জীবনটা ক্ষনিকের তবুও মনে স্বপ্ন উঁকি মারে! (৮ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৫:১১ রাত
কানিজ বাসায় নেই আর আযাদের এই সময়টা কাটছে শুধুই ভাবনার জালে নিজেকে জড়িয়ে! পৃথিবীটা বড়ই বৈচিত্রময়! আরো বৈচিত্রময় এখানের মানুষগুলো! চর্মের এবং হাড়ের অন্তরালে অন্তরের রুপ চেনা বড়ই কঠিন! সম্পদ এমনই এক জিনিস যার জন্য আপন ভাই ও হয়ে যায় শত্রু! আর এই সম্পদ ছাড়া পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে চলা ও কঠিন! আযাদ ভাবতে ভাবতে মনের ভেতর থেকে উত্তর পায় আযাদ তুমি কানিজের জন্য যা করেছ তা তোমার সঠিক সিদ্ধান্ত! তুমি কাউকেই ঠকাও নি আর কানিজও ঠকেনি! তারপরও আযাদ ভাবতে থাকে কানিজের পরিশেষে কি হবে? তার ভাই যদি সম্পদের জন্য কানিজের কোন ক্ষতি করে তবে সে নিজেকে কি দিয়ে শান্তনা দেবে? আযাদের মনে কোন ভাবেই শান্তি আসেনা! বরং কানিজ না থাকাতে সে যেন নানারকম ভাবনায় জড়িয়ে নিজে আরো অসুস্থ হয়ে যায়! তবুও কানিজকে আসতে বলেনা! কারন আযাদ চায় কানিজ তার মনটাকে সম্পূর্ণ ফ্রেশ করে আসুক এবাসায় তাহলে সে আগের মত করে হাসবে, চলবে, পরিবেশটা অনেকটা স্বাভাবিক হবে! নয়তো কানিজের মনে কোন মেঘ থাকলে সে মেঘের আঁধার আযাদকেও অন্ধকারে ঠেলে দেবে! কানিজের চোখের অশ্রু আযাদকে আরো অশ্রু সিক্ত করবে! তার চেয়ে কানিজ নিজেকে শান্তনা দিয়ে নিয়ে আসুক তবে আবারো শান্তি বিরাজ করবে তাদের উভয়ের মাঝে! এদিকে কানিজের আযাদের কথা মনে পড়লেও এবার সবাই কানিজের সাথে সেই আগের মত খারাপ ব্যবহার করেনি! বরং সবাই সহনশীল ব্যবহার করেছে! এই কারনে কানিজের ইচ্ছে হলো আরো কিছুদিন এখানে থেকে যেতে! আর যখনই আযাদের কথা মনে পড়ে তখনই ফোন করে খোজ খবর নেয়! আযাদ কি করছে? কি খেয়েছে? কিভাবে সময় কাটছে? সবকিছু জেনে নেয়! আর কাজের ছেলেটার সাথে কথা বলে, বলে দেয় দেখিস তোর ভাইয়ের যেন কোন সমস্যা না হয়! তু্ই সবসময় তোর ভাইয়ের পাশে পাশে থাকবি বুঝলি? ছেলেটা বলে হাঁ থাকবো ভাবী! তোর যা লাগে আমি আসলে দেব! তুই শুধু তোর ভাইয়ের সবদিক দেখভালো কর! ইদানিং বাসার ভেতরে আযাদের ভয় ভয় লাগতে থাকে! কাজের ছেলেটাকে ডেকে সামনে এনে রাখে! আবার যখন ভয় দুর হয় তখন বলে যা তুই অন্য কাজ কর গিয়ে! এভাবে আরো কয়েকদিন চলে গেলো! আযাদের ভয় বাড়তে থাকলো! আযাদের মনে হতে লাগলো কেউ তাকে জোর করে ছাদে নিয়ে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিচ্ছে! আযাদের ভয় যেন দিন দিন বাড়তেই থাকে! কিন্তু কাউকেই বলতে পারেনা কিসের ভয়? কেন সে ভয় পায় আজকাল? কাজের ছেলেটা আযাদের সকল কাজের আঞ্জাম দেয় পাশে পাশে থাকেও কিন্তু কোথা থেকে যে আযাদের মনে ভয়ের উদয় হয় আযাদ অনুভব করতে পারেনা! এভাবে ভয়ে ভয়ে আযাদের আরো কয়েকদিন পাড় হলো! কিন্তু কিছুতেই ভয় দুর হলোনা!
আযাদের ভয়টা দিন দিন গভীর হতে থাকে! সে যেন নিজের ছায়াকেও ভয় পেতে শুরু করে! ভয় এমনই এক জিনিস মানুষের স্বস্তিকে অস্বস্তিতে পরিণত করে! পেরেশানি বাড়িয়ে দেয়! ভয়ে তখন আর নিজেকে শান্ত রাখা সম্ভব হয়না! ভয় যেন সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাড়া করে বেড়ায়! এখন বিকেল বেলা! আযাদ প্রতিদিনের মত বিকেলে বারান্দায় বসে বসে নানা রকম ভাবনাতে নিজেকে আবদ্ধ রাখে! কানিজে বাসায় নেই বলে আযাদ ছাদে যায়না! বারান্দায় বসে বসেই আকাশ দেখে! নিজেকে ভাসায় কল্পনার জগতে! সাঁতরে বেড়ায় স্মৃতির এপার ওপার! কিন্তু আজকে যেন প্রতিদিনের থেকে বিপরীত লাগছে আযাদের কাছে! সে আজকে কোন ভাবেই কল্পনাতে ভাসতে পারছেনা ভয় যেন এখানেও তাকে তাড়া করছে! কাজের ছেলে জালালকে ডেকে বলছে জালাল তুই কি করিস? আজকে এখানেই বসে থাক! আজকে তোর সাথে গল্প করি! জালাল জানতে চায় ভাইজান গল্প কি? আযাদ উত্তর দেয় জীবনের ঘটনা গুলোই এক একটি গল্প! জীবনের মাঝে কোন ভুল হলে কেউ কেউ তাকে আলোচনা সমালোচনা করে নিজেকে সংশোধন করে নেয়! আর কেউ কেউ তা করতে পারেনা! জালাল তোর কোন কথা বল আজকে জালাল বলে ভাইজান আমার তো কোন গল্প নেই তাহলে কি বলবো? আযাদ জালালের কথা শুনে হাসে, আর বলে কি বলিসরে জালাল তোর কোনই গল্প নেই? তুই নিজেই তো একটি গল্প! জালাল জবাব দেয় ভাইজান আমি আপনার কঠিন কঠিন কথাগুলোর কিছুই বুঝিনা! আযাদ জবাব দেয় তোর তো কোন গল্প নেই তবে আমার গল্পটাই শুন! এই যে দেখ আমি কি ছিলাম, কি অবস্থা হয়েছে, আর শেষ পরিণতিই বা কি হবে? একটা সময় মুক্তোকাশে ডানা মেলে বেড়িয়েছি! মনের সকল ইচ্ছাকে পূরণে ব্যতিব্যস্ত হয়েছি! কি করিনি নিজের মনের ইচ্ছাকে পূরন করতে? বাড়ি সম্পদ সবকিছুই করেছি জীবনের সুখের জন্য! ব্যাংকে কিছু টাকাও আছে কিন্তু আজকে দেখ সেই মুক্তোকাশে ডানা মেলে উড়া পাখিটা আমি আজকে নিজের ঘরেই যেন নজর বন্দি! আজকে নিজের আপন স্বজনেরা চাইছে আমি কখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবো আর ওরা সবকিছু আত্মসাদ করবে! পারলে এখনই আমাকে গলা টিপে হত্যা করে সম্পদের ভাগ নেয়! এটাই জীবনের গল্পরে ভাই এটাই জীবনের গল্প! জালাল বলে ভাই আমরা সহজ সরল তাই এত কঠিন কঠিন ভাষা বুঝিনা! তবে বুঝি সৃষ্টি কর্তা যা করেন তাই আমাদের জন্য কল্যান! আর তাতেই আমাদের সকলের খুশি থাকা উচিৎ! আযাদ বলে তুই ঠিকই বলেছিস জালাল!
আযাদ আরো নানা রকম গল্প করতে থাকে! জীবনের পাওয়া নাপাওয়ার হিসেব কষে কষে জালাল কিছুই বুঝেনা! সে চুপচাপ শুনতে থাকে! আর আযাদ আপন মনে বলে যায় তার মনের অব্যক্ত কথাগুলো! মানুষ যতই মুখে বলুক আল্লাহ যা করেছেন ভালো করেছেন কিন্তু বাস্তবতায় সেই ভালোর উপর ধৈর্য ধারণ করা কঠিনই বৈকি! আযাদ হয়তো কানিজের সহযোগীতা আর সহমর্মীতায় নিজেকে ধৈর্যশীল করতে পেরেছে তবে সবাই পারেনা! দুমড়ে মুচড়ে পড়ে অধৈর্য হয়ে! আর মূল কথা হলো আল্লাহ প্রদত্ত বিষয় গুলোতে কারোরই কিছুই করার থাকেনা একাগ্র চিত্তে মেনে নেয়া ছাড়া! আযাদ ও জীবনের কঠিনতাকে মেনে নিয়েছে প্রানপ্রিয় স্ত্রী কানিজের সহযোগীতায়! তারপরও জীবনে সে নিজেও পূর্ণতা পেলনা আর কানিজকেও পূর্ণ করতে পারলো না! এতো আরেক ধরণের অপূর্ণতা! আর যতদিন আযাদ বাঁচবে ততদিনই এভাবে চলবে! আযাদ কানিজের সকল কাজে খুশি কারন কানিজের মত এমন শিক্ষিত ওস্মার্ট মেয়ে নিজেকে নিঃশ্বেস করে আযাদকে পূর্ণ করেছে! তার কাজের প্রতি খুশি না হয়ে পাড়া যায়না! আর সবকিছুর পরেও নিজের হাতে আযাদের সেবা করছে কোন লেন-দেনের হিসাব না করে! আযাদ একলা বসে বসে কত যে কল্পনা জল্পনা করছে তার কোন শেষ নেই! জীবনের এই ক্লান্তি লগ্নে এসে আযাদের ইচ্ছে করে সেই যৌবন ফিরে পেতে যখন সে পৃথিবীর অলি গলিতে চলেছে মুক্ত মনে সেই জীবন আযাদের আবারও ফিরে পেতে ইচ্ছে করে! ইচ্ছে করে সেই জীবনের মত মূল্যবান সময়ে কানিজের ভালোবাসাকে পূর্ণ করতে! কিন্তু স্রষ্টার লিখন ভিন্ন! তাই সবকিছুই বিপরীত হয়েছে! আযাদ আর কানিজ ও সবকিছু মেনে নিয়েছে! কিন্তু এখানেও ভালোবাসার মাঝে অন্তরায় হয়ে দাড়াতে চাইছে সম্পদ নামের বাঁধার প্রাসাদ! আপন ভাইদের শত্রুতার স্বীকার এখান আযাদ আর কানিজ!
জালাল হঠাৎ করে ভাইয়া বলে ডাক দিয়ে আযাদের কল্পনাতে বিঘ্ন ঘটায়! আযাদ বলে কি হয়েছে জালাল? জালাল বলে ভাই ঘরের বাতি গুলো জ্বালিয়ে দিয়ে আসি মাগরীব হয়ে এলো! আযাদ বলে যা তাহলে আর শুন আমাকে অযু করিয়ে দিয়ে যা আমি মাগরীবের নামাজটা পড়ে নেই! জালাল আরো জানতে চায় ভাইজান এখন নাস্তা কি করবেন? আযাদ বলে আজকে তোর পছন্দমত কিছু তৈরি কর সেটাই খাবো! জালাল আযাদকে অযু করিয়ে বের হয়ে যায়! সে অনেকক্ষন পরে তার মায়ের হাতের মুড়ি ভাজা আর দুধ চা বানিয়ে আযাদের কাছে আসে! এসে ভাইজান দেখেন খেতে পারেন কিনা! আযাদ বলে আরে এ তো দেখছি গ্রামের মুড়ি ভাজা! জালাল বলে জি ভাইজান আমার মায়ের হাতের মুড়ি ভাজা! মা পরিচিত একজনকে দিয়ে পাঠিয়েছেন! আমি তো অনেকদিন হয় গ্রামে যেতে পারিনি তাই! আযাদ বলে অনেকদিন পর আসলে গ্রামের মুড়ি ভাজা খাচ্ছি! ভালোই লাগছে রে জালাল! তোর মাকে আমার সালাম বলিস আবার গেলে! জালাল বলে ঠিক আছে ভাইয়া! আযাদ বলে আমরা শহরে সুযোগ সুবিধা বেশী পেলেও গ্রামের অনেক টাটকা আর ভেজাল মুক্ত খাবার থেকে বঞ্চিত হই সবসময়! আরো বঞ্চিত হই গ্রামের নির্মল শীতল বাতাস থেকেও! আরো বঞ্চিত হই মা চাচিদের হাতের বানানো পিঠা থেকে! মাঝে মাঝে খুবই খারাপ লাগে! যদিও শহরে অনেক সুযোগ আর সুবিধার কারনে পড়ে থাকে মানুষগুলো! তারপরও যাদের গ্রামে স্থায়ী ঠিকানা আছে তারা তো বছরে একবার হলেও গ্রামের ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে পারে! আর আমরা শহরে জীবনে এতটাই জড়িয়ে পড়েছি যে এখান থেকে কোথাও যাওয়ার কোন পথ নেই! আর এখন তো আমার কয়েদীর মত জীবন এখন তো শহরটাকেও আর আগের মত করে দেখতে পারিনা! জালাল এবার জানতে চায় ভাইয়া ভাবী আসবেন কবে? আযাদ বলে তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে যে জালাল? তোর ভাবীতো অনেকদিন পরে গেছে বাবার বাড়িতে থাকুক মন ভরে যখন ভালোলাগে তখন আসবে! জালাল বলে ভাইজান কষ্ট হবে কেন? ভাবী বাড়িতে নেই বলে বাড়িটা কেমন খাঁ খাঁ করে! ভাবী থাকলে যেন বাড়িটাতে চাঁদের আলোয় ঝলমল করে! এখন বাড়িতে নেই বলে বাড়িটা কেমন যেন পানিতে পড়ে আছে! আযাদ বলে আসবে আসবে আরো কয়েকদিন পরে আসবে তখন আবার এই বাড়িটাতে চাঁদের আলোয় ঝলমল করবে! তুই ঠিক কথাই বলেছিস রে জালাল! তোর ভাবী এঘরের বাতি! সে না থাকাতে তো অন্ধাকারই থাকবে তাইনা? সে আসলে আবারও সবকিছু আলোয় আলোয় ভরে উঠবে বাড়ির আঙিনা সাথে আমার হৃদয়ের আঙিনাও! জালাল কালকে এক কাজ করিস তো ভোর বেলাতে উঠে আমাকে অযু করিয়ে দিয়ে তুই পাশের এলাকাতে গিয়ে টাটকা লাল শাক আর চিংড়ি মাছ এনে রান্না করিস! অনেকদিন হয় ক্ষেতের টাটকা লাল শাক খাইনা! জালাল বলে ঠিক আছে ভাইয়া! কিন্তু ভাবী তো আমাকে বলে গেছে ভাবী না আসা পর্যন্ত আপনাকে একা রেখে কোথাও যেতে না! ভাবী জানতে পারলে আমাকে কাজ থেকে বিদায় করে দেবে! সেটার কি হবে? আযাদ বলে কিছুই হবেনা তুই যাবি আর আসবি! ইনশা-আল্লাহ আমার কিছুই হবেনা! তুই আসলে এক সাথে সকালের নাস্তা করবো! কেমন? জি ভাইয়া!
বিষয়: সাহিত্য
১৪০১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে আজাদ চরিত্রের বিষয়টা মোটামুটি অনুমান করতে পেরেছি। মনে হচ্ছে কোন এক ধমকা হাওয়া এসে তার জীবনকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
মিছে সম্পদের মায়ায় পড়ে মানুষ আপন থেকে কেমন দূরে চলে যায় তা সুন্দর ভাবে ফুটে উঠছে গল্পের পরতে পরতে! অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকুমুল্লাহ জানাচ্ছি!
শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বী! অনেক দিন পরে আপনাকে আবার পেলাম!দীর্ঘ বিরতীর কারণ কী???
আপনার সর্বাধিক কল্যান কামনা করি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন