Rose Rose ভালো বন্ধু হয়ে ( ধারাবাহিক গল্প ২) Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২২ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৮:৪৪:৩৫ রাত

প্রথম পর্বের পর

পরশদের বাসার উপর দিয়েই যাচ্ছিলো রোকেয়া! অন্য একজনের বাসায় আড্ডা দেয়ার জন্য! তখনই জানতে পারে এবাসায় চুরি হয়েছে! আশে পাশের মহিলারা বলাবলি করছে মেয়েটা এমনি বাসায় থাকেনা ছুটিতে বাসায় আসছে কালকে আর রাতেই তার কাপড়ের ব্যাগ চুরি গেছে! শুনে রোকেয়া মনে মনে ভাবলো মেয়েটার নাম অনেক শুনেছি কিন্তু কখনো দেখিনি আজকে দেখা করে যাই! পরশদের ঘরে গেল রোকেয়া! পরশ খুব লজ্জা পাচ্ছিল বড়দের কাপড় পরে আছে বলে! রোকেয়া ঘরে ঢুকেই বলছে পরশ নাম শুনতে শুনতে চুল পেঁকে যাচ্ছে কিন্তু এখনো দেখলাম না! চাচি ও চাচি তোমার পরশ কই? আইতে কওনা সামনে! পরশ এসেই সালাম দেয় আস-সালামু আলাইকুম! রোকেয়া বলে আমাকে সালাম দেয়ার দরকার নেই আমি এখনো বুড়ি হইনি! পরশ বলে সালাম তো ছোট বড় সবাই সবাইকে দিতে পারে ছোট আর বুড়ো নেই! বসেন; পরশ চুপি চুপি ওর মাকে বলে মা! উনাকে কি বলে ডাকবো? মা বলে দেয় ওর স্বামী তো আমাকে চাচি ডাকে তুই ওকে ভাবি বলে ডাক! পরশ ভাবি বলেই ডাকে কথা বলে নানা রকম বিষয়ে! রোকেয়ার পরশের কথাগুলো খুব ভাললাগে! পরশ তুমি এসো আমাদের বাসায় এই তো তোমাদের পাশেই বাসা! তখন মা বলেছিল ও তো পর্দা করে তাই সমস্যা হতে পারে! ভাবি বলল না কোনই সমস্যা হবেনা আপনার ছেলে তো দিনে বাসায় থাকেনা রাতে আসে সেও অনেক রাতে! পরশ বলল আচ্ছা দেখি! ভাবি তো নাছোড়বান্দি জবান নিয়েই গেছে পরশও কথা দিল যাবো ইনশা-আল্লাহ! রোকেয়া বাসায় এসে ভাবলো পরশ কতকিছু জানে অথচ আমি কিছুই জানিনা! পরশের সবকথা গুলো রোকেয়ার কানে বাজতে থাকে পরদিন রোকেয়া আবারও আসল পরশদের ঘরে এসে ডেকে নিয়ে গেল পরশকে তাদের ঘরে! ( পরশ পাশাপাশি বাসা হওয়ার পরও বোরখা পরিধান করে গেল ভাবীর বাসায়) অনেক কথা হল ইসলাম বিষয়ে! পরশের কথা শুনে রোকেয়া খুব মুগ্ধ হতে লাগলো! আর ভাবতে লাগলো আমি ওতো কত কিছু জানিনা আমার ও তো জানা দরকার! কিন্তু এই বয়ষে কিভাবে জানবো? পরশকে বলে তুমি তো অনেক কিছু জানো আমার তো সেই বয়ষ নেই আমর জানার কোনই সুযোগ নেই! পরশ বলে কে বলেছে সুযোগ নেই? মরন পর্যন্ত আপনি শিখতে পারেন কে আপনাকে নিষেধ করেছে? রোকেয়া বলে লজ্জা করে যে কিভাবে শিখবো?

পরশ বলে ভাবি পড়া শুনার মাঝে কোন লজ্জা নেই, লজ্জা হলো যার যার প্রতিপালকের কাছে গুনাহ নিয়ে যাওয়াতে, লজ্জা হলো চুরি করাতে, লজ্জা হলো বেপর্দা ভাবে চলা ফেরাতে, লজ্জা হলো অপরের সম্পদ লুট করাতে, লজ্জা হলো অপরের গীবত করাতে, লজ্জা হলো স্বামীর নাফরমানি করাতে, লজ্জা হলো মুসলমান হয় অমুসলিমের মত চলাতে! পরশ পরশরে! তুই কতকিছু জানিস আমাকে শেখাবি? বলেই ভাবি পরশকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো! পরশ ও কেঁদে ফেললো! পরশ বলল আপনি যদি লজ্জা ভুলে শিখতে পারেন আমিও আপনাকে শেখাতে পারবো! কয়েকদিনেই পরশ আর রোকেয়া ভাবির সাথে খুব গভীর সম্পর্ক হলো! রোকেয়ার ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ সম্পর্কটাকে আরো বেশি মজবুত করেছে! এদিকে পরশ সুন্নতী পোষাকের কারনে মুরুব্বীদের ইতে'কাফে দিনগুলোতে যে খেদমতে যাবার কথা সেখানেও যেতে পারছেনা। কারন ঈদের আগে কেউ জামা কাপড় বানানোর অর্ডার নেয়না! ঈদের পরে ছাড়া বানানো সম্ভব নয় এটা জেনে রোকেয়া ভাবি পরশকে নিজের জন্য ঈদে পরার পোষাকের থেকে একটা পোষাক দিলো এবং বলল তোর কাপড় বানানো পর্যন্ত রাখ! এরপর দেখা যাবে কি করা যায় পরশ তো নেবেনা এই পোষাক কারন তা ভাবির ঈদের দিন পরার পোষাকের একটা! তবুও ভাবি জোর করেই দিলো পরশকে! পরশ একরকম বাধ্য হয়েই নিলো! এভাবে ওদের মাঝে সম্পর্কটা আরো গভীর হল!

কে বলে বড় ছোট বন্ধুত্ব হয়না? পরশ মাত্র আলেমে পড়ছে আর ভাবি আট নয় বছর ধরে সংসার করছেন! তাতে কি? মনের সাথে মন মেলা যাকে বলে! এভাবে পরশ রোকেয়া ভাবিকে শেখালো আল্লাহর ভয় কি? রাসূল (সঃ) এর আদর্শ কি? সৎ পথ কি তা শেখালো, শেখালো পর্দা কি? কেন পর্দা করতে হয়? সালাম দিলে কি হয়? এভাবে তারা পরশের ছুটির সময়টাতে অনেক আগালো! ভাবি তো এখন পরশকে মাথার মনি ভাবে! ভাবি শিখল গুনাহ কি? গুনাহের শাস্তি কি? রোকেয়া ভাবি যেন নতুন জীবন পেল! পেল হেদায়াতের আলো যা রোকেয়া ভাবির ঘরে নয় অন্তরে জ্বলে উঠলো! এক সময় পরশ ছাড়া কিছুই বুঝেনা এমন কি কিছু খেলেও পরশকে নিয়ে খাবে! এভাবে পরশের ছোঁয়ায় ভাবি যেন নিজেকে বদলে নিলো! অল্প দিনেই ভাবি পর্দা করতে শুরু করল! এখন তার স্বামী কথা কাটাকাটি করলে সে চুপ করে থাকে কিছু বলেনা! তার সংসার হয়ে উঠলো জান্নাতের টুকরোর মত! তার স্বামীও এখন অনেক খুশি! সংসারে এখন আর আগের মত ঝগড়া হয়না! পরশ থেকে শিখেছে একজন রাগলে অপরজনকে শান্ত থাকতে হয় এতে করে ঝগড়া থেকে বেঁচে থাকা যায়! ভাইয়া রেগে কিছু বললে আপনি চুপচাপ শুনবেন অথবা এমন ভাবে থাকবেন যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না! তখন একদিন, দুইদিন, এভাবে কয়েকদিন পর দেখবেন ভাইয়া ও আপনাকে মন্দ বলা থেকে বিরত থাকবে আমার বিশ্বাস! পরশের কথা গুলো বাস্তব হতে লাগলো ভাবির সংসারে! আগেতো রাগ করলে দুজনেই কথা বলা বন্ধ করে দিতো কিন্তু এখন ভাইয়ার রাগ আর আগের মত স্থায়ী হয়না! আর ভাবি রাগলেও ভাইয়া এখন চুপ করে থাকে যে কারনে ঝগড়া ও হয়না খুব সুখে কাটতে লাগলো রোকেয়া ভাবির সংসার!

রোকেয়া মনে মনে ভাবে আসলে এতদিন শুধু শুধুই সময়ের অপব‌‍্যবহার করে এসেছে অথচ বুঝতেই পারেনি কখন যে এতগুলো সময় পাড় হয়ে গেছে। পরশের সাথে দেখা না হলে হয়তো রোকেয়া এখনো ঘোরের মাঝেই থাকতো। নিজেকে নিজে চিনতেই পারতো না রোকেয়া। রোকেয়া এখন নিজের গুনাহের কারনে মহান আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত, সে বর্তমানে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে পড়ে অতীতের গুনাহের জন‍্য রোনাজারি করে এবং আল্লাহর কাছে অনুনয় বিনয় করে কাঁদে আর এরই মাঝে পরশের জন্য পৃথিবীর সকল কল‍্যাণের কামনা করে। কারন পরশই তাকে সত‍্য ও সঠিক পথ চিনতে সহায়তা করেছে। পরশ যদিও বয়ষে অনেক ছোট কিন্তু পরশের মত সে আর কাউকে পায়নি ব‍্যক্তি জীবনে। তার আপন ভাই বোনেরাও কখনো তাকে সৎ পথের সন্ধান দিতে পারেনি। কিন্তু পরশ তাকে চিনিয়েছে আল্লাহকে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে, এবং আরো নানা বিষয় রোকেয়া জানতে পেরেছে পরশের কাছ থেকে তাই রোকেয়ার কাছে মনে হয় পরশই ইহজগতে আর পরম প্রিয়জনা। তাই রোকেয়া প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর পরই পরশের জন্য দোয়া করতে ভুলেনা। বরং পরশের জন্য রোকেয়ার আলাদা ভালোবাসা জম্মেছে। সেই ভালোবাসার মাঝে অনেক আন্তরিকতা লুকানো আছে। সত্যিই মানুষের মাঝে যখন আল্লাহর ভয় না থাকে তবে যেকোন ভাবে মানুষ নিজেকে পরিচালনা করতে পারে হয়তো সে পথ ভুল। কিন্তু যখন মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় বিরাজ করে তখন প্রতিটা কদম ফেলতে মানুষ বিচার-বিবেচণা করে। রোকেয়াও আজকাল তাই করে চলে। কোরআন-হাদীসের চর্চা করে ঘরে বসে, নিয়মিত নামাজ আদায় করে, পর্দায় থাকতে চেষ্টা করে, আগে যেভাবে বেপর্দা ভাবে চলতো এখন আর তা করেনা বরং বড় ওড়না দিয়ে শরীল ঢেকে চলে। দরকার না হলে বাহিরে বের হয়না। রোকেয়া এই জীবনের প্রথম জীবনকে জীবন হিসেবে উপলদ্ধি করে আর মনে করে আসলেই আল্লাহর বিধানমত জীবন-যাপন করাতে অনেক শান্তি আছে। এতদিনের আড্ডার জন্যও তার অনুশোচণায় কেঁদে ওঠে। রোকেয়া প্রার্থনাতে বলে হে আল্লাহ আমার মত অজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য তুমি একজন করে পরশকে পাঠাও যাতে করে তারা নিজেকে পরশের পরশ দিয়ে মূল্যবান করতে পারে।

চলছে...........চলবে।

বিষয়: বিবিধ

১৪১৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

301324
২২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:১১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বি। অনেক সুন্দর শিক্ষণীয় ঘটনাটির জন্য বারাকাল্লাহু ফিক।
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:১৪
243930
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আস-সালাময়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
উৎসাহ মূলক মন্তব্যের জন্য আপনার শুকরিয়া আদায় করছি।
301330
২২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৫৮
প্রগতিশীল লিখেছেন : লজ্জার কিছু নেই লিখুন তবে লজ্জার আধিক্য খারাপ...পুনরাবৃত্তির স্থলে নতুনত্ব আনুন..
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:১৪
243931
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : উৎসাহ মূলক মন্তব্যের জন্য আপনার শুকরিয়া আদায় করছি। ইনশা-আল্লাহ চেষ্টা করবো নতুনত্ব আনতে........।
301331
২২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৫৯
প্রগতিশীল লিখেছেন : Happy) Happy) Happy) Happy)
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:১৫
243932
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : উৎসাহ মূলক মন্তব্যের জন্য আপনার শুকরিয়া আদায় করছি।
301521
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:১৮
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:১৫
243933
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : উৎসাহ মূলক মন্তব্যের জন্য আপনার শুকরিয়া আদায় করছি।
301619
২৫ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:৪২
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : পরশের স্পর্শে রোকেয়ার মধ্যে আমূল পরিবর্তন এসেছে...ইস! এমনটা যদি আমাদের চারপাশের চিত্র হতো...
০৬ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৫
254278
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আপনার মত আমারও আকংখা ইস..যদি সবার ঘরে ঘরে এমন করে পরশদের জন্ম হতো.................।
314531
১২ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৯
সাদামেঘ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বি। চমৎকার লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File