ভালো বন্ধু হয়ে (ধারাবাহিক গল্প ১ম) !!
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৮:৩১:২২ রাত
রোকেয়ার বিবাহ হয়েছে প্রায় আট নয় বছর হবে এই জীবনে সে পেয়েছে সাজানো সংসার, আসবাব-পত্র, সন্তান, অলংকারাদি, ও দামি দামি পোষাক এত সবকিছুর পরেও সে কেন যেন নিজেকে সুখী ভাবতে পারছেনা কারন স্বামীর সাথে ছোটখাট নানা কারনে রাগারাগি হয় একসময় তা ঝগড়ার রুপ নেয়, আরো বেড়ে তা মারামারি পর্যন্ত গড়ায় এরপর এমন হয় যে কয়েকদিন কেটে যায় কেউ কারো সাথে কথা বলেনা তবে যার যে দায়িত্ব সে তা পালন করে যায় ঠিকই কিন্তু মুখে হাসি থাকেনা! আর এমন ছোট ও অনর্থক বিষয় নিয়ে উভয়ের মাঝে এসব হয় যা কেউ শুনলে হেসেই উড়িয়ে দেয়! আর তখনও রোকেয়ার মনে হয়না তারা উভয়ে কি লজ্জাজনক কাজ করেছে! তখনও ভাবেনা তারা ইস; কি করলাম মানুষ শুনলে হাসবে! কেউ কেউ সমালোচনাও করবে! এভাবে তার স্বামীও ভাবেনা ঝগড়ার বিষয় কতটা মামুলি। না ভেবেই দু'জনে দু'জনকে নিয়ে এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর ধরে। প্রকৃত ভাবে মানুষ নিজে যে ভুল গুলো করে তা কখনোই নিজের চোখে ধরা পড়েনা ধরা পরে অপরের চোখে! আর এভাবেই তারা সংসার নামক ভেলাটা চালিয়ে আসছিল দীর্ঘ আট নয় বছর ধরে সন্তানদের মুখপানে চেয়ে! কারন রোকেয়া মনে করে পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ হল দ্বিতীয় বিবাহ! লোকে বলবে সংসার করার যোগ্যতা নেই অথবা নানা রকম অপবাদ দেবে সেসব ভেবে এই ভাবেই কাটিয়ে দিচ্ছে জীবনের মূল্যবান সময়গুলো! বেশীর ভাগ সময় বাসার অন্যান্য মহিলাদের সাথে নানা রকম আড্ডা দিয়ে আর টিভি দেখে কাটিয়ে দেয় অবসর সময়গুলো! সে মনে করে এভাবেই নিজেকে কোন রকম ভাল রেখে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে হবে! এভাবে চলতে চলতে রোকেয়া একদিন হাফিয়ে উঠে আবারও সন্তানদের কথা ভেবে সেভাবেই চলতে থাকে তার জীবনের চাকা!
রোকেয়া মনে মনে একজন কাউকে খুজতে থাকে যাকে সে মনের কষ্টের কথা গুলো বলবে! শেয়ার করবে জীবনের অপূর্ণ বিষয়গুলো তাতে করে সে নিজেকে কিছুটা স্বস্তিতে রাখতে পারবে বলে তার বিশ্বাস। নিজের না বলা কথাগুলোর মাঝে কোন ভুল থাকলে সমাধান পাবে আর সমাধান না পেলেও শান্তনা তো পাবে! মনের অজান্তে দোয়াও করতে থাকে কেউ যদি আসতো সেরকম বন্ধু হয়ে! পরশ মাদ্রাসার ছুটিতে বাসায় আসছে! সে খুব অসুস্থ আর ওদিকে মাদ্রাসা পনের বিশ দিনের জন্য বন্ধ থাকে বলে ছুটি নিচ্ছিলোনা কারন পড়া কম হয়ে যাবে তাই সে ক্লাসের শেষদিন পর্যন্ত ক্লাসেই ছিল অসুস্থ হয়েও, আজকেই বাসায় আসছে পরশ! এ ক'দিন পায়ে ফোঁড়া উঠার কারনে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি! ফোঁড়ার ব্যাথায় ঠিকমত নামাজ পড়তেও খুব কষ্ট হচ্ছিলো পরশের! আর হবেই বা কি করে? দুই পায়ের হাটুতেই দুইটা করে চারটা ফোঁড়া উঠেছে কিভাবে বসবে? আর কিভাবে খাবে? আজকে তার মা বাসায় এনে ভাল করে পরিষ্কার করে ধুইয়ে ওষধ দিয়েছে এবং মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছে আর আজকের তৃপ্তির কারনে পরশ মন ভরে ঘুমাচ্ছিল এ'শার নামাজ পড়েই! ছুটিতে নিয়ে আসা ব্যগ পর্যন্ত খোলার সময় পায়নি সে! ঘুমাতে ঘুমাতে কখন যে ফজর হয়েছে সে টেরই পায়নি! উঠে তাড়াতাড়ি ফজর পড়বে বলে অযু করতে যাবার সময় দরজা যে আগে থেকেই খোলা ছিল তা সে টেরই পায়না! অযু করে ফজর পড়ে যখন তসবীহ পড়ছিল তখন তার মনে পড়ে মেইন দরজা তো খোলা ছিল! যাক গে মা মনে হয় আমার আগেই ঘুম থেকে জেগেছিল এজন্য খোলা! পরশ নামাজ শেষ করেই তসবীহ পড়ে কিছুসময় এরপর তেলোয়াত করে প্রায় একপারা! এরমাঝে সবাই ঘুম থেকে জাগে!
মা ডেকে বলে পরশ ফোঁড়ার ব্যথার কি খবর? পরশ বলে মা গো মা তুমি যেন কালকে আমার এই কঠিন ফোঁড়ার ব্যথার উপরে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছ আমি তো সারা রাতেই টের পাইনি এখনও ব্যথা খুব কমই অনুভুত হচ্ছে! মা বললেন আয় এখন আবার গরম পানি দিয়ে ধুইয়ে মলম লাগিয়ে দেই পরশ যায় মার পিছু পিছু! বাথরুমে ঢুকে পরশের মা যেন আবারও পরশকে প্রশান্তির মলম লাগানোর জন্য তৈরি করছে! মা ছোট বোনকে বলল পরশের জামা কাপড় নিয়ে আয় তো বকুল! বকুল ঘর থেকে জামা কাপড় আনতে গিয়ে দেখে বড় আপুর কাপড়ের ব্যাগ নেই! অমনি চিৎকার করে বলতে থাকে মা আপুর কাপড়ের ব্যাগ নেই আমি খুজে পাচ্ছিনা! মা বলেন আরে কালকে তো ড্রইং রুমেই রেখেছিলাম ওর ব্যাগটা! কোথায় গেল? ভাল করে খুজে দেখ! বকুল বলল মা আমি পাচ্ছি না! মা দৌড়ে গিয়ে খুজতে থাকে না কোন ঘরেই ব্যাগ নেই! গেল কোথায় ব্যাগ? ব্যাগ ব্যাগ করে কোনই লাভ হলোনা? ব্যাগ খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে পরশের মায়ের একটা বারহাতের কাপড় এনে মা বলল নে এটা পরে ঘরে আয় এরপর খুজবো তোর ব্যাগ তখন পরশের মনে হল তাহলে কি ব্যাগটা চোরে নিয়ে গেল? কারন সে তো ঘুম থেকে উঠে মেইন দরজা খোলা পেয়েছে! না! অনেক খুজেও সে ব্যাগ পাওয়া গেলনা! মনটা খুব খারাপ হল পরশের! এতদিন পরে বাসায় এসেও ভাল লাগছে না তার! কারন মায়ের কাপড় পড়ে কারো সামনে যেতে তার লজ্জা লাগছে কারন সে সুন্দর করে কাপড় পরতে পারেনা! আর এটা সুন্নতী পোষাক ও নয়! কি করবে মনে মনে ভাবছে সে!
ঈদুল ফিতরের আর মাত্র চারদিন বাকি! পাশের বাড়ির দাদিকে কথা দিয়েছিল ছুটিতে বাসায় আসলে তারা যখন এতে'কাফে বসবে তখন সে খেদমতে থাকবে! মুরুব্বী কার কি লাগে তার জন্য কিন্তু এখন কি হয়ে গেল? কি করবে? ভেবে পায়না পরশ! মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে হে আল্লাহ উত্তম ব্যবস্থা করে দাও। পরশের কাপড়ের ব্যাগ চুরি গেছে নানার জনে নানান রকম মন্তব্য করছে আরে পরশ তুই এত নামাজ-কালাম পড়িস আর আল্লাহ তোর ব্যাগটা কেন চুরি করালোরে? পরশ বলে এর মাঝে ও আল্লাহ হয়তো কোন কল্যাণ রেখেছেন তাই চুরি গেছে। নানান জনের নানান কথার প্রেক্ষীতে পরশ বলছে সবাইকে চোর আমার ব্যাগ চুরি করেছে তাতে আমার মনে কষ্ট নেই তবে আমি চোরের জন্য দোয়া করছি এবং কদ্বরের রাতেও রাত জেগে চোরের জন্য দোয়া করবো। ব্যাগে সাড়ে তিনশত টাকা আছে সেটা দিয়ে সে যেন একটি পাঞ্জাবী কিনে মসজিদগামী হয় এবং খাস তওবাহ করে ও আর কারোর কিছু চুরি করে ক্ষতি না করে এবং খাস তওবাহ করে তার উপর অটল থাকে। আল্লাহ যেন তাকে মু'মিন বানিয়ে দেন। পরশের কথা শুনে পাড়া-প্রতিবেশীরা হাসে আর বলে চোরের ভাগ্য কত ভালো যে, চুরি করেও দোয়া পাচ্ছে। আল্লাহ কি সত্যিই চোরকে তওবাহ করার সুযোগ দেবেন? পরশ বলে আল্লাহ সবকিছু পারেন তিনি চাইলে চোরকে মু'মিন বানিয়ে দেবেন আমি তো শুধু দোয়া করছি আপনারাও সবাই দোয়া করুন কারন আমার ক্ষতি করেছে আলহামদুলিল্লাহ কিন্তু আর কারোর ক্ষতি যেন না করে।
বিষয়: বিবিধ
১৪০৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়ে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকেও যাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
অনুপম শিক্ষার বার্তা পৌছে দিলেন গল্পের আবহে! যে কোন অবস্হায় ধৈর্য্যধারণ এবং এর চেয়ে ভালোর প্রত্যাশা রাখা অনেক বড় মানবীয় গুণ! আমরা যেন তা অর্জন করতে পারি!!
আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন