Rose Roseজীবনটা ক্ষনিকের তবুও মনে স্বপ্ন উঁকি মারে! (৯ম পর্ব)Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:৩১:৫৪ রাত

ফজরের আযান হলো! চারিদিক এখনো অন্ধকারে আচ্ছন্ন! জালাল উঠে আযাদের রুমে আসে! তাকে ডাক দেয়! ভাইজান ফজর নামাজের সময় হয়েছে! নামাজ পড়বেন! আযাদকে কয়েকবার ডাকলে ঘুম থেকে জেগে যায়! জালাল তাকে অযু করিয়ে নিজেও অযু করে আযাদের পেছনে নামাজে দাড়িয়ে যায়! আযাদ ইমামের ভূমিকায় নামাজ শেষ করে! জালাল আযাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাশের এলাকাতে যায়! তখনো সূর্যদ্বয় হয়নি! আযাদ হুইল চেয়ারে বসে এ ঘর থেকে ও ঘরে যাচ্ছে! সবশেষে বারান্দায় এসে দাড়িয়ে সূর্যদ্বয় দেখছে! অনেকদিন এভাবে সূর্যদ্বয় দেখা হয়নি! আযাদ ভোরের সূর্যদ্বয় দেখছে আর ভাবছে সূর্যদ্বয় কত সুন্দর তবুও তার সময়সিমা নির্ধারিত ভোর থেকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে আলো বিলাতে পারবে এরপর রীতিনুযায়ী অস্তমিত হয়ে যাবে পশ্চিমাকাশে! আযাদ ভাবতে থাকে এমন করেই তো প্রত্যেকের জীবনের সময় সিমা নির্ধারিত করা আছে আযাদ ভাবে এমন ও একদিন আসবে যেদিন আর আযাদের জীবনে নতুন সূর্যদ্বয় হবেনা সেদিন কোন দিন আযাদ তা জানেনা। আযাদ আরো ভাবতে থাকে মানুষ কত যে অসহায় তা আযাদ বুঝতে পারছে প্রতি ক্ষনে ক্ষনে! জীবনের কঠিনতাকে সম্বল করে জীবন পরিচালনা করছে আযাদ ও কানিজ। আযাদের মনে নিজেকে নিয়ে ভয় থাকলেও কানিজকে নিয়ে তিনি নতুন স্বপ্ন দেখেন। কারন আযাদের সময় ফুরিয়ে গেলেও কানিজের যে আরো অনেক দুর পর্যন্ত পাড়ি জমাতে হবে। তাই আযাদ সবসময়ই কানিজের কল্যানের জন্য প্রার্থনা করে যেন কানিজ আগামি দিনগুলো নিরাপদে ও শান্তিতে কাটাতে পারে।

মনির আযাদের আপন ভাই হলেও মনির সম্পদের লোভী ও একজন দুষ্টোলোক। সে সম্পদের লোভে ভাইয়ের মৃত্যু কামনায় সময় পাড় করছে। কখন তার ভাই মৃত্যু বরণ করবে সেই চিন্তায়ই মনির আজকাল সময় কাটাচ্ছে। তার মনের মাঝে সবসময়ই শুধু সম্পদ লাভের উচ্চাকাংখা বিরাজ করে। মনিরের প্রথমা স্ত্রী অনেক বুঝান তাতে মনিরের কোন মাথা ব্যথা নেই মনির একবাক্যে তার স্ত্রীকে বলে দেয় তোমার জায়গায় তুমি থাকবে আর কানিজের জায়গায় কানিজ। তুমি কেন সব বিষয়ে বারণ করতে আসো? তুমি সাধারণ মেয়ে মেয়ের মতই থাকবে। কোন কর্তৃত করতে আসবেনা। তারপরও মনিরের স্ত্রী অনেক করে বুঝান মনিরকে কারন মনির তাকেও খুব পছন্দ করে বিয়ে করেন। সে তখন রাজি ছিলোনা। মনিরদের বাড়ির ভাড়াটিয়ার মেয়ে ছিল তার প্রথমা স্ত্রী অর্পা। তাকে এক রকম জোর করেই বিয়ে করেন মনির। দোষ তার একটিই সে অপরুপা সুন্দরী। এই কারনে তাকে প্রথমে নানা রকম লোভ ও পরে নানা রকম ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেন মনির। এখন আবার কানিজের পেছনে লেগেছেন। অর্পার দোষ ছিল সে গরীবের মেয়ে হয়েও সুন্দরী ছিলো আর কানিজের দোষ সে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছে। এখন মনির যেকোন ভাবে সেই সম্পদ হাতে পেতে চায়। আর এই সম্পদ লাভের জন্য যত কঠিন কাজই করতে হবে তাতে সে রাজি। মনির ও অর্পা এই সব নানান বিষয়ে তর্ক বিতর্ক করতে করতে মনিরের রাতে ভালো ঘুম হয়নি। তাই খুব ভোরেই জেগে গেছে। নানা রকম টেনশনে সে ঘর ও তাদের বারান্দায় পায়চারি করছে। হঠাৎ বারান্দায় গিয়ে দেখলো জালাল বাসা থেকে বেড়িয়ে কোথাও যাচ্ছে। মনির ভাবে এত ভোরে জালাল কোথায় যায়? জালালকে বাহিরে যেতে দেখে মনির মনে মনে ভাবে এমনই একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন। তখনই মনিরের মনের লোভী পশুটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।

সে ঘনঘন পায়চারি করতে থাকে বারান্দায়। আর ভাবতে থাকে কিভাবে এই সুযোগটাকে কাজে লাগানো যায়? তার চিন্তার সাথে এসে যোগ হয় শয়তানের কুবুদ্ধি। শয়তান তার মনের মাঝে বসে বসে নানা রকম উস্কানি দিতে থাকে হে মনির তুমি এই সূবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাও। তুমি অঢেল সম্পদের মালিক হবে। আর কানিজ ও হবে তোমার। কোন কিছুই তোমার হাত ছাড়া হবেনা। মনির যা করার এখনই করো নয়তো পরে আফছূছে হাত কামড়াবে। মনির মনের সাথে আর পেরে ওঠেনা। তার সম্পদ লোভী মন কিছুতেই বশ মানতে চাইছেনা। মনির মনে মনে বলতে থাকে আজই কোন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে এই সময়কে কাজে লাগাতেই মনির তড়তড় করে তার ঘর থেকে বের হয়ে আযাদের বাসার দিকে যায়। প্রবেশ করে আযাদের রুমে। খুজতে থাকে আযাদকে এঘরে ওঘরে। শেষে আযাদকে পায় তাদের বেড রুমের বারান্দায়। পিছন থেকে আযাদকে হুইল চেয়ারসহ টেনে সোজা ছাদে নিয়ে যায় মনির। আযাদ বলতে থাকে কে কেরে আমাকে নিয়ে উপরে যাচ্ছিস? আযাদের মনে পড়ে কানিজকে বলা সেই কথাযা মনির বলেছিল সুযোগ পেলে আযাদকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার কথা। আজকে আযাদ বুঝতে পারছে কেন তার কয়েকদিন থেকে এত ভয় লাগছে। আযাদ বলছে মনির কেন তুই আমাকে নিয়ে উপরে যাচ্ছিস? তুই কি আমাকে মেরে ফেলবি? তুই না আমার আপন ভাই? সম্পদের জন্য তুই এতটা নিচে মেনে গেছিস? মনির কোন কথা না বলে সে ছাদের দিকেই যাচ্ছে। আযাদ অনেক কাকুতি মিনতি করলেও মনির কোন কথা না শুনে তিন তলার ছাদের উপরে নিয়ে খুবই জোরে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে আসে। আযাদ চিৎকার করতে থাকলেও সে কোন ভ্রুক্ষেপ করেনা। একসময় আযাদের চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। সে নিচে পড়েই মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান আর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ও মাথা থেকে খুবই রক্ত ক্ষরন হয়। জালাল পাশের এলাকা থেকে এসে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন আজকে আপনার পছন্দমত তরকারি এনেছি আমি নিজ হাতে রান্না করবো আপনি মন ভরে খাবেন এসব বলতে বলতে রান্না ঘরে তরকারি রেখে আসে।

এবার আযাদকে খুজতে থাকে ভাইজান কোথায় গেলেন? কথা বলছেন না কেন? বড় ভাই আপনি কোথায়? জালাল এ ঘর ওঘর খুজে না পেয়ে ছুটে যায় ছাদের দিকে, ভাইজান তো কখনো একা একা ছাদে যায়না। আজকে কি তাহলে একা একা ছাদে গেলেন? সিড়ে দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে জালাল বলে ভাইজান আমাকে বললেই তো আমি ছাদে রেখে যেতাম আপনাকে। কেন যে একা একা কষ্ট করতে গেলো? ছাদে উঠে তো জালাল একেবারে হতভম্ব হয়ে যায়। তাহলে বড়ভাইজান গেলো কোথায়? জালাল এবার আরো অস্থীর হয়ে ভাবে তাহলে কি ভাইজান একাকি ছাদে এসেছিলো আর ছাদ থেকে কোনভাবে পড়ে গেলো? নয়তো অল্প একটু সময়ের মধ্যে ভাইজান যাবে কোথায়? ছাদ থেকে পড়ে যাবার কথা মনে আসতেই জালাল দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে আসে ও বাড়ির আশে পাশে খুজতে থাকে, হঠাৎ বাড়ির পেছন দিকে চোখ যেতেই জালাল জোরে চিৎকার করে ওঠে হায় আল্লাহ একি হলো? ভাইজান কিভাবে পড়ে গেলো? সামনে গিয়ে দেখে প্রচুর রক্তে ভিজে আছে আযাদে দেহ। জালাল চিৎকার করে কাঁদে আর বাড়ির লোকদেরকে ডাকাডাকি করে, ভাড়াটিয়া কয়েকজন লোক এসে আযাদকে ধরা ধরি করে বাড়ির নিচে নিয়ে যায় ও হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ভাড়াটিয়াদের একজনকে গাড়ি আনতে পাঠায়। জালাল মনিরের বউকে বলে যায় ছোট ভাবী আপনি বড়ভাবীকে খবর দেন আমি ভাইজানকে নিয়ে হাসপাতালে যাই বলেই জালাল গাড়ি আসলে সবাই মিলে ধরাধরি করে গাড়িতে উঠায় ও গাড়ি হাসপাতালের দিকে চলে যায়। অর্পা কানিজকে ফোন করে বলে বড়ভাবী আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন বড়ভাই ছাদ থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। জালাল ভাইজানকে নিয়ে পুরোনো হাসপাতালে গেছে, একথা শুনেই কানিজের মনে পড়ে মনিরের বলা সেই কঠিন কথা। তাহলে কি মনিরই আযাদকে নানা এ হয়না। আমি কেন আরো আগে বাসায় গেলাম না। কেন আমি এখানে পড়ে রইলাম? আমি দুরে থাকার কারনেই আযাদের আজকে এই অবস্থা। হে আল্লাহ তুমি আযাদকে বাঁচাও।

বিষয়: সাহিত্য

১২৪৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

290663
০২ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৬
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : আমার মনের যত স্বপ্ন একজন নিয়ে গেছে তাই আর কোনো স্বপ্ন উকি দেয় না। Broken Heart Broken Heart
০২ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫১
234364
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : জীবনটা নদীর মত পানি কম থাকলেও ঢেউ আসে আর বেশি হলে তো কথাই নেই তেমনী মনের মাঝে স্বপ্ন ছোট আর বড় থাকবেই। আবার নতুন স্বপ্ন দেখুন।
প্রথম মন্তব্যকারি হিসেবে আপনাকে যাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
290669
০২ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:০৭
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : খুব কষ্টের পর্ব।
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৫৭
234496
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : সম্পদের কারনে যখন আপন ভাইও শত্রুর মত আচরণ করে তখন কষ্ট লাগাটাই স্বাভাবিক।
290708
০২ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৫
সামসুল আলম দোয়েল লিখেছেন : ভালো লাগল। Good Luck
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০০
234498
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : উৎসাহ মূলক মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে যাযাকুমুল্লাহ।
290736
০২ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫৯
সালসাবীল_২৫০০ লিখেছেন : চমৎকার হয়েছে! ধন্যবাদ
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
234497
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : উৎসাহ মূলক মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে যাযাকুমুল্লাহ।
290834
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৫০
কাহাফ লিখেছেন :
বরাবরের মতই সুন্দর মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেল উপস্হাপনার নান্দনিকতা!
অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম! Thumbs Up Thumbs Up Rose Rose
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০০
234499
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : উৎসাহ মূলক মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে যাযাকুমুল্লাহ।
290952
০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩২
ভিশু লিখেছেন : আপন ভাইটা এরকম করতে পারলেন? আযাদ কি বাঁচলেন?
লেখা ভালো লাগ্লো আপুজ্বি...Happy Good Luck
০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০১
234814
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভিশু ভাই কেমন আছেন? অনেকদিন পর আসলেন।

মানুষ এমনই একশ্রেনীর যখন লোভ আসে মনের মাঝে, তখন অন্য সব সম্পর্ক তুচ্ছ হয়ে যায়, তখনকি ভাই? আর কি বাপ? নিজের লোভের বর্শবর্তী হয়ে নানা অপকর্ম করে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
আমিন।
291604
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:১০
ফজলে এলাহি মুজাহিদ লিখেছেন : পুরোটা লেখা হয়ে গেলে আমি একবারে পড়ে নেবো। Big Grin
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৮
235332
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আপনার অনুভুতি ব্যক্ত করে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য যাযাকুমুল্লাহ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File