্রীর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে গিয়ে বলছেন বেশী বেশি দোয়া করো আল্লাহ যেন আমাদের জন্য যা কিছু কল্যাণকর তাই করেন। স্ত্রী বললো ফি আমানিল্লাহ।
লিটন সাহেব স্ত্রীকে আরো বলেন ধৈর্য রাখো আর কেঁদোনা। এসময় তোমার কান্না করা ঠিক নয়। এতে করে তোমার সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করবে। যতটা পারো ধৈর্য রেখে দোয়া করো। আল্লাহ না করুন এসময় জোরে কান্নাকাটি তোমার সেলাইয়ের ব্যথা বাড়িয়ে দেবে। শুধু প্রান ভরে দোয়া করো মহান আল্লাহ যেন আমাদের কলিজার টুকরোকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দিয়ে, নেক হায়াত দিয়ে আমাদের জন্য দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণ বানিয়ে আমাদের কোলে দেন।
লিটন সাহেবের স্ত্রী বলেন; মায়ের চোখের পানিই সন্তানের জন্য দোয়া। আবার কখনো বদ-দোয়া। আমার চোখের পানিই আমার মা'মনির জন্য দোয়া। আর কোন মাকেই দু'হাত উঠিয়ে দোয়া করতে হয়না। মায়েরা মনে মনে বা গোপনে যাই বলুক সেটাই দোয়া হয় সন্তানের জন্য। আমি দু'চোখের পানি ফেলে ফেলে সেই দোয়াই করছি। ইনশা-আল্লাহ; মহান আল্লাহ একজন অসহায় মায়ের বুকের কষ্ট বুঝেই প্রতিদান দেবেন। ধৈর্য কি ধরতে পারে কোন মায়েরা সন্তানের মূমূর্ষাবস্থায়? মা তো শুধু মা ই হয়। মায়ের কান্নাও দোয়া। নিঃশ্বাস ও দোয়া সন্তানের জন্য। আর আমি অন্তরে অন্তরে আমার বেবীর জন্য সর্বাঙ্গিন কল্যাণের দোয়াই করছি আল্লাহ কবুল করুন।
সন্তানের জীবন-মরন যুদ্ধে মায়েরা শক্তিহীন দূর্বল হয়ে পড়ে এটাই স্বাভাবিক। লিটন সাহেবের স্ত্রীরও সেই অবস্থাই চলছে। লিটন সাহেব স্ত্রীর হাত ধরে টেনে টেনে গাড়িতে বসান। তার স্ত্রী যেন নির্বাক ও বোবা হয়ে গেছে কিছুক্ষন ধরে। কোন কথারই জবাব দেয়না যেন সে শুনছেই না। শুধু নির্বাক নেত্রে চেয়ে আছে বাহিরে গাড়ির জানালা দিয়ে রাস্তার দু'ধারে । চোখের অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া দৃশ্যগুলোর দিকে, আর নিরবে ফেলতে থাকেন দু'চোখের পানি। দু'চোখের অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া দৃশ্যগুলোর মত জীবনের অনেক বর্তমান ও হারিয়ে যায় অতীতের স্মৃতির পাতায়। এই কষ্টের দিনগুলো হয়তো থাকবেনা লিটন সাহেব ও তার স্ত্রীর জীবনে। তবে কিছু কিছু ঝড়ে অনেক সময় মহা মূল্যবান বস্তুও হারিয়ে যায় যা অর্থের মূল্যে বা সম্পদের মূল্যে কেনা সম্ভব হয়না। এই কথাগুলোই ভাবছেন অপলক নেত্রে তাকিয়ে লিটন সাহেবের স্ত্রী।
সেদিন স্বামীর অবাক করা নেত্রে তাকানোর মানে না বুঝলেও আজকে ঠিকই বুঝেছে লিটন সাহেবের স্ত্রী। স্বামী না বললেও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় মাঝরাতেই লিটন সাহেবের স্ত্রী হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন ওগো চলো হাসপাতালে যাই কলিজার টুকরোটাকে দেখে আসি। আমার খুবই অস্থীর লাগছে। মনে হচ্ছে কোথাও কিছু হচ্ছে, কিছু ঘটছে, আমার বুকটা কেমন যেন হাহাকার করছে, মনে হচ্ছে খালি খালি তুমি আমাকে নিয়ে যাওনা আমার মা'মণির কাছে? লিটন সাহেব চুপ মেরে বসে থাকলেন এত রাতে কিভাবে কি করবেন? ডাক্তারকে কল ও করা যাবেনা। আর রাউন্ডের ডাক্তার তো নম্বরই দেয়নি তবে কি করে যোগাযোগ করি। স্ত্রীকে শান্তনা দেন ভোর হোক তোমাকে নিয়ে বেবীকে দেখিয়ে আনবো ইনশা-আল্লাহ। এবার ঘুমাতে ট্রাই করো। স্ত্রী বলেন সন্তানকে এন আই সি ইউতে রেখে কোন মা কি নিশ্চিন্তভাবে ঘুমাতে পারে? তুমি ঘুমাও আমার ঘুম আসলে ঘুমাবো নয়তো জেগেই রাত পাড় করবো।
