Rose Good Luckজীবনটা ক্ষনিকের তবুও মনে স্বপ্ন উঁকি মারে! (৬ষ্ঠ পর্ব) Good Luck Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:৩২:৪৮ রাত

পারিবারিক নানা কারনে কানিজ ও আযাদের মনটা খুবই খারাপ যাচ্ছে ইদানিং! কানিজ মাঝে মাঝে খুবই কাঁদে কারন যাকে ভালোবেসে জীবনটা পাড় করে দিতে চেয়েছে তার পিছনে কত শত্রু! মনটা আজকে কানিজের বাঁধনহারা তার ইচ্ছে করছে মুক্ত পাখির মত সারা আকাশটা চড়ে বেড়াতে! ইচ্ছে করছে পৃথিবীর বাঁকে বাঁকে গিয়ে দেখতে সব মানুষই কি এমন সম্পদ লোভী? নাকি কিছু ভালো মানুষও আছে এই দলের ভেতর? কানিজ আজকাল আগের মত করে হাসেনা! কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকে সবসময়! কানিজ ভাবতে থাকে সামান্য সম্পদের মোহে মানুষ মানুষকে কেন হত্যা করে? কেন টাকার কাছে বিক্রিত পৃথিবীর সকল ভালোবাসা? কেন অর্থের কাছে রক্তের সম্পর্কও হয়ে যায় বিলিন? তবে কি টাকাই সবকিছু? সম্পদই সবকিছু? নয়তো ভাইয়ের ভালোবাসা কেন ভাইয়ের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়? নাকি সবকিছুর পরেও ভালোবাসা বলেও পৃথিবীতে কিছু একটা আছে? যদি ভালোবাসা থেকেই থাকে তো ভালোবাসা কেন পৃথিবীর সম্পদের কাছে নতি স্বীকার করবে? কানিজ আর ভাবতে পারেনা! কোন কিছুতেও যেন মনকে স্থীর করতে পারছেনা! কি করবে? কি করা উচিৎ এখন কোন সিদ্ধান্তও নিতে পারছেনা! তারপরও চুপচাপ আছে কানিজ! কিন্তু তার ভেতরের কষ্ট গুলো মুখে যেন ভেসে আছে! চোখের পাতায় যেন লেখা আছে কানিজের মনে কি হচ্ছে তা সবকিছু!

কাজিনের এই অবস্থা আযাদ লক্ষ করে! আযাদ নিজ থেকেই বলে কানিজ যাও ক'দিন তোমার বাবার বাড়িতে গিয়ে থেকে এসো ভাই বোন ও বাবা মায়ের সাথে কিছুদিন সময় কাটালে মনটা ভালো হয়ে যাবে তখন চলে এসো! কানিজের মনটা চাইছে বাহিরে থেকে ঘুরে আসতে কিন্তু এই অক্ষম লোকটাকে কার দায়িত্বে রেখে যাবে? এখানে তো সবাই সবার শত্রু হয়ে আছে! মনিরের কথাগুলো কানে বাজতে থাকে কানিজের! তাই কানিজ বাবার যেতে রাজি হয়না! বলে যাবো সময় করে! তখন আযাদ বলে আমার জন্য ভেবনা! তুমি নিশ্চিন্তে যাও ঘুরে এসো! মন ভালো হবে তোমার! আর তোমার মন ভালো হলে আমরা আবার আগের মত করে চলবো! গল্প করবো! ছাদে উঠে রাতের আকাশের তারা গুণবো! একসাথে গান শুনবো! আমাদের পৃথিবীটাকে আমরা আমাদের মনের রঙে রাঙিয়ে রাখবো! দেখবে সব কষ্ট চলে যাবে! আর কোন কষ্টকেই আমরা প্রশ্রয় দেবনা! কানিজ ভাবে কি করবে? বাবার বাড়িতে কানিজ যেতে চায়না আযাদের বিষয়গুলো ছাড়াও কিছু কারনে! ওখানে সবাই কানিজকে নানা রকম কথা বলে কানিজের সারাজীবনের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য! নানা রকম কথা শুনতে হয় বলে কানিজ বাবার বাড়িতেও যায়না খুব একটা! বড় বোনের মেয়েরা পর্যন্ত কানিজকে কটূ কথা বলতে দ্বিধা করেনা! কিন্তু এবার এমন লাগছে যে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছে করছে! আর আযাদ ও যখন যাওয়ার জন্য বলছে তখন যাই যতক্ষন সময় ভালো লাগে ততটুকুন সময় থাকবে তারপর চলে আসবে! কানিজ সবকিছু গুছিয়ে রেখে নিজের ব্যাগও গুছিয়ে বাবাকে খবর দেয় আসতে কানিজের বাবা এসে কানিজকে নিয়ে যায়!

কানিজ যাওয়ার পর আযাদের মনে হয় বিয়ের পর এই প্রথম সে নিজেকে একাকি বোধ করছে! মনে হচ্ছে কানিজ ছাড়া তার পৃথিবীটা আসলেই অন্ধকার! কানিজই তার ভালোবাসা আর ভালো ব্যবহার দিয়ে আযাদের জীবন থেকে অনেক কষ্ট দু করেছে! সেখানে জ্বেলেছে ভালোবাসার বাতি! দেখিয়েছে আগামির স্বপ্ন! আসলেই কানিজ যদি সেদিন বিয়ের সিদ্ধান্ত না নিতো তবে আজকের আযাদ হয়তো সকলের অবহেলায় শেষ হয়ে যেত! কানিজের সর্বোচ্চ ত্যাগের কারনেই আজকের আযাদ এখনো বেঁচে আছে! নয়তো সেই কবেই মিশে যেত মাটির সাথে! কানিজের ঋন সে কোনদিনই শোধ করতে পারবেনা! তাই কানিজের মুখের হাসির জন্য আযাদের সবকিছু করা উচিৎ! আযাদের তো কষ্ট হবেই তারপরও কানিজের মন ভালো হওয়ার জন্য আযাদের এই ত্যাগ স্বীকার! কাজের ছেলেটাকে সব সময় ডেকে পাশে রাখে! কাজের ছেলে সব সময় তার সব কাজ করে দিলেও আযাদের মনে কানিজের জন্য দূর্বলতা কমেনি বরং বেড়েছে! আযাদ ভাবতে থাকে কানিজ এভাবে আর কতদিন নিজেকে কষ্ট দিয়ে তার সেবা করে যাবে? তার ও নিজস্ব একটা ইচ্ছা স্বাধীনতা আছে! সে ও তো নিজেকে আরো সুন্দর করে সাজাতে গুছাতে পারতো! কিন্তু সে তা না করে আযাদের ভালোবাসায় নিজেকে এক রকম কোরবানিই করে দিয়েছে! তার এই কোরবানির মূল্যায়ন আযাদ কি দিয়ে করবে? সম্পদের পরিমাপ দিয়ে তো আর ভালোবাসার পরিমাপ হয়না! তাকে পরিমাপ করতে হয় ভালোবাসা দিয়েই!

কানিজ তার বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ার পর থেকে আযাদের কেমন যেন ভয় ভয় লাগে তার নিজের ঘরে! আযাদ অনুভব করে কানিজ কত দিক দিয়ে আযাদকে সহযোগীতা করে যাচ্ছে তা সে কাছে থাকলে বুঝা যায়না কিন্তু সে না থাকাতে হারে হারে বুঝা যাচ্ছে সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই সংসারের জন্য! তার কতটা মূল্য এই সংসারে! আসলেই প্রত্যেক মানুষের গুরুত্ব বা মূল্যায়ন বাড়ে যখন সে কাছে না থাকে! সবসময় কাছে মানুষের মূল্য বুঝা যায়না! যখন দুরে চলে যায় তখন বুঝা যায় সে আসলে কতটা মূল্যবান মানুষ! কানিজের বেলাতেও তাই অনুভুত হচ্ছে আযাদের! আযাদ একাকি হওয়াতে মনে হয় নানা রকম ভাবনা এসে তার মাথায় ভীর করেছে! সে একের পর এক ভাবনাতে ডুবেই আছে সবসময়! কাজের ছেলেটা মাঝে মাঝে সেই ভাবনার ভেতর থেকে আযাদকে ডেকে জানতে চায় ভাইয়া আপনার কিছু লাগবে? এখন কি করবো? আযাদ শুধু বলে এখন তুই বসে থাক আর কিছু করতে হবেনা! আযাদ আবারও হারিয়ে যায় ভাবনার অতলে! ভাবনার ভেলা তাকে কোনদিক থেকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে তা সে কল্পনাও করতে পারেনা! শুধু ভাবছে এই জীবনের ইতি কোথায়? আর কানিজের ভবিষ্যতই বা কি? সব ভাবনার মাঝে আযাদ কানিজের কল্যানের জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে! হে আল্লাহ তুমি তো সব জানো সবকিছু দেখছো তুমি কানিজের জন্য যাকিছু কল্যান তাই করো! প্রার্থনাতে কখন যেন দু'চোখ বেয়ে ক'ফোটা অশ্রু বেড়িয়ে আসল আযাদ যেন টেরই পেলনা! আযাদ উপলদ্ধি করে কানিজ এক পরশ পাথরের নাম যার পরশ আযাদকে মূল্যবান করেছে! বাঁচার আগ্রহ দিয়েছে! কানিজ আসলেই একটি পরশ পাথরের নাম! এই পরশ পাথরের পরশ না পেলে আযাদের কি অবস্থা হতো আযাদ আর কল্পনা করতে পারেনা! সে বলে আল্লাহ যা করেছেন ভালোর জন্যই করেছেন! নয়তো বিপরীতমুখি কিছু হতো! কানিজ চলে যাওয়ার পর থেকে আযাদ নানা বিষয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখে ভাবনার জগতে! সেখানে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে আর নিজেই জবাব খুজে নিতে চেষ্টা করে! আযাদের ভাবনার আকাশ জুড়ে কখনো মেঘ, কখনো মেঘ ভেদ করে আসা সূর্যের রশ্নির আলো, আর কখনো রঙধনুর ছোঁয়ায় রাঙানো কানিজের ভালোবাসার দৃশ্য যা তাকে অনেক কষ্টের মাঝেও আনন্দের দোলা দিয়ে যায় মনের ভেতরে!

বিষয়: সাহিত্য

১১৪২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

280692
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:০২
কাহাফ লিখেছেন :
বরাবরের মতই অনুভূতি কে নাড়িয়ে যাচ্ছে লেখনী! বাস্তবতার নিরিখে নিজেকেও মেপে মেপে নিতে হচ্ছে!
অনেক ধন্যবাদ ও ভাল লাগা রেখে যাচ্ছি!
Rose Rose Rose
০৭ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৫৬
225516
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : কোন কোন সময় গল্পও বাস্তবতার মতই হয়! আর গল্প থেকেই মানুষের জীবন সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত!
280722
০৩ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:০৬
মামুন লিখেছেন : সুন্দর ও সাবলীল লিখনিতে ভাল লাগা রেখে গেলাম। Rose Rose Rose
০৭ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৫
225518
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আপনার উৎসাহ মূলক মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে যাযাকুমুল্লাহ!
287413
২৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৩১
নাছির আলী লিখেছেন : মাধুর্যযুক্ত সাবলীল লিখনিতে ভালো লাগা অনুভূতি রেখে গেলাম।যাযাকাল্লাহ
২৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:১৪
231477
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালোলাগা মন্তব্য করে উৎসাহ দেয়ার জন্য যাযাকুমুল্লাহ খাইরান ফিদ্দারইন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File