স্বামী লিটন সাহেব অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেন। অনেকক্ষন পর স্ত্রীর ঘুম আসে সামান্য সময়ের জন্য এরপর আবারও জেগে যান আর কান্নাকাটি করেন। কান্নার শব্দে লিটন সাহেবের ঘুম ভেঙে যায় সে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ফজরের সময় চলছে উঠেই কিন্তু জামাতের নামাজ শেষ হয়ে যায় তিনি অযু করে আসতে আসতেই। ঘরেই পড়ে নেন ফজরের নামাজ। নামাজ সেরে সাথে সাথেই কল করেন বেবীর ডাক্তারের কাছে, ডাক্তার কল ধরতে পারেননি। আরো ঘন্টা খানেক পরে ডাক্তার কল করলে জানতে পারে বেবীর অবস্থা আরো গুরুতর আপনি আসেন কিছুক্ষনের মধ্যে, লিটন সাহেব জানতে চায় বেবীর মাকে সাথে আনবো কিনা ডাক্তার বলেন হাঁ নিয়ে আসুন। তিনি আরো জানতে চান বাবীর মা কি বেবীকে ছুঁয়ে দেখতে পারবে? ডাক্তার সম্মতি জানিয়ে মোবাইল কেটে দেয়। তারা দুজন রেডি হয়ে রওয়ানা হোন হসপিটালের দিকে।
পথিমধ্যে ডাক্তার ভাবির কল আসে লিটন সাহেবের স্ত্রীর মোবাইলে সে কল রিসিভ করতেই তিনি সালাম দিয়ে বললেন ভাবি আপনারা কোথায়? তাড়াতাড়ি আসুন। তিনি বললেন ভাবি আমরা তো পথে আরেকটু সময় লাগবে পৌছাতে। তবে ডাক্তার ভাবির কান্না মাখা কন্ঠ শুনেই লিটন সাহেবের স্ত্রী বুঝতে পারেন তার কলিজার ধন আর নেই যার সম্পদ সেই নিয়ে গেছে। হসপিটালে পৌছলে কেউই কিছু বললো না শুধু বললো যান ভেতরে বেবীকে দেখে আসুন। আর ডাক্তার ভাবি বললো বেবীকে দেখে যাবার আগে আমার সাথে দেখা করে যাবেন। ভেতরে প্রবেশের আগেই লিটন সাহেবের স্ত্রীর চোখ গেলো বেবীকে রাখা যেখানে সেখানে কম্পিউটরের দিকে, দেখলো সেটা বন্ধ তার হৃদয়টাতে ছ্যাৎ করে উঠলো। যা ভাবলো তাই বাস্তব হলো। লিটন সাহেব স্ত্রীকে পাঠ করতে বললেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন। দুজনেই পড়ে নিলেন সেই আয়াত।
লিটন সাহেবের স্ত্রী প্রথম ও শেষ বারের মত প্রিয় সন্তানকে কোলে নিলেন তার দু'চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো লোনাপানির ঝর্নাধারা। কে রুখবে সেই ঝর্নার ধারাকে? মায়ের চোখের পানি ছাড়া এই সময় আর কি দেবে সন্তানকে? তিনি বলছেন জান্নাতের বাড়ি থেকে আসা জান্নাতের কবুতর জান্নাতেই উড়াল দিয়ে চলে গেলো। মাকে বা বাবাকে কোন কষ্টই দিলো না। শরীরে জড়ালো না পৃথিবীর পোষাক, খাবার গ্রহণ করলো না এখানের, দু'চোখ খুলে দেখলো না এই মায়াময় পৃথিবীর রুপ। জম্ম থেকেই প্রায় দুইশত ঘন্টা ত্রিশ মিনিট ছিলো এই পৃথিবীর বুকে কিন্তু চোখ খুললো না, দেখলো না মাকে, দেখলো না বাবাকে আর দেখলো না এই সুন্দর পৃথিবীকে
মায়ের দোয়া নিয়ে যাও হে প্রিয় সন্তান তুমি জান্নাতের সিঁড়িতেই থাকো মা ও বাবাকে রেখে যেওনা যেন। আমাদের জন্য অপেক্ষা করো আমরাও আসছি তোমার কাছে, দেখা হবে আমাদের জান্নাতে......।
হে প্রিয় সন্তান সেদিন মন ভরে তোমাকে দেখবো। বুকের জ্বালা মিটিয়ে তোমাকে কোলে নেবো। সেদিন প্রশান্ত করবো আমার তৃষিত আত্মাকে................তোমাকে বুকে জড়িয়ে আমরা ও আসছি................। হে আল্লাহ বৃহত্তম প্রতিদানের আকাংখায় ধৈর্য ধরছি তুমি তোমার ওয়াদা পূরন করো সেদিন। অসহায় দুঃখিনী মায়ের প্রার্থনা কবুল করো আমাকে উত্তম ধৈর্য দান করো।
আমিন।
বিষয়: সাহিত্য
১০৭৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এইমাকে উত্তম ধৈর্য ধরার তৌফিক দিন।
আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন